কিছু কিছু ঘটনা জীবনে দগদগে ঘাঁ হয়ে থাকে। শুকায় না। তখন কলেজে পড়ি। আর্থিক অবস্থা বেশি ভাল না। তালি মারা একজোড়া জুতা পড়ে ঘুরাঘুড়ি করি, কলেজে যাই। নতুন একজোড়া কেনা দরকার। বাসা থেকে টাকা নেয়া যাবে না। বাজারের টাকা শর্ট পড়বে। আশায় আছি টিউশনির টাকাটা পেলে কিনব।
অবশেষে টিউশনির টাকা পেলাম। তখন বার্মিজ স্যান্ডেল নতুন নতুন বাজারে এসেছে। রঙ বেরঙের স্যান্ডেল। ওর মধ্য থেকে একজোড়া পছন্দ হল। ১১০ বা ১২০ টাকা দিয়ে কিনে ফেললাম। আগের জোড়া ফেলে দিলাম। এটা পড়েই কলেজে যাই, নামাজে যাই, টিউশনি করি, বাজার করি ইত্যাদি। এরমধ্যেই একদিন একপাশ থেকে ফিতা খুলে গেল। মুচির কাছে গেলে টাকা লাগবে বলে নিজেই সিলাই করে ফেললাম। তবুও শেষ রক্ষা হল না। একদিন ফজরের নামাজ পড়ে বেরিয়ে দেখি আমার স্যান্ডেল হাপিস হয়ে গেল।
মাথায় হাত! এখন কলেজে যাব কিভাবে? নতুন জুতা কিভাবে কিনব? একটা টাকাও নাই হাতে। এই অবস্থা দেখে এক বড়ভাই একটা বুদ্ধি দিলেন। মসজিদের টয়লেটের সামনে মুসুল্লিরা মাঝে মাঝে তাদের পুরনো জুতো-স্যান্ডেল রেখে যেত। ফি সাবিলিল্লাহ! ওখান থেকে আমাকে একজোড়া নিতে বললেন। উপায়ান্তর না দেখে সেখান থেকেই একজোড়া নিলাম।
পুরনো হলেও মজবুত ছিল। বৃষ্টির সময় সাবধানে চলতে হত। নাহলে পিছলে যেত। এমনি একদিন রাতে বৃষ্টি হয়েছে। সকালে কলেজে যেয়ে দেখি গেটের কাছটায়, বারান্দা পানিতে ভেজা। পা টিপে টিপে হাটছি। এমন সময় আমাদের কলেজের গেম টিচার কে দেকলাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে আমার অবস্থা দেখে বিদ্রুপের হাসি হেসে বললেন,
"কি? কি অবস্থা?"
রাগে-দুঃখে, অপমানে-লজ্জায় আমার চোখে পানি চলে আসল। মনে মনে ভাবছিলাম যে, খোদা এমন অবস্থা কেন দিলা একজোড়া ভাল স্যান্ডেল পড়তে পারি না? কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে ক্লাসে চলে গেলাম।
No comments:
Post a Comment