আমার এক বড় ভাইয়ের কথা বলি। গল্পের স্বার্থে ধরে নিলাম উনার নাম শাহীন। আমি যখন কলেজে পড়ি তখন তিনি এক মেয়ের সাথে প্রেম করেন। মেয়েটা আমার জুনিয়র। যদিও আমি চিনি না। উনি মেয়েটাকে কঠিন ভাবে ভালবাসতেন। কিন্তু উনার বাসায় হয়ত ততটা গুরুত্ব দিত না।
বড় ভাই লেখাপড়ায় লবডংকা ছিলেন। এস এস সিও বোধহয় পাস করেন নাই। সকাল বিকাল নানা বাহানায় মেয়ে যে বাসায় থাকত তার আশেপাশে ঘোড়াঘুড়ি করতেন। মেয়েটাও তার সাথে আলাপ-সালাপ করত।
সমস্যা বাদে মেয়ে এইচ এস সি পাশ করার পর। এইচ এস সি পাশ একটা মেয়ে আন্ডার মেট্রিক একটা ছেলের সাথে রিলেশন করবে? এতো অসম্ভব!
বড় ভাই মনে খুব কষ্ট পেলেন। সারাদিন কান্নাকাটি করেন। খাওয়া-দাওয়া করেন না। বাসার সবাই তাকে বোঝায়, অন্য বড় ভাইরা তাকে বোঝায়। কাজ হয় না। বড়ভাই তীব্র অনশন শুরু করলেন। দু'দিনেই শয্যাশায়ী। অবস্থা বেগতিক দেখে ছেলের বাসা থেকে লোকজন মেয়ের বাসায় পর্যন্ত গেল। কিন্তু মেয়ে কিছুতেই রাজি না। মেয়ের ফ্যামিলিও রাজি না। তিনদিনের দিন বড়ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা লাগল।
বড়ভাই এখন ভাল আছে।
আরেকটা ঘটনা বলি। এটা শুনেছি বুয়েট থেকে পাশ করা এক বন্ধুর কাছে। তার হলে সাফাত ভাই নামে এক বড় ভাই ছিল। সাফাত ভাইও এক মেয়েকে ভালবাসতেন। কঠিন ভাবেই ভালবাসতেন। মেয়ে যখন মেয়ের ফ্যামিলিকে এই রিলেশনের কথা জানায় তখন ফ্যামিলি থেকে বলা হয় ডাঃ পাত্র ছাড়া বিয়ে দেবে না। ফ্যামিলির কথা শুনে মেয়ে পিছিয়ে যায়। সে ফ্যামিলির কথার বাইরে যাবে না।
সাফাত ভাই খুবই কষ্ট পান। এতদিনের রিলেশন টেকাতে উনি খুব চেষ্টা চালান। মেয়েকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন। মেয়ের এক কথা ফ্যামিলির মতের বাইরে তার পক্ষে কোন কিছু করা সম্ভব না। মনের দুঃখ সাফাত ভাই আমার বন্ধুকে একদিন বলেন,
"জীবনে কি আছে জানি না। তবে ওর স্থান আর কাউকে দেয়া সম্ভব না। নিজের পাশে আর কাউকে আনাও সম্ভব না।"
সাফাত ভাই এখন কেমন আছেন কে জানে?
এমন ঘটনা/এর বিপরীত ঘটনা, মেয়েদের পক্ষ থেকে ঘটনা বহু আছে।
এই প্রসঙ্গের অবতারনা করার কারন একটাই, মানুষ যখন কাউকে ভালবাসে তখন সে তার ভালবাসার মানুষটাকে দেখাতে চায়, বোঝাতে চায় সে তাকে কতটা ভালবাসে। এই কারনেই কলেজ, ভার্সিটির রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে; টিফিনের খরচ, বাস ভাড়া বাচিয়ে তাকে গিফট কিনে দেয়; সারাদিন একসাথে থাকলেও যখন একটু বাইরে যায় তখন ফোন করে তার গলাটা শুনে নেয়। একটু কিছু হলে অভিমান, কান্নাকাটিতো আছেই।
তেমনি ভালবাসার মানুষটাকে হারানোর আশংকা হয় তখন মানুষ বলে "তোমাকে ছাড়া আমি বাচব না।" সবাই যে বেচে থাকে এমনও না। অনেকে বোকার মত সুইসাইডও করে। তাই এটা শুধু কথার কথা না।
অনেকসময় দেহ বেচে থাকলেও মন মরে যায়। তখন মানুষ আর রোবটের মধ্যে কোন তফাৎ থাকে না। হাসে, খেলে, খায়, দায়; কিন্তু কোনকিছুতেই "প্রান" থাকে না।
মৃত্যুর চেয়ে প্রানহীন দেহ টানার কষ্ট অনেক বেশি। কাপুরুষেরা মৃত্যুকে বেছে নেয় আর সাহসীরা বেছে নেয় বেঁচে থাকাকে। এটাই পার্থক্য!!
No comments:
Post a Comment