Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Monday, October 13, 2014

বিশ্বইজতেমা

প্রতিবছরের মত এবারেও টঙ্গীতে শুরু হতে যাচ্ছে ইজতেমা। সারাবিশ্বের অগনিত মুসলিম এতে অংশ গ্রহন করবেন। কিন্তু দুঃখের কথা হল আমাদেরই কিছু মানুষ শুধু বিরোধীতা করার জন্য বিশ্বইজতেমা নিয়ে নানান মুখরোচক কথা বলে থাকে। যারা কোনদিন ইজতেমা ময়দানের পাশদিয়ে হেটেও যায়নি তাদের মুখ থেকে যখন বিশ্বইজতেমাকে ব্যঙ্গ করে "পিকনিক", "জঙ্গী" জাতীয় কথা বার্তা শুনতে পাই তখন মেজাজ ঠান্ডা রাখা মুশকিল হয়ে যায়।
সম্ভবত ২০০৯ সালে ইজতেমায় যাবার সৌভাগ্য আমার হয়। কাজেই আমি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। ট্রেনে করে যখন টঙ্গী স্টেশনে নামী তখন আমার কাধে কয়েকদিন থাকার মত কাপড় চোপড়, কাথা বালিশ সম্বলিত ভারী একটা ব্যাগ। প্রায় একমাইল দূরে অবস্থিত ময়দানে যেতে ঐ ব্যাগ কিছুক্ষন হাতে, কিছুক্ষন কাধে, কিছুক্ষন মাথায় নিয়ে নিয়ে ক্লান্তির শেষ পর্যায়ে পৌছে আমাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে পৌছি।
ইজতেমা ময়দানে উপরে কাপরের প্যান্ডেল আর নিচে জমিনের উপর পাটি বেছানো। ইলেক্ট্রিসিটির কাজ ততক্ষনে শেষপর্যায়ে। এই কাজকরার তোড়জোড়  শুরু হয়েছে আরো আগে থেকেই। বিভিন্ন পেশাজীবীর (ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ) সমন্বয়ে গঠিন স্বচ্ছাসেবীর এক দল এইসব কাজে অংশগ্রহনে করে ইজতেমা ময়দানে কাজ করে এক আমাদের জন্য থাকার উপযোগী করে তোলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে (সেনাবাহিনীসহ) একে সর্বাত্মক সহযোগীতা করা হয়। প্রথম দিনে পৌছেতে দেরি হয়ে যাওয়ায় আমরা নিজেরা রান্না না করে বাইরে খেয়ে নেই। কাছাকাছিই অস্থায়ী ভাবে গড়ে উঠা খাবারের দোকানে ঢুকে যাই। ভাতে পাথর আর তরকারীতে বালি থাকলেও কোন অভিযোগ না করেই কচকচ করে খেয়ে ফেলি। রাতের বেলায় শুরু হল আসল পরীক্ষা।
শীত আর শীত!! প্রচন্ড ঠান্ডা!! দুটো কাথা পাটির উপর বিছিয়ে, কম্বল গায়ে জড়িয়ে, জ্যাকেট পড়ে, মাফলার গলায় পেচিয়েও রেহাই নেই। এর মধ্যে যাদের কপাল বেশি খারাপ তাদের উপর গভীর রাতে উপরে কাপড় চুইয়ে শিশিরের পানি পড়া শুরু হল। আবার কারো কারো স্বপ্নদোষ হল। আমারো একরাতে হয়েছিল। রাত তখন প্রায় ৩ টা। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ করে ঘুম থেকে উঠলাম। বালিশের নিচেই লুঙ্গি গামছা ছিল। টান দিয়ে বের করেই আরকজনকে ডাকদিলাম। শীতে কাপতে কাপতে গেলাম চৌবাচ্চার কাছে।
চৌবাচ্চাটা মাটি খুড়ে বসানো। মূলত ওযুর জন্য করা। সারাক্ষন সাপ্লাইয়ের পানি এসে পড়ছে। তবুও সেই চোবাচ্চা উপচিয়ে পড়ে না। পানি ব্যবহার হচ্ছেই। ওখানে যেয়ে দেখি আরো অনেকেই আছে আমার মত। শীতের রাতে খোলা জায়গায় ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করার মজা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। যারা করেছেন তারা নিশ্চয় জানেন!
ইজতেমা ময়দানে ইলেক্ট্রিসিটি দেয়া হয় সন্ধার সময়। সারাদিন থাকে না। তখন মোবাইল চার্জ দেবার জন্য সিরিয়াল দিতে হয়। সিরিয়াল পেলে আবার মোবাইল পাহাড়া দেবার যন্ত্রণা! মাগরিবের পরে ইজতেমা ময়দানে বয়ান শুরু হয়। বয়ানে উঠে আসে সারাবিশ্বের তাবলীগ জামাতের কার্যক্রমের হালৎ, বিভিন্ন সাথীদের জীবনের ঘটে যাওয়া চমকপ্রদ সব ঘটনা, আল্লোহর আদেশ-নিষেধ, রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দাওয়াতী আদর্শ, সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) দের ঈমান শেখার, ইসলামের জন্য তাগ্যের বিভিন্ন বর্ণনা। আরো দেয়া হয় ভবিষ্যৎ দাওয়াতী কাজের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা। মূলত তিনদিনের তাবলীগ জামাতে গেলে যেসব কথা বার্তা হয় সেগুলোই আরো বিস্তারিতভাবে ইজতেমায় উঠে আসে। বক্তা যদি বাংলাদেশী হন তবে বয়ান হয় বাংলায়। ভিনদেশী হলে তার নিজের ভাষায় বয়ান করেন। পরে আরেকজন তা বাংলায় ভাষান্তর করে থাকেন।
সবচেয়ে কষ্টকর হল "খেদমত" করা। ধরাযাক, ১৬ জনের একটা গ্রুপ একসাথে ইজতেমায় গেল। তাদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা, কার কি লাগে খেয়াল রাখা, মালপত্র গুছিয়ে রাখার জন্য ৩-৪ জনের ছোট্ট একটি দল থাকে। প্রতিদিন সকালে এই দলের সদস্য পরিবর্তন করা হয়। বেশিরভাগ সদস্যই স্বেচ্ছায় খেদমতের দলে থাকতে তৈরি হয়ে যান। স্বীকার করতে দোষ নাই ভয়েই আমি খেদমতে যাই নাই। কোথায় বাজার!! কোথায় পানি!! কোথায় রান্নার জায়গা!! প্রায় অর্ধ কিলোমিটার দূরে রান্নার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিরাট বিরাট সসপ্যান টানাটানি, বালতি ভরে পানি নিয়ে আসা-এর মধ্যে খেয়াল রাখতে হয় কারো গায়ে যেন স্পর্শ না লাগে, কারো জুতায় যেন পা না লাগে, নিজের জুতার সাথে যেন বালি না আসে, হাজারটা কথা!! আল্লোহর বিশেষ অনুগ্রহ যাদের উপর আছে তারাই এই বিরাট দায়িত্ব নিতে তৈরি হয়ে যায়। আল্লোহ তাদের সারাজীবন তার অনুগ্রহের মধ্যে রাখুন এই কামনাই তাদের জন্য।
টয়লেটের কথা বলি এবার। ময়দানের দু'পাশে দু'ধরনের টয়লেট। একপাশে পাকা দালান। সেখানে টয়লেটের পাশাপাশি কিছু গোসল খানাও আছে। শুধু সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। আরেকপাশে নালা কেটে তুরাগ নদীতে সংযোগ দেয়া হয়েছে। নালার উপর দুইটি তক্তা ফেলে চারপাশে কাপড় ঘিরে ছোট ছোট খুপরি তৈরি করা হয়েছে। বাসায় কত লিটার পানি খরচ করি ঠিক নেই, কিন্তু ওখানে একবদনা পানিই সম্বল। যা করার এক বদনা দিয়েই করতে হবে। যার বেশি সমস্যা সে দেখা যায় দু'হাতে দু'বদনা নিয়ে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে সারাদিনে পানিতে ভিজে তক্তাগুলো পিচ্ছিল, অন্ধকার, দুর্গন্ধ-তার উপর সিরিয়াল ধরতে হয়। অভিজ্ঞতা বটে! প্রতিদিন সকালে ওয়াসার ট্রাক এসে পানি মেরে নালা পরিষ্কার করে দিয়ে যায়।
ফেরার সময় আমাদের টিকেট কাটা হল মালিবাগ থেকে। টঙ্গী থেকে মালিবাগ রাস্তা কিন্তু কম না। তারউপর সবার হাতেই তার জিনিসপত্রের বিশাল ব্যাগ, কোন গাড়ি ঘোড়াও নাই। চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। অনেকক্ষন হাটার পর একটা পিকআপ পাওয়া গেল যে আমাদের মালিবাগ পৌছাতে রাজি হল। মালিবাগ কাউন্টারে পৌছানোর পরে শরীরে আর একটুও শক্তি অবশিষ্ট ছিল না। তবুও আল্লোহর শুকরিয়া ভালয় ভালয় ইজতেমা শেষ করতে পেরেছি। কিন্তু রাতে বাসে আমার জ্বর এসে গেল। বাসে আমার তেমন ঘুম আসে না। তবে সেরাতে কোথা দিয়ে বাস চিটাগাং আসল বলতে পারব না। মাজখানে কুমিল্লাতে যখন বিরতি দিল তখন শুধু চোখ মেলে দেখলাম কোথায় এসেছি। তারপর আবার চোখ বন্ধ করলাম। সকাল ৬ টার দিকে রুমে ফিরে নামায পড়ে, নাস্তা খেয়ে আবার ঘুম।
এটা আমার কয়েকবছর আগের অভিজ্ঞতা। এখন আরো উন্নত ব্যবস্থা হয়েছে কিনা জানা নেই। তবে বিদেশী মেহমানদের জন্য সবকিছুই আলাদা, একটু উন্নত। স্বাভাবিক, তারা আমাদের চেয়ে বেশি কষ্ট স্বীকার করে ইজতেমায় শরীক হয়েছেন।
এখন আমার প্রশ্ন দুটি,
১. কোন পিকনিকে মানুষ এই ধরনের কষ্ট স্বীকার করে অংশগ্রহন করে? 
২. আপনি ইজতেমা ময়দানে কোথায় দেখেছেন সেখানে "জঙ্গী"রা ট্রেনিং করে? (সেনাবাহিনী, র‍্যাব-রাতদিন ২৪ ঘন্টা সেখানে টহল দেয়, সাদা পোশাকে পুলিশতো আছেই)

No comments: