শীতের সকাল। মৃদু হিম হিম হাওয়া বইছে। আনিস সাহেব বারান্দায় বসে সূর্্যোদয় দেখছেন। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা তার ছোটবেলা অভ্যাস। শীতের সকাল হলেতো কথাই নেই। সকালের মিস্টি রোদের সাথে শীতল স্নিগ্ধ বাতাস মনে পবিত্র একটা ভাব এনে দেয়। অকারনেই নিজেকে সুখী সুখী লাগে। মনে হয়, পৃথিবীতে অশুভ কিছুর অস্তিত্ব নেই।
আচ্ছা সবার কি এমন হয়? নির্মল পবিত্রতা কি সবার অন্তর ছুয়ে যায়? যদি তাই হয় তবে অপরাধীদের নিয়ম করে সূর্যোদয় দেখা উচিৎ। এতে করে তাদের অন্তরের অন্ধকার কেটে যাবার কথা।
চায়ের কাপে অলস চুমুক দিতে দিতে আনিস সাহেব এসব হাবিজাবি কথাই ভাবছিলেন। তার মন যখন খুব ভাল থাকে তখন তার মনে এমন ভাবের উদয় হয়।আজকেও তার মন খুব ভাল। গতকাল তার সিংগাপুরের ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং ছিল। সেই মিটিং সফলভাবে শেষ হয়েছে। প্রায় ১০ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে।
"আব্বু, কি কর?"
লিশা এসে বারান্দার দরজায় দাড়িয়েছে। ঘুম ঘুম চোখ, গায়ে একটা শাল জড়িয়ে রেখেছে। মেয়েকে দেখে আনিস সাহেবের মন আরো ভাল হয়ে গেল।
"কিছু নারে মা, এমনি বসে আছি। তুই এত সকালে?"
"হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল।আর ঘুম আসছে না। ভাবলাম বারান্দায় একটু বসি।"
"ভাল করেছিস। আয় আমার কাছে বোস।"
"জ্ঞানের কথা বলবে নাতো?" লিশা মুচকি হাসে।
আনিস সাহেবও হেসে ফেললেন, "আমি কি শুধুই জ্ঞানের কথা বলি? আচ্ছা যা, আজকে আর বলব না। তিশা উঠেনি?"
" নাহ...ওর ঘুম এত সহজে ভাঙে না।ও হাতির মত ঘুমুতে পারে।" বলতে বলতে লিশা বাবার পাশে বসল।
"এইতো একটা ভুল কথা বললি। হাতিরা কিন্তু বেশি ঘুমায় না। তারা ভোরের আগে কয়েক ঘন্টা ঘুমায়। আর দিনের বেলায় যখন গরম পড়ে তখন কিছু সময়ের জন্য ঘুমায়।প্রানীজগতে সবচেয়ে বেশি ঘুমায় কোয়ালাস নামক এক প্রানী। এরা দিনে প্রায় ২২ ঘন্টা ঘুমায়।বাদামী বাদুড় ঘুমায় দিনে ২০ ঘন্টা। একপ্রজাতীর বানর আছে যারা ২৪ ঘন্টায় প্রায় ১৯ ঘন্টা ঘুমায়। জায়ান্টা আরমাডিল্লোসের নাম শুনেছো?......"
"আবার শুরু করেছো জ্ঞানের কথা!!! ধ্যাত, তোমার সাথে কথা বলাই ঠিক না।"-রেগে মেগে লিশা উঠে চলে গেল।
আনিস সাহেব মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মেয়েটা পুরোপুরি মিলির মত হয়েছে। মিলিও এমন করত। তার লেকচার সহ্য করতে পারত না। তিনি প্রায়ই মিলিকে রাগানোর জন্য এধরনের কথা বলতেন। রাগলে ওকে আরো ভাল লাগত।কত আর বয়স ছিল মিলির! আনিস সাহেব যখন মিলিকে ঘরে আনেন তখন সে সদ্য এইচ.এস.সি পাস করেছে। আনিস সাহেব তখন সবে মাত্র চিটাগাং এসেছেন। একটা কনস্ট্রাকশন ফার্মে চাকুরী পেয়েছেন। সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের পর বাসায় এসে মিলি সাথে খুনসুটি করতে তার অসম্ভব ভাল লাগত।তিনি অফিস করতেন ঠিকই কিন্তু তার মন পড়ে থাকত মিলির কাছে। সেই মিলি তিশা-লিশার জন্ম দিতে গিয়ে তাকে ছেড়ে চলে গেল। আনিস সাহেব স্ত্রী শোকে কাতর হননি। ফুটফুটে দুই মেয়ে তার কোলে ছিল। তাদেরকে ঘিরেই তখন তিনি স্বপ্ন দেখতে থাকেন। মেয়েদুটো বড় হয়েছে।কয়েকদিন পরে হয়ত অন্যের ঘরে চলে যাবে। তখন তিনি আবার একা হয়ে যাবেন।
আনিস সাহেবের মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
[একটা উপন্যাস লেখার ইচ্চা আছে। শুরুটা বোধহয় এমনি হবে]
No comments:
Post a Comment