১. পাত্রী দেখা মেয়েদের জন্য হয়রানী।
২. কয়লার মত কালো ছেলে ধবধবে ফর্সা পাত্রী খুজে!
৩. পাত্রপক্ষের অভিভাবকগন মেয়েকে অর্থহীন প্রশ্ন করে।
৪. মেয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনা করা হয় না।
ইত্যাদি ইত্যাদি।
খুবই কমন অভিযোগ। বোঝাই যাচ্ছে এই অভিযোগগুলো মেয়েদের তরফ থেকে করা। অভিযোগগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন এমনটা আমি বলব না। আমি বলব অন্যকিছু, একটু অন্যভাবে।
এই অভিযোগগুলো সাধারনত এরেঞ্জড ম্যারেজের ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে। লাভ ম্যারেজের ক্ষেত্রে কিন্তু এগুলো হয় না। ভালবাসার মানুষটি যেমনই হোক তা নিয়ে কারো মাথাব্যাথা নেই। ভালবাসা বলে কথা!
কিন্তু এরেঞ্জড ম্যারেজের কথা ভিন্ন। মেয়েকে ছেলে দেখবে। পারস্পারিক সম্মতি থাকলে কথাবার্তা সামনের দিকে এগোবে। কোন ছেলে যখন মেয়ের বাড়িতে যায়-হতে পারে নিকটে বা বহুদূর, তার কিছু প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। সেদিন প্রখর রোদ, তুমুল বৃষ্টি বা তীব্র শীত যাই থাক ভ্রমণ করার ঝক্কি কিন্তু ছেলেকেই পোহাতে হয়। আমাদের ধর্ম/সমাজব্যবস্থা মেয়েকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছে। অনেকেই অবশ্য রেস্টুরেন্ট বা অন্যকোথাও ফেভার করতে পারেন। তবে যেহেতু অভিভাবকের সম্মতিতেই দেখাসাক্ষাৎ হচ্ছে সেহেতু ঘরে এই অনুষ্ঠান হওয়াই যুক্তিযুক্ত বলে আমি মনে করি। আর আমরা যার কদর করি তার সাথে দেখা করতে যাই, খোজখবর নেই। ছেলেরাই কিন্তু মেয়ে দেখতে যায়। প্রায় সব ছেলেই মেয়ের দেখার পর সম্মানি (মেয়ে যে তাকে সময় দিয়েছে সেজন্য কৃতজ্ঞতাস্বরূপও বলা যেতে পারে) প্রদান করে থাকে। কাজেই "মেয়ে দেখা মানে মেয়েদের হয়রানি করা"-এমনটা ভাবা ঠিক হবে না।
কালোছেলেরা সুন্দরী মেয়ে খুজলে সমস্যা কোথায় তা বোধ্যগম্য নয়। সুন্দরী মেয়ে যদি কালো ছেলের সাথে প্রেম করতে পারে-তবে বারাক ওবামা শ্বেতাঙ্গ মহিলা বিয়ে করতে চাইলে কেন অভিযোগের তীর ছোড়া হবে? কালো কোন ছেলে যদি চায় তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের গায়ের রঙ তার চেয়ে ভাল হোক-এটা সে চাইতেই পারে। ধরি, আমার গায়ের রঙ খুব কালো। আমি ভাল মাইনে পাই বা আমার গ্রীন কার্ড আছে। আমি বিবাহইচ্ছুক এবং ধবধবে মেয়ে খুজছি। এখন পাত্রীর অভিভাবক যদি আমার মাইনে বা গ্রীন কার্ড দেখে মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে বসতে রাজি করায় সেখানে আমার দোষ কোথায়? মেয়ে যদি তার অভিভাবকের মতের বাইরে যেতে না পারে বা বিয়ে ভাঙ্গতে না পারে, তবে সুন্দরী মেয়ে খোজা আমার অপরাধ হয়ে গেল? মেয়েরা কি সুদর্শন পাত্র চায় না? নাকি কালো মেয়েরা সব আফ্রিকান বিয়ে করে?
কেস স্টাডিঃ আমার বোনের বিয়ের ব্যাপারে বলি। আমার এক কাজিন আমার বোনকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। দেখতে সুদর্শন হলেও তেমন লেখাপড়া করে নি। এখন সৌদি থাকে। কাচা পয়সা। বোন রাজি হল না। আমি বললাম, যার বিয়ে সে যদি রাজি না হয় তাহলে কিভাবে বিয়ে হয়? সেই বিয়ে হল না। এরপর এল আমাদের গ্রামের এক ছেলে। তাকে দেখে আমার ছোটভাইয়ের পছন্দ হল না, বোনেরও পছন্দ হল না। আমার মামা, ফুপা পারলে জোড় করেই বিয়ে দিয়ে দেন। আমি পরিস্কার করে বললাম, বোনের যদি মত থাকে তবে আপনারা আগান, না থাকলে দরকার নাই। একথা বলি নাই যে, আপনারা যা ভাল মনে করেন, তাই হবে। আমার দূর সম্পর্কের এক ফুপাকে আমার বোন সব বলল। তার হস্তক্ষেপে বিয়ে বন্ধ হল। ছেলেপক্ষ (ছেলের বড় বোন) আমাদের গালিগালি করতে করতে চলে গেল। কাজেই মেয়ের মত না থাকলে মেয়ের অভিভাবকের দায়িত্ব সেই বিয়ে বন্ধ করার। এতে ছেলেপক্ষের দোষ খুজে লাভ নেই।
এরপর আসে অভিভাবকদের অর্থহীন প্রশ্ন। প্রথমে আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগের কথা একটু আলোচনা করি। তখনকার অভিভাবকগন মেয়েকে শুধু প্রশ্নই করতেন না, মেয়ের চুল দেখতেন, দাঁত দেখতেন, হাটা দেখতেন, পায়ের ছাপ দেখতেন। অনেকেই একে কোরবানির হাটে গরু কেনার সাথে তুলনা করেন। সেইসব হীনমন্যতায় ভোগা সাইকোদের উদ্দেশ্যে নিচে কয়েকটি লাইন লিখছি-
১. উচকপালী, চিড়লদাতী, পিঙ্গল কেশ
ঘুরবে কন্যা নানান দেশ। (খনার বচন)
২. ঘরে আখা বাইরে রাঁধে।
অল্প কেশ ফুলাইয়া বাঁধে
ঘন ঘন চায় উলটি ঘাড়
ডাক বলে এ নারী ঘড় উজার।।
৩. নিয়ড় পোখড়ি দূরে যায়।
পথিক দেখিয়ে আউড়ে চায়।।
পর সম্ভাষে বাটে থিকে
ডাক বলে এ নারী ঘরে না টিকে।।
৪. রাঁধে বাড়ে গায় না লাগে কাতি।
অতিথি দেখিয়া মরে লাগে
তবু তার পূজার সাজে।।
সুশীলা শুদ্ধ বংশে উৎপত্তি।
মিঠা বোল স্বামীতে ভকতি।
রৌদ্রে কাঁটা কুঁটায় রাঁধে।
খড়কাট বর্ষাকে রাঁধে।।
কাখে কলসী পানীকে যায়
হেটমুন্ডে কাকহো না চায়।।
যেন যায় তেন আইসে।
বলে ডাক গৃহিনী সেই সে।।
(২,৩,৪- ডাক বচন)
ডাক ও খনার বচন শুধু কৃষিক্ষেত্রে নয় বরং জীবনের সর্বক্ষেত্রেই কিছু না কিছু দেখা যায়। এসব জীবনার্জিত জ্ঞানকথা আমাদের অজ্ঞাত থাকলেও সেইসব মুরব্বীদের নিশ্চয়ই জানা ছিল। তাই তারা এমন বউ আনতে চাইতেন যে হবে "গৃহিনী", ঘর উজার করে দেবে না।
বর্তমানের অভিভাবকগন জীবনকে আমাদের মত টিনএজারদের চেয়ে বেশি দেখেছেন, তাদের অভিজ্ঞতালদ্ধজ্ঞান আমাদের চেয়ে স্বাভাবিকভাবেই বেশি। কাজেই তাদের জ্ঞানকে আমাদের জ্ঞানদিয়ে মাপলে বিরাট ভুল হবে। যে প্রশ্ন আমার কাছে অর্থহীন, সেই প্রশ্নের কোন নিগূড় তাৎপর্য্য থাকতে পারে।
কেস স্টাডিঃ আমার এক বড় ভাই বিয়ে করবেন। হঠাৎ কোন এক গ্রামে তার এক মেয়েকে খুব পছন্দ হল। ভাল কথা। তিনি তার অভিভাবকদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়ে দেখতে গেলেন। মুরুব্বীরা তাকে ঐ মেয়েকে বিয়ে করতে নিষেধ করলেন। তিনি তাদের নিষেধ অমান্য করে বিয়ে করলেন। বিয়েরপর তিনি বুঝতে পারলেন কি ভুল করেছেন। ঐ মেয়ে দেখতে মেয়ে হলেও তার যৌনাঙ্গ পরিনত ছিল না। বহুবিধ চিকিৎসার পরেও এর কোন সমাধান না হওয়ায়, বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়।
কাজেই "অর্থহীন" সবকিছুই অর্থহীন নয়। হয়ত তারা আপনার সহিষ্ণুতা পরীক্ষা করছেন। আর একটা সংসার টানতে একটা মেয়েকে কতটা সহিষ্ণু হতে হয় তা আমি আমার মাকে দেখলে টের পাই।
কোন শিক্ষিত ছেলে/অভিভাবক মেয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার গুরুত্ব দেবেন না-এটা কল্পনা করাও কষ্ট। প্রথম প্রশ্নই হয় মেয়ের পড়াশুনা কতদূর? আর অশিক্ষিত ছেলে/অভিভাবক মেয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার উপর গুরুত্ব দেবেন না সেটাইতো স্বাভাবিক। এসব ক্ষেত্রে মেয়ের অভিভাবকদের দায়িত্ব পরে সে বিয়ে রুখে দেবার। তার মেয়েকে অশিক্ষিত ছেলের হাতে না দেয়া। আর যদি মেয়ে স্বেচ্ছায় রাজি থাকে তবে আর কি বলার থাকতে পারে!!
[ছেলে হিসেবে ছেলেদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই কথাগুলো লেখা। মেয়েদের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে পারলে ভাল লাগত। :) ]
No comments:
Post a Comment