মাঝে মাঝে আমার কিছু অদ্ভূত ইচ্ছে করে। প্রায় সবগুলোই খাওয়া দাওয়া নিয়ে।
ক্ষুদের চাল চেনেন? ধান ভাঙানোর পরে যেসব চাল ভেঙে যায় সেগুলো হল ক্ষুদ। ভাঙানোর পরে চাল ঝেড়ে কুড়া, ক্ষুদ আর চাল আলাদা করা হয়। ক্ষুদের মধ্যে একটা হল আকারে একটু ছোট, ওটা হল ছোট ক্ষুদ আর যেটা বড়, সে বড় ক্ষুদ। আম্মা ছোট ক্ষুদ দিয়ে কড়াইয়ের মধ্যে তেল, পেয়াজ, দারচিনি দিয়ে কষিয়ে তারপর একপ্রকার ভাত রান্না করত। তরকারী ছাড়াই সেই ক্ষুদের ভাত মাংশের চেয়েও বেশি স্বাদ লাগত। আমার ক্ষুদের ভাত খেতে ইচ্ছে করে।
বাসায় কোন কারনে যদি পানি ভাত বেশি হয়ে যেত তবে আম্মা বা আপু মরিচ-হলুদ কড়াইয়ের মধ্যে একপ্রকার খিচুরীর মত রান্না করে। পরে আমরা সব ভাইবোন মিলে খাই। আমার পানি ভাতের খিচুরী খেতে ইচ্ছে করে।
স্কুলে যাবার পথে একলোক বিভিন্ন লোভনীয় আইটেম নিয়ে বসে থাকত। আমরা বলতাম "কদু"র দোকান। সেখানে কালো কালো হজমী পাওয়া যেত। টক টক স্বাদের সেই হজমী খেলে জিহ্বা কালো হয়ে যেত। আমার মাঝে মাঝে ঐ হজমী খাইতে ইচ্ছা করে।
ছোটবেলায় বাড়িতে যেয়ে একবার কচি লাউয়ের ভর্তা খেয়েছিলাম। লবণ,মরিচ, তেতুল দিয়ে মাখিয়ে। আমার সেই লাউ ভর্তা খেতে ইচ্ছে করে।
এখন আম কাঠালের সিজন। মুচির ভর্তা খেয়েছেন কেউ? আমার না মাঝে মাঝে মুচির ভর্তা খেতে ইচ্ছে করে। কচি মুচি কুচি কুচি করে কেটে মরিচ, তেতুল, চিনি, লবন দিয়ে ভাল ভাবে মাখিয়ে...উফফফফফ......
আমাদের বাড়ির তেতুল গাছে অনেক তেতুল আসে। আম্মা সেগুলো এনে বিচি ছাড়িয়ে কৌটায় পুরে রাখত। আমরা দু'ভাই দুপুর বেলা সবাই ঘুমিয়ে গেলে পা টিপে টিপে ঐ কৌটা খুলে তেতুল বের করে লবন, মরিচ দিয়ে মাখিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে খেতাম। ল্যাক্টোজনের কৌটা থেকে দুধ চুরি করে চিনি আর অল্প একটু পানি দিয়ে পেস্টের মত বানিয়ে খেতাম। এখনো খেতে ইচ্ছে করে।
সামনে জামের সিজন। জামভর্তা আমার বিশেষ প্রিয়। আব্বা দুপুর বেলা বাসায় ফিরে জামভর্তা বানিয়ে দিতেন। আমরা ভাই-বোনেরা মিলে কাড়াকাড়ি করে সেটা খেয়ে ফেলতাম।
এখন সবই আছে। চাইলেই খেতে পারি। খাইও। ভাইবোন, বাবা-মা কেউ কাছে নাই। খাই ঠিকই কিন্তু স্বাদ পাই না।
No comments:
Post a Comment