Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Sunday, October 12, 2014

নিকাহ/বিয়ে/শাদী/ম্যারেজ-২

বিবাহের পূর্বে কনেকে দেখা

আবদুর রহমান ইব্‌ন ইবরাহীম (রঃ)...আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি এক আনসারী নারীকে বিবাহের পয়গাম দিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বললেনঃ তুমি কি তাকে দেখেছো? সে ব্যক্তি বললেনঃ না। তখন তিনি তাকে দেখে নেয়ার জন্য তাকে আদেশ করলেন।

মুহাম্মাদ ইব্‌ন আবদুল আযীয ইব্‌ন আনূ রিয্‌মা (রঃ)...মুগীরা ইব্‌ন শু'বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সময় আমি এক নারীকে বিবাহ করার পয়গাম দিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তুমি তাকে দেখে নাও। কেননা, এতে তোমাদের মধ্যে (ভালবাসার) সম্পর্ক রচিত হবে। [রেফারেন্সঃ ৩-৩-৩৪৯]

পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্র যা দেখবে তা হল, পাত্রীর কেবল চেহাড়া ও কবজি পর্যন্ত হস্তদ্বয়। অন্যান্য অঙ্গ দেখা বা দেখানো বৈধ নয়। কারণ, এমনিতে গম্যা (বিবাহ করা যায় এমন) নারীর প্রতি দৃকপাত করা অবৈধ। তাই প্রয়োজনে যা বৈধ, তা হল পাত্রীর ঐ দুই অঙ্গ। 

এই দর্শনের সময় পাত্রীর সাথে যেন তার বাপ বা ভাই বা কোন মাহরাম থাকে। তাকে পাত্রের সহিত একাকিনী কোন রুমে ছেড়ে দেওয়া বৈধ নয়। যদিও বিয়ের কথা পাক্কা হয়। 

পাত্র যেন পাত্রীর প্রতি কামনজরে না দেখে। (মুগানী ৬/৫৫৩) আর দর্শনের সময় তাকে বিবাহ করার যেন পাক্কা ইরাদা থাকে।

পাত্রীকে পরিচয় জিজ্ঞেস করা বৈধ। তবে লম্বা সময় ধরে বসিয়ে রাখা বৈধ নয় এবং বারবার বহুবার অথবা অনিমেষনেত্রে দীর্ঘক্ষন তার প্রতি দৃষ্টি রাখাও অবৈধ। অনুরূপ একবার দেখার পর পুনরায় দেখা বা দেখতে চাওয়া বৈধ নয়। (দতাঃ ২৮ পৃঃ)

পাত্রীর সহিত মুসাফাহা করা, রসালাপ ও রহস্য করাও অবৈধ। কিছুক্ষন তাদের মাঝে হৃদয়ের আদান প্রদান হোক, এই বলে সুযোগ দেওয়া অভিভাবকের জন্য হারাম।

এইসময় পাত্রীর মন বড় করার জন্য কিছু উপহার দেওয়া উত্তম। অবশ্য পাত্রীর গলে নিজে হার পরানো বা হাত ধরে ঘড়ি অথবা আংটি পরানো হারাম। পরন্তু পয়গামের আংটি বলে কিছু নেই। এমন অঙ্গুরীয়কে শুভাশুভ কিছু ধারনা করা বিদআত ও শির্ক। যা পাশ্চাত্য-সভ্যতার রীতি। (আফঃ ১০ পৃঃ, আজিঃ ২১২ পৃঃ)

এরপর পছন্দ অপছন্দের কথা ভাবনা চিন্তা করে পরে জানাবে।

অনুষ্ঠান করে ক্ষনেকের দেখায় পাত্রী আচমকা সুন্দরী মনে হতে পারে অথবা প্রসাধন ও সাজসজ্জায় ধোকাও হতে পারে। তাই যদি কেউ বিবাহ করার পাক্কা নিয়তে নিজ পাত্রীকে তার ও তার অভিভাবকের অজান্তে গোপনে লুকিয়ে দেখে, তাহলে তাও বৈধ। তবে এমন স্থানে লুকিয়ে দেখা বৈধ নয়, যে সেখানে সে তার গোপনীয় অঙ্গ প্রকাশ করতে পারে। অতএব, স্কুলের পথে বা কোন আত্মীয়য়ের বাড়িতে থেকেও দেখা যায়।

প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, "যখন তোমাদের কেউ কোন রমনীকে বিবাহ প্রস্তাব দেয়, তখন যদি প্রস্তাবের জন্যই তাকে দেখে তবে তা দূষনীয় নয়; যদিও ঐ রমনী তা জানতে না পারে।" (সিসঃ ৯৭ নং)

সাহাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ্‌ বলেন, "আমি এক তরুনীকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তাকে দেখার জন্য লুকিয়ে থাকতাম। শেষ পর্যন্ত আমি তার সেই সৌন্দর্য্য দেখলাম যা আমাকে বিবাহ করতে উৎসাহিত করল। অতঃপর আমি তাকে বিবাহ করলাম।" (সিসঃ ৯৯ নং)

পাত্রী দেখার সম্য কালো কলফে যুবক সেজে তাকে ধোকা দেওয়া হারাম। যেমন পাত্রীপক্ষের জন্য হারাম, একজনকে দেখিয়ে অপরজনের সহিত পাত্রের বিয়ে দেওয়া। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, "যে (কাউকে) ধোকা দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়।" (ইরঃ ১৩১৯ নং)

পক্ষান্তরে একজনের সাথে বিবাহের কথা-বার্তা হয়ে বিবাহের সময় অন্যের সাথে ধোকা দিলে সে বিবাহ শুদ্ধ নয়। এমন করলে মেয়েকে ব্যভিচার করতে দেওয়া হবে।" (হাসিয়াতু রওযিল মুরাব্বা' ৬/২৫৪)

পাত্রের বাড়ির যেকোন মহিলা বউ দেখতে পারে। তবে পাত্র ছাড়া অন্য কোন পুরুষ দেখতে পারে না; পাত্রে বাপ-চাচাও নয়। সুতরাং বুনাই বা বন্ধু সহ পাত্রের পাত্রী দেখা ঈর্ষাহীনতা ও দ্বীন-বিরোধীতা। পাত্রী ও পাত্রীপক্ষের উচিৎ একমাত্র পাত্র ছাড়া কোন পুরুষকে পাত্রীর চেহাড়া না দেখানো। নচেৎ এতে সকলেই সমান গোনাহগার হবে।

পাত্রী দেখার আগে অথবা পরে বাড়ির লোককে দেখানোর জন্য পাত্রীর ফটো বা ছবি নেওয়া এবং পাত্রীপক্ষের তা দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। বিশেষ করে বিবাহ না হলে সে ছবি রয়ে যাবে এ বেগানার কাছে। তাছাড়া ঈর্ষাহীন পুরুষ হলে সেই ছবি তার বন্ধু-বান্ধব অন্যান্য পুরুষ তৃপ্তির সাথে দর্শন করবে। যাতে পাত্রী ও অভিভাবকের লজ্জা হওয়া উচিত।

পক্ষান্তরে পাত্রীকে সরাসরি না দেখে তার ছবি দেখে পছন্দ সঠিক নাও হতে পারে। কারণ, ছবিতে সৌন্দর্য্য বর্ধন ও ত্রুটি গোপন রাখা যায় সে কথা হয়ত প্রায় সকলেই জানে।

পাত্রীরও পছন্দ-অপছন্দের অধিকার আছে। সুতরাং পাত্রকে ঐ সময় দেখে নেবে। (বিবাহের দিন বিবাহবন্ধনের পূর্বে বাড়িতে দেখায় বিশেষ লাভ হয় না।) তার পছন্দ না হলে সেও রদ করতে পারে। (দতাঃ ৩৫ পৃঃ)

পাত্রী পছন্দ না হলে পাত্র বা পাত্রপক্ষ ইঙ্গিতে জানিয়ে দেবে যে, এ বিয়ে গড়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। স্পষ্টরূপে পাত্রীর কোন দোষ-ত্রুটি তার অভিভাবক বা অন্যলোকের সামনে বর্ণনা করবে না। যে উপহার দিয়েছিল তা আর ফেরৎ নেওয়া বৈধ নয়, উচিতও নয়। তবে বিয়ে হবেই মনে করে যদি অগ্রিম কিছু মোহরানা (ব'লে উল্লেখ করে) দিয়ে থাকে তবে তা ফেরৎ নেওয়া বৈধ এবং পাত্রীপক্ষের তা ফেরৎ দেওয়া কর্তব্য। (ই'লামুল মুআক্কিঈন ২/৫০)

পরন্তু সামান্য ত্রুটির কারনে বিবাহে জবাব দিয়ে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা বৈধ নয়। কারণ অঙ্গীকারবন্ধ হয়ে তা ভঙ্গ করা মুনাফিকের লক্ষণ। (মিঃ ৫৬ নং) যেমন কোন "থার্ড পার্টি" র কথায় কান দিয়ে অথবা কোন হিংসুকের কান-ভাঙ্গানি শুনে বিয়ে ভেঙ্গে পাত্রীর মন ভাঙ্গা উচিত নয়। 

[রেফারেন্সঃ ৫-০-৪১,৪২,৪৩]

মোহরানা

আরবী "আল-মাহর" শব্দটি মাসদার, অর্থ-বিবাহের সময় আর্থিক বিনিময়। বহুবচনে "মুহুরুন" পরিভাষায় মহর হলো- "সম্ভোগের বিনিময় স্বরূপ যে অর্থ স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী বিবাহের সময় লাভ করে কিংবা তা আদায়ের প্রতিশ্রুতি পায়, তাকে শরিয়তের পরিভাষায় মহর বলে।" [আল-ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবা'আ]

মহর দু'ধরনের হয়-নগদ ও মেয়াদী। বিবাহসম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে যে মহর আদায় করে দেওয়া হয় তাকে নগদ আর যা পরবর্তী কোন নির্দিষ্ট তারিখে কিংবা সময়সাপেক্ষে প্রদানের ওয়াদা করা হয় তাকে মেয়াদী বলে। সামর্থ্যের অধিক মহর ধার্য করা উচিত নয়। মানুষ গর্ব ও সুখ্যাতির অন্ধ মোহে মোটা অংকের মহর ধার্য করে থাকে। কখনো বা স্বামী যাতে স্ত্রীকে সহসা তালাক দিতে না পারে সে লক্ষ্যে তা করে থাকে। শরিয়ত ও বুদ্ধিবৃত্তিক কোনো বিবেচনায়ই এর গ্রহনযোগ্যতা নেই। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন-"স্বল্প ব্য্যবিশিষ্ট বিবাহ অধিক বরকতময়।" [আশরাফুল হিদায়া। পৃঃ ৯৯]

বিবাহ একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই একে অন্যের কাছে উপকৃত ও পরিতৃপ্ত। কিন্তু স্বামীর অধিকার বেশি। তাই স্ত্রীর কর্তব্য অধিক। স্ত্রী তার দেহ-যৌবনসহ স্বামীর বাড়ীতে এসে আ সদা ছায়ার ন্যায় স্বামী-পাশে থেকে তার অনুসরণ ও সেবা করে। তাই তো এই চুক্তিতে এমন কিছু পারিতোষিক প্রদান করতে হয় যাতে সে সন্তুষ্ট হয়ে স্বামীর বন্ধনে আসতে রাজী হয়ে যায়। সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং মানুষকে এ বিধান দিয়েছেন। তিনি বলেন, "উল্লেখিত (অবৈধ) নারীগন ব্যতীত অন্যান্য নারীগণকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, তবে শর্ত এই যে, তোমরা তোমাদের স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য, ব্যভিচারের জন্য নয়। তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা উপভোগ করবে তাদেরকে নির্ধারিত মোহর অর্পন করবে।" (কুঃ ৮/২৪)

তিনি অন্যত্র বলেন, "এবং তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর সন্তুষ্টমনে দিয়ে দাও।" (কুঃ ৪/৪)

আর প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, "সবচেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত যা পূরণ করা জরুরী, তা হল সেই বস্তু যার দ্বারা তোমরা (স্ত্রীদের) গুপ্তাঙ্গ হালাল করে থাক।" (সজাঃ ১৫৪৭ নং)

সুতরাং স্ত্রীকে তার ঐ প্রদেয় মোহর প্রদান করা ফরয। জমি, জায়গা, অর্থ, অলংকার, কাপড়-চোপড় ইত্যাদি মোহরে দেওয়া চলে। বরং প্রয়োজনে (পাত্রীপক্ষ রাজী হলে) কুরআন শিক্ষাদান, ইসলাম গ্রহনও মোহর হতে পারে। (বুঃ মুঃ মিঃ ৩২০২-৩২০৯ নং)

[ আদর্শ বিবাহ ও দাম্পত্য। পৃঃ ৫১-৫২] [ আশরাফুল হিদায়াতে "নিকাহের হুকুম হলো মহর ওয়াজিব হওয়া" লিখেছে। আর কাপড়-চোপড় মহরানা হবে কিনা এটা একটু যাচাই করে নেবেন।-লেখক]

মহর কত হবে? সর্বনিম্ন কত হবে? সর্বোচ্চ কত হবে? 

২৪৭৫.অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তা'আলার বানীঃ "এবং তোমরা তোমাদের স্ত্রীদিগকে সন্তুষ্ট চিত্তে মোহরানা পরিশোধ কর।" আর অধিক মোহরানা এবং সর্বনিম্ন মোহরানা কত এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেন, "এবং তোমরা যদি তাদের একজনকে অগাধ অর্থও দিয়ে থাক,তবুও তা থেকে কিছুই প্রতিগ্রহণ করো না।"এবং আল্লাহ্‌ তা'আলা আরো বলেন,"অথবা তোমরা তাদের মোহরানার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দাও।" সাহ্‌ল (রাঃ) বলেছেন, নবী(সাঃ) এক ব্যক্তিকে বললেন,যদি একটি লোহার আংটিও হয়,তবে মোহরানা হিসাবে যোগাড় করেদাও।

৪৭৭১।সুলায়মান ইব্‌ন হার্‌ব(রঃ)...আনাস(রাঃ)থেকেবর্ণিত। তিনি বলেন,আবদুর রহমান ইব্‌নে আউফ (রাঃ) কোনএক মহিলাকে শাদী করলেন এবং তাকে মোহরানা হিসাবে খেজুরের দানার পরিমান স্বর্ণ দিলেন। যখন নবী (সাঃ)তার মুখে শাদীর আনন্দের ছাপ দেখলেন তখন তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন; তখন সে বললঃ আমি একজন নারীকে খেজুরের আঁটি পরিমাণ স্বর্ণ দিয়ে শাদী করেছি। কাতাদা আনাস থেকে বর্ণনা করেন যে,আবদুররহমান খেজুরের দানা পরিমাণস্বর্ণ মোহরানা হিসাবে দিয়ে কোন মহিলাকে শাদী করেন।

আলী ইব্‌ন আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ)...সাহ্‌ল ইব্‌ন সা'দ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি অন্যান্য লোকের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় একজন মহিলা দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আমার জীবনকে আপনার কাছে পেশ করেছি। এতে আপনার মতামত কি? নবী(সাঃ) কোন উত্তর দিলেন না। এরপর মহিলাটি পুনরায় দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার জীবনকে আপনার কাছ পেশ করেছি। এতে আপনার মতামত কি? তিনি কোন প্রতি উত্তর করলেন না। তারপর তৃতীয় বারে দাঁড়িয়ে বলল, আমি আমার জীবন আপনার কাছে সোপর্দ করছি। আপনার মতামত কি? এরপর একজন লোক দাঁড়িয়ে বলল,ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই মহিলাকে আমার সাথে শাদী দিয়ে দিন। তখন রাসূলাল্লাহ্‌ (সাঃ) বললেন,তোমার কাছে কিছু আছে?লোকটি বলল, না। তিনি বললেন, যাও তালাশ কর, একটি লোহার আংটি হলেও নিয়ে এসো। লোকটি চলে গেল এবং খুঁজে দেখল। এরপর এসে বলল, আমি কিছুই পেলাম না; এমন কি লোহার আংটিও না। নবী (সাঃ) বললেন, তোমার কি কিছু কোরআন জানা আছে? সে বলল, অমুক অমুক সূরা আমার মুখস্থ আছে। নবী (সাঃ)বললেন,তুমিযে পরিমাণ কুরআন মুখস্থ পারতার বিনিময়ে এ মহিলাকে তোমারসাথে শাদী দিলাম।

[সহীহ বুখারী-অষ্টম খন্ড-পৃ-৪৩৭/৪৩৮.ইসলামী ফাউন্ডেশন]

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন মুহাম্মাদ...আবূসালামা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি আয়েশা (রাঃ) কে নবী করীম (সাঃ)এর স্ত্রীদের মাহর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,এর পরিমাণ হ'লবারো উকিয়া এবং এক নশ। আমিজিজ্ঞাসা করি,'নশ'কী?তিনিবলেন, এরপরিমান হল অর্ধ-উকিয়া।

*এক উকিয়ার পরিমান হল চল্লিশ দিরহাম। কাজেই বারো উকিয়া ও এক নশের সর্বমোট পরিমান হলঃ ৪০*১২+২০=৫০০শত দিরহাম।

মুহাম্মাদ ইব্‌ন উবায়দ...আবূ আল-আজফাআস-সালামী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,উমার(রাঃ) খুতবা প্রদানের সময় বলেন, তোমরাস্ত্রীদের মাহর নির্ধারণেরব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে না। যদি তা দুনিয়াতে সম্মানের বস্তু হত অথবা আল্লাহ্‌র নিকট তাকওয়ার বস্তু হত,তবে তা পাওয়ার যোগ্যতম ব্যক্তিহতেন নবী করীম (সাঃ)। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)তাঁরস্ত্রীদের এবং তাঁর কোন কন্যাদের জন্য বারো উকীয়ার অধিক পরিমাণমাহর ধার্য করেননি।

সাইব্‌নে ইসমাঈল...আনাস(রা) হতেবর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আবদুর রহমান ইব্‌ন আওফ (রাঃ) কে একটি হলুদ রঙ বিশিষ্ট চাদর পরিহিত দেখেন। এরপর নবী করীম(সাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ব্যাপার কী? তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি (আনসার) একমহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, তুমি তার জন্য কী পরিমাণ মাহর ধার্যকরেছ? তিনি বলেন, এক নাওয়া পরিমান স্বর্ণ। তিনি বলেন, তুমি ওয়ালীমা কর,যদি একটি বক্‌রীর দ্বারাও হয়।

{একনাওয়া হল ৫ দিরহাম পরিমান}

ইসহাক ইব্‌ন জিব্‌রাঈল বাগদাদী...জাবিরইব্‌ন আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) নবী করীম (সাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেনঃ যদি কেউ তার স্ত্রীর মাহর হিসাবে দু'অংগুলিপূর্ণ (আজলা) আটাবা খেজুর প্রদান করে, তবে তা-ই তার জন্য যথেষ্ট। জাবির (রাঃ) অপরএকটি হাদিসে বর্ণনা করেন যে,আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে বিবাহের মাহর হিসাবে খাদ্যের সামান্য অংশ প্রদান করে তার নিকট হতে ফায়দা গ্রহন করতাম। আবূ দাঊদ (রঃ) বলেন,ইব্‌ন জুরায়জ তিনি আবূ যুবায়ের হতে, তিনি জাবির হতে আবূ আসিম কর্তৃকবর্ণিত হাদীসের অর্থে হাদীসবর্ণনা করেছেন।

হাজ্জাজ ইব্‌ন আবূ ইয়া'কূব সাকাফী...উম্মে হাবীবা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি ছিলেন আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন জাহাশের স্ত্রী। তিনি হাব্‌শাতে ইন্‌তিকাল করেন। এরপর (হাব্‌শার বাদশাহ্‌) নাজাশী তাঁকে নবী করীম (সাঃ) এর সাথে বিবাহ দেন এবং তাঁর(নাজাশী) নিজের পক্ষ হতে মাহর স্বরুপ চারহাজার দিরহাম আদায় করেন এবং তা সহ তাঁকে (উম্মেহাবীবাকে) শুরাহ্‌বীল ইব্‌ন হাসানের সাথে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর খিদমতে প্রেরণ করেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রঃ) বলেন, হাসান হলেন শুরাহ্‌বীলের মাতা।

মুহাম্মাদ ইব্‌ন হাতিম ইব্‌ন বাযী'...যুহরী(রঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাজাশী উম্মে হাবীবা বিন্‌ত আবূ সুফইয়ানকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এরসাথে বিবাহ দেন এবং এই জন্য চার হাজার দিরহাম মাহর ধার্য করেন। এরপর তিনি (নাজাশী) এতদসম্পর্কে একটি পত্র রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে লিখে সবই অবহিত করে,যা তিনি কবুল করেন।

উপরোক্তহাদীসের আলোকে জানা যায় যে, ৫০০ দিরহামের অতিরিক্ত মাহর ধার্যকরা হলে এতে দোষ নেই।

[আবূ দাঊদ-৩-১৪২,১৪৩]

মহর নির্ধারন না করা

মহর নির্ধারণ না করেলও বিবাহ শুদ্ধ হবে। কারণ বিবাহের হাকীকত ও মূল অর্থে মহরের বিষয়টি নেই। মহরের শর্ত করা হয়েছে শুধু সম্ভোগ অঙ্গের মর্যাদা প্রকাশের জন্য। এ সম্পর্কে ইমাম মালেক (রঃ) এর ভিন্নমত রয়েছে। মহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হল দশ দিরহাম। ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেন, বিক্রয় ক্ষেত্রে যা কিছু মূল্যরুপে সাব্যস্ত হতে পারে তা স্ত্রীর মহররূপে সাব্যস্ত হতে পারবে। কেননা মহর হল স্ত্রীর হক। সুতরাং তার পরিমান নির্ধারণের অধিকারও তার হাতেই থাকবে। আমাদের দলিল হলো-নবী করীম (সাঃ) এর বাণী-'দশ [দিরহাম] এর কমে কোন মহর নেই।' তাছাড়া স্ত্রীর বিশেষ স্থানের মর্যাদা প্রকাশের জন্য ওয়াজিব হওয়ার দিক থেকে এটি শরিয়তের হক। সুতরাং তা সম্মানজনক পরিমাণে নির্ধারিত হতে হবে। আর তা হলো দশ [দিরহাম] চুরির নেসাবের উপর কিয়াস করে। 

[আশরাফুল হিদায়া। পৃঃ ৯৮। বিস্তারিত আলোচনা জানার জন্য এই গ্রন্থ দেখা যেতে পারে।]

No comments: