পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।
আগেই বলে নেই এই পোস্টের কোন রেফারেন্স হবে না। কাজেই রেফারেন্স পাগলারা পিছু নিবেন না।
আমি একজন কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট। বেশ কয়েকবছর আগে কোয়ান্টাম মেথডের কোর্স করেছিলাম ঢাকায়। এরপর সাইকি হিলিংয়ের কোর্স করে হিলিংও করেছি কিছুদিন। কাজেই কোয়ান্টামের কিছু জ্ঞান আমার হয়েছে। সেখান থেকেই লিখছি।
প্রথম কথা হল, কোয়ান্টাম মেথডে যেসব শিখানো হয় কুরআন-সুন্নাহতে এগুলো কিছুই নেই। কারও যদি জানা থাকে আছে তাহলে প্রমাণ দিবেন প্লীজ। সালাফে-সালাহীনদের মধ্যে কেউই এগুলো করেন নি।
দ্বিতীয়ত, এটাকে চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে গ্রহন করার সুযোগ নেই। কারণ রোগ-মুক্তির চেয়ে ঈমান বড়। ঈমানহারা হয়ে কোণ মুসলিম রোগমুক্তি চাইতে পারে না।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, কোয়ান্টাম কিভাবে ঈমান হারা করতে পারে? সবচেয়ে বড় কথা হল, কোয়ান্টাম সকল ধর্মকে "সমান" হিসেবে দেখতে শিখায়। অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু কখনই গ্রহন করা হবে না।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ আল বোখারী প্রথম জীবনে একজন জ্যোতিষি ছিলেন। আর জ্যোতিষিদের ব্যাপারে কঠোর সতর্কবার্তা এসেছে। কাজেই তিনি আমাদের কি শিখাবেন সেটা বিবেকবান মাত্রই বুঝতে পারার কথা।
আর ইয়োগা/যোগ-ব্যায়ামের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? জানতে চেয়েছি কোনদিন?
তৃতীয়ত, অনেকেই বলে থাকেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ও ধ্যান করেছেন। আমিও বলতাম একসময়। এ থেকে কোয়ান্টামের মেডিটেশনকে বৈধ করতে চাইতাম (আস্তাগফিরুল্লাহ, আউযুবিল্লাহ) । এখন যারা এসব বলতে চান, তারা কি বিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে জানতে চেয়েছেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ধ্যান কিরুপ ছিল?
চতুর্থত, এদের সেন্টারে গেলে আপনি দেখবেন সুন্দরী রিশেপশনিষ্টরা সাজু গুজু করে বসে আছে। আমি যতবার গিয়েছি চট্টগ্রাম সেন্টারে এমনটাই দেখেছি। পর্দার হুকুম কোথায়? কোয়ান্টাম যদি ইসলামবান্ধবই হবে তাহলে এসব মেয়েকে কেন সাজুগুজু করিয়ে বসিয়ে রাখা হচ্ছে? এদের কথাবার্তায় আমি বুঝেছি যে, উপরের নির্দেশেই তারা এই "বিশেষ" সাজ দেয়।
পঞ্চমত, মাটির ব্যাংক। মাটির ব্যাংকের টাকা কোথায় যাচ্ছে? সেই হিসেব কোথায়? কে সে হিসেব অডিট করেছে? মাটির ব্যাংক জমা দেয়ার জন্য সেন্টার থেকে বার বার ফোণ করত। দিতাম না জমা। একবার এক মেয়ে ফোন করে কমান্ডের সুরে আমাকে বলেছিল, গুরুজী বলেছে মাটির ব্যাংক জমা দিতে। হাইকমান্ড কি তাহলে চাদাবাজি করছে না? আমার কামাই করা টাকার প্রথম হকদার আমার ফ্যামিলি, আত্মীয়-স্বজন। কোয়ান্টাম কে? শহীদ আল বোখারী কে? তার ফান্ডে কেন আমাকে ডোনেট করতে হবে?
ষষ্ঠত, টাকা কথা তুললেই কেউ বান্দারবানের দিকে আঙুল দিয়ে দেখি দেন যে, সেখানে এই হয়েছে সেই হয়েছে। এতিমরা খাওয়া পড়া পাচ্ছে। সেখানে স্কুলে লেখাপড়া করা ছাত্রছাত্রীদের এই সেই এচিভমেন্ট আছে।
এটা বড় ভয়াবহ কথা। বাচ্চাকাল থেকেই তাদের হয়ত কুফরী শিখানো হচ্ছে। সব ধর্ম একই, সমান ইত্যাদি।
সপ্তমত, খুলশির এক প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে শহীদ আল বোখারী বললেন, বান্দারবানের জন্য বেশি বেশি টাকা দিতে মাটির ব্যাংকে। সেখানে মসজিদ হবে, মন্দির হবে, গির্জা, প্যাগোডা হবে। আরও কত কিছু হবে। ইসলাম দুনিয়াতে এসেছেই শিরকের মূলে কুঠারাঘাত করে আল্লাহর একত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে। সেখানে একজন মুসলিমের টাকা দিয়ে মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা? এরপরও আপনি সাফাই গাইবেন বোখারীর পক্ষে?
অষ্টমত, কয়েকদিন আগে শুনলাম এরা আসলে মুসলিমই না। বাহাই ধর্মের অনুসারী। এরপর আর কোন সন্দেহ থাকবে?
নবমত, এরা ঘটা করে জন্মদিন, মৃত্যুদিন পালন করে। আপনার নাম্বার নিয়ে থাকলে বছর বছর ফোন দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে। তাও মেয়েরা মধুর গলায় বলবে। মধু হই হই বিষ হাওয়ানের ধান্ধা এটা বুঝতে খুব বেশি বুদ্ধিমান হতে হয় না। কোনদিন কোন ছেলে আমাকে ফোন করেছে বলে মনে পড়ে না। অবশ্য চট্টগ্রামে যদি ছেলে না থাকে সে ভিন্নকথা।
দশমত, আবু ইব্রাহিম হাসনাইনের একটা কথা দিয়ে শেষ করি। কথাটা উস্তাদ তিম হাম্বলেরও হতে পারে।
ইসলাম ছাড়া অন্য যা কিছুতেই আপনি যান আপনি শান্তি পাবেন না। সবসময় মনের ভিতর একটা সন্দেহ, একটা খচখচানি থাকবে যে, আমি যা করছি ঠিক করছি তো? একটা পেরেশানি কাজ করবে। একমাত্র আল্লাহর দিকে ফিরেই এই অশান্তি দূর হতে পারে।
যারা তওবা করে ফিরে এসেছেন তাদের অভিনন্দন। যারা এখনো হক্ব মনে করছেন তাদেরকে বলব আরেকটু ভাবুন। ফিরে আসুন এই ঈমানহীন রাস্তা থেকে।
[সংক্ষেপে লেখার চেষ্টা করলাম। সম্ভবত বাকি সব মেথডের কাহিনিও সেম। নিচের অংশ দ্বিতীয় পর্বে ছিল]
প্রশ্ন আসলে দু'টো। যারা পক্ষে কথা বলেন তাদের প্রশ্ন, "এখানে ইসলাম বিরুধী কি আছে? / এখানে ইসলাম বিরোধী কিছু পাই নি" । পালটা প্রশ্নটা হল, এখানে ইসলামের কি আছে?
যদি তুলনা দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি তাহলে ইসলাম একটা ঘরের মত যেখানে আলো প্রজ্জ্বলিত। ঘরের বাইরে অন্ধকার। কাজেই যতক্ষন ঘরে থাকব ততক্ষনই আলো পাব। ঘরের বাইরে গেলে আমাকে অন্ধকার গ্রাস করবে। কাজেই ঘরের বাইরে এসে একথা বলার সুযোগ নেই যে, এখানে আলো বিরোধী কিছু পাই নি।
ধরেন আপনি বিয়ের জন্য পাত্রী খুজছেন। আমি বাজার থেকে একটা পুতুল কিনে নিয়ে আসলাম। গায়ে কোন স্পট নেই, দাগ নেই। সাইজেও প্রমান সাইজের মেয়ের মত, লম্বা-চওড়া, সুন্দরী। লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পড়িয়ে ভাল করে মেকাপ দিয়ে দিলাম। দেখতে আরও ভাল লাগছে এখন। বিয়ে করবেন?
কোয়ান্টামের বিষয়গুলো এমনই। এখানে দান করে, ওখানে রক্তের ব্যবস্থা করে, এতিম খাওয়ায়, ব্যথা-বেদনা সারিয়ে দিচ্ছে। বিনিময়ে টাকার পাশাপাশি আপনাকে ঈমানহারা করে দিচ্ছে। এখন চয়েস আপনার।
কোয়ান্টামে একটা কথা প্রায়ই বলে, আপনার মনোছবি যত পরিষ্কার হবে আপনার মনের বাসনা তত দ্রুত পুরা হবে। কাজেই বেশি বেশি মনোছবি দেখুন।
আমি অনেকবার ভেবেছি এটা আসলে কিভাবে কাজ করে? নিজেকে নিজেই ব্যাখ্যা দিতাম যে, একটা জিনিস বার বার ভাবলে নিজের ভিতরে এক ধরনের কর্মোদ্দীপনা তৈরি হয় এবং মানুষ কাজে উৎসাহ পায়। কিন্তু কোথায় যেন খচ খচ করত, নাহ, এটা মনেহয় সঠিক ব্যাখ্যা না। অন্যকিছু আছে এখানে।
আমি রেগুলার রিলাক্সেশন করতাম। প্রায় বছরখানেক টানা করেছি। বেশিরভাগ দিনই দুইবেলা করে করতাম। একসময় মনোছবি আমার কাছে প্রায় জান্তব হয়ে উঠত, চোখ বন্ধ করলেই লেভেলে চলে যেতাম। মেডিক্যাল চেকআপের (ইসিজি) সময় টেকনলজিস্ট অবাক হত এই বয়সে পালস এত কম কেন? কারন আমি চোখ বন্ধ করে থাকতাম। ডাক্তার এমনকি হার্টের সমস্যা মনে করে ইকোকার্ডীওগ্রাম করতেও বলেছিল।
মানুষ যখন স্বপ্ন দেখে তখন স্বপ্ন তার কাছে বাস্তব মনে হয়। কোণ পঙ্গুও হয়ত স্বপ্ন দেখে ঘোড়ার মত দৌড়াচ্ছে। মেডিটেশনের খেলাও এখানেই। মেডিটেশনের মাধ্যমে আপনি যত স্বপ্নের কাছাকাছি যেতে পারবেন তত কল্পনাটাই বাস্তব মনে হতে থাকবে। স্বপ্নে যেমন জিনদের প্রভাব থাকে তেমন এখানেও থাকতে পারে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে, মেডিটেশনের/হিলিংয়ের মাধ্যমে অনেকে নিজের ভিতরে এবং অন্যের ভিতরে দৌড়ে বেড়ায়, সমস্যা খুজে বেড়ায়, নিরাময় করায় এসবে জ্বিনের হাত আছে। গনকরা যেমন জ্বিনদের কাছে সংবাদ পায় তেমনি এখানেও জ্বিনেরা অন্তরে, মগজে তথ্য ঢেলে দেয়। ইসলামের কোথায় এগুলো আছে?
ইসলাম আমাদের শেখায় সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ তথা আল্লাহর যিকর করতে। কোয়ান্টাম শেখায় "কুন কুন" করতে। ইসলামে কোথায় "কুন কুন" করার কথা আছে?
কোয়ান্টা ভঙ্গি বা মুদ্রা সরাসরি হিন্দু/বৌদ্ধদের তথা অমুসলমিদের নিকট থেকে প্রাপ্ত। আর মুসলিম হয়ে আমরা এইগুলা করছি। হিন্দু/বৌদ্ধ দেব-দেবির কাছে সাহায্য চাইছি। কেউ আবার বলবেন না যে, এসব ভঙ্গি করে হিন্দু/বৌদ্ধরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইত/চায়!
তাহলে মেডিটেশন করে যে, অমুকের এই সমস্যা ওই সমস্যা দূর হয়েছে? তার কি বলবেন?
বলব যে, দুনিয়াতে যেটা হবার সেটাই হবে। উদাহরনস্বরূপ, কারও ভাগ্যে যদি আজকে দুইশ টাকা কামাই লেখা থাকে তাহলে সে দুইশ টাকাই কামাই করবে। এখন কি পদ্ধতিতে কামাই করবে তার উপর তার বিচার হবে। সে যদি চুরি ছিনতাই করে তাতেও দুইশ টাকাই পাবে। আবার রিকশা চালালেও দুইশ টাকাই পাবে। যে চুরি-ছিনতাই করবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে আর যে রিকশা চালিয়েছে সে পাবে পুরস্কার। এখানে এই আপত্তির সুযোগ নেই যে, কপালে ছিনতাই ছিল তাই ছিনতাই করেছি!
কাজেই বলা যায়, সমস্যার সমাধান আল্লাহ তায়ালা করবেন। আমাদের পরীক্ষা হল সেই সমাধানের জন্য আমরা কি আল্লাহর দিকে ফিরছি নাকি অন্য কারও দিকে? যে আল্লাহর দিকে ফিরবে তার জন্য পুরষ্কার, আর যে ফিরবে না তার জন্য শাস্তি!
তাহলে এসব সমস্যার ইসলামী সমাধান কি? একমাত্র সমাধান হল রুকইয়াহ। কুরআন দ্বারা চিকিৎসা, সুন্নাহ সম্মত চিকিৎসা! এখানে কোন ধান্ধাবাজি নেই। কাউকে এক পয়সা দেবারও দরকার নেই। নিজের সমস্যার সমাধান আল্লাহর কাছ থেকে নিজেই করেন। সব সিস্টেম আমরা শিখিয়ে দিতে প্রস্তুত আছি ইনশাআল্লাহ। কোন জায়গায় আটকে গেলে আমরা সহযোগীতা করতে প্রস্তুত আছি ইনশাআল্লাহ।
কোয়ান্টাম সম্পর্কিত কিছু লেখা
কোয়ান্টাম মেথড (এই লেখাটা রিভিউ করা হবে ইন শা আল্লাহ)
No comments:
Post a Comment