Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Sunday, October 12, 2014

কুহুক

এক

"নাম কি?"
-"কুহুক"
-"কি!??"
-"জে কুহুক।"
-"কি করো?"

ছেলেটি মাথা নিচু করে হাসল। বিরক্তিতে মনসুর সাহেবের ভ্রু কুঁচকে গেল। বিরক্তি নিয়েই তিনি টেবিলে রাখা চায়ে চুমুক দিলেন। তার বিরক্তি আরো বেড়ে গেল। এত করে বলার পরেও পিয়ন বদমাইশটা চায়ে চিনি কম দিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই তিনি কম চিনিতে কিছু খেতে পারেন না। বিরস মুখে আরেকটা চুমুক দিয়ে তিনি ছেলেটার দিকে তাকালেন।


 কিছুদিন পরপরই গ্রাম থেকে একেকজন তার কাছে আসে। তবে এত কমবয়সী কেউ আর আগে আসেনি। ১২-১৩ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে। মাথা ভর্তি কোকড়ানো চুল। ময়লা হয়ে আসা একটা গেঞ্জি আর জিন্স পড়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আসার পর থেকে ছেলেটি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একবারো উপর দিকে তাকায় নি। তার এত বড় অফিসে তাকিয়ে দেখার মত অনেক কিছুই আছে। কিন্তু ছেলেটি মনে হয় মেঝে দেখেই আনন্দ পাচ্ছে।

মনসুর সাহেব বা হাতে ধরা চিঠির দিকে তাকালেন। নরসিংদীর খানেপুর গ্রামের হাইস্কুলের হেডমাস্টারের চিঠি। ছেলেটি সাথে করে নিয়ে এসেছে। একসময় তিনি ঐ স্কুলে পড়তেন। হেডমাস্টার সাহেবের কথা তার মনে আছে। তাকে খুবই স্নেহ করতেন।

"বাবা মনসুর,

পত্রপাঠে সালাম নিও। আশা করি আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ভালই আছো। আমাদের এইদিকের সব খবরা খবর ভাল। শুধু আমার হাপানির টানটা একটু বাড়িয়াছে। শীতকালে বিশেষ কষ্টে থাকি।

পর সমাচার এই যে, তোমার কাছে যেই ছেলেটাকে পাঠাইলাম সে আমার বিশেষ প্রিয় পাত্র। পড়াশুনায়ও খুব ভাল। দাবা খেলায় অত্র এলাকায় তাহার সুনাম রহিয়াছে। ছেলেটির পিতা-মাতা, আত্নীয়-স্বজন বলিতে কেহ নাই। এতদিন আমার কাছে ছিল। বৃদ্ধ এক প্রধান শিক্ষকের পক্ষে তাহার ভরণপোষন করা সহজসাধ্য নহে। তাই তোমার কাছে পাঠাইলাম। যদি পার ওকে দেখিয়া রাখিও।এই ছেলের সম্পর্কে অত্র এলাকায় বিশেষ কিছু কথা মানুষের মুখে মুখে ফিরিতেছে। অনেকে বলে তাহার অনেক ক্ষমতা। আমিও কিছু প্রমাণ পাইয়াছি। চিঠিতে বলিলে তুমি বুঝিতে পারিবে না। তোমার কাছে কয়েকদিন থাকুক। তুমি নিজেই দেখিতে পাইবে।শুনেছি সামনের মাসে তুমি আমাদের এখানে আসিবে। আসিলে অবশ্যি দেখা করিও।

ইতিআব্দুল মতিন।

প্রধান শিক্ষক, খানেপুর উচ্চ বিদ্যালয়।"

"এই ছেলে, এদিকে আসো।"

কুহুক জায়গায় দাড়িয়েই আবার হাসল। একচুলও নড়ল না। মনসুর সাহেব আবার বিরক্ত হলেন। আজকালকার ছেলেমেয়ে কথাই শুনতে চায় না।

"তোমার আত্নীয়স্বজন কেউ নাই?"

-"জ্বে না।"

-"এই চিঠিতে বলা হয়েছে তোমার কি যেন বিশেষ ক্ষমতা আছে। তুমি কি বলবে কি ক্ষমতা আছে?"

কুহুক আবার চুপ। মনসুর সাহেবের বিরক্তি সীমা ছাড়িয়ে যেতে লাগল। মনসুর সাহেব বেল টেপার কথা ভুলে গিয়ে ডেকে উঠলেন-

"মকবুল!!!মকবুল!!!!"
-"জ্বি স্যার???" 
-"এই ওকে নিয়ে যাও, বাইরের ঘরে বসিয়ে রাখ। অফিস থেকে বের হবার সময় সঙ্গে নিয়ে যাব।"
-"জ্বি স্যার।"

মকবুল কুহুককে নিয়ে বেড়িয়ে গেল। মনসুর সাহেব অন্যমনস্কভাবে চায়ে আবার চুমুক দিয়েই চমকে উঠলেন। এখন চা আগের চেয়ে মিষ্টি লাগছে! ঠিক যতটুকু উনার পছন্দ।

মনসুর সাহেব অবাক হয়ে চায়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

দুই

বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মনসুর সাহেব রুম থেকে বের হলেন। বের হতেই কুহুকের উপর তার নজর পড়ল। ছেলেটা সোফায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। বোধহয় ঘুমিয়েই পড়েছে।

"মকবুল!!এই মকবুল!!"
-"জ্বী স্যার??!!" মকবুল দৌড়ে এল।
-"ও এখানে এভাবে ঘুমোচ্ছে কেন? বাইরে থেকে কেউ আসলে কি ভাববে?"
মকবুল মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
"ওকে কিছু খেতে দিয়েছো?"
মকবুলের মাথাটা আরো নিচু হয়ে গেল। মনসুর সাহেব রাগ সামলালেন।
"যাও, ওকে ঘুম থেকে তোল। তুলে নিচে গাড়ির কাছে নিয়ে আসো।"
"জ্বী স্যার।"-মকবুল দৌড়ে গেল।

মনসুর সাহেব নিচে নেমে এলেন। তাকে দেখেই জমির গাড়ি আনতে ছুটে গেল। জমির মনসুর সাহেবের ড্রাইভার। বাড়ীর কেয়ারটেকারের দায়িত্বও তার। সকাল বেলা মনসুর সাহেবকে অফিসে দিয়ে যায়, আবার বিকেলে এসে নিয়ে যায়। আর সারাদিন বাড়ীতেই থাকে। যেদিন অফিস থাকে না সেদিন সে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। মনসুর সাহেব জানতে চাননি, জানার আগ্রহও বোধ করেন নি। 

জমির গাড়ী বের করতে করতে মকবুল কুহুককে নিয়ে নেমে এল। না খেয়ে থেকে ছেলেটার মুখ আমসি হয়ে আছে। সে ঘুম ঘুম চোখে গাড়ীতে জমিরের পাশে বসল।

মনসুর সাহেবের বাড়ীটা শুধু প্রকান্ড বললে ভুল হবে। ঢাকা শহরে এতবড় বাড়ী বোধহয় কমই আছে। বাড়ীটা চারদিক দিয়ে উচু পাচিলে ঘেরা। দাড়োয়ান আছে চারজন। পালা করে ডিউটি দেয়। মনসুর সাহেব কুকুর পছন্দ করেন না। তাই পাহাড়াদার কোন কুকুর নেই। তবে সার্ভেইল্যান্স ক্যামেরাগুলো রাতদিন চব্বিশ ঘন্টা ক্লান্তিহীন পাহাড়া দিয়ে যাচ্ছে।

বেশিরভাগ প্রকান্ড বাড়ীর মত মনসুর সাহবের বাড়ীটা বলতে গেলে খালিই। পুরো বাড়ীতে তার সাথে তার মেয়ে মিলি আর মিলিকে দেখাশোনা করার জন্য একজন মহিলা থাকেন। মহিলা প্রায় ৭ বছর ধরে এখানে আছেন। মিলি বলতে গেলে তার হাতেই বড় হয়েছে। মূল দালানের একপাশে বাবুর্চি, মালি, ড্রাইভার আর  দাড়োয়ানদের জন্য ব্যারাকের মত একতলা ঘর তোলা আছে। তাদের রান্না-বান্না,খাওয়া-শোওয়া সব সেখানেই। মূল বাড়ীতে বাবুর্চি রইস মিয়া ছাড়া আর অন্যদের প্রবেশাধিকার নেই।

 গাড়ীর শব্দ পেয়ে মিলি দৌড়ে এল। একহাতে একটা টেডীকে জড়িয়ে রেখেছে। মনসুর সাহেব গাড়ী থেকে নেমে মিলিকে জড়িয়ে ধরলেন। মেয়েটাকে যতবার দেখেন ততবার মনসুর সাহেবের বুকের ভিতরে মোচর দিয়ে উঠে। কি নিষ্পাপ ৭ বছরের একটা মুখ! পুরোপুরি তার মায়ের মত!জন্মের সময় মাকে হারিয়েছে। মনসুর সাহেব সেদিন চোখের পানিতে স্ত্রীকে বিদায় দিয়েছিলেন আর হাসিমুখে মেয়েকে বরণ করেছিলেন।

মেয়েটা যত বড় হচ্ছে ততই অদ্ভূত হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন ঘরের মধ্যে একা একাই থাকে। মনসুর সাহেব লক্ষ্য করেছেন মিলি প্রায়ই দোতলার বারান্দায় টাঙানো তার মায়ের ছবি দিকে তাকিয়ে থাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায়। কেউ ডাক দেবার আগপর্যন্ত ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আর ব্যবসায়ীক ব্যস্ততায় মনসুর সাহেব দ্বিতীয়বার আর সংসার করেননি। এখন মনে হচ্ছে মেয়েরদিকে তাকিয়ে হলেও তার সংসার করা উচিত ছিল। তাহলে মেয়েটা অন্তত একটা সঙ্গ পেত।

 কয়েক সেকেন্ডেই মনসুর সাহেবের মাথায় এতসব ভাবনা খেলে গেল। ততক্ষনে কুহুককে নামিয়ে দিয়ে জমির গাড়ী পার্ক করতে গেছে। মিলি অবাক হয়ে কুহুককে দেখছে। কুহুকের কোন দিকে খেয়াল নেই, সে তাকিয়ে আছে মাটির দিকে।

"মামনি, ও হচ্ছে কুহুক। কয়েকদিন আমাদের এখানে থাকবে।"

মিলি একটু তাকিয়ে থেকে ঘাড় কাত করল। মনসুর সাহেব মেয়েকে কোলে তুলে নিলেন।

"রইস মিয়া, রইস মিয়া!!!"

হন্তদন্ত হয়ে রইস মিয়া হাজির হল।

"রইস মিয়া, ওর নাম কুহুক। কয়েকদিন আমাদের সাথে থাকবে। তুমি নিচতলার একটা ঘর খুলে দাও। আর শোন, ওকে কিছু খেতে দাও আগে।"

"জ্বী আচ্ছা, স্যার।" রইস মিয়া কুহুকের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।

"জমির!!"

জমির গ্যারেজ থেকে বেড়িয়ে আসল।

"জমির, তুমি ঐ ছেলের মাপে কিছু কাপড় চোপড় নিয়ে আসো। আর শোনো, ওর দিকে একটু খেয়াল রাখবে। কিছু ঘটলে আমাকে জানাবে।"

"জ্বী স্যার, ঠিক আছে।" জমির মাথা নাড়ল। মনসুর সাহেব মেয়েকে নিয়ে উপরে চলে এলেন।

তিন

মনসুর সাহেব সিংগাপুর থেকে ফিরলেন বৃহস্পতিবার ভোড়ে। প্রায় একসপ্তাহ দেশে ছিলেন না। মেয়েকে ছেড়ে তিনি বিদেশে যেতে চাননা। তারপরো মাঝে মাঝেই অতি জরুরী কিছু মিটিং থাকে, এড়ানো সম্ভব হয় না। বাড়ীতে পা দিয়েই তিনি অনুভব করলেন কি যেন একটা ঘটেছে। দ্রুত উপরে উঠে মিলির রুমে ঢুকলেন। মিলি ঘুমুচ্ছে, একহাতে জড়িয়ে রেখেছে তার প্রিয় টেডী। মনসুর সাহবে কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করলেন। মেয়ের কপালে হালকা একটা চুমু দিয়ে বেডরুমে চলে এলেন।

খেতে বসে মনসুর সাহেবের খটকা কেটে গেল। ডাইনিং এর জানালায় একটা চড়ুই পাখি! একটু কান পাততেই মনসুর সাহেবের কানে এল অন্য পাখিদের কলকাকলি। বিস্ময়ে মনসুর সাহেব খাবার কথা ভুলে গেলেন। তিনি টেবিল থেকে উঠে জানালার পাশে দাড়ালেন। গাছের ডালে দুটো শালিক বসে আছে! এই বাড়ীটা কিনেছেন প্রায় ১০ বছর হয়েছে। কোনদিন কোন পাখি আশে পাশে দেখেছেন বলে মনসুর সাহেব মনে করতে পারলেন না। শুধু পাখি কেন, কোন প্রানীই এই বাড়ীর ধারে কাছে আসত না। মনসুর সাহেব এখন বাগানের এক কোনায় একটা সাদা বেড়ালও দেখতে পেলেন।

উলটো দিকের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই মনসুর সাহেবের চোখ কপালে উঠে গেল। বাম পাশের কোনার জাম গাছে ডালে কুহুক বসে আছে। তার দুই কাধে দুই চড়ুই বসে কিচির মিচির করছে। কুহুক হাসছে। মনসুর সাহেবের মনে হল কুহুক চড়ুইয়ের কিচিরমিচির বুঝতে পেরেই হাসছে।

একটু পরে কুহুক নিচে নেমে এল। বাগানের ভিতর দিয়ে হাটতে লাগল। প্রতিটা ফুল ছুয়ে ছুয়ে দিল। মনসুর সাহেবের মনে হল তার হাতের ছোয়ায় ফুলগুলো কেমন যেন হেসে উঠল। আরো উজ্জ্বল হয়ে ফুটতে লাগল।
মনসুর সাহেব বেডরুমে এসে গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন।

                                                                  
বিকেল বেলা মনসুর সাহেব বাগানে হাটতে বের হলেন। হাটতে হাটতে হঠাৎ মিলির উপর নজর পড়ল। মিলি তাকে দেখতে পায়নি। সে উলটো দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে কাকে যেন ইশারা করছে। মনসুর সাহেব খেয়াল করতেই বাগানের উলটো দিকে কুহুককে দেখতে পেলেন। সেও মিলির দিকে হাত দিয়ে কি যেন ইশারা করছে। অনেকটা বাচ্চাদের ইশারা ইশারা খেলার মত। কুহুকের প্রতিটা ইশারার সাথে সাথে মিলি যেন হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। মনসুর সাহেব মনসুর সাহেব মিলিকে কখনো এভাবে হাসতে দেখেন নি। মিলিকে বাগানেও ঘুরতে দেখেননি। ফুলের রেনুতে মিলির এলার্জি আছে। তাই মনসুর সাহেব কখনো তাকে বাগানে নিয়ে আসেন নি। আজকে মিলি ফুল হাতে নিয়ে বাগানে ঘুরছে। কি হচ্ছে এসব!! দুঃচিন্তায় মনসুর সাহেবের মাথা চিন চিন করতে লাগল। 

একটু এগিয়ে এসে মনসুর সাহেব জমিরকে ডাকলেন।

"জমির!!" 

বাগানের ভিতর থেকে জমির বেড়িয়ে এল। মুখ একটু যেন ফ্যাকাসে। মনসুর সাহেব অবশ্য তা খেয়াল করলেন না।

"আচ্ছা তোমাকে বলেছিলাম কুহুকের উপর খেয়াল রাখতে। রেখেছিলে??" 

"জ্বী স্যার, ওকে সব সময় চোখে চোখে রাখি।"

"বলোতো, ও সারাদিন কি করে।"

"স্যার, তেমন কিছুতো করে না। বাড়ীরে বাইরে যেতে পারে না। বেশিরভাগ সময়ই বাগানের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। সকাল বেলায় দেখি মাঝে মাঝে গাছে উঠে বসে থাকে। আমি অনেকবার নিষেধ করেছি স্যার, যেন গাছে না উঠে।"

"হুম, আর কি দেখেছো?"

"ছেলেটা তেমন একটা কথা বলে না। একশটা জিজ্ঞেস করলে একটা জবাব দেয়। তবে স্যার একদিন সন্ধ্যায় দেখলাম ফুলের সাথে কি যেন বিড়বিড় করে বলছে। আমার মনে হয় ছেলেটার মাথায় গন্ডগোল আছে।"

এমন সময় মিলির কান্নার শব্দ পাওয়া গেল। মনসুর সাহেব ছুটে গেলেন। 

"কি হয়েছে মামনি?"

মিলির ইশারায় মনসুর সাহেব যা বুঝলেন তা হচ্ছে মিলি তার প্রিয় টেডীটাকে খুজে পাচ্ছে না। 

"কাঁদে না মামনি। নিশ্চয় কোথাও পড়েছে। আমরা খুজে দিচ্ছি। পাওয়া যাবেই।" 

মিলির এই ভাল্লুকটা মনসুর সাহেব গতবার সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার সময় নিয়েছিলেন। মুক্তা ও সোনার কারুকাজ করা এই খেলনার দাম পড়েছিল প্রায় ২ হাজার ডলার।

গাছের আড়াল থেকে কুহুক বেড়িয়ে এল। এসেই মিলির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। মিলি আরো জোড়ে কেঁদে উঠল। মনসুর সাহেব মেয়েকে কোলে তুলে নিলেন। 

জমির এতক্ষন দাঁড়িয়ে দেখছিল। কুহুক বেড়িয়ে আসাতে জমির গিয়ে তার কলার চেপে ধরল।

"স্যার, নিশ্চয়ই এই হারামি নিয়েছে।" বলেই ঠাস করে একটা চড় মেরে দিল। " বল, কোথায় রেখেছিস, বল!!" বলেই আরেক চড়।

কুহুক চুপ। 

"বদমাইসের বাচ্চা, চোর। চুরি করতে আইসছ এই বাড়ীতে। আইজ তরে চুরির মজা বুঝামু।" 

"আহ! জমির!! ছেড়ে দাও ওকে।"

"স্যার, আপনে বুঝতেছেন না..."

"ছাড়ো বলছি!" মনসুর সাহেব ধমকে উঠলেন। ধমক খেয়ে জমির কুহুকের কলার ছেড়ে দিল। 

"এই ছেলে আমার দিকে দেখ।"-মনসুর সাহেব বলে উঠলেন। কুহুক একবার তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিল।

"তুমি ওর খেলনা নিয়েছো??" 

কুহুক চুপ। কোন কথা বলল না। মনসুর সাহেব দুঃখিত হলেন। ছেলেটাকে তার ভালই মনে হয়েছিল। অন্তত চোর মনে হয় নি। 

"জমির।"

"জ্বী স্যার।"

"ওকে বাড়ী থেকে বের করে দাও। আমি কোন চোর পুষব না।"

" জ্বী স্যার। ঠিকাছে। এই ব্যাটা চোরের বাচ্চা, আয় আমার সাথে।" জমির টানতে টানতে কুহুককে নিয়ে গেল। মনসুর সাহেব মেয়েকে নিয়ে উপরে চলে এলেন।

রাতে মিলিকে কিছুতেই খাওয়ানো গেল না। কাদতে কাদতে মনসুর সাহেবের কোলেই ঘুমিয়ে পড়ল। মেয়ের শোকে মনসুর সাহেবেরও খাওয়া হল না। তিনিও মেয়ের পাশে শুয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঘুমিয়ে পড়লেন।

                                                
সকাল বেলা পাখির কিচির মিচিরে মনসুর সাহেবের ঘুম ভাঙল। মিলি বিছানায় নেই। মনসুর সাহেব বারান্দার দিকে এগোতেই দেখেন মিলি তার মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে কাদছে। মিলি তার বাবাকে দেখেই দৌড়ে এল। মনসুর সাহেব মেয়েকে বুকে তুলে নিলেন। মিলি কাদতে কাদতে বলল,

"কুহুক চুরি করেনি আব্বু। ও আমাকে ভাল করে দিয়েছে। দেখো আমিও তোমাদের মত কথা বলতে পারি।"

মনসুর সাহেব গভীর আবেগে মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। তার চোখ ভিজে আসতে শুরু করেছে। 

[সমাপ্ত]

[বিঃদ্রঃ এই গল্পের সাথে হুমায়ূন আহমেদের একটা গল্পের মিল রয়েছে। কারন ঐ গল্পটা পড়েই এই গল্পটা লেখা হয়েছে। যদিও হুমায়ূন আহমেদের লেখনীর ধারে কাছেও এটা নাই। তারপর যদি কারো ভাল লাগে তবে পুরো ক্রেডিট তার। আর না লাগলে দায়দায়িত্ব সব আমার। ধন্যবাদ।]

No comments: