ওয়ালটনের এন্ড্রয়েডে দেখলাম বিল্টইন একটা এপস্ আছে। BDPLAN। অন্যকোন সেটে আছে কিনা জানি না। এটাতে বাংলাদেশের সবগুলো মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিভিন্ন ইন্টারনেট প্যাকেজ সম্পর্কে তথ্য আছে। কিভাবে একটিভ করতে হয়, কত টাকা কাটবে, কতদিন মেয়াদ--এইসব। আমার একটা ররি সীম আছে। এটাই ঐ এন্ড্রয়েডে লাগানো ছিল। ২ টাকা দিয়ে ৪এম্বি কিনলাম। 3G গতি! ওহ সরি, রবিরতো আবার 3.5G!!
পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর জন্য প্যাকেজটা নিলাম। কয়েকটা পেইজ বুকমার্কস করতে করতেই ৪এম্বি শেষ! মনেহয় ব্যাকগ্রাউন্ড এপস চালু ছিল। অটোরিনিউ প্যাক। ২৪ ঘন্টা পর আবার টাকা কেটে ফেলবে। কিন্তু আমারতো আর দরকার নেই। ডিএকটিভেট করে দেই।
ঢুকলাম BDPLAN এ! ওমা! এক্টিভেশন কোড আছে, কিন্তু ডিএক্টিভেশন কোড নেই!
খুব বেশি অবাক হয়নি। ফোন কম্পানির বাটপারি এই দেশে নতুন কিছু না। ভাবলাম ওয়েবসাইটে থাকতে পারে। পিসি দিয়ে রবির ওয়েবসাইটে ঢুকলাম। পুরো ওয়েবসাইট ছানাছানি করেও কিভাবে ডিএক্টিভেট করতে হয় বুঝতে পারলাম না। ডিরেক্ট কোড নেই।
রবি অন্যকোন দিক দিয়ে এক নাম্বার না হলেও বাটপারী আর গ্রাহকদের গালী খাওয়াতে একনম্বর সে অভিজ্ঞতা আমার আগেই হয়েছে।
গ্রামীন, বাংলালিংকে দেখেছি তারা গ্রাহকদের রেটিং দেয়। গ্রামীনের যেমন স্টার গ্রাহক আছে তেমনি বাংলালিংকের আছে সিলভার, গোল্ড, প্লাটিনাম-ইত্যাদি। এই রেটিংগুলা কিন্তু পজিটিভ। আমার ধারনা রবিরও রেটিং আছে। তবে নেভেটিভ রেটিং। এই যেমন গরু গ্রাহক, ছাগল গ্রাহক, ভেড়া গ্রাহক-ইত্যাদি।
কেন জানি আমার নিজেকে রবির ভেড়া গ্রাহক মনে হয়। একবার একটা জরিপ করেছিল রবি থেকে। নানা কিছু জিজ্ঞেস করার পর জানতে চাইল যে, আমার কোন পরিচিত লোককে আমি রবির কানেকশন নিতে উৎসাহিত করব কিনা? আমি না উত্তর দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই মনে হয় রবি আমাকে ভেড়া গ্রাহকদের টপ থ্রীতে তালিকাভুক্ত করেছে। আমার আরেকটা দোষ হল কিছু হলেই কাস্টমার কেয়ারে ফোন দেই আর ভ্যা ভ্যা শুনি। এখন বিপদে যখন পড়ছি ফোনতো দিতেই হবে। নাইলে প্রতিদিন ২ টাকা(!) করে কাটবে। দিলাম ফোন।
এখন আমি যেহেতু ভেড়া গ্রাহক আমার ফোন পেয়ে রবি কাস্টমার কেয়ার অফিস কেঁপে উঠবে এটা আমি মোটেই আশা করি নাই। সুরেলা মহিলা কন্ঠ সুরে সুরে আমাকে স্বাগতম জানাল অবশ্য। তারপর তাদের কারেন্ট প্রমোশন শুনালো বাধ্যতামূলক। স্কিপ করার কোন উপায় নাই। একমিনিট মনেহয় খেয়ে দিল। তারপর বাংলা শুনতে চাইলে...... এইগুলো এল। তাড়াতাড়ি কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধির নাম্বার চাপলাম। এরপর আমার মাথায় সাত আসমান ভেঙে পড়ল!
"সম্মানিত (ভেড়া) গ্রাহক। আমাদের কাছে আপনার প্রতিটা মুহূর্ত (প্রতিটা লোম) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কাস্টমার প্রতিনিধির সাথে কথা বলতে হলে আপনাকে ছয় মিনিট অপেক্ষা করতে হতে পারে।"
হতে পারে বলতে কিছু নেই। ঝাড়া ছয়মিনিট পরে লাইন দিল। এইখানে কপাল একটু ভাল যে, কলটা একটা ছেলে ধরেছিল। মেয়ে ধরলে কি হত বা হয়, সেটা অনেক আগে একটা পোস্টে লিখেছি আমি।
"শুভসন্ধ্যা স্যার, কিভাবে সাহায্য করতে পারি?"
>আমি ... প্যাকেজ নিয়েছিলাম। এটা অফ করে দেন।
"স্যার, আমি আপনাকে মেসেজ পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি সহজেই করতে পারবেন।"
>মেসেজ পাঠাতে হবে না। আপনি করে দেন।
"ঠিক আছে স্যার। আমি করে দিচ্ছি। আরেকটা মেসেজও আপনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি ভবিষ্যতে নিজে নিজেই করতে পারবেন। আমাকে একটু সময় দিবেন স্যার।"
>ওকে...
[আমি মিনিট গুনতেছি]
"আপনাকে ধন্যবাদ স্যার, আমাকে সময় দেয়ার জন্য। আপনার প্যাকেজ ডিএক্টিভেট হয়ে গেছে।"
>আচ্ছা, আমি একটা কথা বলি?
"সিউর স্যার।"
>আপনাদের ওয়েবসাইটে এত কিছু আছে। প্যাকেজের ডিটেলস! কিন্তু ডিএকটিভেশন কোড নাই কেন?
"স্যার, আপনাকে আমি মেসেজ করে দিয়েছি স্যার, কিভাবে আপনি অফ করবেন।"
>আচ্ছা ধরেন, আমি যদি আবার দশ বছর পর এই প্যাকেজটা নেই, আমি কি দশ বছর ধরে এই মেসেজটা আমার ইনবক্সে রাখব?
"যদি আপনি প্রয়োজন মনে করেন স্যার!"
>কিহ!!
"যদি আপনি প্রয়োজন মনে করেন।"
>ও আচ্ছা......!!"
"আর কোনভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি স্যার?"
>ন্...না
বলেই ফট করে রেখে দিলাম। এভাবেই রবির কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধির সাথে একজন ভেড়া গ্রাহকের কথোপকথন শেষ হল!
No comments:
Post a Comment