Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Monday, October 13, 2014

আমল না করা পর্যন্ত আমলের উপদেশ দেয়া যাবে কি?

খুবই কমন একটা প্রশ্ন। অনেকে প্রায়ই বলে থাকেন কথাটা যে, যতক্ষন আমি মানতে পারব না বা আমল করতে পারব না সেই আমলের কথা অন্যকেও বলব না।
এর পক্ষে অনেকে কুরয়ানের এই আয়াতের উদ্ধৃতি দেন যে, "তোমরা অন্যকে সৎকাজের নির্দেশ দাও অথচ নিজেদেরকে ভুলে বস" [সূরা আল বাকারা, আয়াত-৪৪]
এ আয়াতে ইহুদি আলেমদের সম্বোধন করা হয়েছে। এতে তাদেরকে ভৎসর্না করা হচ্ছে যে, তারা তো নিজেদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্নীয়-স্বজনকে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অনুসরণ করতে এবং ইসলামের উপর স্থির থাকতে নির্দেশ দেয়। ( এ থেকে বোঝা যায় ইহুদী আলেমগন দীন ইসলামকে নিশ্চিতভাবে সত্য বলে মনে করত)। নিজেরা প্রবৃত্তির কামনার দ্বারা এমনভাবে প্রভাবিত ছিল যে, ইসলাম গ্রহন করতে কখনো প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু যারাই অপরকে পুণ্য ও মঙ্গলের প্রেরণা দেয়, অথচ নিজের ক্ষেত্রে তা কার্যে পরিণত করে না, প্রকৃত প্রস্তাবে তারা সবাই ভৎসর্না ও নিন্দাবাদের অন্তর্ভূক্ত। এ শ্রেনীর লোকদের সম্পর্কে হাদীসে করুণ পরিনতি ও ভয়ংকর শাস্তির প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
হযরত আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, হুযূর (সাঃ) এরশাদ করেন, মি'রাজের রাতে আমি এমন কিছু সংখ্যক লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম যাদের জিহ্‌বা ও ঠোঁট আগুনের কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছিল। আমি জিবরাঈল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম-এরা কারা? জিবরাঈল (আঃ) বললেন-এরা আপনার উম্মতের পার্থিব স্বার্থপূজারী উপদেশদানকারী, যারা অপরকে তো সৎকাজের নির্দেশ দিত, কিন্তু নিজের খবর রাখতো না। (কুরতুবী)
নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, কতিপয় জান্নাতবাসী কতক নরকবাসীকে অগ্নিদগ্ধ হতে দখে জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমরা কিভাবে দোযখে প্রবেশ করলে অথচ আল্লাহ্‌র কসম, আমরা তো সেসব সৎকাজের দৌলতেই জান্নাত লাভ করেছি, যা তোমাদের কাছে শিখেছিলাম? দোযখবাসীরা বলবে, আমরা মুখে অবশ্য বলতাম কিন্তু নিজে তা কাজে পরিণত করতাম না।
উল্লেখিত বর্ণনা থেকে একথা যেন বোঝা না হয় যে, কোন আমলহীন বিরুদ্ধাচারীর পক্ষে অপরকে উপদেশ দান করা জায়েজ নয় এবং কোন ব্যাক্তি যদি কোন পাপে লিপ্ত থাকে, তবে সে অপরকে উক্ত পাপ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিতে পারে না। কারণ, সৎকাজের জন্য ভিন্ন নেকী ও সৎকাজের প্রচার-প্রসারের জন্য ভিন্ন ও স্বতন্ত্র নেকী। আর এটা সুস্পষ্ট যে, এক নেকী পরিহার করলে অপর নেকীও পরিহার করতে হবে এমন কোন কথা নেই, যেমন, কোন ব্যক্তি নামায না পড়লে অপরেকও নামায পড়তে বলতে পারবে না, এমন কোন কথা নেই। তেমনিভাবে কোন অবৈধ কাজে লিপ্ত হওয়া ভিন্ন পাপ এবং নিজের অধীনস্থ লোকদেরকে ঐ অবৈধ কাজ থেকে বারণ না করা পৃথক পাপ। একটি পাপ করেছে বলে অপর পাপও করতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
যদি প্রত্যেক মানুষ নিজে পাপী বলে সৎকাজের নির্দেশ দান ও অসৎ কাজ থেকে বাধাদান করা ছেড়ে দেয় এবং বলে যে, যখন নিষ্পাপ হতে পারবে, তখনই অপরকে উপদেশ দেবে, তাহলে ফল দাঁড়াবে এই যে, কোন তাবলীগকারীই অবশিষ্ট থাকবে না। কেননা, এমন কে আছে, যে পরিপূর্ণ নিষ্পাপ? হযরত হাসান (রাঃ) এরশাদ করেছেন-শয়তান তো তা-ই চায় যে, মানুষ ভ্রান্ত ধারনার বশবর্তী হয়ে ভাবলীগের দায়িত্ব পালন না করে বসে থাকে।
মূল কথা এই যে, "তোমরা কি অপরকে সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং নিজেদেরকে ভুলে বস?" আয়াতের অর্থ এই যে, উপদেশ দানকারী (ওয়ায়েজকে) আমলহীন থাকা উচিত নয়। এখন প্রশ্ন হতে পারে, ওয়ায়েজ কিংবা ওয়ায়েজ নয়-এমন কারো পক্ষেই যখন আমলহীন থাকা জায়েজ নয়, তাহলে বিশেষভাবে ওয়ায়েজের কথা উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা কি? উত্তর এই যে, বিষয়টি উভয়ের জন্য নাজায়েজ, কিন্তু ওয়ায়েজ বহির্ভূতদের তুলনায় ওয়ায়েজের অপরাধ অধিক মারাত্মক। কেননা, নাজায়েজ অপরাধকে অপরাধ মনে করে জেনে শুনে করছে। তার পক্ষে এ ওযর গ্রহনযোগ্য নয় যে, এটা যে অপরাধ আমার জানা ছিল না। অপরপক্ষে ওয়ায়েজ বহির্ভূত মূর্খদের অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। এছাড়া ওয়ায়েজ ও আলেম যদি কোন অপরাধ করে তবে তা হল ধর্মের সাথে এক প্রকারের পরিহাস। হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, হুযূর (সাঃ) এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ পাক অশিক্ষিত লোকদেরকে যত ক্ষমা করবেন, শিক্ষিতদের তত ক্ষমা করবেন না।
[সূত্রঃ তফসীরে মা'আরেফুল কোরআনঃ প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ২০১,২০২ । প্রকাশনাঃ ইসলামী ফাউন্ডেশন]
আল্লাহ্‌ তায়ালা সবাইকে আমল করার তওফীক দান করুন। আমীণ।

No comments: