একটা গল্প বলি কেমন? গল্পটা হয়ত সত্যি নয়, হয়ত গল্পটা কাল্পনিক। তবুও এটা আমার ভাললাগার একটা গল্প।
গল্পটা একজন শিক্ষককে নিয়ে। নিবেদিত প্রাণ এক শিক্ষকের যিনি সত্যিকার অর্থেই শিক্ষকতাকে মহান পেশা হিসেবে নিয়েছেন। তিনি বেসরকারী একটি ফান্ডের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন সুনাম ও নিষ্ঠার সাথে।
তাই বলে তার শত্রুরা কিন্তু থেকে নেই। শিক্ষকদের মধ্যেই একটা গ্রুপ আছে যারা কোচিং বানিজ্যে লিপ্ত । তারা এই প্রতিষ্ঠানকেও কুলষিত করতে চায়। সব শিক্ষার্থীকে তাকে পিতার মত সম্মান করলেও কোটার পক্ষে অবস্থানের কারনে তাকে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। ক্যাম্পাসে পক্ষ বিপক্ষ দল মুখোমখি অবস্থান নেয়। হাতাহাতির ঘটনা পর্যন্ত ঘটে।
একে একে তিনি যাদের বিশ্বাস করেছিলেন তাদের সবার মুখোশ খুলে যেতে থাকে। ছাত্ররা তার মুখে মুখে তর্ক করতে থাকে, বিদ্রোহী শিক্ষকদের চক্রান্তে তিনি পদ ত্যাগ করেন। বন্ধুপত্নীর ষড়যন্ত্রে নিজ গৃহ থেকে হন বহিষ্কৃত। নিজের মেয়েও তাকে ভুল বোঝেন। এই বিপদে একমাত্র তার স্ত্রী তার পাশে দাড়ান। পরিস্থিতি এক পর্যায়ে তাকে এক বস্তিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। এভাবেই তিনি হিরো থেকে জিরোতে পরিনত হন।
সেই বস্তির পাশেই সুউচ্চ এক কোচিং সেন্টার। সেখানে কোচিং করলেই ভাল ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি সুযোগ।
মাস্টারমশাই লজ্জায়, অপমানে রাতে ঠিকমত ঘুমান না। ভোরেই ঘুম ভেঙে যায়। বারান্দায় এসে দেখতে পান। পাশের ঘরের এক মেয়ে বারান্দায় বসে কি যেন পড়া লেখা করছে। সারাজীবন শিক্ষকতা করেছেন। কি এক দুর্নিবার আকর্ষনে এগিয়ে যান। কি নিয়ে পড়াশুনা করছে জিজ্ঞেস করেন।
এভাবেই আবার শুরু। মেয়ের রেজাল্ট ভাল হচ্ছে দেখে তার আরও কিছু বান্ধবী তার সাথে পড়তে আসে। একসময় আসে পুরো ক্লাস। জায়গা হয় না। বস্তিবাসী তাদের অল্প জায়গা থেকে ছেড়ে দিয়ে আলাদা ঘরে তুলে দেয় ছেলেপেলের পড়ার জন্য। ধীরে ধীরে পুরো এলাকায় এই খবর ছড়িয়ে পড়ে। রিক্সাওয়ালার ছেলে থেকে শুরু করে গাড়িওয়ালার ছেলে/মেয়েও এখানে পড়তে আসে। একসাথে একই বেঞ্চে বসে পড়ে। কেউ কেউ আবার নাক সিটকে সরে যায়।
তার পুরনো ছাত্ররাও তাদের ভুল বুঝতে পেরে পিতৃতুল্য শিক্ষকের থেকে ক্ষমা আদায় করে নেয়। তারপর তিনজন মিলে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে তাদের শিক্ষাদান চলতে থাকে। আগের কিছু শিক্ষকই ভালোবাসার টানে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন।
ততদিনে ঐ কোচিং সেন্টারের ছাত্র সংখায় কমতে শুরু করেছে। ফ্রীতেই যদি উচু মানের শিক্ষা পাওয়া যায় কে যাবে টাকা দিয়ে কোচিং করতে!
কোচিংওয়ালাদের মাথা খারাপ। যে লোক ষড়যন্ত্র করে প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে সরিয়ে ছিল, সে লোকই ঐ কোচিং সেন্টার চালায় বেনামে। এবার সে পূর্ণ শক্তি দিয়ে বস্তি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। রাতের আধারে নোটিশ ঝুলানো হয় বস্তির দেয়ালে যে পরের দিনই বস্তি উচ্ছেদ করা হবে। ভোরে নোটিশ দেখে প্রচারের পর শত শত ছেলে-মেয়ে, তাদের অভিভাবক শুভাকাঙ্খিরা সেন্টারে ভিতরে জড়ো হয়। ততক্ষনে বস্তি ভাঙার জন্য বুল্ডোজার চলে এসেছে।
সবাই একে অন্যের হাত ধরে বুলডেজারের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। সরকারীলোক ড্রাইভারকে বুল্ডোজার চালাতে নির্দেশ দেয়। বুল্ডোজার চলে না... ব্যাপার কি? ড্রাইভার চাবি নিয়ে নিচে নেমে যায়। তার ছেলে যে এই বস্তিতেই পড়ালেখা করে। সেই এই বুল্ডোজার চালাতে পারবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়।
এরই মধ্যে ফান্ডের মালিক চলে এসেছে। তাকে আগেই সব জানানো হয়েছে। তিনি এসেই কোচিং সেন্টারের মালিককে তার প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করলেন। এরপর আগের প্রতিষ্ঠান ভেঙে নতুন করে আরও বড় আয়োজনে আরও নতুন নতুন আইডীয়া নিয়ে আরও বড় প্রতিষ্ঠান করার ঘোষনা দিলেন। আর সেই নতুন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক করলে সেই শিক্ষকে।
এভাবেই তিনি জিরো থেকে হলে সুপার হিরো...
মোরালঃ ভিতরে জিনিস থাকলে সেটা বের হবেই। কেউ আটকাতে পারবে না।
No comments:
Post a Comment