আমার কাছে ব্যাচেলর লাইফের সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা কি জানেন? নাস্তা করা। সকালের নাস্তা আর সন্ধ্যার নাস্তা। দেরি করে ঘুম থেকে উঠার কারনে অনেক সময় সকালের নাস্তার ক্ষুধা মরে যায়। কিন্তু যেদিন সকাল সকাল উঠে পড়ি সেদিন কি খাব, কি খাব- চিন্তায় আরো বেশি করে ক্ষুধা লেগে যায়। আসলেও খাওয়ার মত কিছু পাই না। অফিসে থাকলে ক্যান্টিনের রুটি/ডীম/ডাল অথবা ভাজি নাহয় খিচুরী/ডীম নাহয় পরোটা/ডীম/ডাল অথবা ভাজি খেতে হয়।
রুটি বানিয়ে আনতে আনতে ঠান্ডা হয়ে যায়। রুটি আমি এমনিতেই খেতে পারি না। গিলতে কষ্ট হয়। ঠান্ডা হলেতো আরো পারি না। ওভেনে দিয়ে গরম করলে সেটাও আবার কেমন যেন হয়ে যায়। আর পরোটা? সেটাতো তেলে চুপচুপ! দু'আঙুলে চিপে দিলে তেল ঝরবে এমন!
গলধঃকরন করতেও কষ্ট, গলধঃকরন করার পরেও কষ্ট। পেটে গ্যাস হবেই। বিকেলের নাস্তা আরেক যন্ত্রণা। নিজে বানাতে ইচ্ছে করে না, আবার কেনা কিছু খেতেও ইচ্ছে করে না। কতবার এমন হয়েছে নাস্তা করতে বা বিস্কিট কিনতে গিয়েছি কিন্তু কিছুই পছন্দ না হওয়াতে ফিরে এসেছি।
বয়স হয়েছে। রুচির পরিবর্তন হয়েছে। আগে যেসব খাবার (চানাচুর, বিস্কিট টাইপ)পেলে আর কিছু চাইতাম না, এখন সেগুলোর দিকে তাকাতেও ইচ্ছে করে না। ভাল ভাল ব্র্যাণ্ডের বিস্কিট, চানাচুর, কেক দোকানে থরে থরে সাজানো। কিন্তু আমার চাহিদা হয় না।
আর চিটাগাঙ্গের সাথে রুচি অন্যকোন জেলার মানুষের সাথে মিলবে কিনা জানি না। আমাদের এলাকার সাথে মিলে না। আমরা রমজান ছাড়া ছোলা খেতে দেখিনি। চিটাগাঙ্গের সারাবছর চনা চলে। "তীর ছাড়া আমার চলেই না"-এর মত "চনা ছাড়া আমরা খাই-ই না"-টাইপ।
এখানে কেউ যখন নাস্তা করতে চলে তখন লাফিয়ে লাফিয়ে ঝাল ঝাল করে। মানে ঝালে খাবে। মনে মনে হাসি। আসল ঝালতো জিন্দেগীতে চেখে দেখো নাই। গরুর মাংস খাবে লাল টুক টুক। আরে না, মরিচের জন্য না। কে জানে কি দেয়। যত গর্জে তত বর্ষে না। যত লাল দেখা যায় তত ঝাল হয় না।
এখানে ভাজা পোড়ার ব্যবসা জমজমাট। যত তেল তত মজা। তেলে চুবিয়ে ভেজে আপনি যা বিক্রি করতে চান সব বিক্রি হয়ে যাবে। ডালপুড়ি, আলুপুড়ি, কিমাপুড়ি আগেও খেতাম, এখানেও খেয়েছি। খাওয়ার পর বন্ধুদের সাথে গল্প করেছি, “চিটাগাং আসিস, এমন পুড়ি খাওয়াব আর জিন্দেগীতে পুড়ির নাম নিবি না।” যারা এসেছে এবং খেয়েছে তাদেরকে অনেক কষ্টে সুইসাইড করা থেকে বিরত রেখেছি।
অফিস থাকলে ক্যান্টিনে সকালের নাস্তা করি। যেদিন পরোটা থাকে সেদিনের কথা আর কি বলব। তেলে চুপচুপ। একটা পরোটা চাপলে যে তেল পড়বে তাতে আরো একটা পরোটা ভাজা যাবে। একেকটা পরোটা দু'আঙুলের চেপে মুখের সামনে ধরি আর চুক চুক করে আফসোস করি, এই ছিল জীবনে! আর রুটি হলেতো মাথায় বাড়ি। যেদিন খিচুরী দেয় সেদিন একটু শান্তি শান্তি লাগে।
মাঝে মাঝে লোকাল দুই একজনে নাস্তা নিয়ে আসে। কুরবানীর পর একজন সকালে রুটির সাথে খাওয়ার জন্য মাংস নিয়ে আসছে। সাথে আরো দুইজন আমরা ডিউটি করি। আমাদেরকেও সাধতে হয়। সাধার আগে যখন বাটির মুখ খুলেছে তখন উৎকট গন্ধে আমাদের এসি রুমের বারোটা বেজে গেল। পচা গন্ধ আসল কোথা থেকে? পরে কাছে যেয়ে দেখি মাংসের গন্ধ! খোদা!
এই লোকই একদিন বিকালে আমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসলো। লাউয়ের সেমাই! ওয়াও! ভাবলাম কি না কি! নতুন কিছু টেস্ট করা হবে। নাস্তার সময় আগ্রহ নিয়ে বসলাম। কিন্তু বাটিতে নেবার পর জিনিসটা দেখেই কেমন কেমন লাগা শুরু করল। ভয়ে ভয়ে মুখে দিলাম। পানসে! উনার ভাষায় কড়া মিস্টি এই সেমাই বেশি একটা গেলা আমার জন্য সম্ভব হল না। উনি অন্যদিকে ফিরতেই বাটি নিয়ে বাইরে চলে এলাম। ডাস্টবিনে ফেলে দিলাম। ভেবেছিলাম আমারই বুঝি এমন লাগল। পরে যখন আর একজন বের হয়ে আসল আধ খাওয়া বাটি নিয়ে তখন বুঝতে পারলাম, না, আমার মাথা এখনো ঠিক আছে।
মিস্টির কথা যখন আসলই আরো কিছু কথা বলা যাক। আমরা যেখানে বড় হয়েছি সেখানে বিখ্যাত কোন ব্যান্ড নেই। সবই লোকাল ব্র্যান্ড। চাকুরীতে আসার পর একজনের কাছে এখানকার স্পঞ্জের খুব সুনাম শুনলাম। কোথায় পাব জানতে চাইলে বললেন, ওহ! আমাদের বাড়ির এখানেই দোকান আছে। আমি রিকোয়েস্ট করাতে পরেরবার বাড়ি যেয়ে আমার জন্য এক কেজি স্পঞ্জ নিয়ে আসলেন।
দেখতে খুবই সুন্দর। ধবধবে সাদা! মুখে দেয়ার পর মনে হলো, আরে! এই মিষ্টিতো আমি আগেও খেয়েছি। স্মৃতির পাতা হাতড়ে দেখলাম স্পঞ্জ খেয়েছি ২০০৬ এ, নোয়াখালীতে। যতই চাবাই ততই ফুলে! কিরে ভাই! এইগুলো কি? মিষ্টি নাকি রবার? কিভাবে খায়?
সেই স্পঞ্জ গুলোর তুলনায় এইগুলো একটু ভাল হলেও স্পঞ্জইতো! জাত ভাই। এরে ওরে খাইয়ে খাইয়ে এককেজি স্পঞ্জ শেষ করলাম। কোতয়ালী মোড়ের বিখ্যাত সাধুর স্পঞ্জও রুমমেট একদিন কিনে আনলেন। একটা খেয়েই আমার আর আমার রুমমেটের “আউশ” মিটে গেল। পরে এর তারে রিকুয়েস্ট করে মিস্টিগুলো অন্তত ফেলে দেয়ার হাত থেকে রক্ষা পেল।
হাইওয়ে, বনফুল, ওয়েলফুড, মধুবন, স্বাদ—হল চিটাগাঙ্গের বিখ্যাত সব বেকারী। বেকারী বলাটা ঠিক হল কিনা বুঝতে পারছি না। যাই হোক, সবগুলোর মিষ্টিই মোটামুটি চাখা হয়েছে। চলে, খারাপ না।
৫-৬ বছর আগে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ফর ক্যামিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজে ট্রেনিংএ যাই কোম্পানির তরফ থেকে। ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল বয়লার এন্ড অপারেশন অফ স্টিম জেনারেশন সিস্টেম এর উপর ট্রেনিং করতে আমাদের সাথে যোগ দেন কর্ণফুলী পেপার মিল, সিলেট গ্যাস ফিল্ড, ইউরিয়া সারকারখানা, পলাশ ইউরিয়া সারকারখানা, চিটাগাং ইউরিয়া সারকারখানা, যমুনা সারকারখানা, ড্যাপ সারকারখানা থেকে আরো ভাইয়েরা আমাদের সাথে যোগ দেন।
বলতে গেলে বাড়িতেই গিয়েছি ট্রেনিং করতে! কেপিএমের ভাইয়েরা একবার বললেন মিষ্টি খেতে চান। নিয়ে গেলাম। তেমন বিখ্যাত কিছু না। রাজলক্ষী মিষ্টান্ন ভান্ডার। এক চামচ মুখে দিয়েই তারা অবাক! “ভাই এটা কি মিষ্টি?” “রসগোল্লা!”
ট্রেনিং শেষে তারা রসগোল্লা কিনে নিয়ে আসছেন চিটাগাং। এরপর দেখা হলেই মিষ্টির কথা বলেন।
ইনিয়ে বিনিয়ে এত কথা বলার উদ্দেশ্য হল, খাওয়া নিয়ে শান্তিতে নেই। আমার চাহিদা খুব বেশি নয়। যেটা পছন্দ সেটা অল্প হলেই হয়। যেরকম পছন্দ সেটা একটু কমদামী বা সেকেন্ড/থার্ড ক্লাস হলেও সমস্যা নেই। কিন্তু আমার পছন্দ হতে হবে।
বাসায় কিভাবে বোঝাই?
আমার যে একটা বউ দরকার সেটা আরো খোলাসা করে বলতে হবে?
বোগে না কেও বোগে না... !!
No comments:
Post a Comment