Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Monday, October 13, 2014

বড়লোক ট্রাজেডী

আমি বড়লোক নই। যাদের গাড়ী, বাড়ী আছে প্রচলিত অর্থে তাদেরকেই বড়লোক বলে। আমার গাড়ী, বাড়ী কোনটাই নেই। অদূর ভবিষ্যতে হবে এমন কোন সম্ভবনাও দেখি না। কিন্তু প্রচুর টাকা হাতিয়েছি। সেই টাকা হাতানোড় যেসব তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে সেখানে থেকেই কিছু তুলে ধরলাম।
প্রায়ই গল্প-সিনেমায়, নাটকে, পত্রিকায় আমরা বিভিন্ন কাহিনী দেখি, পড়ি। সেখানে বড় বড় বাড়ির মালিকেরা, তাদের গৃহিণীরা, বাড়ির কাজের লোক, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করে সেটা দেখতে পাই। মনে মনে তাদের প্রতি একধরনের ঘৃণা তৈরি হয় যে, মানুষ এমন করতে পারে? মানুষ এত খারাপ হতে পারে?
আসলে কারো ভাল হওয়া বা খারাপ হওয়া বিষয়টা আপেক্ষিক। কারো দ্বারা যদি আমার স্বার্থ উদ্ধার হয় তবে সে আমার চোখে ভাল। আর যদি উদ্ধার না হয় তবে সে আমার কাছে খারাপ। আমি যদি কোন বদমাইশি করতে চাই আর কারো কাছে চেয়ে হেল্প না পাই তবে আমার চোখে সে খারাপ হয়ে যাবে।
এইসব নাটক, গল্পের দৃষ্টিভঙ্গি হয় সাধারনত একচোখা। গরীবের চোখ দিয়ে দেখিয়ে মানুষের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা। কাহিনী মানুষকে গেলাতে হবে না? কিছুদিন আগে আমার মাথায় ঢুকল যে, টাকাপয়সা হলে মানুষ এমন করে কেন? টাকাপয়সা কি মানুষকে বদলে দেয়? দিলে কেন দেয়? কিভাবে দেয়? এখন যার হাতে টাকা এসেছে সেও তো একসময় দরিদ্র ছিল। তাহলে সে কেন দরিদ্রদের সহ্য করতে পারে না? তাদেরকে কেন সহানুভূতির চোখে দেখে না?
কারন একটাই সহানুভূতি দেখানোর জায়গা থাকে না।
কেস স্টাডি-১ (বন্ধু)
"দোস্ত, হাজার তিনেক টাকা দিতে পারবি? সামনের মাসে পাবি।"
"আচ্ছা নিছ..." 
সামনের মাসে পেয়ে গেলাম।
>>তারপর আরেক দিন, আরেকজন (ধরি, মফিজ)
"দোস্ত দু'লাখ টাকা দে। জমি কেনার বায়না করছি। দু'মাস পরেই পেয়ে যাবি।"
"টাকা দিতারমু না। আমার লাগব।"
"আরে দে..."
"জমি জমার লাইগা টেকা দেওয়াতো নিষেধ।"
"তর টেকাতো পইড়াই রইছে। দে...দিয়া লামুতো..."
"আচ্ছা...নিছ..."
দু'মাস পরে। 
"তোর ১ লাখ টাকা ম্যানেজ হয়েছে। এখন কি ১ লাখ নিবি নাকি পরে একসাথে ২ লাখ নিবি।"
"আইচ্ছা ১ লাখই দে। টাকারতো দরকার।"
আরজু আমাকে,
"ভাই, লাখখানেক টাকা দেনতো। বন্ধু একটা বিদেশ যাচ্ছে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে। ওর একাউন্টে টাকা দেখাতে হবে। কাগজ বেড়িয়ে গেলেই আপনার টাকা পেয়ে যাবে।"
"ঠিক আছে। মফিজতো বলছে টাকা দেবে। এককাজ করি তোমাকে চেকটা দিয়ে দেই। তুমি ব্যাংক থেকে তুলে নিও।"
"আচ্ছা ঠিক আছে। দেন।"
বিকেলে ফোনে ১৬ মিসড কল। ফোন ব্যাক করলাম। তখন বিকেল ৪ টা।
"ভাই আপনে কই। এতবার ফোন দিলাম। ফোন ধরেন না কেন?"
"আমিতো ঘুমাচ্ছিলাম। কি হইছে?"
"আরে ভাই, বড় অংকের চেক। এখন ব্যাংক থেকেতো কনফার্ম হতে চায়। হের ফোন বন্ধ। আপনেও ধরেন না। ব্যাংক থেকে হের যে নাম্বার দিছে সে নাম্বারে ফোন ঢুকে না। ব্যাংকের ম্যানেজার চেক দিছে আটকিয়ে। আমারেও আটকাইয়া রাখছে।"
"কও কি?"
"হ...ম্যানেজার আমাকে বলে আমি নাকি জেনে শুনেই আসছি। হেগো কথাবার্তার ভাব শুনে মনে হচ্ছে আমি চুরি করতে আসছি ব্যাংকে। ব্যাংকের সবাই আমার দিকে তাকাইয়া রইছে।"
"আইচ্ছা আমি দেখতাছি।"
একটেলে ফোন দেই। দিতেই থাকি। ধরে না। গ্রামীণে ফোন দেই। ঢুকে না। একবার ঢুকল, রিসিভও হল। কেউ কথা বলে না। বিকেল সাড়ে চারটা।
"শোনো, তুমি দেখ কোনভাবে ম্যানেজ করে আসতে পারো কিনা। হেতো ফোন ধরে না। সে শহরেই আছে। কোথায় আছে কে জানে।"
"ভাই এইডা কোন কথা হইল!!! আইচ্ছা আমি দেখতেছি।"

রাত সাড়ে নয়টা।
"এই নে তর চেক। তুই টাকা তুলে আমারে ফেরত দিছ।"
"কেন কি হইছে। সমস্যা কি?"
"কি হইছে না হইছে পরে শুনিস। এখন মাথা গরম আছে। অফিসে যাইতাছি। কথা পরে কমুনে।"
"চেকে কি হইছে কবি তো?"
"চেকে কিছু হয় নাই। তুই তর চেক ভাইঙ্গা টেকা ফেরত দিস। তাইলেই হইব।"
"কেন সমস্যা কি?"
"বালের সমস্যা হইছে!! তর মোবাইল কই থাকে??? সারাদিন ধইরা তরে ফোন দিতাছি। ধরছ না কেন? তুই জানস না তর ব্যাংকে বড় ট্রানজেকশন হইলে মোবাইলে কনফার্ম করতে হয়? মোবাইল কই রাখস? তুই জানস তর লাইগ্যা আরেকটা পোলারে ব্যাংক আটকাইয়া রাখছিলো?"
"একটেলটাতো রুমে রাইখ্যা গেছি। গ্রামীণে ফোন করলেইতো হত।"
"তুই ব্যাংকে যেইটা দিছস ঐটা থুইয়া যাস করে। অফিসিয়াল নাম্বার থুইয়া অন্যডা লইয়া যাস। ফাইজলামি করস। তর আস্টডা নাম্বার!! একটা সবসময়ের লাইগা রাখতারস না?"
"ব্যাংকে গ্রামীনটাও ছিল......"
"তর গ্রামীণে আমিতো ফোন দিলাম। ধইরা কথা কস না... কি পাইছস? তরে আগেইতো মানা করছিলাম টাকা দিতারমু না। তুই জোর কইরা নিলি। তর লগে গরম গরম কথা বলারতো আমার দরকার নাই। টাকাপয়সার লেনদেন নিয়া শুনছি অনেক সম্পর্ক নষ্ট হয়। এখন বুঝতাছি কেরে হয়...... তুই তর চেক লইয়া যায়। টেকা দিয়া যাইস। আর বাকি টাকাও দিয়া লাইছ। এখন যা। তর লগে পের পের করতে ইচ্ছা করতাছে না।"
[সম্পর্ক নষ্ট। বহুদিন সে আমার সাথে কোন কথা বলে নাই আগ বাড়িয়ে। আমিও বেশি ট্রাই করি না। এখনো জিনিসটা আমার লাইফের একটা পেইন।]

>>তিনমাস পরে পেলাম। অন্যকেউ (কেরামত) মফিজকে
"কিছু টাকা দেস না দোস্ত। বাপে টেকা পাঠায় নাই। পাঠালেই ফেরত পাবি।"
"কত লাগব?"
"এই হাজার চল্লিশেক দিলেই চলব।"
"এত টাকাতো আমার কাছে নাই। হের কাছে চা। হের কাছে টেকা থাকে।"
"আইচ্ছা, হেরে ফোন দিতাছি।"

>>কেরামত আমাকে.....
"দোস্ত, তর কাছে কিছু টাকা হইব?"
"কত লাগব?"
"চল্লিশ হাজার। আব্বা এইমাসে টাকা পাঠায় নাই। সামনের মাসে পাঠালেই দিয়া দিমু।"
"আচ্ছা নিস।"
[টাকা একমাসের জায়গায় দুইমাস পরে পাইলাম।]

>>আবুল আমাকে... 
"দোস্ত, আমিতো আই ই এল টি এস করতাছি।"
"ভাল কথা কর।"
"এখনতো ফি জমা দেয়া লাগব। আমি বাসা থেকে টাকাটা নিতে চাচ্ছি না। তুই আপাতত আমারে ১২ হাজার টাকা দে। আমি তরে দিয়া দিমুনে।"
"আচ্ছা নিস..."
>>মকবুল আমাকে
"দোস্ত কি খবর?"
"আছি ভাল, আলহামদুলিল্লাহ। তর কি খবর?"
"তরে তো একটা কথা কমু। ক্যামনে কই বুছতাছিনা।"
"আরে ক...সমস্যা নাই।"
"দোস্তের বাড়ীর ছাদের ঢালাইটা আটকে আছে। এদিকে আব্বার পেনশনের বিলটা আটকে আছে। তুই যদি আমারে ১ লাখ টাকা দেস তবে আব্বার বিলটা হইলেই পাইয়া যাবি।"
"আচ্ছা নিস... তয় দেরি করিছ না। দিয়া দিছ।" 
[তিনমাস পরে দেবার কথা ছিল। মনে হয় চারমাস পরে পাইছি।]

>>লুলু আমাকে 
"দোস্ত তর কম্পিউটারেতো সুন্দর সুন্দর মুভি আছে। আমারে দে কয়টা।"
"দে তর পেনড্রাইভ দে..."
"আমরটাতো আনি নাই। তরটা দিয়া দে। শহরে গেলে আমার সাথে যোগাযোগ করিস দিয়া দিমুনে।"
"আইচ্ছা ল..."
[আমার ১২০০ টাকার ২জিবি ফেন্সি পেনড্রাইভটা নির্দ্বিধায় মেরে দিল। সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেল।]

এমন কাহিনী বহু লেখা যাবে। অবস্থা এখন এমন দাড়াইছে যার যা লাগে আমার কাছে ফোন। আমি মানা করি এখন। এই কারনে আমার এখন আগের ইমেজ নাই। আপনে দশদিন কোল বসাইয়া চুমা দেন, মনে রাখবে না। একদিন চোখ গরম করে একটু তাকাবেন, সারাজীবন মনে রাখবে।
কেসস্টাডি-২ (আত্মীয়)
"আমার বাড়িটা করতেছি। কিছু টাকা শর্ট পড়ছে। একটা জমির বিল পাবো। বিলটা পেলেই টাকা হাতে চলে আসবে। এখন ৩-৪ লাখ টাকা দাও। বিলটা হয়ত একমাস লাগবে। হলেই টাকা দিয়ে দেব তোমাকে।"
"এত টাকাতো আমার কাছে নাই এখন। ২লাখের মত আছে।"
"আচ্ছা ২ লাখই দাও।"
[একবছর পর সে টাকা ফেরত পাইছি।]

>>"একটা ইমার্জেন্সী কাজের জন্য ১ লাখ টাকা দরকার। একসপ্তাহের মধ্যে পেয়ে যাইবা।"
"আচ্ছা নিয়েন..."
.......... [ছয় মাস পর] 
"আমারতো টাকাটা লাগব।"
"সামনের শুক্রবারে নিও।"
সামনের শুক্রবারে।
"কই টাকাতো দিলেন না।"
"একজনে পাঠানোর কথা ছিল। রবিবারে পাঠাইব। রবিবারে ব্যাংক খুললে টাকা তুইলা তোমার মার কাছে দিয়া আসুম।" 
রবিবারে...
"আম্মা টাকা দিয়া গেছে?"
"না, দেয় নাই।"
[এখনো ঘুরাচ্ছে।১-১.৫ বছর হইছে বোধহয়।] 
কেস স্টাডি-৩ (কলিগ)

>> "কিছু টাকা দাওতো।"
"কি জন্য?"
"একটা জরুরী কাজে লাগবে। চিন্তার কিছু নাই। এমাসের বেতন পেলেই দিয়ে দেব।"
"কত?"
"পঞ্চাশ হাজার দিলেই হবে।"
"আচ্ছা নিয়েন..."
[প্রায় বছর খানেক ঘুরিয়ে আমাকে টাকা ফেরত দিয়েছে।]

>>"ভাই, কিছু টাকা দেনতো। আপনার ভাবির অসুখ। ভাল ডাক্তার দেখানো দরকার।"
"কবে দিবেন।"
"এইতো মাসের বেতন দিলেই দিয়ে দেব। চিন্তা কইরেন না। পেয়ে যাবেন।"
"কত নিবেন?"
"৫০ হাজার দিলেই চলবে।"
"আচ্ছা নিয়েন।"
[প্রায় ১০ মাস পরে টাকা ফেরত দিছে।]

>> "ভাই, কিছু টাকা দেন। বোনের বিয়ে। চিটাগাঙ্গের বিয়ের ব্যাপারতো বোঝেনই। বিরাট খরচের ব্যাপার!"
"আমার কাছে টাকা নেই।" [ডাহা মিথ্যে কথা।]
"ভাই, দেন না। বিপদে পড়ছি। বোনের বিয়েতো দিতে হবে। এক কাজ করি। আপনাকে চেক লিখে দেই। বেতন হলেই আপনি ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েন।" কেঁদে ফেলার অবস্থা। [মিথ্যে কথা। সে চেক লিখে দিবে না সেটা আমি ভাল করেই জানি।]

"আচ্ছা, আচ্ছা। কত লাগবে?"
"আপনি ৫০ হাজার দিলেই হবে।"
[৮-৯ মাস হয়ে গেছে। কোন খবর নাই]

>>ডিসেম্বর-২০১৪
"শোনেন...!"
"কি?"
"আপানার সাথে একটা জরুরী কথা আছে।"
"কি কথা?" 
"আমাদের একটা প্লট আছে **শহরে। সেই প্লটে এখন বাড়ি করতেছে আমাদের সমিতি। সমিতির এই কিস্তির চাঁদা আমার বাকি আছে। হাতে টাকা নাই। আপনার কাছে কি কিছু টাকা হবে? ফেব্রুয়ারীতে পেয়ে যাবেন। ফেব্রুয়ারীর ফার্স্ট উইকেই মনে হয় পেয়ে যাবেন।" 
"কত লাগবে?"
"এই দেড়-দু'লাখ!!"
"আচ্ছা দেখি।"
[কিছুদিন পরে ১,৪০,০০০ টাকা তার একাউন্টে চলে গেল। ফেব্রুয়ারী গিয়ে মে চলছে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে পাব বলে আশ্বস্ত করেছে।]

এইসব কারনে কাউকে হেল্প করার ইচ্ছে এখন মরে গেছে। মরুক গা! সবাই আমার টাকা কাজে লাগিয়ে জমি, গাড়ি, বাড়ি, নারী পেয়ে গেল। আর আমি *** খেয়ে খাল হয়ে গেলাম!
আর যারা বড়লোক তাদের কথা কিভাবে বলব? বড় বড় শহরে যারা গাড়ী, বাড়ী নিয়ে বসবাস করে তাদের অবস্থা যে এমন নয় কিভাবে বলব। সবাই ঘটনার কথা জানে। ঘটনার পিছনের কথা জানে না। একটা কাজের লোক নিয়ে এল গ্রাম থেকে সে চুরি করে পালিয়ে গেল। আরেকজনকে আনা হল সে-ও একই কাজ করল নাহয় শুধু শুধুই ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট করতে লাগল। হিংসুকেরতো অভাব নেই সমাজে। হিংসায় মানুষ কত কিছুই করে। পরিশেষে বাধ্য হয়ে তাকে আটকে রাখতে হয়। ছোট বাচ্চা আনতে হয়। চোখে চোখে রাখতে হয়। মার দিতে হয়। বাড়ির গেটে ঝুলিয়ে দিতে হয় "কুকুর হতে সাবধান!" আর ডাকাত মার্কা দাড়োয়ান রাখতে হয় যেন কেউ ঢুকতে না পারে।
[শেষ প্যারাটার সাথে বাস্তবের মিল থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। পুরোপুরি কল্পনা থেকে লেখা হয়েছে।]

No comments: