Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Monday, October 13, 2014

আমার বই পড়া

বড়বোনের কাছে শুনেছি আমি নাকি ক্লাস থ্রীতে তিন গোয়েন্দা পড়ার মাধ্যমে বাইরের বই পড়া শুরু করি। তখন আমার বোন বই নিয়ে আসত ধার করে। তার পড়ার ফাকে ফাকে আমিও পড়তাম। প্রথম কোন বইটা পড়েছি তা মনে নেই। তবে এই টুকু মনে আছে তিন গোয়েন্দার প্রথম বইটা পড়ার পর মাথার ভিতর "রকি বীচ", "হেডকোয়ার্টার", "সুড়ঙ্গ" এইসব শব্দগুলো ঘুরে বেড়াত। নিজে নিজেই চিন্তা করতাম এইগুলোর মানে কি? বোনকে বলার পর সে কি উত্তর দিয়েছিল জানা নেই। তবে আমি আগ্রহ হারাই নি। একের পর এক বই পড়তে লাগলাম। "অথৈ সাগর-১,২", "গোলাপী মুক্তো", "ছায়াশ্বাপদ", "মমি", "রত্নদানো", "পোচার", "ঘড়ির গোলমাল", "কানা বিড়াল" "জলদস্যুর দ্বীপ-১,২", ...... কি বই একেকটা!!!
এরপর পড়লাম হরর সিরিজের কিছু বই। টিপু কিবরিয়ার। যারা আমার "আয়না" পড়েছেন তারা ধরতে পেরেছেন কিনা জানি না, আয়না লেখা হয়েছে টিপু কিবরিয়ার "আয়নার ওপাশে" বইটি পড়ে। টিপু কিবরিয়ার মত দুর্দান্ততো লিখতে পারব না। কাহিনীর সাথেও মিল নেই। জাস্ট কাহিনী ঘেষা। তারপর একে একে পড়লাম লোমহর্ষক সিরিজ, এডভেঞ্চার সিরিজ, মাসুদ রানা সিরিজ, ওয়েস্টার্ন সিরিজ।
ওয়েস্টার্ন সিরিজের বইগুলো খুব বেশি প্রিয় না হলেও মাসুদ রানা সিরিজের কিছু বই খুবই প্রিয়। গতবারও বাসায় যেয়ে পড়লাম "নরপিশাচ"। কাজী আনোয়ার হোসেনের কথার জাদু, লেখার জাদুতে আমি এতটাই বিমোহিত যে এখনও মাসুদ রানা সিরিজের কিছু কিছু ডায়লগ মাঝে মাঝে দেই। দুর্দান্ত এসপিওনাজ এজেন্ট MR9 এর ভক্ত আমার মত অনেকেই হয়ত আছেন। অদম্য, দুঃসাহসী, দেশপ্রেমিকের এই কাহিনীগুলো বিদেশী কাহিনী অবলম্বনে লিখিত হলেও পড়ার সময় বইয়ের ভিতরে ঢুকে যাই, যেন চোখের সামনে সবকিছু ভেসে উঠে।
মাসুদ রানা নিয়ে যে মজার কাহিনী না বললেই নয় সেটি হল, আমাদের একব্যাচ জুনিয়র নাহিদের কথা(বানানো নাম)। জুনিয়র হলেও তার খেলাধূলা ছিল আমাদের সাথেই। আমরা বই পড়তাম। সে আমাদের কাছ থেকে বই নিয়ে পড়ত। একদিন আমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছি। সে আমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করল,
"আশিক, নিতম্ব কি রে? সুডৌল নিতম্ব?"
ওর প্রশ্ন শুনে আমরা উত্তর দিব কি, হাসতে হাসতে শেষ। বুঝলাম পোলা মাসুদ রানা পড়েছে। শেষ পর্যন্ত ওর নিতম্বে লাথি মেরে ওর প্রশ্নের উত্তর দেয়া হল।
"বোস্টন জ্বলছে", "কালসাপ", "শ্বেতসন্ত্রাস", "আমিই রানা", "নরপিশাচ", "কালো ফাইল", "কালপুরুষ"--ইত্যাদি হল মাসুদ রানা সিরিজের প্রিয় কিছু বই।
আমাদের পাশের বাসায় এক নবদম্পতি ছিলেন। আমরা আপা-দুলাভাই ডাকতাম। তাদের কাছে মাসুদ রানা কিছু বই ছিল। অন্যান্য লেখকদেরও কিছু বই ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই মাসুদ রানার বইগুলো পড়া আমাদের শেষ হয়ে গেল। তারপর একদিন ভাই বাসায় ছিলেন না। আমি আপাকে বলে একটা বই নিয়ে আসলাম হুমায়ূন আজাদের। বইটার একটু পড়েই বুঝলাম ভুল বই নিয়ে আসছি।  একটু পর কান দিয়ে ভাব বেরোতে শুরু করল। জলদি পড়া শুরু শেষ করে ফেরত দিয়ে আসলাম। পরেরদিন ভাই আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, কি বই নিয়েছিলাম। আমি দেখালাম। উনি বললেন, এটাতো বড়দের বই। আমি নিরীহ ভঙ্গি করে বললাম, ও এইজন্যতো কিছুই বুঝলাম না। কি লিখছে না লিখছে! তারপর অন্য একটা বই নিয়ে ফিরে আসলাম।
হুমায়ূন আহমেদের সাথে পরিচয় হবার পর আমি এক নতুন জগতে প্রবেশ করলাম। একলাফে রকি বীচ, হেডকোয়ার্টার, বিসিআই, এফবিআই, সিআইএ, মোসাড, কেজিবি, র, আইএসআই, গোলাগুলি, খুনোখুনি ফেলে বাংলাদেশের রাস্তায় চলে এলাম। অবাক বিস্ময়ে একের পর এক বিস্ময় আবিস্কার করতে লাগলাম। আমার চিন্তা-ভাবনার নতুন নতুন দুয়ার খুলে যেতে লাগল। কিশোর পাশা, মুসা আমান, রবিন মিলফোর্ড, জর্জ গোবেল, টেরিয়াল ডয়েল, বোরিস-রোভার, মাসুদ রানা, ভিনসেন্ট গগল, কবীর চৌধুরী, গিলটি মিয়া, সোহানা, রূপা, ইলোরা, রেবেকার পাশাপাশি হিমু, মিসির আলী, শুভ্র, বাদল, ফিরোজ, আনিস, অপলা, তিথি, ইরা, মীরা, মাজেদা খালারাও আমার আপন হয়ে উঠে।
হুমায়ূন আহমেদের লেখা, লেখনি সম্পর্কে মন্তব্য করার দুঃসাহস আমার নেই। আমি কেবল পাঠক হিসেবে আমার অনুভূতি ব্যক্ত করতে পারি। বড় লেখকদের একটা গুন হচ্ছে তারা পাঠকের মনে কৌতূহল সৃষ্টি করতে পারেন। বই শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাঠকের মনে একটা প্রশ্ন ঘুরতে থাকে যে, "এরপর কি হল? এরপর কি হল?" বিশেষ করে মিসির আলী, হিমু! এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মত বই। কত এমন হয়েছে যে, বই পড়া শুরু করেছি শেষ না করে উঠিনি। এর মধ্যে আম্মা হয়ত আমাকে ডেকেছেন কোন কাজে। শুনতেই পাইনি। পরে কাছে এসে ডাকার পর শুনেছি।
আমার একটা বদভ্যাস হল আমি খাবার সময় বই পড়ি। বাসায় থাকলে অবশ্য। আম্মার, বড় বোনের অনেক বকাঝকা অনেকের অনেক কথা শুনেও আমি এই অভ্যাস থেকে পিছ পা হইনি। এরফলে একটা সুবিধা হল ভাত-তরকারী কেমন হল না হল সেটা মাথায় থাকে না। লবন কম হল কি বেশি তা নি চিন্তা করার সুযোগ নেই। আমার মনে আছে আমি তখন এইচ এস সি পরীক্ষার্থী। একটু পরে পরীক্ষা দিতে যাব। আম্মা ভাত নিয়ে আসলেন। আমি একটা মাসুদ রানা বের করলাম। তারপর পড়া শুরু করলাম। সাথে সাথে ভাত খাওয়া তো চলছেই।
হুমায়ূন আহমেদের নাটক নিয়ে আর কি বলব? "কোথাও কেউ নেই" কি রকম আলোড়ন তুলেছিল বাংলাদেশে তা সবাই জানে। তার নাটকগুলো মানুষের ভিতর ঢুকে যেত। যারা সেগুলো উপভোগ করত তারা নিজেদের মুখ দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের ডায়লগ বেরিয়ে আসত।
জীবিত থাকতেই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে অনেক টানা-হেচড়া, বিতর্ক চলেছে। মৃত্যুর পরেতো চলেছেই। আমার বক্তব্য হল, হুমায়ূন আহমেদ আর দশটা পুরুষের মত লুকিয়ে লুকিয়ে জল খাননি, নকল মুখোশ লাগিয়ে সমাজে চলাফেরা করেন নি। তার প্রথমদিককার লেখাগুলোতে অন্যরকম ইঙ্গিত থাকলেও শেষ বয়সের লেখাগুলো (বেশিরভাগ জীবনীমূলক গুলোতে) উলটো ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অন্তরের অবস্থা আল্লাহুই ভাল জানেন।
বর্তমান কালের লেখকদের দু'একজন কে নিয়ে একটু বলি। এখনকার লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লাগে Mostaque Ahamed কে। তার লেখা "নিহির ভালবাসা" পড়ে তার ফ্যান হয়ে যাই। নিরি তার অন্যবদ্য একটি বই। এছাড়াও রয়েছে গিগো, গিপিলিয়া, লিলিপুটদের গ্রহে, পৃথিবীতে লিলিপুটেরা, লিলিপুটদের ফিরে যাওয়া, প্রজেক্ট ইক্টোপাস, মুক্তিযুদ্ধের রাজারবাগ, জকি ইত্যাদি। বেশিরভাগই সায়েন্স ফিকশন। তার ভৌতিক ও প্যারাসাইকোলজিক্যাল কিছু বইও আছে।
মাসউদুল হকের নাম শুনেছেন? শোনার কথা না। তার একটা বই কিনেছিলাম কৌতূহলের বশে। নাম "দীর্ঘশ্বাসেরা হাওড়ের জলে ভাসে"। বইটার স্টার্টিংটা একটু স্লো। কিন্তু কাহিনী গতি পাবার পর বোঝা গেল অসাধারণ একটা বই। লেখক তার সুনিপুন লেখনি দিয়ে কাহিনীর শেষ পর্যন্ত সেই অসাধারন্ত্ব ধরে রেখেছেন।
এছাড়া জনপ্রিয় ন্যানোকাব্য লেখক আসিফ মেহ্‌দী ভাইয়ের কিছু বই পড়েছি। রাসায়াত রহমান জিকো ভাইয়ের কিছু বই পড়েছি। আরো নাম মনে নেই লেখকদের বই পড়া হয়েছে।
আমাদের সময় আমরা বাইরের বই পড়তাম লুকিয়ে লুকিয়ে। বাবা-মা দেখলেই দেবে বকা। বন্ধুদের সাথে বই বিনিময়ের পাশাপাশি শেয়ার করে বই কিনেছিও। আপু উপবৃত্তির টাকা দিয়ে বই কিনত। আমি টাকা জমাতাম। কিছু টাকা হলেই আপুর কাছ থেকে বাকি টাকা নিয়ে বই কিনে ফেলতাম। বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে একটা প্রতিযোগীতার মত ছিল। কে কার চেয়ে বেশি বই কিনতে পারে, পড়তে পারে। গল্পের বই পড়া একটা ক্রেডিটের ব্যাপার ছিল।
এখনকার অবস্থা জানি না। পোলাপান কি এখনো বই পড়ে? ওরা পৃথিবীতে এসেই দেখে মোবাইল নামক অত্যাশ্চর্য্য বস্তু! এটা দিয়ে কি না করা যায়? বইপড়ার চেয়ে অনেক ইন্টারেস্টিং ইন্টারেস্টিং ব্যাপার স্যাপার মোবাইলে থাকে। আমরা যেখানে সুনীলের ২০০-৩০০-৪০০ পৃষ্ঠার বই পড়ে ফেলেছি, সেখানে পোলাপান এখন ছোট খোজে ছোট!!
এখন জীবনের সবকিছু হয়ে গেছে Ctrl+c, Ctrl+v, Ctrl+x, Ctlr+s এর মত। তাল মিলিয়ে চলতে পারি না। ব্যাকডেটেড হয়ে যাই। হাটুর বয়সী পোলাপানের গালি খাই, ঝাড়ি খাই। বাস্তবতা বড়ই নির্মম। কার কবিতা যেন পড়েছিলাম,
"এসেছ নতুন শিশু
তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান!"

কতটা কঠিন কথা কত সহজভাবে উপস্থাপন। আসলেই আমাদের মত নকিয়া ৩৩০০ যুগ এটা না। এখন এন্ড্রয়েডের জয়জয়কার। আমাদের বেইল শ্যাষ!!

No comments: