[ ডিসক্লেইমার
- এই পোস্ট মুলত অন্য একটি পোস্টের কমেন্ট এবং পালটা কমেন্টের সংকলন।
- পোস্টের শব্দ সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। প্রথমে বাকা হরফে মূল পোস্ট তুলে দেয়া হল। এরপর পর্যায়ক্রমে আমার কমেন্ট ও কমেন্টের রিপ্লাই তুলে দেয়া হল।
- সময় সময় এই নোট আপডেট করা হবে ইন শা আল্লাহ। ]
তথ্যভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য সমালোচনাই কাম্য🌹
প্রসঙ্গঃ তারাবীহর রাক‘আতের সংখ্যা
👍 সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীসের মাধ্যমে রসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে তিন ধরনের সংখ্যা বর্ণনা করা হয়েছেঃ
(১) ১১ রাক‘আতঃ আয়িশাহ (রাযি.) থেকে বিভিন্ন সনদে ও ভাষা-ভঙ্গিতে বর্ণিত হয়েছে যে, নাবী (সাঃ) রাত্রিকালে ইশার পরের দু’রাক‘আত ও ফাজরের পূর্বের দু’রাক‘আত সুন্নাত বাদে সর্বমোট এগার রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। এক বর্ণনায় এসেছে রসূলুল্লাহ (সাঃ) রমাযান ও অন্যান্য মাসেও রাত্রে ১১ রাক‘আতের বেশী নফল সলাত আদায় করতেন না। (বুখারী হাদীস নং- ১১৪৭, ১১৩৯, ৯৯৪, ২০১৩, মুসলিম- সলাতুল্লাইল ওয়াল বিত্র ৬/১৬,১৭,২৭)
(২) ১৩ রাক‘আতঃ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাত্রিকালে রসূলুল্লাহ (সাঃ) ১৩ রাক‘আত নফল সলাত আদায় করতেন। [বুখারী হাদীস নং ১১৩৮, তিরমিযী (তুহ্ফা সহ) ৪৪০] ইবনু আববাস (রাঃ)-এর হাদীসে ১১ রাক‘আতের চেয়ে দু’রাক‘আত বৃদ্ধি পাওয়া যায়। এ বর্ধিত ২ রাক‘আত এর ব্যাখ্যা বিভিন্নভাবে পাওয়া যায়। নাসাঈ গ্রন্থে ইবনু আববাসের বর্ণিত হাদীসে- ১৩ রাক‘আতের বর্ণনা এসেছে। ৮ রাক‘আত রাত্রের সলাত, তিন রাক‘আত বিত্র ও দু’রাক‘আত ফজরের পূর্বের সুন্নাত। (নাসাঈ ৩/২৩৭, ফাতহুল বারী ২/৫৬২) ফাজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত ধরে আয়িশাহ (রাযি.)-ও ১৩ রাক‘আতের কথা বর্ণনা করেছেন। দেখুন বুখারী হাদীস নং ১১৪০, মুসলিম- সলাতুল লাইলি ওয়াল বিত্র ৬/১৭-১৮, ফাতহুল বারী ২/৫৬২, বুখারীতে আয়িশাহ (রাযি.)-এর কোন কোন বর্ণনায় ১১ ও দু’রাক‘আতকে পৃথক করে দেখানো হয়েছে; হাদীস নং ৯৯৪, ১১৪০। যে সমস্ত বর্ণনায় ১৩ রাক‘আতের বিস্তারিত বর্ণনা আসেনি, সে সমস্ত বর্ণনায় ফজরের ২ ক‘আত কিংবা ইশার ২ রাক‘আত সুন্নাত উদ্দেশ্য। (ফাতহুল বারী ২/৫৬২ পৃঃ) কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) রাত্রের সলাত উদ্বোধন করতেন হালকা করে দু’রাক‘আত সলাত আদায়ের মাধ্যমে। হতে পারে এই ২ রাক‘আত নিয়ে ১৩ রাক‘আত। কিন্তু এই ২ রাক‘আত সলাত বিভিন্ন হাদীসের মাধ্যমে ইশার সুন্নাত বলেই প্রতীয়মান হয়। (আলবানী প্রণীত সলাতুত্ তারাবীহ ১৭ নং টীকা)
(৩) পনের রাক‘আতঃ ইশার পরের ও ফজরের পূর্বের দু’রাক‘আত সুন্নাত সলাত সহ আয়িশাহ (রাঃ) ও ইবনু আববাস উভয়েই ১৫ রাক‘আত বর্ণনা করেছেন। আয়িশাহ (রাযি.)-এর হাদীস নং ১১৬৪, ইবনু আববাস (রাঃ)-এর হাদীস নং ৯৯২। সহীহ হাদীসসমূহের মাধ্যমে ও পূর্বাপর প্রায় সকল মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহগণের মতে রসূলুল্লাহ (সাঃ) ১১ বা ইশা অথবা ফজরের সুন্নাত মিলিয়ে ১৩ বা উভয় সলাতের সুন্নাত মিলিয়ে ১৫ রাক‘আতের বেশী রাত্রের সলাত পড়েননি। (রমাযান সম্পর্কিত রিসালাহঃ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম)
👎 কেউ বলতে পারেন যে, যদি ১১ বা ১৩ এর অধিক রাক‘আত তারাবীহ পড়া সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত না হয় বরং সহীহ সাব্যস্ত হাদীসের বিপরীত হয় তবে সঊদী আরবে মাক্কাহ-মাদীনার মাসজিদদ্বয়ে কেন ২০ রাক‘আত পড়ানো হয়?
হ্যাঁ- এ কথা সত্য, তবে মাক্কার মাসজিদুল হারাম, মাসজিদে ‘আয়িশাহ সহ দু’চারটি মাসজিদ এবং মাদীনার মাসজিদে নাববী, কূবা ও ক্বিবলাতাইন এবং বিভিন্ন শহরে দু’একটি করে মাসজিদ ব্যতীত সৌদি আরবের হাজার হাজার মাসজিদে লক্ষ লক্ষ ও কোটি মুসলিম সহীহ হাদীস মোতাবেক ১১ রাক‘আত পড়েন। কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যদি ২০ রাক‘আত সহীহ হাদীসের বিপরীত হত তবে মাক্কাহ-মাদীনাহ্ মাসজিদে পালন করা হত না।
জবাবে বলা হবে, ৮০১ হিজরী থেকে শুরু করে ১৩৪৩ হিজরী পর্যন্ত সর্বমোট ৫৪২ বৎসর ধরে মাক্কার মাসজিদুল হারামে এক সলাত চার জামা‘আতে আদায় করার জঘন্যতম বিদ‘আত যদি এতদিন চলতে পারে তবে তারাবীর ক্ষেত্রে সহীহ হাদীসের বিপরীত আমল চালু থাকা বিচিত্র কিছু নয়। আজ থেকে ৬৯ বৎসর পূর্বে যেমন চার জামা‘আত উঠে গেছে, সহীহ হাদীস মুতাবিক এক জামা‘আতে আদায় করা হচ্ছে তেমনি এক সময় ২০ রাক‘আত উঠে গিয়ে সহীহ হাদীস মোতাবেক ১১ রাক‘আত চালু হওয়া দূরের কোন ব্যাপার নয়।
👍 যে সমস্ত হাদীসের কিতাবে ১১ রাক‘আতের দলীল বিদ্যমান তা উল্লেখ হলো : (বুখারী ১ম খন্ড ১৫৪,২৬৯ পৃষ্ঠা। মুসলিম ২৫৪ পৃষ্ঠা। আবূ দাঊদ ১ম খন্ড ১৮৯ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৪৮ পৃষ্ঠা। তিরমিযী ৯৯ পৃষ্ঠা। ইবনু মাজাহ ৯৭-৯৮ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তা মালিক ১৩৮ পৃষ্ঠা। সহীহ ইবনু খুযাইমাহ ৩য় খন্ড ৩৪১ পৃষ্ঠা। যাদুল মাআদ ১ম খন্ড ১৯৫ পৃষ্ঠা। বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩য় খন্ড হাদীস নং ১৫৯২-১৫৯৭। বুখারী আযিযুল হক ১ম খন্ড হাদীস নং ৬০৮। বুখারী আধুনিক প্রকাশনী ১ম খন্ড হাদীস নং ১০৭৬, ২য় খন্ড হাদীস নং ১৮৭০। মিশকাত নূর মোহাম্মদ আযমী ৩য় খন্ড ও মাদ্রাসা পাঠ্য ২য় খন্ড হাদীস নং ১২২৮। হাদীস শরীফ মাওঃ আব্দুর রহীম ২য় খন্ড ৩৯০ পৃষ্ঠা)
👎 বিশ রাক‘আত তারাবীহ প্রসঙ্গ :
১।
حديث ابن عباس : أن النبي كان يصلي في شهر رمضان (في غير جماعة) بعشرين ركعة (والوتر)
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ রমাযান মাসে (জামাআত ব্যতীতই) বিশ রাক‘আত তারাবীহ পড়তেন। তারপর বিতর পড়তেন।-এটি জাল হাদীস।
হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে ইবনে আবি শায়বা ‘মুসান্নাফ’ ২/৯০/২, আব্দ বিন হামিদ ‘মুনতাখাব মিনাল মুসনাদ’, তাবারানী ‘মু’জামুল কাবীর’ ৩/১৪৮/২ ও ‘আওসাত’ ইবনে আদী ‘কামেল’ ১/২৩, খতীব ‘‘মুওয়াজ্জেহ’’ গ্রন্থে ১/২১৯, বাইহাকী ২/৪৯৬ ও অন্যান্যরা। এদের প্রত্যেকেই আবী শায়বার সনদে এটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসের পূর্ণ সনদ নিম্নরূপ- أبي شيبة إبراهيم بن عثمان عن الحكم عن مقسم عن ابن عباس .................... ইমাম তাবারানী বলেন, ইবনে আববাস হতে এই সনদ ব্যতীত অন্য সনদে এটি বর্ণিত হয়নি। ইমাম বাইহাকী বলেন, এটি আবূ শায়বার একক বর্ণনা আর সে হলো যঈফ রাবী। আল্লামা আলবানী (রহঃ) বলেন- ‘‘আর অনুরূপ হাইসামী (রহঃ) বলেছেন যে, এখানে আবূ শায়বা হলো যঈফ’’। হাফিয (রহঃ) বলেন, ইবনে আবি শায়বার সম্পৃক্ততার কারণে সনদটি দুর্বল। হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত হাফিযে হাদীস আল্লামা জামালুদ্দীন যায়লায়ী হানাফী (রহঃ)-ও এর সনদকে যঈফ বলেছেন। তিনি হাদীসের মতনকে অস্বীকার করে বলেন, আর এটি আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসের বিপরীত।
আয়িশার হাদীসটি হলো- ما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يزيد في رمضان ولا في غيره على احدى عشرة ركعة (رواه الشيخان) রসূলুল্লাহ (সাঃ) রমাযানে ও অন্যান্য সময়ে এগারো রাকআতের বেশি পড়তেন না। অতঃপর দেখুন নাস্বুর রায়া ২/১৫৩, হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ)-ও একই কথা বলেছেন। ফকীহ আহমাদ বিন হাজার (রহঃ) ‘ফাতাওয়া কুবরা’ গ্রন্থে বলেন- নিশ্চয় ওটি চরম দুর্বল হাদীস أنه حديث شديد الضعف। ইরওয়াউল গালীল ৪৪৫। এছাড়াও সনদে আবূ শায়বা ইবরাহীম বিন ওসমান সম্পর্কে- ইমাম নাসাঈ (রহঃ) বলেন- সে পরিত্যক্ত متروك))। ইমাম শু’বা (রহ.) বলেন, সে মিথ্যাবাদী كذاب))। ইমাম দারেমী (রহ.) বলেন, তার বর্ণিত কথা দলিল হিসেবে গণ্য নয়। মিযানুল ঈতিদাল ১ম খন্ড। আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, আমার দৃষ্টিতে তিনটি কারণে হাদীসটি জাল। (১) হাদীসটি ‘আয়িশাহ (রাযি.) ও জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের বিপরীত। (২) সনদে আবূ শায়বা দুর্বলতায় চরম যা ইমাম বাইহাকী ও অন্যান্যদের উদ্ধৃতি দ্বারা বুঝা গেছে। তদুপরি তার সম্পর্কে-ইবনে মাঈন বলেছেন, সে নির্ভরযোগ্য নয় ليس بثقة))। জাওযাজানী বলেছেন, সে বর্জিত (ساقط)। শু’বা তাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেছেন- তার ব্যাপারে কেউ মত ব্যক্ত করেননি। ইমাম বুখারী যখন কারো সম্পর্কে (سكتوا عنه) বলেন, তখন সেই ব্যক্তির অবস্থান হয় নিকৃষ্টতর ও তার নিকট অধিকতর খারাপ। (৩) আবূ শায়বার হাদীসে বলা হয়েছে যে, নাবী রমাযানে জামাআত ছাড়া নামায পড়েছেন। এটি অনুরূপ জাবির (রাঃ)-এর হাদীসের বিরোধী।
‘আয়িশাহ (রাযি.)-এর অন্য হাদীসে রয়েছে-
أَنَّ رَسُولَ اللهِ r خَرَجَ لَيْلَةً مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ فَصَلَّى فِي الْمَسْجِدِ وَصَلَّى رِجَالٌ بِصَلَاتِهِ فَأَصْبَحَ النَّاسُ فَتَحَدَّثُوا فَاجْتَمَعَ أَكْثَرُ مِنْهُمْ فَصَلَّى فَصَلَّوْا مَعَهُ فَأَصْبَحَ النَّاسُ فَتَحَدَّثُوا فَكَثُرَ أَهْلُ الْمَسْجِدِ مِنْ اللَّيْلَةِ الثَّالِثَةِ فَخَرَجَ رَسُولُ اللهِ r فَصَلَّى فَصَلَّوْا بِصَلَاتِهِ
নিশ্চয় রসূল (সাঃ) এক রাত্রিতে রাতের মধ্যভাগে বের হলেন এবং মাসজিদে সলাত আদায় করলেন। লোকেরাও তাঁর সাথে সলাত আদায় করল। অতঃপর মানুষেরা সকালে উপস্থিত হয়ে বলাবলি করতে লাগল এবং (দ্বিতীয় দিনে) তাদের চেয়েও বেশি লোক জমায়েত হলো এবং তাঁর সাথে সলাত আদায় করল। এরপর লোকেরা সকালে উপনীত হয়ে (সলাতের ব্যাপারে) বলাবলি করতে লাগল। অতঃপর তৃতীয় রাত্রিতে মাসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেল। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাঃ) বের হয়ে সলাত আদায় করলেন।
হাদীসটি জাবির (রাঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ। আর তাতে রয়েছে যে- ,لكن خشيت أن تفرض عليكم فتعجزوا عنها বরং আমি ভয় করেছিলাম তোমাদের উপর ফারজ হয়ে যাবার। ফলে তা পালনে তোমরা অপারগ হয়ে পড়বে। সহীহ বুখারী ও মুসলিম।
এ সকল দিকগুলোই প্রমাণ করে যে, আবী শায়বার হাদীসটি বানোয়াট। (সিলসিলাতুল আহাদীসিয যঈফা অল-মাওযুআ ৫৬০)
২।
حدثنا وكيع عن مالك بن أنس عن يحيى بن سعيد أن عمر بن الخطاب أمر رجلا يصلي بهم عشرين ركعة
ইয়াহইয়া বিন সাঈদ হতে বর্ণিত। নিশ্চয় উমার (রাঃ) এক ব্যক্তিকে তাদের সাথে বিশ রাক‘আত নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসটি মুনকাতে‘। ইবনে আবী শায়বা- মুসান্নাফ ২য় খন্ড ১৬৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৬৮২, এই বর্ণনাটি মুনকাতি‘। আল্লামা মুবারাকপুরী ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ গ্রন্থে বলেছেন, আল্লামা নিমভী (রহঃ) ‘আসার আসসুনান’ গ্রন্থে বলেছেন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আনসারী উমার (রাঃ)-এর সময় পান নাই। আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন, তার সিদ্ধান্ত নিম্ভী (রহঃ)-এর অনুরূপ। এই আসারটি মুনকাতে‘ যা দলিল গণ্য হবার জন্য শুদ্ধ নয়। তদুপরি এটি উমার (রাঃ) হতে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত প্রতিষ্ঠিত হাদীসের বিপরীত।
হাদীসটি হলো- حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ عَنْ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ أَنَّهُ قَالَ أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيمًا الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً ‘উমার (রাঃ) দু’জন সাহাবী (১) উবাই বিন কা‘ব (২) তামীমদারীকে (রমাযান মাসে) ১১ রাক‘আত নামায পড়ানোর নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। (মুয়াত্তা মালিক হাদীস নং ২৫৩) হাদীসটি ‘মুয়াত্তা’ মালিক গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। এমনিভাবে ইয়াহইয়া বিন সাঈদের হাদীস রসূলুল্লাহ (সাঃ) হতে প্রমাণিত বিশুদ্ধ হাদীসের বিরোধী। তাছাড়া ইয়াহইয়া বিন সাঈদকে কেউ কেউ মিথ্যাবাদীও বলেছেন। যেমন, ইমাম আবূ হাতিম (রহঃ) বলেন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ কর্তৃক বর্ণিত কোন কথাই সত্য নয় বরং প্রত্যাখ্যাত। কারণ, সে হলো মিথ্যাবাদী। (জরহে আত্তাদীল ৯ম খন্ড, তাহযীবুত তাহযীব ৬ষ্ঠ খন্ড)
৩।
عن أبي الحسناء أن عليا أمر رجلا يصلي بهم في رمضان عشرين ركعة.
আবুল হাসানা বলেন, আলী (রাঃ) এক ব্যক্তিকে বিশ রাক‘আত তারাবীহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ হাদীসের সনদ যঈফ। মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২য় খন্ড, বাইহাকী ২/৪৯৬, ইমাম বাইহাকী বলেন, এর সনদে দুর্বলতা রয়েছে। আল্লামা আলবানী (রহঃ) বলেন, এতে আবুল হাসানা ত্রুটি যুক্ত। তার সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বলেছেন, সে কে তা জানা যায়নি। হাফিয (রহঃ) বলেছেন, সে অজ্ঞাত। আবুল হাসানা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস প্রত্যাখ্যাত। মিযানুল ই‘তিদাল ১ম খন্ড, যঈফ সুনানুল কুব্রা ২য় খন্ড, বাইহাকী।
৪।
عبد العزيز بن رافع قال : كان عن أبى بن كعب يصلي بالناس في رمضان بالمدينة عشرين ركعة ويوتر بثلاث.
আব্দুল আযীয বিন রাফে‘ বলেন, উবাই বিন কা‘ব
রমাযান মাসে মদীনায় লোকদের সাথে বিশ রাক‘আত (তারাবীহ) নামায পড়েছেন এবং বিতর পড়েছেন তিন রাকাআত। হাদীসটি মুনকাতে‘। মুসান্নাফ আবী শায়বা ২/৯০/১। এখানে আব্দুল আযীয ও উবাই এর মধ্যে ইনকিতা‘ হয়েছে। কেননা, তাদের উভয়ের মৃত্যুর ব্যবধান ১০০ বছর বা তারও অধিক সময়ের। দেখুন- (তাহযীবুত তাহযীব) আর এজন্যই আল্লামা নিম্ভী হিন্দী (রহঃ) বলেছেন যে, আব্দুল আযীয বিন রাফে, উবাই বিন কা‘বের সময় পান নাই। আল্লামা আলবানী বলেন, এখানে উবাই বিন কা‘বের আসারটি মুনকাতে‘। সাথে সাথে এটি উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের বিরোধী। (যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) অনুরূপ এটি উবাই এর সপ্রমাণিত বর্ণনার বিরোধী। বর্ণনাটি হলো- عن أبي بن كعب أنه صلى في رمضان بنسوة في داره ثمان ركعة উবাই বিন কা‘ব বলেন, তিনি রমাযান মাসে তার ঘরে মহিলাদের নিয়ে আট রাক‘আত (তারাবীহ) সলাত আদায় করতেন। অনুরূপ আবূ ইয়ালায় বর্ণিত জাবির (রাঃ)-এর হাদীস- আব্দুল্লাহ বলেন, উবাই বিন কা‘ব রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! রমাযানের রাত্রিতে আমার একটি ব্যাপার ঘটে গেছে। রসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তা কী হে উবাই! সে বললো, আমার ঘরের নারীরা বলে যে, আমরা কুরআন পাঠ করবো না বরং আপনার সঙ্গে নামায পড়বো? তিনি বললেন, আমি তাদের নিয়ে আট রাক‘আত নামায পড়লাম এবং বিতর পড়লাম। হাইসামী বলেছেন, এর সনদ হাসান, আলবানীর মতও তাই।
৫।
أخبرنا أبو طاهر الفقيه حدثنا أبو عثمان البصري حدثنا أبو أحمد محمد بن عبد الوهاب حدثنا خالد بن مخلد حدثنا محمد بن جعفر حدثني يزيد بن خصيفة عن السائب بن يزيد قال : كنا نقوم في زمن عمر بن الخطاب بعشرين ركعة والوتر
সায়িব বিন ইয়াযীদ বলেন, আমরা উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর সময় ২০ রাক‘আত তারাবীহ ও বিতর পড়তাম। (নাস্বুর রায়া- লিআহাদীসে হিদায়া ২য় খন্ড, ৯৯ পৃষ্ঠা) হাদীসটির সনদ যঈফ। হাদীসের সনদে- (১) আবূ উসমান বাসরী রয়েছে। সে হাদীসের ক্ষেত্রে অস্বীকৃত। (২) খালিদ বিন মুখাল্লাদ রয়েছে। সে যঈফ। তার বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত, তার কোন বর্ণনা দলীল হিসেবে গণ্য নয়। তদুপরি সে ছিল শিয়া ও মিথ্যাবাদী। (তাহ্যীব ২য় খন্ড) (৩) ইয়াযীদ বিন খুসাইফা রয়েছে। তার সকল বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত। (মিযানুল ই’তিদাল, তাহযীবুত্ তাহযীব ২য় খন্ড)
৬।
- رواية يزيد بن رومان قال : كان الناس يقومون في زمن عمر بن الخطاب في رمضان بثلاثة وعشرين ركعة
ইয়াযীদ বিন রুমান বলেন, উমার (রাঃ)-এর সময় লোকেরা (রমাযানে) ২৩ রাক‘আত নামায পড়তো। এটির সনদ যঈফ। মালিক ১/১৩৮, ফিরইয়াবী ৭৬/১, অনুরূপ বাইহাকী ‘সুনান’ ২/৪৯৬ এবং ‘‘মা’রেফা’’ গ্রন্থে আর তাতে তিনি হাদীসটিকে এই বলে যঈফ বলেছেন যে, ইয়াযীদ বিন রুমান উমার (রাঃ)-এর যামানা পান নি। ইমাম যায়লায়ী হানাফী (রহঃ) ও নাস্বুর রায়াহ গ্রন্থে একই কথা বলেছেন- দেখুন নাস্বুর রায়াহ ২/১৫৪। ইমাম নববী (রহঃ)- এটিকে যঈফ বলেছেন, মজমু’ গ্রন্থে। অতঃপর তিনি বলেছেন, হাদীসটি ইমাম বাইহাকী বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সেটি মুরসাল। কেননা, ইয়াযিদ বিন রুমান উমার (রাঃ)-এর সময়ে ছিলেন না (فان يزيد بن رومان لم يدرك عمر) * অনুরূপ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহঃ) এটিকে যঈফ বলেছেন- ‘উমদাতুল কারী শরহে সহীহ বুখারী (৫/৩০৭) গ্রন্থে এই বলে যে, এর সনদ মুনকাতে‘। * আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলাবানী (রহঃ)-ও এটিকে যঈফ বলেছেন (ইরওয়ালিল গালীল ২/১৯২)
👍 তারাবীহর রাক‘আত সম্পর্কে মনীষীদের পর্যালোচনাঃ
* শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী হানাফী (রহঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে ২০ রাকআতের প্রমাণ নেই। ২০ রাকআতের হাদীস দুর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে। যার দুর্বলতার ব্যাপারে সকল হাদীস বিশারদগণ একমত।
* হিদায়া গ্রন্থের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনেল হুমাম (রহঃ) বলেন, তাবারানী ও ইবনে আবী শায়বার হাদীস দুর্বল এবং বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসের বিরোধী। ফলে এটি বর্জনীয়।
* আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) হতে কেবলমাত্র ৮ রাক‘আত তারাবীহ-এর হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। ২০ রাক‘আতের হাদীস যঈফ। এ ব্যাপারে সকলে একমত। খুবই সঠিক কথা স্বীকার করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই যে, রসূলুল্লাহর তারাবীহের নামায ছিল ৮ রাক‘আত। (আল-‘উরফুশ শাযী ৩০৯ পৃষ্ঠা)
* মোল্লা আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, হানাফী শায়খদের কথার দ্বারা বিশ রাক‘আত তারাবীহ বুঝা যায় বটে কিন্তু দলীল প্রমাণ মতে বিতর সহ ১১ রাক‘আতই সঠিক। (মিরকাত ১ম খন্ড)
* আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন,২০ রাক‘আতের হাদীস সহীহ হাদীসের বিরোধী হওয়ায় তা বিনা দ্বিধায় বর্জনীয়। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন- ইমাম নাসাঈ ‘যুআফা’ গ্রন্থে, আল্লামা আইনী হানাফী উমদাতুল কারী গ্রন্থে, আল্লামা ইবনু আবেদীন ‘হাশিয়া দুররে মুখতার’ গ্রন্থে এবং অন্যান্য বহু মনীষীগণ।
* বর্তমান জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) তাঁর প্রণীত ‘সলাতুত তারাবীহ’ গ্রন্থে তারাবীহর রাক‘আত সংখ্যা সম্পর্কে বলেন : নাবী (সাঃ) ১১ রাক‘আত তারাবীহ সলাত আদায় করেছেন। যে হাদীসে তাঁর বিশ রাক‘আত পড়ার উল্লেখ রয়েছে তা খুবই দুর্বল। তাই এগার রাক‘আতের বেশি তারাবীহ পড়া জায়িয নয়। কেননা, বৃদ্ধি করাটাই রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কর্মকে বাতিল ও তাঁর কথা অসার করাকে আবশ্যক করে দেয়। আর নাবী (সাঃ)-এর ভাষ্যঃ ‘‘তোমরা আমাকে যেরূপ সলাত আদায় করতে দেখেছ ঠিক সেভাবেই সলাত আদায় করো’’। আর সেজন্যই ফাজরের সুন্নাত ও অন্যান্য সলাতে বৃদ্ধি করা বৈধ নয়। যখন কারোর জন্য সুন্নাত স্পষ্ট হয় না এবং প্রবৃত্তির অনুসরণও করে না, ১১ রাক‘আতের বেশি তারাবীহ পড়ার কারণে তাদেরকে আমরা বিদ‘আতীও বলি না এবং গোমরাহও বলি না। এ ব্যাপারে চুপ থাকাটাই নিঃসন্দেহে উত্তম। কেননা, নাবী (সাঃ)-এর বাণী হলোঃ ‘‘মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর হিদায়াতই উত্তম হিদায়াত’’। আর উমার (রাঃ) তারাবীহ সলাতে কোন নতুনত্বই সৃষ্টি করেননি। বস্তুতঃ তিনি এই সুন্নাতে জামা‘আতবদ্ধতা সৃষ্টি করেছেন এবং সুন্নাতী রাক‘আত সংখ্যার (১১) হিফাজত করেছেন। উমার (রাঃ) সম্পর্কে যে উক্তি বর্ণনা করা হয়- তিনি এ তারাবীহর সংখ্যাকে অতিরিক্ত বিশ পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন- এর সনদের কিছুই সহীহ নয়। নিশ্চয় এর সনদের একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে না এবং সমার্থতার ভিত্তিতে শক্তিশালী বুঝায় না। ইমাম শাফিয়ী (রহঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রহঃ) এটিকে দুর্বল বর্ণনা বলেই নির্দেশনা দিয়েছেন এবং ইমাম নববী (রহঃ), ইমাম যায়লায়ী (রহঃ) সহ অন্যান্যরাও এর কতককে যঈফ সাব্যস্ত করেছেন।
👌 যদি উল্লেখিত অতিরিক্ত করাটা প্রমাণিত হয়ও তথাপিও আজকের যুগে তা আমল করা ওয়াজিব নয়। কেননা, অতিরিক্ত করণটি এমন একটি কারণ যা সহীহ হাদীস থাকার কারণে দূর হয়ে গেছে। এই (২০) সংখ্যার উপর বাড়াবাড়ির ফল এই যে, সলাত আদায়কারীরা তাতে তাড়াহুড়া করে এবং সলাতের একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি সলাতের বিশুদ্ধতাও নষ্ট হয়ে যায়। এ অতিরিক্ত সংখ্যা আমাদের গ্রহণ না করার কারণ ঠিক সেরূপ যেমন ইসলামী আইনে উমারের ব্যক্তিগত অভিমতঃ এক বৈঠকে তিন তালাককে তিন তালাক হিসেবে গ্রহণ না করা। আর এতদুভয়ের মাঝে কোনই পার্থক্য নেই। বরং আমরা গ্রহণ করেছি সেই যিনি [নবী (সাঃ)] তাদের (২০ রাক‘আতপন্থীর) গৃহীত ব্যক্তি হতে উত্তম। এমনকি তাদের গৃহীত ব্যক্তি মুকাল্লিদদের নিকটেও উত্তম। সাহাবীদের কেউ ২০ রাক‘আত তারাবীহ পড়েছেন- তার প্রমাণ নেই। বরং ইমাম তিরমিযী (রহঃ) আলী (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি দুর্বল হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। নিশ্চয় ২০ রাক‘আতের ব্যাপারে ইজমা সাব্যস্ত হয়নি। তাই সুন্নাত সম্মত (১১) সংখ্যাকে আঁকড়ে ধরাই অবশ্য কর্তব্য যা রসূলুল্লাহ (সাঃ) ও উমার (রাঃ) হতে প্রমাণিত। আর আমরাতো আদিষ্ট হয়েছি নাবী (সাঃ) ও তার খালীফা চতুষ্টয়ের সুন্নাত পালনে যারা ছিলেন সঠিক পথের দিশারী। ইমাম মালিক, ইবনুল আরাবীসহ অন্যান্য উলামা এই অতিরিক্ত (২০) সংখ্যাকে অপছন্দ করেছেন।
এই পোস্টে আমাকে ট্যাগ না করলে আমি পড়তামই না। যাইহোক আমার প্রথম কমেন্টঃ
এইগুলা আর ভাল লাগে না। রমজানে ইবাদত বন্দেগী করব নাকি তারাবি নিয়ে বহছ? ভবিষ্যতে এই ধরনের পোস্টে আমাকে ট্যাগ/মেনশন না করার অনুরোধ রইল। আমিতো এসব পোস্টে কাউকে ট্যাগ করি না। কারো মন চাইলে তারাবী পড়বে, মন চাইলে রোযা রাখবে। মনে না চাইলে পড়বে না, রাখবে না। আমার কি তাতে? গত কয়েকবছর ধরে এই ক্যাচালের মধ্যে আছি। আমার গবেষনায় আমি যা পাইছি তা হল হানাফি ফিকহের ফায়সালা, মাসয়ালার দলিল এবং যুক্তিসমূহ অন্যগুলোর চেয়ে শক্তিশালী ও অকাট্য। কাজেই যে আমলের উপরে ছিলাম সে আমলের উপরেই আছি। এতে কেউ আমাকে বিদাতী, জাহান্নামি বললেও আমার কিছুই আসে যায় না।
আমার কমেন্টের রিপ্লাইঃ
বোদ্ধা ব্যক্তিদের পরামর্শ সাদরে গ্রাহ্য!আমরা যদি নিউট্রাল পয়েন্ট থেকে নিজেকে না চিনি, নিজ ধর্মকে যাচাই না করি, তাহলে আমাদের জন্য এটাই শ্রেয় যে, "হাজার বছর ধরে চলে আসা সংস্কার, যেটা আমার দাদার দাদারা, বাবারও করে এসেছেন, সেই মূর্তিপূজা আমি ছাড়ি কী করে?!"ব্যক্তিগতভাবে জানি, ভালোবাসি, তাই ট্যাগ করতে হয়!!
আমার রিপ্লাইঃ
ভাই, আপনি আমার কথা বুঝলেন না কেন বুঝলাম না। প্রথম কথা বলছি যেন, রমজান মাসে এসব থেকে বিরত থেকে এবাদত বন্দেগীতে সময় কাটাই। বছরের অন্য সময় এগুলা আলোচনা করা যাবে। কিন্তু রমজানের আমল অন্যসময় পাওয়া যাবে না।
ট্যাগের কথা বলছিলাম কারন হল এইগুলা দেখতে দেখতে চোখ পচে গেছে। আর ভাল লাগে না। কেউ পোস্ট দিলেও পড়িনা। কেউ ট্যাগ করলে ভাবি ইম্পর্ট্যান্ট কিছু হবে। যখন দেখি এইগুলা তখন অসম্ভব বিরক্ত লাগে।
শেষের কথাগুলা বলছিলাম কারন হল ছোটকাল থেকে যেভাবে আমল করে আসছি প্রত্যেকটা যদি যাচাইয়ের কাজে নামতে হয় তাহলে সময় বের করার জন্য "রুজি" অন্বেষণ বাদ দিতে হয়। পাতিলের ভাত যেমন দু-একটা টিপলেই হয় তেমনি দু-একটা হানাফী ফায়সালা নিয়ে পড়াশুনা করার পর যখন দেখলাম ঐগুলা ঠিকই আছে তখন বাকিগুলার উপরও ভরষা করেছি যে ঐগুলাও ঠিকই হবে।
আর এখন মিডিয়ার কোন লেকচার, লেখার উপর বিন্দুমাত্র আস্থা নাই। যত ভাল কথাই বলুক বাস্তবে মিলিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই গ্রহণ করি না এবং কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলেও উত্তর দেবার পর মিলিয়ে দেখার কথা বলি।
রিপ্লাইতে আপনি যে কথা বললেন সেগুলা অসম্ভব আপত্তি কর। আপনার "উপমা" যথার্থ নয়, দুঃখজনক। তারাবী ৮ রাকাত পড়ুক বা ২০ রাকাত অথবা কেউ ৬০ বছরের জীবনে কোনদিনও পড়ে নাই আপনি তাকে শিরককারীদের সাথে তুলনা দিতে পারেন না। আমাদের বাপ-দাদারা যেভাবে আমল করেছেন তার সাথে মূর্তি পূজারীদের দূরতম সম্পর্কও নেই। নির্ঘাত মূর্তিপুজা শিরক এবং তা ইসলাম বহির্ভুত। তারাবী ২০ রাকাত অথবা ৮ রাকাত অথবা একেবারেই না পড়া কি ইসলাম বহির্ভূত? কাজেই বাপ-দাদা তারাবী ২০ রাকাত পড়লে আমাকে ৮ রাকাত অথবা ৮ রাকাত পড়ে থাকলে আমাকে ২০ রাকাত পড়ে "সহীহ মুসলিম" হতে হবে আর নাহয় বাপ-দাদার ইসলাম বহিভুর্ত কর্ম থেকে বের হতে পারলাম না - এটা কোন যুক্তিই না।
এরপরও যদি না বোঝেন তাহলে আর বোঝানোর কিছু নাই।
অন্য এক ভাইয়ের আমাকে রিপ্লাইঃ
ভাই রবিন রাসুল সঃ বলেছেন, কিয়ামতের দিন সবচেয়ে দুর্ভাগা আমলদার হবে ঐ ব্যক্তি যে অনেক আমল করেছে,ইবাদাত করেছে,কিন্তু রাসুল নির্দেশিত পদ্ধতির সাথে তার আমল না মিলার কারনে তার সমস্ত ইবাদাত বরবাদ হয়ে যাবে।আপনি রোযার মাসে অনেক আমল করলেন কিন্তু সেগুলো রাসুলের পদ্ধতির সাথে যদি না মিলে এই আমল করে লাভ কি?
আমার রিপ্লাইঃ সেটা জাজমেন্টের দায়িত্ব আল্লাহর উপরেই থাক। আর এমনতো নয় যে সারাবছর রাসূল (সাঃ) এর পথে (আপনি যেটা মনে করেন) করছি আর রমজানে অন্যপথে। আর কোনটা রাসূল (সাঃ) নির্দেশিত পদ্ধতির সাথে মিলে না স্পষ্ট করে বলেন।
২য় ভাইয়ের রিপ্লাইঃ তারাবিকে ২০ রাকাত নিধার্রিত করে নেয়া।
আমার রিপ্লাইঃ কি ভয়ংকর কথা! আচ্ছা ভাই, আপনি যা বলেন তাই সই। একমত আপনার সাথে।
প্রথম ভাইয়ের রিপ্লাইঃ রসুল (সঃ) যেটা করেনই'নি, সেটাকে রসুলের আমল হিসেবে মান্য করা বোকামি, আর আমল করা গোমরাহি! সত্য জানতে অনাগ্রহকে "পশ্চাৎপদ" বলা গেলেও, সত্য মানতে অনিচ্ছাকে কি "ভ্রষ্টতা" বলে না?!
রসুল (সঃ) জীবনে কোনোদিনও নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করেননি! কিন্তু আমরা সেটাকে শুধু প্রথা নয়; অলিখিতভাবে নামাজের অঙ্গও বানিয়ে ফেলেছি! আবার এই চরম বিদআত জানার পরেও আমরা লোকলজ্জা, চক্ষুলজ্জা, কটুক্তি, হেয়পনার ভয়ে শুদ্ধ আমল করতেও পারি না; কাউকে এই দাওয়াতও দিতে পারি না!! এর একমাত্র কারণ, দাদা-বাবা থেকে প্রাপ্ত সংস্কার!!
"মূর্তিপূজা" আর "জেনেশুনে বিদআত আমল করা" কি ভিন্ন অপরাধ?! (হয়তোবা একটা শিরকী, অন্যটা মুনাফেকী)
ভাত একটা টিপলেই যদি বোঝা যেত; তাহলে বাইবেলের ঐশী কিছু বিষয়ের সত্যতা দেখে কি আমরা সমগ্রটাই মেনে নেব, যদিওবা একসময় এটাও আল্লাহর কিতাব ছিল!?
"আচ্ছা যান, তালগাছ আপনার", আলোচনাতে "হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম" এরূপ কিছুই নেই! পুরোটাই নিউট্রাল পয়েন্ট থেকে বোঝার জিনিস!!
রমজানের শেষে সময় হলে অবসরের একটু টাইম দ্বীন গবেষণার পিছনে খরচ করবেন আশা করি, যদিওবা এটি নন-প্রোডাক্টিভ বিষয়; বা এই ব্যাপারে আপনি ইন্টারেস্টেড নন!
ধন্যবাদ Ahmmad Robin ভাই, সঙ্গে থাকার জন্য!
আমার পরবর্তী রিপ্লাই সমূহঃ
১. “বিশর ইব্ন মুহাম্মদ (রঃ)......... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ধারনা করা থেকে বিরত থাকো। কারো প্রতি ধারণা পোষণ করা সবচেয়ে বড় মিথ্যা ব্যাপার। তোমরা দোষ অন্বেষণ করো না, গোয়েন্দাগিরী করো না, পরস্পরে হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হয়ো না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহ্র বান্দা ভাই ভাই হয়ে থেকো”। [সহীহ বুখারী, নবম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ৪৩১, হাদীস নং ৫৬৩৮, ইসলামী ফাউণ্ডেশন]
আর আপনি কি করলেন আসুন দেখি।“রমজানের শেষে সময় হলে অবসরের একটু টাইম দ্বীন গবেষণার পিছনে খরচ করবেন আশা করি, যদিওবা এটি নন-প্রোডাক্টিভ বিষয়; বা এই ব্যাপারে আপনি ইন্টারেস্টেড নন!” আর আপনি ধারনা করে নিলেন যে আমি এই ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড নই। আপনি রাসূল (সাঃ)এর হাদিস বিরুদ্ধ আমল করলেন।
২. আপনি প্রথমে আমাকে ভালবাসার দাবি করলেন। ভালবেসে আমাকে ট্যাগ করেছেন। এই দাবি মিথ্যে। কারন ভালবাসার দাবি হল ভালবাসার মানুষকে প্রশস্ততা দান করা। আপনি সেটাতো করেনই নি উপরন্তু আমি যতবার থামতে চেয়েছি ততবার ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে আমাকে পেচিয়ে ধরতে চেয়েছেন। পরোক্ষভাবে “মূর্তিপুজারী, বিদআতী, পথভ্রষ্ট” বলেছেন। আপনার ভালবাসার নমুনা দেখে রীতিমত লজ্জা পাচ্ছি!
৩. আপনি বলেছেন, আমরা নাকি সালাতের পর দু’হাত তুলে মুনাজাতকে নামাযের অংগ বানিয়ে ফেলেছি! এত মিথ্যাচার কোথায় শিখলেন ভাই? আপনি যার কাছে নামায শিখেছেন তিনি যদি আপনাকে নামাযের অঙ্গ হিসেবে মুনাজাতকে শিখিয়ে থাকেন তাহলে সে দায় আমাদের উপর দিচ্ছেন কেন? আমরা কোথায় বলি মুনাজাত নামাযের ফরজ? কোথায় বলেছি মুনাজাত নামাযের ওয়াজিব? সুন্নত?
৪. আপনি বলছেন নামাযের পর দু’হাত তুলে মুনাজাত করা বিদাত! আপনার কাছে বিদাআতের সংগা কি? কোথায় পেয়েছেন বিদআতের সেই সংগা? প্রমাণ করেন কেউ যদি নামাযের পর মুনাজাত না করে তাহলে তাকে আমরা খারাপ বলি, পথভ্রষ্ট বলি, বেদাতী বলি, মূর্তিপুজারী বলি। আরো প্রমাণ করেন যে, নামাযের পর দু’হাত তুলে মুনাজাত করতে রাসূল (সাঃ) নিষেধ করেছেন। রাসূল (সাঃ) যদি নিষেধ না করে থাকেন তাহলে আপনি নিষেধ করার কে? আর এটাও প্রমান করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে হাত তুলে মুনাজাতের বিষয়টি ছিল না।
৫. আমি বলেছি হানাফী ফায়সালার কথা আর আপনি নিয়ে আসলেন ইহুদি-খ্রিষ্টানদের কিতাব! হানাফী ফায়সালা কি ইহুদি-খিষ্টানদের জন্য? নাকি ইহুদি-খ্রিষ্টানদের কিতাব আমরা অনুসরণ করি? আমি আগরতলা বলে আপনি চকিরতলা বোঝেন কেন? পারলে আগরতলার সাথে আগরতলার মিল আছে এমন কিছু আনেন।
৬. “নিরপেক্ষতার” কথা বলছেন। আসেন নিরপেক্ষভাবে একটা হাদীস যাচাই করি। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসখানার কথাই আনা যাক। এখন নিরপেক্ষভাবে এই হাদীসকে আপনি কিভাবে বিচার করবেন? কিভাবে বুঝবেন এটা সহীহ না গলদ? আপনি কি আয়েশা (রাঃ)থেকে নিজে এই হাদীস শুনেছেন? না শুনে থাকলে কিভাবে বুঝলেন এটা সহীহ হাদিস? যদি মুহাদ্দিসদের কথাই শুনলেন তাহলে আপনি নিরপেক্ষ থাকলেন কোথায়? কোন যুক্তিতে একদল মুহাদ্দিসের কথা অগ্রগন্য করে আরেকদল মুহাদ্দিসের কথা বাদ দিচ্ছেন?
৭. আলোচনার কথা বলছেন। এই হল আলোচনার নমুনা। ৮ রাকাত তারাবী ধরে নিয়ে এর পক্ষে যুক্তি প্রমাণ যোগাড় করার চেষ্টা এবং ২০ রাকাত যারা আদায় করে তাদের “মূর্তিপুজারী, বাপ-দাদার ধর্মী, বেদাতী, ভ্রষ্ট” ইত্যাদি বলার নাম হল আলোচনা। আলোচনার মানেই বোঝেন না আপনি।
এবার পোস্টের ব্যাপারে আসা যাক। প্রথমেই পোস্টে দেয়া রেফারেন্স গুলো চেক করা যাক। রিসোর্স এবং সময় স্বপ্লতার কারনে সবগুলো রেফারেন্স চেক করা সম্ভব হবে না। ১১ রাকাতের যে রেফারেন্সগুলো দেয়া হয়েছে তা হলঃ
“যে সমস্ত হাদীসের কিতাবে ১১ রাক‘আতের দলীল বিদ্যমান তা উল্লেখ হলো : (বুখারী ১ম খন্ড ১৫৪,২৬৯ পৃষ্ঠা। মুসলিম ২৫৪ পৃষ্ঠা। আবূ দাঊদ ১ম খন্ড ১৮৯ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৪৮ পৃষ্ঠা। তিরমিযী ৯৯ পৃষ্ঠা। ইবনু মাজাহ ৯৭-৯৮ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তা মালিক ১৩৮ পৃষ্ঠা। সহীহ ইবনু খুযাইমাহ ৩য় খন্ড ৩৪১ পৃষ্ঠা। যাদুল মাআদ ১ম খন্ড ১৯৫ পৃষ্ঠা। বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩য় খন্ড হাদীস নং ১৫৯২-১৫৯৭। বুখারী আযিযুল হক ১ম খন্ড হাদীস নং ৬০৮। বুখারী আধুনিক প্রকাশনী ১ম খন্ড হাদীস নং ১০৭৬, ২য় খন্ড হাদীস নং ১৮৭০। মিশকাত নূর মোহাম্মদ আযমী ৩য় খন্ড ও মাদ্রাসা পাঠ্য ২য় খন্ড হাদীস নং ১২২৮। হাদীস শরীফ মাওঃ আব্দুর রহীম ২য় খন্ড ৩৯০ পৃষ্ঠা)”
এরমধ্যে সবগুলো বই আমার কাছে নেই বা সব প্রকাশনীর নেই। যেগুলো আছে সেগুলোতে দেখি।
১. প্রথমে ইসলামী ফাউন্ডেশনের বুখারী শরীফ। “বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩য় খন্ড হাদীস নং ১৫৯২-১৫৯৭"। এই রেফারেন্স ভুয়া। পারলে এই রেফারেন্সের স্ক্রিনশট দিন।
১১ রাকাত সম্বলিত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসখানা আবার দেখে নেই। আব্দুল্লাহ ইব্ন ইউসুফ (রঃ)..... আবূ সালামা ইব্ন আব্দুর রাহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেন, রামাযান মাসে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লামের ছালাত কেমন ছিল? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম রামাযান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতের বেলা) এগার রাকা’আতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। তিনি চার রাকা’আত সালাত আদায় করতেন। তুমি সেই সালাতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘত্ব সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর চার রাকা’আত সালাত আদায় করতেন, এর সৌন্দর্য্য ও দীর্ঘত্ব সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর তিনি তিন রাকা’আত (বিতর) সালাত আদায় করতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, (একদিন) আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি কি বিত্রের আগে ঘুমিয়ে থাকেন? তিনি ইরশাদ করলেনঃ আমি চোখ দু’টি ঘুমায়, কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমায় না।
হাদীসে লক্ষ করার বিষয় হল স্পস্ট বলা আছে “রামাযান মাসে এবং অন্যান্য সময়ে (রাতের বেলা)”। ইমাম বুখারী (রঃ) তার কিতাবে দু’অধ্যায়ে এই হাদীস বর্ণনা করেছে। প্রথমে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে এবং পরবর্তীতে তারাবীহের অধ্যায়ে। এর মূল উদ্দেশ্য ইমাম বুখারী(রঃ)-ই ভাল জানেন। কিন্তু এই হাদীসকে যদি আমরা তারাবীহের সাথে সম্পৃক্ত করি তাহলে প্রশ্ন জাগে এই হাদীসকে কেন তিনি তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে বর্ণনা করলেন? কারন রামাযান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে তারাবীহ নেই। আর এই হাদীসকে যদি তাহাজ্জুদের সাথে সম্পৃক্ত করি তাহলে আর এই প্রশ্ন জাগে না। কারন তাহাজ্জুদ রামাযান এবং রামাযান ছাড়াও সবসময় পড়া যায়।
উমার (রাঃ) যে তারাবীহ্র আমলকে সুসংগহত করেছেন তার প্রমাণ বুখারী শরীফেই পাওয়া যায়। 'আব্দুল্লাহ ইবন ইউসুফ (রঃ)...আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় তারাবীহ্র সালাতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহের মাফ করে দেওয়া হবে। হাদীসের রাবী ইবন শিহাব (র) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ইনতিকাল করেন এবং তারাবীহর ব্যাপারটি এভাবে চালু ছিল। এমনকি আবূ বাকর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে ও 'উমর (ড়াঃ)-এর খিলাফতের প্রথমভাগে এরূপই ছিল। ইবন শিহাব (রঃ) 'উরওয়া ইবন যুবায়র (রঃ) সূত্রে ' আবদুর রাহমান ইবন 'আবদ আল-ক্বারী(র) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রমযানের এক রাতে 'উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর সঙ্গে মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখতে পাই যে, লোকেরা বিক্ষিপ্ত জামায়াতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত আদায় করছে আবার কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করছে এবং তার ইকতেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে। 'উমর (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে একত্রিত করে দেই, তবে তা উত্তম হবে। এরপর তিনি উবাই ইবন কা'ব (রাঃ)-এর পিছনে সকলকে একত্রিত করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তাঁর [উমর (রাঃ)] সঙ্গে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছিল। 'উমর (রাঃ) বললেন, কত না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থা তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত আদায় কর, এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুঝিয়েছেন, কেননা তখন রাতের প্রথমভাবে লোকেরা সালাত আদায় করত।
এই হাদীস দ্বারা পরিষ্কার যে, এক জামাতে তারাবীহ্ পড়ার আমল উমর (রাঃ)র খেলাফতে শুরু হয়। এই হাদীসে রাকাত সংখ্যা উল্লেখ না থাকলেও অন্য হাদীসে তা পাওয়া যায়। এখন কথা হল যারা যারা বিশ রাকাতের হাদীসকে দুর্বল, ২০ রাকাত আদায়কারীদের বিদআতী বলে প্রচার করেন তারা বুখারী শরীফের এই হাদীসকে কি বলেন? নাকি তাদের মতে বুখারী শরীফের হাদীসও দুর্বল? আর জামাতবদ্ধ হয়ে আদায় করার ব্যাপারে তাদের রায় কি? তারা কি একেও বিদআত বলেন?
“বুখারী আযিযুল হক ১ম খন্ড হাদীস নং ৬০৮” –এও আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীস উল্লেখ্যিত আছে। মজার ব্যাপার হল, উক্ত বোখারী শরীফে “রসূলুল্লাহ (সঃ) রমযান শরীফেও তাহাজ্জুদ পড়িতেন” শিরোনামে আলোচ্য হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে এবং হাদীস বর্ণনা করার পর যা লেখা হয়েছে তা হুবহু তুলে দিচ্ছি,
“ঐ সময় জামাতের সহিত নিয়মিতরূপে তারাবীহ পড়া হইত না। তাই রসূলুল্লাহ (সঃ) রমযান শরীফেও বেতের নামায তাহাজ্জুদের সঙ্গেই পড়িতেন।
পাঠকবৃন্দ! লক্ষ্য রাখিবেন, বোখারী (রঃ) আলোচ্য হাদীছকেও তাহাজ্জুদ নামায সম্পর্কে সাব্যস্ত করিয়াছেন। বস্তুতই এই হাদীছ তারাবীহ সম্পর্কে সাব্যস্থ নহে। কারণ, ইহাতে রমযান ও রমযান ছাড়া উভয়েরই উল্লেখ হইয়াছে অর্থাৎ অত্র হাদীছে এইরূপ নামাযের বর্ণনা করা হইয়াছে যে নামায রমযান ছাড়াও পড়া হয়। অতএব, এই হাদীছের উদ্দেশ্য তারাবীর নামায হইতে পারে না; উহা রমযান ব্যতীত পড়া হয় না। হ্যাঁ, তাহাজ্জুদ নামায উভয় সময়ে পড়া হয়, সুতরাই ইহাই এই হাদীছের উদ্দেশ্য এবং ইহারই সংখ্যা আট রাকাত বলা হইয়াছে”।
স্ক্রিনশট চেয়েছি তাই রেফারেন্স দিলাম না।
২. এরপর “মুসলিম ২৫৪ পৃষ্ঠা” এই রেফারেন্স দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে তা আমি পরিষ্কার নই।যদি মূল কিতাবের ২৫৪ পৃষ্ঠা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে সে কিতাব আমার কাছে নেই। কাজেই যা আছে সেটাই দেখি বরং। ইসলামী ফাউন্ডেশনের যে কপি আমার কাছে আছে তার প্রথম খণ্ডের ২৫৪ পৃষ্ঠায় ইমাম মাহদী সম্পর্কিত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কাজেই আরেকটু ঘাটতে হল। সহীহ মুসলিম, ৩য় খন্ড, ইসলামী ফাউন্ডেশন, হাদীস নং ১৬০০, পৃষ্টা-৬৪ তে উপরোক্ত হাদীসটি বর্ণিত আছে। বলেন তো দেখি কোন অনুচ্ছেদে এই হাদীস বর্ণিত হয়েছে? “অনুচ্ছেদ ১৫। রাতের বেলার নামায এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলা যে কয় রাকাআত নামায পড়তেন তার বর্ণনা। বেতের নামায এক রাকাআত এবং তা এক রাকাতই ঠিক”
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা জরুরী যে, সহীহ মুসলিম শরীফে তারাবীহের জন্য আলাদা অধ্যায় রয়েছে। সহীহ মুসলিম, ৩য় খন্ড, ইসলামী ফাউন্ডেশন, হাদীস নং ১৬৫৬ থেকে ১৬৬১, পৃষ্টা-৯৪ থেকে ৯৮। “অনুচ্ছেদঃ ১৬। রমযান মাসের রাতের বেলা ইবাদত করা অর্থাৎ তারাবীহ্ নামায পড়ার উৎসাহ দান”।
উক্ত তারাবীহ্র অধ্যায়ে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস খানা নেই। যেসব হাদীস বর্ণিত আছে কোনটিতেই তারাবীহের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয় নি। বোঝাই যাচ্ছে ইমাম মুসলিম (রঃ) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসটি তারাবীহের সাথে সম্পৃক্ত করেন নি। করলে তারাবীহের অধ্যায়ে আলোচনা করতেন। আলোচনার সুবিধার্থে উক্ত গ্রন্থের ১৬৬১ নং হাদীসের টিকা তুলে দিলামঃ
“এসব হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে তারাবীর নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা হতো না। এমনকি খোদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম সাহাবাদের সাথে কয়েকদিনের বেশী তারাবীহর নামায পড়েননি। কারণ তিনি আশংকা করেছিলেন যে যদি তিনি সাহাবাদের সাথে নিয়মিত তারাবীহর নামায পড়েন তাহলে তাঁর উম্মাতের জন্য তা ফরয করে দেয়া হতে পারে। আর এমতাবস্থায় তা আদায় করা তারঁ উম্মতের জন্য কঠিন হবে। এজন্য চতুর্থ দিনে তারাবীহ পড়ার জন্য মসজিদে অনেক লোকের সমাগম হলেও তিনি সেই জামায়াতে হাজির হননি।
হযরত আবু বকর (রাঃ)-র পুরো খিলাফত যুগ এবং হযরত উমার (রাঃ)-র খিলাফতের দিকে কয়েক বছর পর্যন্ত তারাবীহ নামায জামায়াতের সাথে পরার ব্যবস্থা ছিলো না। বরং সবাই মসজিদে অথবা বাড়ীতে একা একা এই নামায আদায় করতো। পরবর্তী সময়ে হযরত উমার (রাঃ) জামায়াতের সাথে তারাবীহ আদায় করার ব্যবস্থা করেন। তখন থেকেই তা মসজিদে জামায়াতসহ আদায় করা হয়ে থাকে এবং আজ পর্যন্তও এভাবেই আদায় হয়ে আসছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য সাহাবা জীবিত ছিলেন। কেউ তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন নি।
লক্ষ্য রাখার বিষয় হল, মুসলিম শরীফের টিকা অনুযায়ী (রাকাত সংখ্যা উল্লেখ না থাকলেও) তারাবী এখন পর্যন্ত তেমনই আছে যেমনটা উমার (রাঃ) চালু করেছিলেন এবং কোন সাহাবী (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেন নি।
৩. এবার “নাসাঈ ১৪৮ পৃষ্ঠা”। এটা কি মূল কিতাবের রেফারেন্স নাকি অনুবাদের তা পরিষ্কার নয়। কাজেই ইসলামী ফাউণ্ডেশনের সুনানু নাসাঈ শরীফ খুলে দেখা যাক। নাসাঈ শরীফে ১১ রাকাআতের যে হাদীসটি রয়েছে তা হল “বিতর ও তাহাজ্জুদ” অধ্যায়ে। সুনানু নাসাঈ শরীফ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪০০, হাদীস নং-১৬০৪। আয়েশা (রাঃ) এই হাদীসে স্পষ্টভাবে তাহাজ্জুদের কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও সুনানে নাসাঈ শরীফে “রমযান মাসে তারাবীহ্র সালাত আদায় করা” শিরোনামে যে অনুচ্ছেদ রয়েছে তাতে ৩টি হাদীস রয়েছে। সেখানে ১১ রাকাআতের কোন হাদীস নেই। হাদীস নাম্বার ১৬০৭, ১৬০৮, ১৬০৯ দেখলেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
কাজেই বোঝা গেল নাসাঈ শরীফে উল্লেখিত ১১ রাকাতের হাদীস তারাবীহ্ সংক্রান্ত নয়।
৪. জামে তিরমিযির দিকে নজর দেয়া যাক এরপর। “তিরমিযী ৯৯ পৃষ্ঠ” -একই কথা। কোথাকার রেফারেন্স পরিষ্কার নয়। তিরমিযি শরীফে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীসটি আছে প্রথম খন্ডের ৩৭০ পৃষ্ঠায়, হাদীস নং ৪৩৯, হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী, তাহক্বীক্বঃ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দিন আলবানী আবূ আব্দুর রহমান। যথারীতি অধ্যায়ের শিরোনাম "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাতের নামাযের বৈশিষ্ট"। এই অধ্যায়ে ৪৪০,৪৪১,৪৪২,৪৪৩,৪৪৪ নং হাদীগুলোতে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম রাতের বেলা ৯, ১১, ১৩ রাকাআত নামায আদায় করতেন বলে উল্লেখ আছে। ৪৪৪ নং হাদীসের পর যা লেখা আছে তা হুবহু তুলে দিচ্ছি,
"আবূ ঈসা বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের (তাহাজ্জুদের) নামায বিতরসহ সর্বোচ্চ তের রাক'আত এবং সর্বনিম্ন নয় রাক'আত ছিল বলে বর্ণিত আছে।"
কাজেই সহীহ আত-তিরমিযি থেকে আমরা স্পষ্ট প্রমাণ পেলাম। উপরন্তু সহীহ আত-তিরমিযীর ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ১৭৮ এ "অনুচ্ছেদঃ ৮১।। রামাযান মাসের রাতের কিয়াম (রাত্রের ইবাদত)" বলে আলাদা অনুচ্ছেদ আছে। স্পষ্ট আলোচনার জন্য উক্ত অনুচ্ছেদের ৮০৬ নং হাদীস তুলে ধরা হল,
আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমরা রোযা পালন করেছি। তিনি আমাদেরকে নিয়ে রামাযান মাসে কোন (নফল) নামায আদায় করেননি। অবশেষে তিনি রামাযানের সাত দিন বাকী থাকতে আমাদেরকে নিয়ে নামাযে দাঁড়ালেন। এতে এক-তৃতীয়াংশ রাত চলে গেল। আমাদের নিয়ে তিনি ষষ্ঠ রাতে নামাযের উদ্দেশ্যে দাঁড়াননি। তিনি আবার আমাদের নিয়ে পঞ্চম রাতে নামাযের উদ্দেশ্যে দাঁড়ান। এতে অর্ধেক রাত চলে গেল। আমরা তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমাদের বাকী রাতটিও নামায আদায় করে পার করে দিতেন। তিনি বললেনঃ ইমামের সাথে যদি কোন লোক (ফরয) নামাযে শামিল হয় এবং ইমামের সাথে নামায আদায় শেষ করে তাহলে সে লোকের জন্য সারা রাত (নফল) নামায আদায়ের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর মাসের তিন রাত বাকী থাকা পর্যন্ত তিনি আর আমাদের নিয়ে নামায আদায় করেননি। আবার তিনি তৃতীয় (২৭শে) রাত থাকতে আমাদের নিয়ে নামাযের জন্য দাঁড়ালেন। তাঁর পরিজন ও স্ত্রীগণকেও তিনি এ রাতে ডেকে তুললেন। এত (দীর্ঘ)-সময় ধরে তিনি নামায আদায় করলেন যে, যার ফলে সাহ্রীর সময় চলে যাওয়ার সংশয় হল আমাদের মনে। বর্ণনাকারী জুবাইর ইবনু নুফাইর বলেন, আবূ বাক,র (রাঃ)-কে আমি বললামঃ 'ফালাহ্"কি? তিনি বললেন, সাহ্রী খাওয়া।
-সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (১৩২৭)
আবূ ঈসা হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। আলিমগণের মধ্যে রামাযানের রাত রাত সমূহে (তারাবীহ্ নামায ও নফল ইবাদাতের উদ্দেশ্যে) দণ্ডায়মান হওয়া প্রসঙ্গে দ্বিমত আছে। কোন কোন আলিম বলেন, বিতর সহকারে এর রাক'আত সংখ্যা একচল্লিশ। মাদীনায় বসবাসকারীদের অভিমত এটাই এবং এরকমই আমল করেন এখানকার লোকেরা। কিন্তু আলী ও উমার (রাঃ) প্রমুখ সাহাবায়ি কিরাম হতে বর্ণিত বিওয়ায়াত অনুযায়ী বেশিরভাগ আলিমের অভিমত অর্থাৎ (তারাবীহ্) বিশ রাক'আত। এই মত সুফিয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারাক ও শাফিঈ (রাহঃ)-এর। ইমাম শাফিঈ (রাহঃ) বলেন, আমাদের মক্কা নগরীর লোকদেরকেও বিশ রাক'আত আদায় করতে দেখেছি। আহমাদ (রাহঃ) বলেন, এই বিষয়ের উপর বিভিন্ন প্রকার রিওয়ায়াত বর্ণিত আছে। এই ব্যাপারে তিনি কোনরকম সিদ্ধান্ত দেননি। ইসহাক বলেন, আমরা উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ)-এর বর্ণনানুযায়ী একচল্লিশ রাক'আত আদায় করাকেই পছন্দ করি।
রামাযান মাসে ইমামের সাথে তারাবীহ্ আদায় করাকে ইবনুল মুবারাক, আহমাদ ও ইসহাক (রাহঃ) সমর্থন করেছেন। ইমাম শাফিঈ কুরআনের হাফিয ব্যক্তির জন্য একাকী(তারাবীহ্র) নামায আদায় করাকে উত্তম বলেছেন। আইশা, নু'মান ইবনু বাশীর ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেও এই অনুচ্ছেদের হাদীস বর্ণিত আছে।
কোথায় আট রাকা'আতের হাদীস? বরং এখানকার ২০ এবং ৪১ রাকা'আতের উল্লেখ্য আছে।
সুনানু ইবনে মাজাহ্, ইসলামী ফাউণ্ডেশন, পৃষ্ঠা -৪৯৫, অনুচ্ছেদঃ রাতে কি পরিমাণ সালাত আদায় করবে। এই অনুচ্ছেদে ৬ টি হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে। হাদীস নং ১৩৫৮-১৩৬৩। এখানে আয়েশা (রাঃ) থেকে ১১ রাকাত উল্লেখ্য করে যে হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে তার নাম্বার ১৩৫৮। এই হাদীসে রামাযানের উল্লেখ্য নেই। পরের হাদীসে (১৩৫৯) আয়েশা (রাঃ) ১৩ রাকা'আতের কথা বলেছেন। এরপরের হাদীসে(১৩৬০) ৯ রাকাত বলেছেন।মজার কথা হলে এই ১১/১৩/৯ রাকা'আত নামায যে তাহাজ্জুদের নামায তা ১৩৬১ নং হাদীসে পরিষ্কারভাবে এসেছে। "মুহাম্মদ ইবন 'উবায়দ ইবন মায়মূন আবূ 'উবায়দ মাদিনী(র)....আমির শা'বী(র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি 'আব্দুল্লাহ ইবন 'আব্বাস (রাঃ) ও 'আব্দুল্লাহ ইবন 'উমর (ড়াঃ) -কে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তাঁরা বললেনঃ তের রাক'আত, এর মধ্যে আট রাক'আত তাহাজ্জুদ, তিন রাক'আত বিতর এবং ফরজের পর দুই রাকা'আত।"
এরপরের দুই হাদীসে যথাক্রমে ১৩ ও ১২ রাকাত সালাত আদায় করার কথা এসেছে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে আয়েশা (রাঃ)র ১১ রাকাতের হাদীসখানা তারাবীহ সংক্রান্ত নয়। যদি হত তাহলে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে তা সংযুক্ত করা হত না।
এবার আবু দাঊদ শরীফ, ইসলামী ফাউণ্ডেশন, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নাম্বার-২৪৮, "৩২১. অনুচ্ছেদঃ রাতের (তাহাজ্জুদ) নামায সম্পর্কে" খোলা যাক। উক্ত অনুচ্ছেদে ১৩৩৪ থেকে ১৩৬৭ পর্যন্ত হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে যার মধ্যে আমাদের আমাদের আলোচ্য হাদীসখানা রয়েছে (হাদীস নং ১৩৪১)। উক্ত গ্রন্থের পৃষ্ঠা নং ২৭১, "৩২৩ অনুচ্ছেদঃ রমযান মাসের রাত্রিকালিন ইবাদত"-এ ১৩৭১ নং থেকে ১৩৭৮ নং হাদীসে তারাবীহ্র নামাযের আলোচনায় উক্ত হাদীস বর্ণনা করা হয় নি। কাজেই আবু দাঊদ শরীফ মতেও আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসখানা তারাবীহ্ সংক্রান্ত নয়।
ইমাম মালিক (রঃ) তার "মুয়াত্তা" গ্রন্থে আলোচ্য হাদীসটি বিতর নামাযের অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। দেখুন মুয়াত্তা, প্রথম খণ্ড, ইসলামী ফাউণ্ডেশন, পৃষ্ঠা-১৭৬, রেওয়ায়ত ৯। উক্ত গ্রন্থে তারাবীহ্র সালাতের জন্য আলাদা অনুচ্ছেদ রয়েছে। সেখানে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি নেই। বরং উমার (রাঃ) বরাতে ১১ রাকা'আত তারাবী পড়ানোর নির্দেশ দানের উল্লেখ রয়েছে এবং পরবর্তী হাদীসেই উমার (রাঃ) শেষ পর্যন্ত ২০ রাকাত তারাবী পড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন মর্মে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে। দেখুন মুয়াত্তা, প্রথম খণ্ড, ইসলামী ফাউণ্ডেশন, পৃষ্ঠা-১৭০ থেকে ১৭২।
যারা মুয়াত্তা হাদীস গ্রন্থের হাদীসের উপর দুর্বলতার অভিযোগ করেন তাদের জন্য মুয়াত্তার ভূমিকা থেকে তুলে দিলাম, "ইমাম মালিক (রঃ) ছিলেন তাবে'তাবেঈনদের মধ্যে অন্যতম। 'মুয়াত্তা' রচনায় তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও সাবধানতা সর্বজনস্বীকৃত। তিনি প্রায় এক লক্ষ হাদীস থেকে বিশুদ্ধতা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিশেষ সতর্কতার সাথে চল্লিশ বছর ধরে 'মুয়াত্তা'র হাদীসগুলি সংকলন করেন। মদীনা শরীফের সত্তরজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ্র কাছে মুয়াত্তা যাচাইক করার জন্য পেশ করা হয়। তাঁরা সকলেই এর সঙ্গে একমত পোষণ করেন।"
ইমাম শাফিঈ (রঃ) এই হাদীস গ্রন্থ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেনঃ আল্লাহর কিতাবের পরই সবচাইতে বিশুদ্ধ কিতাব হচ্ছে মালিক ইবন আনাসের 'মুয়াত্তা'।
হাদীসের কোন গ্রন্থটি মুখস্থ করা যায়- এ বিষয়ে জনৈক হাদীস্পিপাসু ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রঃ)-কে প্রশ্ন করলে তিনি 'মুয়াত্তা' কেই মুখস্থ করে রাখার জন্য পরামর্শ দেন"।
আশাকরি এরপর মুয়াত্তার ব্যাপার কোন আপত্তি থাকবে না। উপরের আলোচনা থেকে একথা পরিষ্কার যে, আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত ১১ রাকাত নামাযের হাদীস কোন উপরোক্ত হাদীস গ্রন্থাকারগন তারাবীহ্ নয় রাতের নামায তথা তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। একমাত্র ইমাম বুখারী এই হাদীসকে দু'অধ্যায়েই বর্ণনা করেছেন। তার যুক্তিসঙ্গত কারনও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস উক্ত পোস্টের বাকি সব রেফারেন্স চেক করলেও নানান ধরনের চালাকি বের হয়ে আসবে। কাজেই লোকজনকে বিভ্রান্ত করার জন্য রাতের নামাযকে তারাবীহ্ সাথে সংশ্লিষ্ট করা থেকে আমাদের বিরত থাক উচিত।
এবার বিশ রাকাত প্রসঙ্গে আসি। মজার ব্যাপার হল যে হাদিস গ্রন্থ থেকে উমর (রাঃ) এগার রাকা'আত পড়ানোর নির্দেশের কথা বলা হয়েছে এবং এই পোস্টে উক্ত হাদীসকে সহীহ বলা হয়েছে সেই হাদীস গ্রন্থেরই পরের হাদীসে ২০ রাকা'আত তারাবীর কথা বলা হয়েছে। জ্বী, আমি মুয়াত্তা গ্রন্থের কথাই বলছি। দুইটি হাদিসই আমি পাশা-পাশি দিয়ে দিচ্ছি। সব সন্দেহের অবসান হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।
"সায়িব ইব্ন ইয়াযিদ (রঃ) বলিয়াছেনঃ উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) উবাই ইবনে কা'ব এবং তামীমদারী (রাঃ)-কে লোকজনের (মুসল্লিগণের) জন্য এগার রাক'আত (তারাবীহ্) কায়েম করিতে নির্দেশ দিয়াছিলেন। কারী একশ আয়াতবিশিষ্ট সূরা পাঠ করিতেন, আর (আমাদের অবস্থা এই ছিল) আমরা নামাযে দীর্ঘ সময় দাঁড়াইতে দাঁড়াইতে (ক্লান্ত) হইয়া পড়িলে সাহায্য গ্রহণ করিতাম অর্থাৎ লাঠির উপর ভর দিতাম। (এইভাবে নামায পড়িতে পড়িতে রাত শেষ হইত)। আমরা ভোর হওয়ার কিছু পূর্বে ঘরে প্রত্যাবর্তন করিতাম।"
মুয়াত্তা, প্রথম খণ্ড, ইসলামী ফাউণ্ডেশন, পৃষ্ঠা নং ১৭১, রেওয়ায়ত নং ৪। এই হাদিসের অংশবিশেষ পোস্টে উল্লেখ আছে এবং স্বীকার করে নেয়া হয়েছে এটি সহীহ হাদিস। পরের হাদীসখানা দেখি।
"মালিক (রঃ) ইয়াযিদ ইবনে রুমান (রঃ) হইতে বর্ণনা করেন- তিনি বলিয়াছেনঃ লোকজন উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ)-এর খিলাফতকালে রমযানে তেইশ রাক'আত তারাবীহ পড়িতেন- তিন রাক'আত বিতর এবং বিশ রাক'আত তারাবীহ। ইহাই হযরত উমর (রা) শেষ পর্যন্ত নির্ধারন করিয়া দিয়াছেন"।
মুয়াত্তা, প্রথম খণ্ড, ইসলামী ফাউণ্ডেশন, পৃষ্ঠা নং ১৭১, রেওয়ায়ত নং ৫। পরিষ্কার বোঝা গেল উমর (রাঃ) তের রাক'আত নামাযের আদেশ দিয়েও তার শেষ ফায়সালা ছিল ২০ রাকা'আতের। ৮ রাক'আতপন্থীদের চালাকি দেখুন। একই গ্রন্থের একই পৃষ্ঠার প্রথম হাদীসকে সহীহ স্বীকার করে পরের হাদীসের উপর আমলকারীদের "মূর্তিপুজারী, ভ্রষ্ট, বেদআতী" আখ্যা দিয়ে বেড়াচ্ছেন!
উমর (রাঃ)র ২০ রাকাত পড়ার আদেশ গত ১৪০০ বছর ধরে পালন করা হয়ে আসছে। মক্কায় সর্বদা ২০ রাকা'আত এবং মদীনায় ২০ রাক'আতের বেশিও পড়াও হয়েছে। কোন যুগেই মক্কা-মদীনায় ৮ রাক'আত পড়া হয়নি। এই হাদীস সহিহ হবার জন্য এর চেয়ে শক্ত রেফারেন্স দরকার আছে কি?
আরবী শব্দ তারঅয়িহু এর বাংলা রূপ তারাবী। এ শব্দের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) লেখেন-
তারঅয়িহু শব্দটি তারয়িহা'তুন-এর বহুবচন। তারয়িহা'তুন অর্থ একবার বিশ্রাম গ্রহণ করা। যেমন তাসলিমাতুন অর্থ একবার সালাম দেওয়া। মাহে রমযানের বরকতময় রজনীতে জামাতের সঙ্গে যে নামায পড়া হয় তাকে তারঅয়িহু (তারাবী) বলে। এই নামকরণের কারণ হচ্ছে, যখন থেকে সাহাবায়ে কেরাম এ নামায সম্মিলিতভাবে আদায় করতে আরম্ভ করেন তখন থেকেই তাঁরা প্রতি দু'সালামের পর (অর্থাৎ চার রাকাআতের পর) বিশ্রাম নিতেন'। (ফাতহুল বারী)
লক্ষ করার বিষয় এই যে, তারঅয়িহু শব্দই বোঝাচ্ছে , এই নামাযের রাকাআত সংখ্যা আট নয়, আটের অধিক। (নবীজীর নামায, ড. শাইখ মুহাম্মাদ ইলিয়াস ফয়সাল, পৃষ্ঠা-২৫৬)
কারন বহুবচন হতে হলে কমপক্ষে ৩ হতে হয়। তাহলে তারঅয়িহু শব্দ দ্বারা কমপক্ষে ৩ বার বিশ্রামের কথা বোঝানো হলেও তারাবী ১২ রাকাত হবে। আর ৩ থেকে বেশি হলেতো আরো বেশি।
তারাবী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যতদিন দুনিয়াতে ছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ কেবল তিনবার মসজিদে এসে জামাতের সঙ্গে তারাবী পড়েছেন। পুরো রমজান তারাবী পড়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ । এর দ্বারা নামাযীর গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবী নামাযের রাকাআত সংখ্যা নির্ধারন করেন নি।
খিলাফতে রাশিদায় তারাবী নামায
১. হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর যুগে সবাই নিজেদের মতো তারাবী পড়ত।
২. রমযানের প্রতি রাতে ইশার পর বিতরের আগে জামাতের সঙ্গে তারাবী নামায পড়ার এবং তাতে পুরো কুরআন খতম করার ধারাবাহিকতা হযরত উমর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে আরম্ভ হয়। সে সময় তারাবীর নামায বিশ রাকাআত পড়া হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম বিশ রাকাআত নামায উপরোক্ত নিয়মেই আদায় করেছেন এবং ফুকাহা ও মুহাদ্দিসীনদের আমলও এরূপ ছিল। আজ পর্যন্ত হারামাঈন শরীফাইনে এই ধারাবাহিকতা বিদ্যমান রয়েছে।
যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবী নামাযের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন, কিন্তু ফরয হওয়ার আশঙ্কায় এর নিয়মিত রূপ দিয়ে যাননি তাই তার রুচি ও ইচ্ছা সম্পর্কে অবগত খলীফায়ে রাশেদ হযরত উমর (রাঃ) আনসার ও মুহাজির সাহাবীগণের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তারাবী নামাযের নিয়মিত রূপ প্রদান করেন, যার সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ - "লাও কানা বা'য়দিই নাবিইয়াল লাকাআনা উমার" যদি আমার পরে কোন নবী হত তাহলে উমর নবী হত। বলাবাহুল্য; ওহীর ধারাবাহিকতা সমাপ্ত হওয়ার পর এখন আর তারাবী ফরয হওয়ার আশঙ্কা ছিল না। এসব কিছু সত্ত্বেও এই পবিত্র মাসে একশ্রেণীর মানুষ আট রাকাআতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন। উপরন্তু এর জন্য বিভিন্ন ধরনের হিলা-বাহান অন্বেষণ করেন। এর মধ্যে একটি এই যে, 'তারাবী নামায বিশ রাকাআত হওয়া হযরত উমর (রাঃ)-এর যুগে সাব্যস্ত হয়েছে'।
প্রশ্ন এই যে, তারাবীর বর্তমান নিয়মিত রূপটিও তো উমার (রাঃ)-এর যুগেই নির্ধারিত হয়েছে। যথাঃ পুরো রমযান জামাতের সঙ্গে তারাবী পড়া, বিতরের নামায জামাতে আদায় করা ইত্যাদি। তাহলে শুধু তারাবীর রাকাআত-সংখ্যা বিষয়ে এই আপত্তি কতটুকু যৌক্তিক?
[টীকাঃ জেনে রাখা ভাল যে, সর্বপ্রথম ১২৮৫ হিজরীতে প্রসিদ্ধ গায়রে মুকাল্লিদ আলিম মুফতী মুহাম্মাদ হুসাইন বিটালভী এই ফতোয়া প্রচার করেছিলেন যে, 'আট রাকাআত তারাবী পড়া সুন্নত, আর বিশ রাকাআত পড়া বিদআত'। এই অদ্ভুত ফতোয়ার কারনে সে সময় উপমহাদেশের মুসলিমদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। আহলুস সুন্নত ওয়াল জামাআতের আলিমগণ সে সময় এ ফতোয়ার জবাব দিয়েছেন। এমনকি ন্যায়নিষ্ঠ গায়রে মুকাল্লিদ আলিমগণও এর প্রতিবাদ করেছেন। ১২৯০ হিজরীতে প্রসিদ্ধ গায়রে মুকাল্লিদ বুযুর্গ মাওলানা গোলাম রসূল সাহেব এই ফতোয়ার জবাব দিয়ে লেখেন, "আমি বলি, যে হাদিসে এসেছে--'তোমাদের কেউ কখনও মুমিন হতে পারবে না যতক্ষন না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তান থেকে এবং সকল মানুষ থেকে অধিক প্রিয় না হই।'--সে হাদীস মোতাবেক খুলাফায়ে রাশেদীনের প্রতিও মহব্বত ও অনুরাগের দলীল। খুলাফায়ে রাশেদীনের অনুসরণ এবং তাঁদের সম্পর্কে নবীজীর বানী--'তাদের সুন্নত দৃঢ়ভাবে অবলম্বণ করবে এবং মাড়ির দাঁত দ্বারা আকড়ে রাখবে'-স্মরণ রাখাও নবী-মহব্ববতের বহিঃপ্রকাশ। এর বিপরীত এমন অবস্থা কোনভাবেই কাম্য নয় যে, কারপুরুষতার কারণে শুধু এগারো রাকাআত নামায পড়লাম আর সাহাবায়ে কেরামের আমলকে বিদআত ঘোষণা দিয়ে তাঁদের ইজবা বা সম্মিলিত সিদ্ধান্তের সমালোচনা করতে থাকলাম। এমনকি যারা তেইশ রাকাআত নামায আদায় করে থাকেন তাদের প্রতি 'মুশরিক সুলভ কর্মে'র ও 'পূর্বপুরূষদের অন্ধ অনুকরণের' অপবাদ দিলাম।
তারাবী বিষয়ে আমাদের প্রথম দলীল হল রাসূলুল্লাহর হাদীস। ফাযাইলের ক্ষেত্রে এ পর্যায়ের হাদীস অনুসরণ-যোগ্য হওয়ার বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। দ্বিতীয় দলীল হল সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, চার মুজতাহিদ ইমাম এবং মুসলিম উম্মাহর সম্মিলিত আমল, যা উমার ফারূক (রাঃ)-এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মাশরিক-মাগরিব সর্বত্র জারি রয়েছে। তারা সকলে তেইশ রাকাআত নামায পড়েছেন। কিন্তু এই গোড়া লোকটি সকলের সম্মিলিত কর্মধারাকে বিদআত ঘোষণা করেছে এবং বলাবাহুল্য সে সীমালংঘন করেছে"।
তিনি আরও লেখেন, "এই মুফতী সুন্নত অনুসরণকারীদের আমলকে বিদআত ঘোষণা দিয়েছে এবং উমর (রাঃ)-এর যুগ থেকে সাহাবা, তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন এবং গোটা মুসলিম বিশ্বর আলিমদের সুন্নাহ-বিরোধী আখ্যা দিয়েছে। তার এ কর্ম যে অন্যায় সিনাজুরি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বরং এই মুফতী তো এ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মুসলিম উম্মাহর এই সর্ববাদীসম্মত আমলকে ইশারা-ইঙ্গিতে 'মুশরিকদের কর্ম' আখ্যা দিতে এবং তাদের সবাইকে 'পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসারী' সাব্যস্থ করতেও তার বিবেক-বুদ্ধিতে বাধেনি"। (গোলাম রাসূল, রিসালা তারাবী পৃ.২৮,৫৬)
রেফারেন্সঃ (নবীজীর নামায, ড. শাইখ মুহাম্মাদ ইলিয়াস ফয়সাল, পৃষ্ঠা-২৫৮,২৫৯,২৬০)
যে কথা আমি বলতে চেয়েছিলাম সে কথা মাওলানা গোলাম রসূল সাহেব বলে দিয়েছেন।
উমর (রাঃ) নির্দেশ পালনকারীদের যারা "বিদআতী", "ভ্রষ্ট", "বাপ-দাদার ধর্মের অন্ধ অনুকরন"-এর অপবাদ দেয় তারা মূলত উমার (রাঃ)কেই উক্ত অভিযোগে অভিযুক্ত করে। উমর (রাঃ)কে অভিযুক্ত করা মানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অভিযুক্ত করা। আর যারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন জখন্য অভিযোগে অভিযুক্ত করে তারা কিদাতী? তারা পথের অনুসারী? কোন ধর্ম পালন করে?
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ)-এর গবেষণা
'যখন উমর (রাঃ) লোকদেরকে উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ)-এর পিছনে একত্র করে দিলেন তখন তিনি বিশ রাকাআত তারাবী ও বিতর পড়তেন।' (আল-ফাতাওয়াল মিসরিয়্যা)
আরও লেখেন- "উমার (রাঃ) সকল সাহাবীকে উবাই ইবনে কাব (রাঃ)-এর পিছনে এক জামাতে একত্র করেছেন। বলাবাহুল্য, উমর (রাঃ) খুলাফায়ে রাশেদীনের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যাঁদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আমার সুন্নাহ ও আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাগণের সুন্নাহকে অবলম্বণ করবে এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে রাখবে।'
মাড়ির দাঁতের কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্য বলেছেন যে, এভাবে ধারণ করলে তা মজবুত হয়ে থাকে। তারাবী বিষয়ে উমর (রাঃ)-এর এই কাজ সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত"। (ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া)
রেফারেন্সঃ (নবীজীর নামায, ড. শাইখ মুহাম্মাদ ইলিয়াস ফয়সাল, পৃষ্ঠা-২৬১-২৬২)
আশাকরি এতটুকু উল্লেখ করাই যথেষ্ঠ হবে। পরবর্তী খলীফাদের যুগেও বিশ রাকাত তারাবী পড়া হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)ও বিশ রাকাআত তারাবী পড়তেন।
টীকাঃ তাবেয়ী যুকে মদীনাবাসীদের কেউ কেউ ছত্রিশ বা চল্লিশ রাকাআত নামাযও আদায় করতেন। তবে তাদেরও মূল তারাবী ছিল বিশ রাকাআত। অবশিষ্ট রাকাআত সম্পর্কে ইবনে কুদামা (রঃ) বলেন-
"আলিমগণ বলেছেন যে, মদীনাবাসীরা এটা করেছেন ছওয়াবের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার মানসিকতা থেকে। কেননা, মক্কাবাসীরা প্রতি চার রাকাআত নামাযের পর সাত বার কা'বা শরীফ তাওয়াফ করতেন। এ সংবাদ শুনে মদীনাবাসীরা (তারাবীর) প্রতি চার রাকাআতের পর চার রাকাআত (নফল) পড়তে আরম্ভ করলেন। তবে সাহাবায়ে কেরামের আমলই অধিকতর অনুসরণীয়'।'' (আলমুগনী)
হারাম শরীফে তারাবীহ
মক্কা মুকাররমায় উমর ফারূক(রাঃ)-এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত তারাবী নামায বিশ রাকাআত পড়া হয়েছে। কোনো যুগে এর কম বা বেশি পরা হয়েছে-এমন কোন কথা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত নয়। এজন্য আজও মক্কা মুকাররমায় তারাবী নামায বিশ রাকাআত পড়া হয়। ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) মক্কাবাসীর কর্মপন্থা উল্লেখ করে লেখেন-
"তারাবী নামায বিশ রাকাআত পড়া আমার কাছে এজন্য পছন্দনীয় যে, উমর (রাঃ) থেকে এরূপ বর্ণিত আছে। মক্কাবাসীও তারাবী নামায এভাবেই আদায় করেন। আর তারা বিতর তিন রাকাআত পড়ে থাকেন"। (কিতাবুল উম্ম)
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) লেখেন-"অধিকাংশ আহলে ইলম ঐ মতই পোষণ করেন, যা উমর (রাঃ), আলী (রাঃ) এবং অন্যান্য সাহাবীদের থেকে বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ তারাবী নামায বিশ রাকাআত পড়া। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী, ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক ও ইমাম শাফেয়ী (রহঃ)-এর মতও তাই। ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেছেন,'আমি মক্কাবাসীকে বিশ রাকাআত তারাবী নামায পড়তে দেখেছি'।" (জামে তিরিমিযীঃ১/১৬৬)
মোটকথা, তারাবী নামায বিশ রাকাআত পড়া সাহাবায়ে কেরাম, পরবর্তী আহ্লে ইলম এবং সকল মক্কাবাসীর আমল ছিল।
মদীনায় তারাবীহ নামায
চৌদ্দ শ' বছরের ইতিহাস অনুসন্ধানে দেখা যায়, মদীনাবাসীও সর্বদা তারাবী নামায বিশ রাকাআত পড়েছেন। তবে কিছু উদ্যমী মানুষ ছত্রিশ রাকাআত তারাবী ও তিন রাকাত বিতরও পড়েছেন। এর কারণও ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
সৌদি আরবে প্রসিদ্ধ আলিম, মসজিদে নববীর মশহুর মুদাররিস এবং মদীনা শরীফের বর্তমান কাযী শায়খ আতিয়্যা সালিম আরবী ভাষায় একটি কিতাব লিখেছেন, যার বিষয়বস্তু হল মসজিদে নববীতে তারাবী নামাযের চৌদ্দ শ' বছরের ইতিহাস। ভূমিকায় তিনি কিতাব রচনার কারণ উল্লেখ করে বলেন,
'মসজিদে নববীতে তারাবী নামায হতে থাকে, ওদিকে কিছু মানুষ আট রাকাআত পড়ে নামায সমাপ্ত করে দেয়। তাদের ধারণা, তারাবী নামায আট রাকাআত পড়া উচিত, এর বেশি পড়া জায়েজ নয়। এভাবে এই মানুষগুলো মসজিদে নববীর অবশিষ্ট নামাযের ছওয়াব থেকে বঞ্চিত থাকে। তাদের মন্দ নসীব দেখে দুঃখ হয়। তাই আমি এই কিতাব রচনার ইচ্ছা করেছি, যাতে তাদের সন্দেহ-সংশয় দূর হয়। এবং তারাবী নামায বিশ রাকাআত পড়ার তৌফিক হয়। আর যে গোড়া কিসিমের মানুষ ইশার নামায সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এজন্য মসজিদ থেকে বের হয়ে যায় যে, দূরের কোন মসজিদে গিয়ে আট রাকাআত তারাবী আদায় করবে তাদেরকে শুধু এটুকু বলে দেওয়াই যথেষ্ট যে, মসজিদ থেকে বের হয়ে না তোমরা ঐ হাদীসের মোতাবেক আমল করলে যে হাদীসে ঘরে যেয়ে নফল পড়ার ফযীলত উল্লেখিত হয়েছে, আর না মসজিদে নববীতে তারাবী পড়ার ফযীলত লাভ করলে, যে মসজিদে এক রাকাআত নামায পড়া অন্যত্র এক হাজার রাকাআত নামায পড়ার চেয়েও উত্তম।'
রেফারেন্সঃ নবীজীর নামায, ড. শাইখ মুহাম্মাদ ইলিয়াস ফয়সাল। পৃষ্ঠা-২৬৬,২৬৭,২৬৮।
উক্ত গ্রন্থে প্রথম শতাব্দী থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত মক্কা মুকাররমা ও মসজিদে নববীতে তারাবীহ্র নামাযের ইতিহাস তুলে ধরার পর শায়খ আতিয়্যা সালিমের লেখনি তুলে ধরা হয়েছে -"উপরের এই দীর্ঘ আলোচনা ও পর্যালোচনা পর পাঠকের খেদমতে আমাদের প্রথম প্রশ্ন এই যে, এই সুদীর্ঘ এক হাজার বছরেরও বেশি সময়ে কখনো কি মসজিদে নববীতে তারাবী নামায আট রাকাআত পড়া হয়েছে? কিংবা বিশ রাকাআতের কম পড়া হয়েছে? হয়নি। বরং ইতিহাস একথাই প্রমাণ করে যে, পুরা চৌদ্দ শ' বছর তারাবী নামায বিশ রাকাআত বা তারও বেশি পড়া হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন এই যে, কোনো মুহাজির বা আনসারী সাহাবী কি এই ফতোয়া দিয়েছেন যে, তারাবী নামায আট রাকাআতের চেয়ে বেশি পড়া জায়েয নয়? তাদের কেউ কি আয়েশা(রাঃ)-এর হাদীসকে আট রাকাআত তারাবীর পক্ষে দলীল হিসেব পেশ করেছেন?
যখন এই দীর্ঘ সময়ে একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিও এমন পাওয়া যায় না, যিনি বলেছেন-তারাবী নামায আট রাকাআতের বেশি পড়া জায়েয নয়, আর না মসজিদে নববীতে তারাবী নামায আট রাকাআত হওয়ার কোনো প্রমাণ রয়েছে, তারপরও যারা আট রাকাআত নিয়েই অটল হয়ে আছেন এবং অন্যদের সেদিকে আহ্বান জানাচ্ছেন তাদেরকে আমরা শুধু এইটুকুই বলতে পারি যে, খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত সকল মুসলিমের যে অবিচ্ছিন্ন কর্মধারা, তার বিরোধীতা করার চেয়ে অনুসরণ করাই অধিক শ্রেয়, বিশেষত যিনি মসজিদে জামাতের সঙ্গে তারাবী পড়তে ইচ্ছুক।"
রেফারেন্সঃ নবীজীর নামায, ড. শাইখ মুহাম্মাদ ইলিয়াস ফয়সাল। পৃষ্ঠা-২৭২,২৭৩।
উপরের আলোচনা থেকে যেসব সিদ্ধান্তে আমরা আসতে পারি তা হলঃ
১. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসটি তাহাজ্জুদ সম্পর্কিত, তারাবীহ্ সংক্রান্ত নয়।
২. ইমাম বুখারী (রহঃ) ব্যতীত অন্যকেউ এই হাদীস তারাবীহ্র অধ্যায়ে বর্ণনা করেন নি। তবে সকলেই "রাতের নামায" তথা তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।
৩. রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলে আট রাকাত তারাবী পড়ার কোন প্রমান নেই।
৪. মক্কা-মদীনায় গত চৌদ্দ শ' বছর ধরে তারাবী বিশ রাকাআত পড়া হচ্ছে।
অভিযোগ ও যুক্তিঃ
১. "তারাবীহ্ নামায নিয়ে অভিযোগ হাফেজ সাহেব দ্রুত ক্বেরাত পড়েন। এভাবে পড়া ঠিক না।"-এই "দ্রুত"র স্ট্যান্ডার্ড কি? এবং কত "দ্রুততার" সাথে পড়া ঠিক না তার সংজ্ঞা দেয়ার এখতিয়ার কার আছে? যাদের এখতিয়ার আছে তারা এই ব্যাপারে কি বলেন? আমাদের, যাদের এখতিয়ার নেই তারা এই ব্যাপারে নাক গলাচ্ছি কেন?
২. "তাড়াহুড়ো করে বিশ রাকাত পড়ার চেয়ে আস্তে ধীরে ৮ রাকাত পড়াই শ্রেয়!" মনগড়া যুক্তি দিয়ে আমল নষ্ট করার ধান্ধা। বিশ নম্বরের পরীক্ষায় কেউ যদি চিন্তা করে তাড়াহুড়ো করে বিশ নম্বর লেখার দরকার কি? বরং আস্তে-ধীরে সুন্দর করে ৮ নম্বর উত্তর দেই তাহলে তাকে নির্বোধ না বলে উপায় নেই। যত সুন্দর করেই লেখা হোক সে ৮এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮-ই পেতে পারে। এর বেশি এক নম্বরও পাবে না।
৩. আলোচ্য পোস্টেও যুক্তি দেয়া হয়েছে যে, মক্কায় একসময় একই ওয়াক্তে চার মাযহাবের ইমামগন আলাদা আলাদা ভাবে চার জামাতে নামায পড়াতেন, এখন তা নেই। কাজেই একসময় মক্কা-মদীনা থেকে ২০ রাকাআত উঠে যেয়ে ৮ রাকাআত চালু হয়ে যাবে।
কিসের সাথে কিসের মিল! মক্কায়-মদীনায় কখনো চার জামাআত চালু ছিল কিনা তা আমার জানা নেই। একথা সত্যি হলেও বলা যায় তারাবীহ্ বিশ রাকাআত জামাতবদ্ধভাবে আমল উমর (রাঃ) শুরু করেন। ইন শা আল্লাহ কেয়ামত পর্যন্ত এই আমল জারি থাকবে। এতে যাদের মনঃকষ্ট বাড়বে তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
৪. আমরা যখন এসব কথার প্রতিবাদ করি তখন আমাদের কিছু দরদী ভাই আমাদের প্রতি অভিযোগ করেন যে, আমরা নাকি উম্মতের মধ্যে বিভেদ ঘটাচ্ছি, ঐক্য নষ্ট করছি! তাদের প্রতি আমার অনুরোধ একটু বিবেক খাটান। আমরা যারা মাযহাব মানা জরুরী মানি, তাদের মধ্যে চার রকমের সুন্নাহ প্রচলিত আছে। আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই। মালেকী, শাফেয়ী, হাম্বলী মাযহাবের অনুসারীদের নামায যখন আমাদের থেকে একটু ভিন্ন হয় তাহলে আমরা তাদের বিদআতী, ভ্রষ্ট, বাপদাদার ধর্মের অনুসারী হবার মত ঘৃণ্য অভিযোগ করি না। এমনকি যারা ৮ রাকাআত সালাত আদায় করে তাদেরকেও এসব কথা বলি না। এতটুকুই বলি তারা পূর্ণ তারাবীহ্র সওয়াব পাবে না। বরং ৮ রাকাতের সওয়াব পাবে। তারা যখন আমাদের আমলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় তখনও আপনারা চুপ থাকেন। আমরা যখন জবাব দেই তখন আপনাদের মধ্যে ঈমানী চেতনা জাগ্রত হয় এবং আমাদের বিরুদ্ধের উম্মাহর ঐক্য বিনষ্টের অভিযোগ আনেন! বিবেক খাটান একটু। মগজ একেবারে অব্যবহৃত রেখে দিলে কিভাবে চলবে?
কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন এইযে তারা মানুষের আমলের ভিতরে বাঁহাত ঢুকাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য কি? যারা আমার আপনার আমলের মধ্যে সন্দেহের বীজ বুনে দিচ্ছে তারা বলে থাকে তারা লোকদের সহিহ আক্বীদা/হাদীস/আমলের দিকে ডাকে! কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। মানুষকে আমল থেকে বিমুখ করতে তাদের জুড়ি মেলা ভার। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন কানাঘুষা শুনতাম তারাবীহ্ ১২ রাকাত পড়লেই হয়। এরপর শুনলাম, তারাবী ৮ রাকাআত। বর্তমানে কিছু কিছু মানুষ ইনিয়ে বিনিয়ে বলছেন তারাবীহ্ হল নফল। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তিনদিনের বেশি এই নামায পড়েন নি। কিছুদিন পর যদি শুনি তারাবীহ্ নামায বলতে কিছু নেই তাহলে অবাক হব না। এসব প্রপাগান্ডার মূল উদ্দেশ্য হল মানুষকে তারাবীহ্ থেকে বিমুখ করা। আর কিছু না। লোকজন ভাববে কেউ বলে ২০ রাকাআত, কেউ বলে ৮ রাকাত! আগে তারা নিজেরা ঠিক করুক কত রাকাআত এরপর তারাবী পড়ব। কেউ কেউ ভাববে তারাবীহ্ নামাযতো নফল। এটা নিয়ে এত মাতামাতির কিছু নেই। এভাবে মানুষ আমল বিমুখ হয়ে যায়/যাবে।
চিন্তা করা দরকার উমর (রাঃ) যখন বিশ রাকাআত তারাবী জামাতবদ্ধ হয়ে পড়ানোর জন্য ব্যবস্থা করেন তখন অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) জীবিত ছিলেন। তারা কেউ এই ব্যবস্থার প্রতিবাদ করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। সহীহ মুসলিম, ইসলামী ফাউণ্ডেশন, ৩য় খণ্ডের ৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত টীকা তুলে দিচ্ছিঃ
“অর্থাৎ হযরত ঊমার (রাঃ) পরবর্তী সময়ে মসজিদে জামায়াত করে তারবীহ পড়ার নিয়ম চালু করেন। কোন সাহাবা তাঁর এ কাজে কোন প্রকার আপত্তি উথাপন করেননি। ফলে তাঁর এই নীতি সাহাবা কিরাম (রাঃ)-এর ইজমা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হযরত উমার (রাঃ)-এর খিলাফত যুগে তিনি হযরত উবাই ইবনে কা’বকে তারাবীহর জামায়াতের ইমাম নিয়োগ করেন। এভাবে সর্বপ্রথম তারাবীহর নামায জামায়াতবদ্ধভাবে পোড়া শুরু হয়। হযরত উমার (রাঃ)-র এই কাজ সম্পর্কে সহীহ বুখারী শরীফের সিয়াম অধ্যায়ে উল্লেখ আছে। এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পূর্বে লোকজন নিজ নিজ বাড়ীতে একা একা তারাবীহর নামায পড়তো। কারন সবাই এই ব্যাপারে একমত যে তারাবীহর নামায ফরয নয় বরং সুন্নাত।
আরও ভাবা দরকার আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) কি তখন বেঁচে ছিলেন? বেঁচে থাকলে কোথায় ছিলেন?তিনি কেন উমর (রাঃ)র প্রতিবাদ করেন নি?
এভাবে আরও অসংখ্য প্রশ্ন করা যায়। ইন শা আল্লাহ সত্যানুসন্ধানকারীদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ঠ।
No comments:
Post a Comment