Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Monday, October 13, 2014

জীবনের ভূত

তোমরা কেউ কি কখনো ভূত দেখেছো? আমি দেখেছি! ভূতগুলো কিন্তু আমাদের আশেপাশেই থাকে। ঘাপটি মেরে, চুপটি করে। আর সুযোগ পেলেই আমাদের ঘাড় মটকে দেয়! আমি নিজেও কিন্তু মাঝে মাঝে ভূত হয়ে যাই! ঘাড় মটকে দেই। আজ আমি ভূত চেনার কৌশল আবারো বাতলে দেব।
ভূতেরা কখনো পজিটিভ চিন্তা করতে পারে না। তাদের চিন্তা-চেতনা, মনন সবসময় নেগেটিভ প্রান্তে থাকে। তাদের পা থাকে পিছন দিকে। তাই যখনি তারা সামনের দিকে এগুতো চায় তখনি পিছনে চলে যায়! তাদের কিছু কমন ডায়লগ থাকে। যেমন, "এইগুলো করে কি হবে?", "এভাবে কিছুই হবে না।", "কখনো ভাল কিছু হবে না", "তোদের দিয়ে কিছু হবে না", "এভাবে না", "ওভাবে না" --মোট কথা "না" ছাড়া কোন কথা নেই। তারা যাদের ঘাড় মটকে দেয় তাদেরও এই স্বভাব পেয়ে বসে। না এর চক্কর থেকে বেরোতে পারে না।
রমজান আসার পর ভূতদের উপদ্রব আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে বেড়েছে ঘাড় মটকানো মানুষের পরিমাণ।
১. রোজার মধ্যে পথশিশুদের নিয়ে বিভিন্ন আয়োজন চোখে পড়েছে। পথশিশুরা যেন ঈদের মধ্যে আর কিছু না হোক, অন্তত একসেট জামা পায় সেজন্য অনেকে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে, অনেকে কয়েকজন মিলে জামা-কাপড় দান করেছেন। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেল ভূতের উপদ্রব! ভূতরা এসে বের করল; পথশিশুদের আসলে জামা নয়, খাবার দেয়া প্রয়োজন! এটা নয়, ওটা করা দরকার। এভাবে নয়, ওভাবে করা দরকার। তাদের কথা-বার্তা বা অন্যকোন কারনেই হোক আমারও ঘাড় মটকে গেল, কোথাও কোথাও আমিও কমেন্ট করলাম, "আপনার আত্মীয়ের / পাড়া-প্রতিবেশিদের হক আগে।"
২. কিছুদিন আগে সিঙ্গার পড়শী তার কিছু ছবি ফেবুতে আপলোড দিয়েছিল। সে কিছু শিশুদের (সম্ভবত) নিজ বাড়িতে ডেকে এনে জামা কাপড় দিয়েছে। বাচ্চাগুলোর সাথে ছবি তুলেছে। ছবিতে কোন বাচ্চাকেই আনহ্যাপি মনে হয় নি। তো, ভূতেরা তো ঘাপটি মেরেই ছিল। ছবিগুলোতে উপদ্রব শুরু করে দিল। কেউ বলল, লোক দেখানোর জন্য করা হচ্ছে, সস্তা জনপ্রিয়তা পাবার জন্য করা হচ্ছে, হারাম পয়সা দিয়ে কেনা জামা দান করে লাভ নেই, কেউ কেউ বাচ্চাদের কাপড় না দিয়ে পড়শীকে নিজের বুকের খাঁজ ঢাকার মত মূল্যবান পড়ামর্শও দিয়েছে।
ক. পড়শী কি বলেছে যে, সে গান গাওয়ার টাকা দিয়ে জামা কিনেছে? অন্যটাকাও তো হতে পারে।
খ. তার অন্তরের নিয়ততো কারো জানার কথা না যে, সে কি জনপ্রিয়তা পাবার জন্য করেছে? নাকি নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই করেছে?
মিথ্যেবাদী হবার জন্য এতটুকুই যথেষ্ঠ যে, কেউ কোন খবর শুনল, অতঃপর যাচাই না করেই অপরকে পৌছে দিল। আর উপরোক্ত কথা সমূহতো নির্ঘাত অপবাদ ছাড়া কিছু না।
নবী (সাঃ) যখন তায়েফবাসীর আচরণে বিপর্যস্ত ছিলেন তখন জীবরাঈল (আঃ) তার কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন যে, তায়েফবাসীকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেবেন কিনা। দয়ার নবী (সাঃ) তা না করে, তায়েফবাসীর জন্য দোয়া করেছিলেন যে, বর্তমান তায়েফবাসীরা না হোক হয়ত ভবিষ্যতে তায়েফের মানুষজন দ্বীন কবুল করবে। আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করেছেন।
পড়শীর জন্য কি আমরা দোয়া করতে পারি না যে, এই দানের উসিলায় সে যেন সঠিক পথে ফিরে আসে? দ্বীনের হুকুম আহকাম মানে? সে না হোক, তার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন দ্বীনের জন্য কুরবানী করতে পারে? কার অন্তর কখন ঘুরে যায় কে বলতে পারে? এককালের জনপ্রিয় নায়িকা শাবানা নাকি অনুরোধ করেছেন তার অভিনিত ছবিসমূহ যেন টিভিতে প্রচার করা না হয়। (রেফারেন্স দিতে পারব না) আমরা কেন এত কৃপন? কেন ভূত হওয়াকেই নিজের জীবনের লক্ষ্য বানাই?
৩. নতুন ভূতের আনাগোনা শুরু হয়েছে ‪#‎SaveGaza‬ , ‪#‎SupportGaza‬ নিয়ে। SaveGaza লিখে কতজন ফিলিস্তিনীর প্রাণ রক্ষা পেয়েছে, কতজন ইসরায়েলী ধ্বংস হয়েছে-এইসব কথাবার্তা! একই যুক্তি দিয়ে তাকে পালটা প্রশ্ন করা যায় যে, ভূতেরা যে SaveGaza লিখে স্ট্যাটাস দেননি বা এখন ভূতের মত কথা বলছেন তাতে কতজন ফিলিস্তিনী প্রাণে বেচেছে? কতগুলো ইসরায়েলী ট্যাংক -কামান ধ্বংস হয়েছে?
ঈমানের সর্বোচ্চ স্তর হল, অন্যায় হতে দেখলে হাত দিয়ে প্রতিরোধ করা। তা না পারলে মুখ দিয়ে প্রতিরোধ করা। সেটাও সম্ভব না হলে, অন্তত অন্তর থেকে ঘৃণা করা / রূহানী তাওয়াজ্জু প্রয়োগ করা।
কেউ যদি হাত দিয়ে/ মুখ দিয়ে প্রতিরোধ করতে পারে তবে তাকে শ্রদ্ধা না করে উপায় নেই। আমার ঈমান এত উপরের লেভেলের নয় যে আমি ফিলিস্তিন গিয়ে যুদ্ধ করব বা বাংলাদেশেই একটা সংবাদ সম্মেলন করতে পারব। তাই বলে কি আমার ঘৃণাটুকুও প্রকাশ করতে পারব না। সেটাও দোষের হয়ে যাবে?
হাজার হাজার ফিলিস্তিনীদের মুখে হাসি না হয় আমরা ফোটাতে পারব না তবে এতটুকু অন্তত দেখাতে পারব যে, লক্ষ লক্ষ লোকের ঘৃনা আছে ইসরায়েলীদের বিপক্ষে ,দোয়া আচ্ছে ফিলিস্তিনীদের পক্ষে।
তাই এইসব কথাবার্তা যাদের বলতে দেখবেন, বুঝে যাবেন একটা ভূত দেখছেন। নির্দ্বিধায় সেখানে বলে দেবেন, "তুই একটা ভূত!"

No comments: