Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Saturday, October 11, 2014

নিশির বালিশ ভূত

এক

কতইবা হবে নিশির বয়স? চার কি পাচ! এই বয়সেই ওকে একা একা ঘুমাতে হচ্ছে। নিশির আব্বু আম্মু বলে নিশি নাকি বড় হয়ে গিয়েছে। তাই এখন তাকে আলাদা ঘরেই ঘুমুতে হবে। অবশ্য প্রতিদিন রাতে নিশির আব্বু নিশিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যান। মজার মজার গল্প শুনতে শুনতে নিশি ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের মধ্যেও নিশি বুঝতে পারে আব্বু ওর কপালে হালকা করে চুমু দিয়ে চলে যাচ্ছেন। তারপর নিশি আরো গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।

নিশির ঘরটা তার আব্বু-আম্মুর ঘরের সাথে লাগোয়া। মাঝখানের দেয়ালে দরজাটা বেশিরভাগ সময়ই খোলা থাকে। নিশি জানে না, রাতে মাঝে মাঝে এসে তার আম্মু তাকে দেখে যান। ঘুমিয়ে থাকা নিশিকে দেখে তার মনে হয় কি এক অভিমানে মেয়েটা গাল ফুলিয়ে আছে! অপেক্ষা করছে কোন পরী এসে তার মান ভাঙাবে।

নিশির ঘরভর্তি খেলনা। দেশি খেলনা, বিদেশী খেলনা! তবে এত কিছু প্রতি নিশির আগ্রহ দেখা যায় না। তার আগ্রহ তার তার ছোট্ট বালিশের প্রতি। শোবার বালিশ নয়, তার কোলবালিশ। নরম তুলো ভর্তি, তুলতুলে, গোলাপী কভার লাগানো বালিশ। সারাক্ষন এটা নিশি এটাকে আগলে রাখে। বালিশকে খাইয়ে দেয়, ঘুম পাড়ায়, গোসল করায়-আরো কত কি! কত কথা বলে! নিশির আব্বু-আম্মু সবই দেখেন। কিছুই বলেন না। বাচ্চাদের খেলা! কি-ই বা বলবেন তারা?

বিপত্তি দেখা দিল নিশি যখন বাড়াবাড়ি শুরু করল।

প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে নিশিকে একগ্লাস দুধ খেতে হয়। দুধ একটা খাওয়ার জিনিস হল!! সে অনেক চেষ্টা করে না খাওয়ার। দৌড়া-দৌড়ি, মোচরা-মুচরি, পেটের ব্যথা, জ্বর আসছে কিনা--তার বাহানার অন্ত নেই। নিশির আম্মু সব বোঝেন কিন্তু দুধ খাইয়েই ছাড়েন।

সেদিন রাতে নিশির আম্মু দুধ টেবিলে রেখে নিশিকে বললেন খেয়ে নিতে। দুধ দেখেই নিশির মন খারাপ হয়ে গেল। সে তার বালিশটাকে কোলের উপর বসিয়ে বালিশটাকে বলল,
"তুমি দেখেছো আমার কত কষ্ট? প্রতিদিন দুধ খেতে আমার একটুও ভাল লাগে না। তুমিতো আমার বন্ধু আমার কষ্টে তোমার কষ্ট লাগে না? তুমি দুধ খাবে? খেয়ে ফেলনা প্লীজ!!"

নিশি বলতে না বলতেই বালিশ থেকে একটা হাত বেড়িয়ে এল। তারপর হাতটা লম্বা হয়ে টেবিলের উপর থেকে গ্লাসটা নিয়ে এসে বালিশের মুখের উপর উপুড় করে দিল। নিশি একটুও অবাক হল না। ভয়ও পেল না। এমনটা প্রায়ই হয়ে থাকে। নিশির সব কথা বালিশটা শোনে। যা করতে বলে তাই করে। এইজন্যই তো বালিশটা তার সবচে' প্রিয় বন্ধু।

একটু পর নিশির আম্মু এলেন। টেবিলের উপর খালি গ্লাসটা দেখে খুব অবাক হলেন।

"নিশি দুধ খেয়েছো?"

নিশি কিছু বলল না।

"দেখি হা করো!"

নিশির আম্মু শুকে দেখলেন। নিশির মুখে দুধের গন্ধ নেই। নিশির আম্মুর মুখে কঠিন হয়ে উঠল।

"দুধ কি করেছো? ফেলে দিয়েছো?"

নিশি চুপ।

"কি ব্যাপার? কথা বলছ না কেন?"-নিশির আম্মু ধমকে উঠলেন।

"দুধ বালিশটা খেয়ে ফেলেছে।"

"কে খেয়েছে?"

"বালিশটা..."

তিনি বালিশটা হাতে নিলেন। ভেজা ভেজা লাগছে দেখে যা বোঝার বুঝে নিলেন।

"নিশি তুমি খুব দুষ্টু হয়েছো। একেতো দুধ ফেলে বালিশ নষ্ট করেছো। তার উপর বলছো মিথ্যে কথা..."

"আমি মিথ্যে বলছি না আম্মু..." - নিশি দুর্বল গলায় প্রতিবাদ করতে চেষ্টা করল।

"চুপ করো! আবার মিথ্যে কথা বলে! তোমাকে এই দুষ্টুমির জন্য শাস্তি পেতে হবে। আজকে তোমাকে একা একাই ঘুমুতে হবে। তোমার আব্বু আসবে না।"- বলেই বালিশটা নিয়ে নিশির আম্মু চলে গেলেন।

নিশির মনটাই খারাপ হয়ে গেল। একা একা ঘুমুতে তার ভাল লাগে না। কিছুক্ষন বিছানায় বসে থেকে শুয়ে পড়ল। একটু পরেই দেখতে পেল তার বালিশটা হেটে হেটে তার দিকেই চলে আসছে। আনন্দে নিশি লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসল। তারপর বালিশটা কাছে আসতেই জড়িয়ে ধরে একটা চুমু দিল। গভীর আনন্দ নিয়ে নিশি ঘুমিয়ে পড়ল।

সেদিন পিংপং বল নিয়ে খেলার সময় বাধল আরেক বিপত্তি। বালিশটা একপাশে আর নিশি একপাশে। নিশি একবার ছুড়ে মারে। লাফাতে লাফাতে বলটা চলে যায়। আবার ফিরে আসে। ছুড়ে মারতে এবার বেশি জোড় হয়ে গেল। বালিশে লেগে ফেরত আসার সময় নিশির হাত ফসকে বলটা বেরিয়ে গেল। রুমের দরজা খোলা থাকায় দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেল। বলের পিছন পিছন নিশিও দৌড় দিল। লাফাতে লাফাতে বলটা ডাইনিং টেবিলের উপর রাখা গ্লাসের উপর পড়ল। আর যায় কোথায়! খালি গ্লাসটাও গড়াতে গড়াতে টেবিল থেকে পড়ে গেল। নিশির চোখের সামনে কাচের গ্লাসটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। শব্দ শুনে নিশির আম্মু দৌড়ে এলেন রান্নাঘর থেকে। নিশি তখন গালে হাত দিয়ে দাড়িয়েছে।

মায়ের অগ্নিমূর্তি দেখে নিশি কৈফিয়ত দেয়ার সুরে বলল,

"আম্মু, আমি ভাঙিনি, বালিশটা বল ছুড়ে মেরেছে।"

রেগে গিয়ে নিশির আম্মু একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিলেন নিশিকে।

"ফাজিল মেয়ে। খালি মিথ্যে কথা বলে।"

চড় খেয়ে নিশি কাদতে কাদতে নিজের ঘরে চলে এল। বালিশটাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদার ফাঁকে তার গলা দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বেড়িয়ে এল,

"আমি মিথ্যে বলিনি আম্মু। বালিশটা সত্যি সত্যি বল ছুড়ে মেরেছে।"

দুই

পাঁচতলা বাড়িটার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হিরু। আজরাতেই কাজটা সারতে হবে। এইকয়েকদিনে ভালভাবে রেকি করা হয়েছে পুরো এলাকা। এইবাড়ীতে চুরি করতে সুবিধা হবে। পিছনদিকে যে পাইপটা আছে সেটা বেয়ে সহজেই উঠা যাবে। পাইপটা নেমেছে একবারে বাথরুমে পাশ দিয়ে। পাশে জানালার কার্নিশ। সেখান থেকে খুব সহজেই লাফিয়ে নিচের বারান্দায় নামা যাবে। আর দাড়োয়ানটাও তেমন সজাগ থাকে না। একটা-দেড়টা বাজতেই ঘুমিয়ে পড়ে। কিভাবে কি করবে চিন্তা করতে করতেই হিরুর মুখে মুচকি একটা হাসি ফুটে উঠল। 

হিরু একসময় গ্রামের ছিচকা চোর ছিল। নিজ গ্রামে চুরি করত না। আশে-পাশের গ্রামে করত। একদিন ধরা পড়ার পর পাশের গ্রামের মানুষ বেধে রাখে। তারপর মাতব্বের নেতৃত্বে তাদের গ্রামের মাতব্বরের কাছে বিচার চায়। গ্রামের সম্মান নষ্ট হওয়ায় লোকজন তাকে জুতার মালা পড়িয়ে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর হিরু কিছুদিন এদিক সেদিক ঘোড়াঘুড়ি করে ঢাকায় চলে আসে।

"ওস্তাদ, কি চিন্তা করেন?"

বিরক্ত হয়ে হিরু তার সাগরেদ জিলুর দিকে তাকাল। চিন্তা-ভাবনার সময় ডিস্টার্ব। এমনিতে জিলুকে দেখে চোর বলে সন্দেহ করার কোন সুযোগ নেই। মনেহবে পরিপাটি ভদ্রলোক। সবসময় সাহেবদের মত প্যান্ট-শার্ট আর কেডস্‌ পড়ে থাকে। কেডসজোড়ার অবশ্য তলা ক্ষয়ে গিয়েছে। কেডসগুলা ভাল ছিল। অনেকদিন পড়া গেছে। বায়তুল মোকাররাম থেকে চুরি করা। এখন কোথাও থেকে নতুন একজোড়া চুরি করা যায় কিনা সেই ধান্ধ্যায় আছে।

"দেহছ না কি করি?" - হিরুর গলায় স্পষ্ট বিরক্তি। "ভালা কইরা দেইখ্যা ল আগেই। পরে যাতে ঝামেলা না অয়। বুঝছস?"

"বুজছি ওস্তাদ। আপনে যেমনে কইবেন।"

"হুন, তিনতালার বাসাডা দেখ। এই বাসায় লোক নাই। মাত্র তিনজন। লোকটার ইনকামও ভালই মনেঅয়। গাড়ি চালায়। ভাল একটাও দাও মারতে পারলে একদুইমাস কোন টেনশন নাই।"

"কামডা কবে করবেন ওস্তাদ?"

"ওস্তাদ, আমি কইলাম একটা কেডস লমু, পাইলে..."

"হ... লইস"

রাত তিনটা। হিরু আর জিলু বাড়ীটার পিছনদিকে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আশে-পাশের সবগুলো বাসার বাতি নিভে গিয়েছে প্রায় আধাঘন্টা আগে। চারিদিকে কোন শব্দ নেই। এই বাড়ীটায় কোন পোষা কুকুরও নেই। তবুও হিরু কানপেতে শোনার চেষ্টা করছে কোথাও কোন কিছু শোনা যায় কিনা। জিলুচোরারও কান খাড়া।

"ওস্তাদ, চলেন উপরে উঠি।" রাতের নিস্তব্দতায় জিলুর ফিসফিসে গলাও জোড়সে শোনা যায়।

হিরু কিছু না বলে দেয়ালে সাটানো পাইপে হাত দেয়। তারপর তরতর করে অভ্যস্ত হাতে পাইপ বেয়ে উঠতে লাগল। তিনতলার কার্নিস উঠে নিচের দিকে তাকাতেই দেখে জিলু তাকিয়ে আছে। হিরু সংকেত দিলেই উপরে উঠা শুরু করবে। একপলক দেখেই কার্নিস থেকে লাফ দিয়ে ধুপ করে বারান্দায় পড়ল। শব্দটা একটু বেশি হয়ে গিয়েছে। হিরু কানপেতে শোনার চেষ্টা করে কেউ সজাগ হয়ে গেল কিনা। কোন কিছু শোনা যায় কিনা। কিছুই শোনা যাচ্ছে না। হিরু উকি দিয়ে জিলুকে সংকেত দিল। একটু পরেই জিলু উঠে এল তার পাশে।

প্রথমবার শব্দ হতেই নিশির ঘুম ভেঙে গেল। একটু চোখ পিট পিট করে নিশি দেখার চেষ্টা করল। কিসের শব্দ হয়েছে। একটু পরেই তার চোখে আবার ঘুম চলে এল। পরেরবার ধুপ শব্দ হতেই নিশির ঘুম একেবারে কেটে গেল। ধড়মড় করে উঠে বসল। বসেই বালিশটাক জড়িয়ে ধরল। কে শব্দ করে?

একটু পরেই নিশির বারান্দার দরজাটা খুলে যেতে নিশি ভয় পেয়ে গেল। দরজাটা একা একাই খুলে গেল কেন? একটু পরে দরজা দিয়ে ভূতুড়ে দু'টো কাঠামো ঢুকতে দেখে আরো ভয় পেয়ে গেল। আরো জোড়ে বালিশটাকে জড়িয়ে ধরল। চিৎকার করতে যেয়েও করল না। যদি ভূত ঘাড় মটকে দেয়!

বালিশটা যেন তার কানে কানে বলল, "নিশি ভয় পেও না। আমিতো আছি।"

বালিশটার কথায় নিশি একটু সাহস পেল। ভয়ে ভয়ে গলায় বলে উঠল

"এই তোমরা কি ভূত?"

নিশির গলা শুনে হিরু-জিলু চমকে উঠল।
"ওস্তাদ, মাইয়াডাতো জাইগা গেছে।"
"হ...এককাম কর। ভিতরের দরজাটা লাগাইয়া দে। চিল্লান দিলে যাতে কেউ আইতে না পারে।"
জিলু নিঃশব্দে যেয়ে দরজা আটকে দেয়।
"এইবার মাইয়াডার হাত-মুখ বাইন্ধা দে যেন নড়তে-চড়তে না পারে।"
"আইচ্ছা দিতাছি..." বলেই জিলু তার সাথে করে নিয়ে আসা দড়ির বান্ডিলটা হাতে নেয়। শক্ত দড়ি। বাধলে বড়দেরই ব্যাথা লাগে। আর এতো বাচ্চা! কিছু করার নেই। বাধতেই হবে।

কিন্তু ওরা দু'জন খেয়াল না করলেও নিশি খেয়াল করল তার বালিশটা তার কোল থেকে নেমে গিয়েছে। সরু সরু হাতের মত দুইটা অংশ বালিশ থেকে বের হয়ে জিলুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্ধকারে অবশ্য দেখা যাওয়ারও কথা না। জিলু বুঝতেই পারল না তার জুতার ফিতে গুলো কিভাবে একটা আরেকটার সাথে গিট্টু লেগে গেল!

নিশির দিকে পা বাড়াতেই জিলু দড়াম করে এক আছাড় খেল। কপাল জোড়সে ঠুকে গেল নিশির খাটের সাথে। "বাবাগো" বলে চিৎকার দিয়েই জিলু অজ্ঞান হয়ে গেল। হি হি করে হেসে উঠল নিশি। চিৎকারের শব্দে নিশির বাবা মায়ের ঘুম ভেঙে গেল। তারা ছুটে এসে নিশির দরজায় হাত দিলেন। দরজা বন্ধ।

"নিশিইইই...নিশিইইইই"

তাদের গলা শুনেই হিরুর বুকটা ধড়াস করে উঠল। পালাতে হবে। জিলুকে রেখে পালানো যাবে না। যদি পুলিশের হাতে পড়ে মার খেয়ে নির্ঘাত সব বলে দেবে। জিলুর কাধ খামচে ধরে দুইটা ঝাকি দেয়ার পরও জিলুর কোন খবর নেই। এখন কি হবে? দ্রুত চিন্তা চলছে হিরুর মাথায়। এখানে বেশিক্ষন থাকলে নিজেকেও ধরা পড়তে হবে। নিশির বাবার হাক ডাকে ইতোমধ্যে দুই-একটা জানালায় আলো জ্বলতে শুরু করেছে। দরজায় দমাদম কিলতো চলছেই।

হিরু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। পালাতে হবে। জিলুকে ফেলেই পালাতে হবে। পরে কি হয় পরে দেখা যাবে। উঠে বারান্দার দরজার দিকে এগোতেই কে যেন তার শার্টের পিছনদিক টেনে ধরল। ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালেও কাউকে দেখতে পেল না। আবার সামনের দিকে এগোতে চাইল হিরু। কিন্তু অদৃশ্য হাতে থেকে শার্ট ছাড়াতে পারল না। রাগে-ভয়ে হিরু হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। পাগলের মত সামনের দিকে এগোতে চাইল। পারল না। হঠাৎ করেই শার্টের বাধনে ঢিল পড়ল। টাল সামলাতে না পেরে হিরু দৌড়ে যেয়ে দরজায় গায়ে আছড়ে পড়ল। শক্ত কাঠের দরজা। বাড়ি খেয়ে সারা শরীর ঝিমঝিম করে উঠল। নিশি আবারো হি হি করে হেসে উঠল।

হিরু পড়ে যেতেই কে যেন তার পায়ের তালুতে সুড়সুড়ি দিতে আরম্ভ করল। একদিকে ব্যাথা আরেকদিকে হাসি। হিরুর মুখটা বিকৃত হয়ে গেল। এরই ফাকে জিলুর হাতের দড়িটা নিজে থেকে এসেই হিরুর দু'পায়ে পেচিয়ে যেতে লাগল। কিছু বুঝে উঠার আগেই হিরু পাগুলো বাধা পড়ে গেল।

ততক্ষনে বিছানা থেকে নিশি নেমে বাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে। আলো পড়তেই হিরুর চোখ জোড়া কুচকে গেল। পরক্ষনে হিরু বিস্ফোরিত নয়নে দেখতে পেল একটা বালিশ হাতে দড়ি নিয়ে এগিয়ে আসছে। ভয়ে-বিস্ময়ে হিরু নড়াচড়ার ক্ষমতা লোপ পেল। ঘ্যাচ ঘ্যাচ করে দু'টো টানের সাথে সাথে হিরুর হাত বাধা হয়ে গেল। ছোট্ট একটা কাপড়ের টুকরো দিয়ে বালিশটা হিরুর মুখও বেধে ফেলল।

হিরু বিস্ফোরিত চোখে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখল।

"নিশিইইইই...নিশিইইইই...মামনি দরজা খোলোওওও...." - নিশির আম্মুর গলা শোনা যাচ্ছে। ততক্ষনে পুরো বাড়ির সবাই জেগে গেছে। তারাও তিনতলায় চলে এসেছে।

"আম্মুউউউ"
"নিশি...দরজা খোলো আম্মু।"
"দরজা খুলছি। তোমরা ধাক্কা দিও না।"

নিশি আস্তে করে দরজার পাশে রাখা টুলটার উপর উঠে দাড়াল। তারপর দরজার উপরের ছিটিকিনি খুলে দিল। টুল থেকে নেমে দরজা টেনে খুলে দিল। হুড়মুড় করে নিশির আব্বু-আম্মু রুমে ঢুকে গেলেন। নিশির আম্মু নিশিকে কোলে তুলে নিলেন। ঘরের অবস্থা দেখে নিশির আব্বু-আম্মু দু'জনের চোখ কপালে উঠে গেল।

"এইগুলো কি? কি হয়েছে?" - নিশির আব্বু কাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলেন বোঝা গেল না।

"আমি কিছু করিনি আব্বু। আমি ওদেরকে মারিনি। সব ঐ বালিশটা করেছে।" বলেই নিশি তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরল।

নিশির আব্বু-আম্মু অবাক হয়ে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

No comments: