কোরবানী ঈদ রিপোর্ট-২০১৪ । যাদের সাথে দেখা হল না, তাদের জন্য।
এইবার ঈদ আসলে আমি যেভাবে ভেবেছিলাম হবে ঠিক সেভাবে হয় নি। আমি সাধারনত যেসব প্ল্যান করি, মিস হয় না। এবারের ঈদের বড় বড় দুটো প্ল্যান মিস হয়েছে।
প্রথম থেকে ছিলাম কনফিউজ। এই বছর অনেক ছুটি নিয়েছি। সো ঈদের সময় কবে থেকে ছুটি নেব, কতদিন নেব এইসব। ছুটি নিলেও পরে যাব কিভাবে? ট্রেনে নাকি বাসে? আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম ট্রেনে একটা রিস্ক নেব। টিকেট পাই কিনা।
একা একা ট্রেন জার্নি খুব বোরিং। যানজট নেই কিছু নেই, তাও ভৈরব যেতে লাগে ৫ ঘন্টা। এত সময় শুধু বসে থাকাও যায় না। ঝিমুনি এসে যায়। সংগে ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজের কারনে ঝিমানোও যায় না। কখন বেহাত হয়ে যায়! বসার একটু পরেই টের পেলাম সিটের ফোমের ভিতর দিয়ে নিচের স্টিলের রডের শক্ত ছোয়া পাওয়া যাচ্ছে। আরাম করে বসারও উপায় নেই।
যাইহোক, রাত সাড় নয়টা নাগাদ পাঁচদোনা পৌছালাম। ঈদের আগের রাত। বাসস্ট্যান্ডের পেসেঞ্জার পেতে এক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে ধারনাতেও ছিল না।
চিটাগাং থাকতেই দুইজন আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে যেন বাসস্ট্যান্ডে এসেই যেন ফোন করি। একজন হল রিফাত, আরেকজন হল এক ছোটভাই। সি এন জিতে থাকতেই ছোটভাইটাকে ফোন দিয়ে বলছি যেন এক নম্বরের গেটের সামনে থাকে। আর নেমে ফোন দিলাম রিফাত কে।
বাসস্ট্যান্ড নেমেই দেখি এক তামশা! গানের আসর বসেছে! একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই এটা কি? বললেন যে, কি জানি ভাই...আমি এইমাত্র আসলাম।
একটু পরে সদ্য জীবিতদের খাতা থেকে নাম কাটা যাওয়া ছেলেটা তার মটর সাইকেল নিয়ে হাজির। পাশেই ঝুলানো মিস্টির প্যাকেট। আমার ঠোটের মুচকি শয়তানি হাসি দেখে সেও হেসে দিল। চড়ে বসলাম তার গাড়িতে। গেটের কাছে এসে দেখি সেই ছোটভাই দাঁড়িয়ে আছে তার সাইকেল নিয়ে। কুশল বিনিময়ের একফাঁকে সে আমাকে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল। প্যাকেটের মুখ ফাঁক করে দেখি আমার জন্য সে গিফট কিনেছে!
আমি যখন খুব অবাক হই তখন ভাষা খুজে পাই না। আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না, আমার কি করা উচিত। আমি কি ওকে ধন্যবাদ দিব? নাকি ঈদের সময় বাসায় দাওয়াত দিব? নাকি ওকেও কিছু একটা কিনে দেব? নাকি অন্য কিছু করব? রাতের এগারোটা বেজে গেছে। সারাদিন তেমন কিছু খাওয়াও হয়নি, ক্লান্তিতো আছেই। অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূড় অবস্থায় ওকে বিদেয় দিয়ে রিফাতের মটরসাইকেলে চড়ে বাসায় চলে আসলাম।
ঈদের দিনটাতো একরকম কেটেই গেল। সবার যেমন কেটেছে তেমনই। বিপত্তি বাধল রাতের বেলা। কলোনীতে বিদ্যুৎ নেই! জিটিজি উপর লোড কমানোর জন্য হাউজিংয়ের লাইন কেটে দেয়া হয়েছে। গরমে অবস্থা কাহিল। পরেরদিন স্পিন খেলা হবে কিনা এই ডিসিশনের উপর আমার আরেকটা ডিসিশন অপেক্ষা করছে। কিন্তু বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় কোন ডিসিশন নেওয়া হল না।
ঈদ ছাড়াও কলোনীতে যাওয়া হয়। সেই একই প্যাটার্ন। সন্ধ্যায় ঘর থেকে বের হয়ে হোস্টেলে যাওয়া, তারপর রাত ৯-১০ টার দিকে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু আড্ডাবাজি। তারপর আরবার ফিরে আসা। ঈদের সময় এই প্যাটার্নের একমাত্র ভিন্নতা হল আমাদের স্পিন খেলা। আমি যথেষ্ঠ আশাবাদী ছিলাম। হয়ত সবাই আগ্রহ দেখাবে। কিন্তু............. যাইহোক যেটা হয়নি সেটা নিয়ে আর কথা বলে লাভ নেই।
আফসোস হল এই কারনে যে, আমার অন্য প্ল্যানটাও ভেস্তে গেল। খেলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় অন্যটাতে সময়মত ডিসিশন দিতে পারি নি।
প্রতিদিনই ঘুরে ফিরে হোস্টেল-বাজার-ঘর। ভাবছিলাম বাপ্পির সাথে একদিন সকালে বের হব। ক্যামেরা নিয়ে। তারপর হন্টন চলবে। বাপ্পি আবার ঘাড়ের ব্যাথায় অস্থির। ঈদের রাতে গেলাম বাপ্পিকে দেখতে। সেখানে গিয়ে এক বিব্রতকর পরিস্থিতি।
বাসার সিলিংয়ের প্লাস্টার খসে পড়েছে আগেই। এবার কাজ করানোর কথা। যাদের ঠিক করেছি তারা ছাদের কাজ করার পর কিছু পেমেন্ট পেয়ে তাইরে নাইরে শুরু করল। সিলিংয়ের কাজ করার জন্য লোক ঠিক করা হল। পরের দিন সকাল থেকে কাজ শুরু করবে। পরেরদিন সকালে আবার আমি চিটাগাং চলে আসব। সবার কাছে বিদেয় নিয়ে টিয়ে রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ৫ টায় উঠতে হবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সব ফর্সা। কিরে কয়টা বাজে? দেখি ৬ টা ১৮! পুরাই মাথায় হাত। এলার্ম দিয়েছে কিন্তু টের পাইনি। ধূর! আজকে আর যাবই না। পাশ ফিরে আবার শুয়ে পড়লাম।
সাড়ে নয়টার দিকে দু'জন লোক এলো। ঘুম থেকে উঠলাম। রুম রেডি করে দিলাম কাজ করার জন্য। কাজ চলল প্রায় আছরের আগ পর্যন্ত। যদিও ধোয়া ধুয়ি শেষ হতে হতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল।ভারী বোঝা টানতে গিয়ে কোমড়ে হ্যাচকা টান খেয়ে বাঁকা হয়ে রইলাম কতক্ষন। চুলা পরিষ্কার করতে গেলাম, চুলার পাশের বটিতে লেগে আঙ্গুল কেটে গেল। পর্দা লাগাতে গেলাম, দেখি একপাশের তারকাটা মিসিং। ঐটা ঠিক করতে যেয়ে অন্যহাতের আঙুলে খেলাম কেচা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুপুরে খাওয়া খেলাম।
পরদিন সকালে কিন্তু সময়মতই উঠলাম। কিন্তু পড়লাম অন্য বিপত্তিতে। দিনটাই শুরু হল ঝগড়া দিয়ে।
সকালবেলা পৌনে ছয়টায় ঘর থেকে বেড়িয়ে যখন হাটা শুরু করেছি তখন দেখি পায়ে টান লাগে! অনেকটা অনেকদিন পরে দৌড়ালে যেমন হয়। উঠলাম সিনএনজিতে। স্ট্যান্ডে আর সিএনজি না থাকায় ভাড়া চাইল ৫ টাকা বেশি।
>কেরে? ৩০ টাকার ভাড়া ৩৫ টাকা কেরে?
>>ঈদের সিজন না? বেশি দেওন লাগব।
>বেশি দিতাম কেরে? আমগোরে বেশি কেডা দেয়?
>>আপ্নেরাতো সরকারী চাকরী করেন। হুইয়া বইয়া থাইক্যা বেতন বোনাস পান। আমগোর বোনাস কে দেয়? সারাদিন গাড়ি চালাই...
>তো কি হইছে? আমগোরে জিম্মী কইরা ভাড়া বেশি নিতেন কেরে আমনে? টাকা হালাল হইত না...
>>আমনেগো টাকা হালাল হইত না। অফিস করেন মিয়া চাইর ঘন্টা...একসপ্তাহ পর্যন্ত এমুন চলব। রবিবার পর্যন্ত...সহাল সহাল আপনের লগে মেজাজ গরম করতারতাম না। না গেলে না যাইবেন... ..............................[আমার সহযাত্রীর সাথে সিএনজি ড্রাইভার]
সিএনজি ছেড়ে দিয়ে এখন বাসের অপেক্ষায়। আসল একটা বাস। ফুল লোড। লোকালে ভাড়া ৩০-৩৫ টাকা। ঐটাও লোকাল, তবে বাস বড়। ভাড়া চায় ৬০ টাকা। উঠলাম না।
উঠলাম মেঘালয় লাক্সারীতে। নরসিংদী রুটে যাদের যাতায়াত আছে তারা নাম শুনে থাকবেন। কাউন্টার সিস্টেম, তাই ভাড়াও ডাবলের বেশি। নেহায়েত কপালগুনে সেই ৪০ সিটের লাক্সারিয়াস মেঘালয়ের ৩৭ নম্বর লাক্সারিয়াস সিটটা আমার কপালে পড়ল। যাই হোক আরেকজনের বিরাট এক গাট্টি কোনরকমে আমার লম্বা লম্বা পা দিয়ে পাশ কাটিয়ে ভারী ব্যাগ কোলের উপর রেখে বসে পড়লাম।
ভূলতা কাউন্টারে এসে নতুন নাটক! গাড়ি থামতেই এক লাল দাড়ির মুরুব্বীগোছের লোক উঠলেন। আমার পাশের ৩৮,৩৯,৪০ নং সিট দখল করলেন। তার পিছে পিছে এলেন দশাসই শরীরের এক হিন্দু মহিলা! সে যখন দেখল সিট সবগুলা দখন তখনই চিল্লাচিল্লি শুরু।
>এই কি ব্যাপার? আপনি একা তিন সিট নিচ্ছেন ক্যান? মহিলার সিট দেন।
>>আরে আমার সিট তিনটাই লাগবে....
>এটা কি ধরনের কথা? আপনি মহিলার সিট দিবেন না...!!
>>আমারোতো মহিলা। আমার লাগবে সিট। দুইটা বাচ্চা আছে। ....এই তোরা বাসে উঠস না কেন?
বলতে বলতেই হিন্দু মহিলার স্বামী, তারপিছে ২ বাচ্চা নিয়ে আরেক দশাসই বোখরাওয়ালী, তারপিছনে গাট্টিবোচকা নিয়ে বোখরাওয়ালী মোটামুটি স্বাস্থ্যের স্বামীর আগমন।
>এই আপনি সিট ছাড়েন না কেন? মহিলা বসতে দিবেন না? ...হিন্দুর স্বামী।
>> আরে আমার তিন সিটই লাগবে। মহিলা আছে, দুইটা বাচ্চা আছে।
এই প্যাচাপ্যাচির ফাঁকে দুই বাচ্চাকে দুই সিটে বসিয়ে মহিলা বসল আমার পাশের সিটে। দুই সিটে বাচ্চা হওয়াতে আমার ও মহিলার সিটের মধ্যে ভালই গ্যাপ ছিল। তাদের বসিয়ে দিয়ে মুরুব্বী নেমে গেছেন।
হিন্দু মহিলা গজগজ করতেছে, "এই বুড়ার সাথে তুমি পারলা না। আমি একা থাকলে এক ধাক্কা দিয়া বুড়ারে কই ফালাইতাম...!"
আমরা ইতোমধ্যে অধৈর্য্য হয়ে উঠছি। কন্ট্রাকটর কোথায়? গাড়ি ছাড়ে না কেন? পরে শুনলাম, এই বাসের কন্ট্রাকটরের মৃগী হয়েছিল। আমরা অবশ্য বাস থেকেই দেখছিলাম একজনকে ধরে সবাই শুইয়ে দিছে।
"আমরা জব করি। জব ধরতে হয়! পুরুষ বসে যাবে আর মহিলা দাড়ায়ে যাবে!!"- হিন্দু মহিলার গজগজানী চলতেছে।
এদিকে বোখরাওয়ালীর জামাই তাদের মালামাল সাইড করেছে। দাঁড়িয়ে আছে। তাই দেখে বোরখাওয়ালীর দরদ উথলাইয়া উঠছে। বাচ্চা দুইটারে ঠেলা দিয়া সরাইছে। আমার আর তার সিটের মধ্যে গ্যাপ বাড়াইছে। তারপর জামাইরে ইশারা দিছে। লোকটা হিন্দু মহিলাকে বলল, "এই যে এখানে বসেন।"
"আমি বসব না। আপনি বসেন!!" মহিলা ঝামটা মারল।
"এখানে কোথায় বসবে? এখানে কি সিট আছে নাকি?" - আমি।
"বিধর্মী তো বিধর্মীই। (আরো কি কি জানি বলছে )" বোরখাওয়ালীর জামাই।
এইবার বাসে কেয়ামত নাইমা আইল।
"এই কি বললেন আপনি? কি বললেন? বিধর্মী বললেন ক্যান?"- হিঃ মহিলা।
"আপনি বিধর্মী গালি দিলেন কেন? কত বড় সাহস! বিধর্মী গালি দেয়। বেয়াদপ কোথাকার।"- হিঃ মহিলার জামাই।
"বিধর্মীরে বিধর্মী বলব নাতো কি বলব? তুই চুপ। স্টুপিড!"-বোঃ জামাই হিঃ জামাইকে।
"আপনি বিধর্মী বলেন কেন?"- হিন্দু ফ্যামিলির ছেলে। বয়স ১৩-১৪ হবে।
"ফাজিলের কোথায়কার!"-আরেক হিন্দু যাত্রী।
"আপনি এইগুলা বলেন কেন? আপনি একাই মুসলমান? আমরা মুসলমান না?"-আরেক মুসলিম (!) সহযাত্রী।
চিল্লাচিল্লীতে কাউন্টার থেকে লোক আসল। ঐ মুরুব্বীও কোথা থেকে এসে হাজির। ঘটনা আঁচ করতে পেরে বোখরাওয়ালীর জামাইরে মুরুব্বী দিছে ধমক। আর ঐ লোকের পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত করছে।
এইসব ঘটনার ফাঁকফোকড়ে লোকটা আমার পাশে এসে বসল। আমি কিছু বললাম না। আমার বসতে তেমন কোন প্রবলেম হচ্ছিল না। কিন্তু লোকটা মনেহয় আমার নিরবতাকে অন্যভাবে নিল।
"দেখছেন? ব্যবহারটা কি করল? বসতে দিলাম...আর কেমন করল..."
এইসুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলাম।
"ভাই আপনি নিজেইতো রং কথা (বিধর্মী) বলছেন। আপনি বসতে বলেন কেন? এখানে কি সিট আছে? আপনার নিজেরই সিট নাই আপনি আরেকজনকে বসতে কেন বলেন?"
ঝাড়ি খেয়ে বেটা একদম চুপ। আমি চিন্তা করলাম, টিকেট কেটে হিন্দু যাচ্ছে দাঁড়িয়ে আর টিকেট ছাড়া মুসলিম (!) যাচ্ছে সিটে বসে।
যাইহোক, আসলাম চিটাগাং রোড। ইউনিকের টিকেট কাটলাম। আমার আগে এক দম্পতি (দুই বাচ্চাসহ) টিকেট কাটছে। আমি কাটছি সাড়ে সাতটায়। গাড়ি ঢাকা থেকে ছাড়বে পৌনে আটটায়। ৮ টা ২০ বেজে গেছে গাড়ির খবর নাই। এখন ঐ ভদ্রলোক কাউন্টারের লোকের সাথে হইচই।
"হ্যা, গাড়ি আসবে বললেন ১০-১৫ মিনিট পর। এখন এক ঘন্টা হয়ে যাচ্ছে। গাড়ির খবর নাই। বাচ্চাগুলা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।"
"কে বলছে গাড়ি ১০-১৫ মিনিট পরে আসবে? আমি বলছি ঢাকা থেকে গাড়ি 7:45 এ ছাড়বে। আসতে আসতে ৩০-৪০ মিনিট লাগবে।"
"আপনি একেক সময় একেক কথা বলেন কেন? এক কথা বলবেন। গাড়ি দেরি হলে বলবেন ১০-২০ মিনিট দেরি হবে। দুই কথা বলেন কেন?"
"দুই কথা কে বলছে? আমি দুই কথা বলি নাই। হেরে (আমাকে) জিগান টিকেট বিক্রির সময় কি বলছি।"
আমি-"ভাই বাদ দেন। বাচ্চারা কান্না কাটি করতেছেতো তাই এসব কথা বলতেছে। আমরাতো জানিই এই রুটের গাড়ির অবস্থা।"
এরপরও ওই লোক গজগজ করলেও কাউন্টারের ম্যানেরজার কিছু বলে নাই আর।
গাড়িতে উঠেও আরেকজনের সাথে ঝগড়া করলাম। যে ঘটনার জন্য যে দোষী না সেই ঘটনায় তার সাথে মেজাজ খারাপ করলাম। মুড অফ অবস্থা চিটাগাং শহরে এসে পৌছালাম।
একঘন্টা বাকি এখনো কম্পোনীর গাড়ি আসতে। এখন কি করব? অপেক্ষা নাকি লোকাল সার্ভিস দেখব? নাকি ওয়াল্টনের কাস্টমার কেয়ার খুজব? আগে নাহয় যুহর পড়ে নেই।
নামাযের পর সিদ্ধান্ত নিলাম ওয়াল্টনের কাস্টমার কেয়ারটাই আগে খুজে বের করি। তারপর দেখা যাবে কিহয়। ফোন দিলাম। বলল আগ্রাবাদ আসতে হবে, আমরা ৬ টা পর্যন্ত আছি।
গেলাম আগ্রাবাদ। বাসে থাকতেই একজনের সাথে কথা বলে মুহুরীপাড়া কোনদিকে আইডিয়া নিয়েছি। কিন্তু নেমে রিকশাওয়ালাকে মুহুরীপাড়া বলাতে চিনলই না। হাটা শুরু করলাম। সিঙ্গাপুর মার্কেটের সামনে দিয়ে হেটে হেটে একটু দূরেই একটা মোড়ে আসলাম। আবার ফোন দিলাম,
"ভাই কোথায় আপনাদের দোকান? রিকশাওয়ালাতো চিনে না..."
"ভাই রিকশাওয়ালাকে বলেন যে, ...... কমিউনিটি সেন্টারের পরেই। ২-৩ মিনিট লাগবে?"
"....... কমিউনিটি সেন্টার?"
"জ্বী..."
"ওকে..."
পাশে থাকা ট্রাফিক পুলিশ আমার কথা শুনল। তারপর উনি নিজেই আমাকে একটা রিকশা ঠিক করে দিল। এই প্রথম মনে হয় কোন পুলিশকে ভাল একটা কাজ করতে সরাসরি দেখলাম!
যাইহোক, কমিউনিটি সেন্টারের ছাড়িয়ে একটু এগিয়েই রিকশা ছেড়ে দিলাম। Waltonbd আর খুজে পাই না। কোথায় কোথায়? সাত পাচ ভাবতে ভাবতে সামনের দিকে এগুচ্ছি। হঠাৎ দূরে সাইনবোর্ডটা চোখে পড়ল। হাটার গতি বাড়ালাম। সামনে যেয়ে দেখি বন্যা! কি অবস্থা আগ্রাবাদে! ঘূর্নিঝড় হুদহুদের প্রভাবে উচ্চজোয়ারে নর্দমা উপচিয়ে রাস্তায় গোড়ালির উপর পর্যন্ত পানি।
এখনতো আর রিকশাও পাই না। কি আর করা। পচা পানি পেরিয়ে গলির ভিতর চিপার মধ্যে গেলাম। ফেরার সময় রিকশা পাওয়াতে আর পানিতে পার ফেলতে হয় নি। ততক্ষনে এক ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। গাড়ি চলে গেছে। পেটেও টান পড়েছে। আগ্রাবাদ মোড়ে হোটেল জামানে ঢুকলাম। লাঞ্চ সেরে তারপর আস্তে আস্তে আমার ডেরায় পৌছালাম।
No comments:
Post a Comment