বিয়ে সংক্রান্ত এই লেখাটি যারা বিয়ে করেন নি তাদের জন্য। ইন শা আল্লাহ সহায়ক হবে।
বিয়ের সময় অসংখ্য প্রশ্ন মাথায় ঘুড়পাক খায়। তন্মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝামেলার প্রশ্ন হল, "কেমন মেয়ে বিয়ে করব?" আমি বরং এই প্রশ্নটাকে একটু ঘুড়িয়ে করতে চাই, "কেমন মেয়ে আপনি বিয়ে করতে চান?"
স্বভাবতই সবাই একই রকম মেয়ে চায় না। কাজেই যে বিয়ে করবে সে কেমন মেয়ে চায় সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও মেয়ে খোজার সময় যেসব দোষ-গুণ দেখা হয় সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল
- রুপবতী কিনা
- কতটুকু শিক্ষিত
- ক্যারিয়ার সংক্রান্ত কোন চিন্তা / কি চিন্তা আছে
- কতটুকু ধার্মিক
- কুমারী কিনা
- অতীত বলতে কিছু আছে কিনা
- বয়স
- পিতা-মাতার কি অবস্থা
ইত্যাদি ইত্যাদি।
স্বাভাবিকভাবেই একশ'তে একশ' কোন মেয়ে খুজে পাওয়া মুশকিল, আমি বলব অসম্ভব। কাজেই একজন মেয়ের মধ্যে আপনার যে বিষয়গুলো দরকার তার মধ্যে প্রায়রিটি নির্ধারন করতে হবে। কিছু বিষয় থাকবে টপ প্রায়রিটি, কিছু বিষয় থাকবে লেস প্রায়রিটি। কোন মেয়ের মধ্যে টপ প্রায়রিটির বিষয়গুলো পাওয়া গেলে, লেস প্রায়রিটিতে ছাড় দিতে হবে।
যেমন ধরা যাক, কেউ রুপবতী-উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করতে ইচ্ছুক। এমন মেয়ে পাওয়া গেল যে রুপবতী-উচ্চ শিক্ষিত, কিন্তু তার পিতা-মাতা জীবিত নেই অথবা সে বয়সে পাত্রের চেয়ে বড় অথবা তার কোন দুঃখজনক অতীত আছে ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে।
আবার ধরা যাক, কেউ ধার্মিক মেয়ে বিয়ে করতে চায়। এমন মেয়ে পাওয়া গেল যে কিনা ধার্মিক কিন্তু অতটা চোখ ধাঁধানো রুপবতি নয়। হয়ত উচ্চতা অন্যমেয়েদের তুলনায় কম অথবা সে খুব বেশি শিক্ষিত নয়। সেক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে।
কাজেই বিয়ের ক্ষেত্রে প্রায়রিটি বিষয়টা আমার মনেহয় খুবই গুরুত্বপূর্ন। তবে কাউকে ভাললেগে গেলে তার হাজারটা দোষ থাকলেও প্রেমিক মন মানতে চায় না।
কাউকে কাউকে বলতে শুনি, ইয়াতীম মেয়ে বিয়ে করবে না। কোন যুক্তিতে সে এমন কথা বলে বোধগম্য নয়। অভিভাবক যদি মারা যান তবে আজকেই আপনিও ইয়াতীম হতে পারেন। এছাড়া ইয়াতীমের সাথে বিবাহতো নিষিদ্ধ নয়। কেন আমরা জীবনকে জটিল করে তুলি?
কেউ কেউ বলে, অতীত আছে এমন মেয়েকে বিয়ে করব না। দ্বীনি ভাইদের মুখে এমন কথা শুনলে আমার করুণা বোধ হয়। পালটা প্রশ্ন করা যায়, ধরা যাক এমন মেয়েকেই বিয়া করলেন যে কখনো ঘর থেকেই বের হয় নি বিয়ের আগে। কি গ্যারান্টি আছে আপনি সুখী হবেন? পক্ষান্তরে কেউ যদি অনুতপ্ত থাকে বা দুর্ঘটনায় পতিত হয় তবে সম্ভবনা আছে সে আপনাকে এমনভাবে আকড়ে থাকবে যেমনটা ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো পেলে আকড়ে ধরতে চায়।
"কখন বিয়ে করব?"
এই প্রশ্নটা যখন মাথায় আসবে, বুঝবেন শীগ্রই আপনার বিয়ে করা উচিত। বিয়ে ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে অনেক বড় একটা বিষয়। কাজেই দ্রুত বিয়ে করা উচিত। বউতো হাতি নয়, তাকে পালতে লাখ লাখ টাকা লাগবে না। মূলকথা, যাকে বিয়ে করলে পালতে সমস্যা হবে না তাকে বিয়ে করুন। উচ্চাকাংখী নয় এমন অসংখ্য মেয়ে পাওয়া যাবে। চালাতে চাইবেন উড়োজাহাজ, আর জ্বালানী দিবেন পানি--তাহলে কিভাবে হবে?
"মেয়ের মনমানসিকতার সাথে আমার মনমানসিকতা মিলবে কিনা কিভাবে বুঝব?"
প্রথমেই বোঝা দরকার কারো সাথে কারো মনমানসিকতা পুরোপুরি মিলবে না। তারপরও যে ধরনের মেয়ে চাই, আলোচ্য মেয়ে সে ধরনের বা কাছাকাছি ধরনের কিনা সেটা বুঝতে পারা বর্তমানকালে কোন ব্যাপারই না।
প্রাথমিক বিষয়সমূহ মেলার পর পাত্র-পাত্রী যখন সামনাসামনি বা ফোনে কথা বলে তখন বুদ্ধিমত্তার সাথে কথা বললেই এই বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। ছেলে হয়ত ঘরকুনো কিন্তু মেয়ের ঘোড়াঘুড়ির খুব শখ। হয়ত ছেলে এমন কোন মেয়ে বিয়ে করতে চায় যার ক্যারিয়ার ভাবনা নেই আর মেয়ে ক্যারিয়ারে অনেকদূর এগিয়ে যেতে চায়। "অনেক পড়াশোনা করেছেন, ক্যারিয়ার নিয়ে কি ভাবছেন?" এভাবে প্রশ্ন করলে এটা জানা ব্যাপারই না।
এমনভাবে কথা বলতে হবে যেন মেয়ে ভাবে আপনি তার সাথে আছেন। বলতে বলতে আপনার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জেনে নিতে পারবেন। এই কথা বলার মাঝেই বেড়িয়ে আসবে, মেয়ে কতটুকু আদব-কায়দা জানে, তার ধৈর্য্য কতটুকু, সে কতটুকু বিনয়ী, লাজুক - ইত্যাদি ইত্যাদি।
এভাবেই বুঝতে হবে মেয়ের সাথে আপনি খাপ খাওয়াতে পারবেন কিনা।
"ভাই, মেয়েতো আমার বান্ধবী..."
সেতো আরো ভাল। বান্ধবী হলেতো আপনাদের মধ্যে ভাল বোঝাপড়া আছে। বোঝাপড়া না থাকলে তো সম্পর্ক হয় না।
"ভাই, এই মেয়েকে আমি ওভাবে দেখি না।"
এক কাজ করেন। চোখ দুটো খুলে ভাল করে ধুয়ে মুছে পড়ে নিয়ে দেখেনতো "ওভাবে" দেখতে পারেন কিনা! পাত্রী খোজার সময় মনমত পাত্রী পাওয়া গেলেই হল। কিভাবে দেখেন, কিভাবে দেখেন না -- এইগুলো ফালতু কথা।
সবশেষে যারা দ্বীনদার তাদেরকে রাসূলুল্লাহর (ছাল্লালাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) বিয়ের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করার অনুরোধ রইল। খাদিজা (রাঃ) ও আল্লাহর রাসূলের যখন বিয়ে হয় তখন খাদিজা (রাঃ) ছিলেন-
- পূর্ব বিবাহিতা
- বয়সে অনেক বড়
এরপরও যতদিন খাদিজা (রাঃ) জীবিত ছিলেন ততদিন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) আর বিয়ে করেন নি। খাদিজা (রাঃ) মৃত্যুর পর রাসূলুল্লাহ খুবই শোকাতর হয়ে পড়েন। অনেক সময় খাদিজা (রাঃ) কন্ঠস্বর শুনতে পেয়েছেন ভেবে চমকে উঠতেন। অন্য বিবিদের সামনে খাদিজা (রাঃ) ভূয়সী প্রশংসা করতেন। [কেউ রেফারেন্স চাইলে দেয়া যাবে]
মনে রাখতে হবে, বরকত, শান্তি - আল্লাহর হাতে। আমরা সুন্নতের উপর যদি থাকতে পারি তবে আশা করা যায় আমরা বরকতপ্রাপ্ত হব, আমরাদের জীবন শান্তিময় হবে। যেসব সুন্নাহ পালন করা সোজা সেগুলো পালন করলাম, আর যেগুলো সমাজ বাকা চোখে দেখে সেগুলো থেকে দূরে থাকলাম -এমন কর্ম থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমীণ।
No comments:
Post a Comment