কিছুদিন আগে আমার কয়েকজন বাল্যকালের ফ্রেন্ড এসেছিল। তাদের সাথেই আমি স্কুল-কলেজে পড়েছি। ওরা এখানে আসবে আগে বলে নি। হুট করে চিটাগাং এসে আমাকে ফোন করে। ওরা ফোন করার পরপরই আমি একটা অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজ বাতিল করে দেই এবং যে কয়েকদিন ওরা থাকে সে ক'দিন কিভাবে ফ্রী থাকা যায় সে চিন্তাও করি। প্রয়োজনে একদিন অফিস থেকে ছুটি নিব এ কথাও ভেবে রাখি।
ওরা আসার পর জানতে পারলাম ওরা কোন কাজে আসেনি, এমনি-ঘুরতে এসেছে। বেশ ভাল কথা, অনেকদিন থেকে কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে পারব ভেবে খুবই আনন্দিত ছিলাম।
প্রথমদিন আমরা পার্কিতে গেলাম। হাসি-ঠাট্টা, ছবিতোলা, হালকা দুষ্টুমি সবই করা হয়েছিল। এরমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে এলে কিছু সময়ের জন্য আমি পৃথক হয়ে যাই। বীচেই বিরাট বিরাট ঝাঊ গাছের নিচে চেয়ার টেবিল পেতে বসার ব্যবস্থা আছে। ফিরে এসে ওদেরকে আমি সেখানেই বসে থাকতে দেখি। কিন্তু একটা ব্যাপার খেয়াল করার পর আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়, মনের ভিতর ক্ষোভ জমে উঠে। যাইহোক, ক্ষোভ চাপা দিয়ে আপাতত ওখান থেকে চলে আসি।
তারপর দিন ওরা পতেঙ্গা যাবে। আমার অফিস থাকাতে আমি যেতে পারিনি। আমাদের প্ল্যান ছিল সারাদিন ঘুরে টুরে রাতে আমরা নিজেরাই বিরিয়ানি পাকিয়ে খাব। অফিসে যাবার আগে বাজার সদাই করার জন্য কিছু টাকাও দিয়ে যাই। রাতে অফিস থেকে ফিরে ওদের সাথে খাওয়া দাওয়া করলাম। আমার তেমন কিছু করতে হয় নি, ওরাই রান্না করেছিল। খাবার কেমন ছিল সেটা মূখ্য ছিল না। এতদিন পর একসাথে আমরা খাচ্ছি এটাই ছিল আনন্দের। খাওয়া-দাওয়ার পর একটা ব্যাপার ঘটল। এরপর আমার মন খারাপ হয়ে যায়, রেগে উঠতে থাকি। আমি উঠে পড়লাম বেরিয়ে আসব বলে। চলে আসলাম।
তারপরদিন ওরা আমার রুমে এল। আমরা বিভিন্ন কথাবার্তা বলতে লাগলাম।
-তুই ঢাকা আইওস না কেরে?
> যাইত ঢাকা মাঝে মধ্যে।
- কই ফোন-টোনতো দেছ না...
> প্রয়োজন মনে করি না।
- এইডা তুই কি কইলি? প্রয়োজন মনে করছ না। তাইলে আমরা তর এন আইসা তরে ফোন দিলাম কিরলাইগা?
> দেখ, আমি ঢাকা যাই ছোট ছোট কিছু কাজ নিয়া। তগরে ডাকলে আমার কাজের দেরি হইব। আর তরাও হয়ত থাকতে পারলি না। তগরওতো কাজ থাকতারে। আর ক্যামনে ক্যামনে কই যাইতে হয় এইগুলাতো তগরে জিগাইয়াই জাইন্যা লই। আর ঢাকা যাইতেও আমার ভাল্লাগে না। এই কারনে ঢাকা গেলেই মনয় কখন ফিরমু। এর লাইগাই কাউরে কিছু কই না। নিজের মত যাই, আবার আইয়া পড়ি।
-তারপরও তুই একটা ফোনতো দিবি...
> আইচ্ছা যা, দিমুনে...
এরপর আরো কথা বার্তা চলতে থাকে। একপর্যায়ে কোন এক কথা প্রসঙ্গে আমি বলি,
"আমি যদি জানতাম পার্কি গিয়া তরা এই কাম করবি তাইলে তগো লগে যাইতামই না। যদি জানতাম বিরিয়ানি খাওনের পরে তগো এই প্ল্যান আছিল তাইলে তগো লগে খাইতামও না।"
ওরা চুপ করে আমার কথাগুলো শুনল। কিছু বলল না।
এটা বলার মত কোন ঘটনা না। বললাম এই কারনে যে, আমি এ ভাবেই কথা বলি। যাদের পছন্দ করি, যাদের যত ভাল চাই, যাদের উপর রাগ করতে চাই না, রাগ করার কোন কারন তৈরি হবার কোন সুযোগ থাকুক চাই না-তাদের সাথে এভাবেই কথা বলি। স্ট্রেট এন্ড বোল্ড।
আর যাদের পছন্দ করি না বা কোন কারনে একবার রেগে যাই এবং সেই রাগ পুষতে চাই তাদের সাথে আগবাড়িয়ে কথাতো বলি-ই না, তারা কথা বলতে চাইলেও হু-হা করে চালিয়ে দেই। তাদের সামনে যেন পড়তে না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখি।
যারা আমাকে চেনে তারা আমার এই ব্যাপারগুলো জানে, তারা অভ্যস্ত। কাজেই আমি তাদের সাথে থাকলে তারা ঐভাবেই চলে। আসলে যারা ঐভাবে চলতে পারবে বলে বিশ্বাস আছে তাদের সাথেই আমি চলি।
ফেসবুকে এইসব বকবকানির কারন হল আমি চাইনা কারো সাথে আমার মনকষাকষি তৈরি হোক। সবসময় সমঝে চলার চেষ্টা করি। তবে মাঝে মাঝেই পিছলে যাই। তাই পিছলে গেলেও যাতে দাড়াবার সুযোগ থাকে সে কারনেই এই স্ট্যাটাস আপডেট।
ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment