Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Saturday, October 25, 2014

কোরবানী-২০১৪

কোরবানী ঈদ রিপোর্ট-২০১৪ । যাদের সাথে দেখা হল না, তাদের জন্য। 

এইবার ঈদ আসলে আমি যেভাবে ভেবেছিলাম হবে ঠিক সেভাবে হয় নি। আমি সাধারনত যেসব প্ল্যান করি, মিস হয় না। এবারের ঈদের বড় বড় দুটো প্ল্যান মিস হয়েছে। 

প্রথম থেকে ছিলাম কনফিউজ। এই বছর অনেক ছুটি নিয়েছি। সো ঈদের সময় কবে থেকে ছুটি নেব, কতদিন নেব এইসব। ছুটি নিলেও পরে যাব কিভাবে? ট্রেনে নাকি বাসে? আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম ট্রেনে একটা রিস্ক নেব। টিকেট পাই কিনা।
একা একা ট্রেন জার্নি খুব বোরিং। যানজট নেই কিছু নেই, তাও ভৈরব যেতে লাগে ৫ ঘন্টা। এত সময় শুধু বসে থাকাও যায় না। ঝিমুনি এসে যায়। সংগে ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজের কারনে ঝিমানোও যায় না। কখন বেহাত হয়ে যায়! বসার একটু পরেই টের পেলাম সিটের ফোমের ভিতর দিয়ে নিচের স্টিলের রডের শক্ত ছোয়া পাওয়া যাচ্ছে। আরাম করে বসারও উপায় নেই।
যাইহোক, রাত সাড় নয়টা নাগাদ পাঁচদোনা পৌছালাম। ঈদের আগের রাত। বাসস্ট্যান্ডের পেসেঞ্জার পেতে এক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে ধারনাতেও ছিল না।
চিটাগাং থাকতেই দুইজন আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে যেন বাসস্ট্যান্ডে এসেই যেন ফোন করি। একজন হল রিফাত, আরেকজন হল এক ছোটভাই। সি এন জিতে থাকতেই ছোটভাইটাকে ফোন দিয়ে বলছি যেন এক নম্বরের গেটের সামনে থাকে। আর নেমে ফোন দিলাম রিফাত কে।
বাসস্ট্যান্ড নেমেই দেখি এক তামশা! গানের আসর বসেছে! একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই এটা কি? বললেন যে, কি জানি ভাই...আমি এইমাত্র আসলাম।
একটু পরে সদ্য জীবিতদের খাতা থেকে নাম কাটা যাওয়া ছেলেটা তার মটর সাইকেল নিয়ে হাজির। পাশেই ঝুলানো মিস্টির প্যাকেট। আমার ঠোটের মুচকি শয়তানি হাসি দেখে সেও হেসে দিল। চড়ে বসলাম তার গাড়িতে। গেটের কাছে এসে দেখি সেই ছোটভাই দাঁড়িয়ে আছে তার সাইকেল নিয়ে। কুশল বিনিময়ের একফাঁকে সে আমাকে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল। প্যাকেটের মুখ ফাঁক করে দেখি আমার জন্য সে গিফট কিনেছে!
আমি যখন খুব অবাক হই তখন ভাষা খুজে পাই না। আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না, আমার কি করা উচিত। আমি কি ওকে ধন্যবাদ দিব? নাকি ঈদের সময় বাসায় দাওয়াত দিব? নাকি ওকেও কিছু একটা কিনে দেব? নাকি অন্য কিছু করব? রাতের এগারোটা বেজে গেছে। সারাদিন তেমন কিছু খাওয়াও হয়নি, ক্লান্তিতো আছেই। অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূড় অবস্থায় ওকে বিদেয় দিয়ে রিফাতের মটরসাইকেলে চড়ে বাসায় চলে আসলাম।
ঈদের দিনটাতো একরকম কেটেই গেল। সবার যেমন কেটেছে তেমনই। বিপত্তি বাধল রাতের বেলা। কলোনীতে বিদ্যুৎ নেই! জিটিজি উপর লোড কমানোর জন্য হাউজিংয়ের লাইন কেটে দেয়া হয়েছে। গরমে অবস্থা কাহিল। পরেরদিন স্পিন খেলা হবে কিনা এই ডিসিশনের উপর আমার আরেকটা ডিসিশন অপেক্ষা করছে। কিন্তু বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় কোন ডিসিশন নেওয়া হল না।
ঈদ ছাড়াও কলোনীতে যাওয়া হয়। সেই একই প্যাটার্ন। সন্ধ্যায় ঘর থেকে বের হয়ে হোস্টেলে যাওয়া, তারপর রাত ৯-১০ টার দিকে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু আড্ডাবাজি। তারপর আরবার ফিরে আসা। ঈদের সময় এই প্যাটার্নের একমাত্র ভিন্নতা হল আমাদের স্পিন খেলা। আমি যথেষ্ঠ আশাবাদী ছিলাম। হয়ত সবাই আগ্রহ দেখাবে। কিন্তু............. যাইহোক যেটা হয়নি সেটা নিয়ে আর কথা বলে লাভ নেই।
আফসোস হল এই কারনে যে, আমার অন্য প্ল্যানটাও ভেস্তে গেল। খেলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় অন্যটাতে সময়মত ডিসিশন দিতে পারি নি। 

প্রতিদিনই ঘুরে ফিরে হোস্টেল-বাজার-ঘর। ভাবছিলাম বাপ্পির সাথে একদিন সকালে বের হব। ক্যামেরা নিয়ে। তারপর হন্টন চলবে। বাপ্পি আবার ঘাড়ের ব্যাথায় অস্থির। ঈদের রাতে গেলাম বাপ্পিকে দেখতে। সেখানে গিয়ে এক বিব্রতকর পরিস্থিতি। 

বাসার সিলিংয়ের প্লাস্টার খসে পড়েছে আগেই। এবার কাজ করানোর কথা। যাদের ঠিক করেছি তারা ছাদের কাজ করার পর কিছু পেমেন্ট পেয়ে তাইরে নাইরে শুরু করল। সিলিংয়ের কাজ করার জন্য লোক ঠিক করা হল। পরের দিন সকাল থেকে কাজ শুরু করবে। পরেরদিন সকালে আবার আমি চিটাগাং চলে আসব। সবার কাছে বিদেয় নিয়ে টিয়ে রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ৫ টায় উঠতে হবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সব ফর্সা। কিরে কয়টা বাজে? দেখি ৬ টা ১৮! পুরাই মাথায় হাত। এলার্ম দিয়েছে কিন্তু টের পাইনি। ধূর! আজকে আর যাবই না। পাশ ফিরে আবার শুয়ে পড়লাম।
সাড়ে নয়টার দিকে দু'জন লোক এলো। ঘুম থেকে উঠলাম। রুম রেডি করে দিলাম কাজ করার জন্য। কাজ চলল প্রায় আছরের আগ পর্যন্ত। যদিও ধোয়া ধুয়ি শেষ হতে হতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল।ভারী বোঝা টানতে গিয়ে কোমড়ে হ্যাচকা টান খেয়ে বাঁকা হয়ে রইলাম কতক্ষন। চুলা পরিষ্কার করতে গেলাম, চুলার পাশের বটিতে লেগে আঙ্গুল কেটে গেল। পর্দা লাগাতে গেলাম, দেখি একপাশের তারকাটা মিসিং। ঐটা ঠিক করতে যেয়ে অন্যহাতের আঙুলে খেলাম কেচা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুপুরে খাওয়া খেলাম।
পরদিন সকালে কিন্তু সময়মতই উঠলাম। কিন্তু পড়লাম অন্য বিপত্তিতে। দিনটাই শুরু হল ঝগড়া দিয়ে।
সকালবেলা পৌনে ছয়টায় ঘর থেকে বেড়িয়ে যখন হাটা শুরু করেছি তখন দেখি পায়ে টান লাগে! অনেকটা অনেকদিন পরে দৌড়ালে যেমন হয়। উঠলাম সিনএনজিতে। স্ট্যান্ডে আর সিএনজি না থাকায় ভাড়া চাইল ৫ টাকা বেশি।
>কেরে? ৩০ টাকার ভাড়া ৩৫ টাকা কেরে?
>>ঈদের সিজন না? বেশি দেওন লাগব।
>বেশি দিতাম কেরে? আমগোরে বেশি কেডা দেয়?
>>আপ্নেরাতো সরকারী চাকরী করেন। হুইয়া বইয়া থাইক্যা বেতন বোনাস পান। আমগোর বোনাস কে দেয়? সারাদিন গাড়ি চালাই...
>তো কি হইছে? আমগোরে জিম্মী কইরা ভাড়া বেশি নিতেন কেরে আমনে? টাকা হালাল হইত না...
>>আমনেগো টাকা হালাল হইত না। অফিস করেন মিয়া চাইর ঘন্টা...একসপ্তাহ পর্যন্ত এমুন চলব। রবিবার পর্যন্ত...সহাল সহাল আপনের লগে মেজাজ গরম করতারতাম না। না গেলে না যাইবেন... ..............................[আমার সহযাত্রীর সাথে সিএনজি ড্রাইভার]

সিএনজি ছেড়ে দিয়ে এখন বাসের অপেক্ষায়। আসল একটা বাস। ফুল লোড। লোকালে ভাড়া ৩০-৩৫ টাকা। ঐটাও লোকাল, তবে বাস বড়। ভাড়া চায় ৬০ টাকা। উঠলাম না।
উঠলাম মেঘালয় লাক্সারীতে। নরসিংদী রুটে যাদের যাতায়াত আছে তারা নাম শুনে থাকবেন। কাউন্টার সিস্টেম, তাই ভাড়াও ডাবলের বেশি। নেহায়েত কপালগুনে সেই ৪০ সিটের লাক্সারিয়াস মেঘালয়ের ৩৭ নম্বর লাক্সারিয়াস সিটটা আমার কপালে পড়ল। যাই হোক আরেকজনের বিরাট এক গাট্টি কোনরকমে আমার লম্বা লম্বা পা দিয়ে পাশ কাটিয়ে ভারী ব্যাগ কোলের উপর রেখে বসে পড়লাম।
ভূলতা কাউন্টারে এসে নতুন নাটক! গাড়ি থামতেই এক লাল দাড়ির মুরুব্বীগোছের লোক উঠলেন। আমার পাশের ৩৮,৩৯,৪০ নং সিট দখল করলেন। তার পিছে পিছে এলেন দশাসই শরীরের এক হিন্দু মহিলা! সে যখন দেখল সিট সবগুলা দখন তখনই চিল্লাচিল্লি শুরু।
>এই কি ব্যাপার? আপনি একা তিন সিট নিচ্ছেন ক্যান? মহিলার সিট দেন।
>>আরে আমার সিট তিনটাই লাগবে....
>এটা কি ধরনের কথা? আপনি মহিলার সিট দিবেন না...!!
>>আমারোতো মহিলা। আমার লাগবে সিট। দুইটা বাচ্চা আছে। ....এই তোরা বাসে উঠস না কেন?
বলতে বলতেই হিন্দু মহিলার স্বামী, তারপিছে ২ বাচ্চা নিয়ে আরেক দশাসই বোখরাওয়ালী, তারপিছনে গাট্টিবোচকা নিয়ে বোখরাওয়ালী মোটামুটি স্বাস্থ্যের স্বামীর আগমন।
>এই আপনি সিট ছাড়েন না কেন? মহিলা বসতে দিবেন না? ...হিন্দুর স্বামী।
>> আরে আমার তিন সিটই লাগবে। মহিলা আছে, দুইটা বাচ্চা আছে।

এই প্যাচাপ্যাচির ফাঁকে দুই বাচ্চাকে দুই সিটে বসিয়ে মহিলা বসল আমার পাশের সিটে। দুই সিটে বাচ্চা হওয়াতে আমার ও মহিলার সিটের মধ্যে ভালই গ্যাপ ছিল। তাদের বসিয়ে দিয়ে মুরুব্বী নেমে গেছেন।
হিন্দু মহিলা গজগজ করতেছে, "এই বুড়ার সাথে তুমি পারলা না। আমি একা থাকলে এক ধাক্কা দিয়া বুড়ারে কই ফালাইতাম...!"
আমরা ইতোমধ্যে অধৈর্য্য হয়ে উঠছি। কন্ট্রাকটর কোথায়? গাড়ি ছাড়ে না কেন? পরে শুনলাম, এই বাসের কন্ট্রাকটরের মৃগী হয়েছিল। আমরা অবশ্য বাস থেকেই দেখছিলাম একজনকে ধরে সবাই শুইয়ে দিছে।
"আমরা জব করি। জব ধরতে হয়! পুরুষ বসে যাবে আর মহিলা দাড়ায়ে যাবে!!"- হিন্দু মহিলার গজগজানী চলতেছে।
এদিকে বোখরাওয়ালীর জামাই তাদের মালামাল সাইড করেছে। দাঁড়িয়ে আছে। তাই দেখে বোরখাওয়ালীর দরদ উথলাইয়া উঠছে। বাচ্চা দুইটারে ঠেলা দিয়া সরাইছে। আমার আর তার সিটের মধ্যে গ্যাপ বাড়াইছে। তারপর জামাইরে ইশারা দিছে। লোকটা হিন্দু মহিলাকে বলল, "এই যে এখানে বসেন।"
"আমি বসব না। আপনি বসেন!!" মহিলা ঝামটা মারল।
"এখানে কোথায় বসবে? এখানে কি সিট আছে নাকি?" - আমি।
"বিধর্মী তো বিধর্মীই। (আরো কি কি জানি বলছে )" বোরখাওয়ালীর জামাই।
এইবার বাসে কেয়ামত নাইমা আইল।
"এই কি বললেন আপনি? কি বললেন? বিধর্মী বললেন ক্যান?"- হিঃ মহিলা।
"আপনি বিধর্মী গালি দিলেন কেন? কত বড় সাহস! বিধর্মী গালি দেয়। বেয়াদপ কোথাকার।"- হিঃ মহিলার জামাই।
"বিধর্মীরে বিধর্মী বলব নাতো কি বলব? তুই চুপ। স্টুপিড!"-বোঃ জামাই হিঃ জামাইকে।
"আপনি বিধর্মী বলেন কেন?"- হিন্দু ফ্যামিলির ছেলে। বয়স ১৩-১৪ হবে।
"ফাজিলের কোথায়কার!"-আরেক হিন্দু যাত্রী।
"আপনি এইগুলা বলেন কেন? আপনি একাই মুসলমান? আমরা মুসলমান না?"-আরেক মুসলিম (!) সহযাত্রী।

চিল্লাচিল্লীতে কাউন্টার থেকে লোক আসল। ঐ মুরুব্বীও কোথা থেকে এসে হাজির। ঘটনা আঁচ করতে পেরে বোখরাওয়ালীর জামাইরে মুরুব্বী দিছে ধমক। আর ঐ লোকের পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত করছে।
এইসব ঘটনার ফাঁকফোকড়ে লোকটা আমার পাশে এসে বসল। আমি কিছু বললাম না। আমার বসতে তেমন কোন প্রবলেম হচ্ছিল না। কিন্তু লোকটা মনেহয় আমার নিরবতাকে অন্যভাবে নিল।
"দেখছেন? ব্যবহারটা কি করল? বসতে দিলাম...আর কেমন করল..."
এইসুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলাম।
"ভাই আপনি নিজেইতো রং কথা (বিধর্মী) বলছেন। আপনি বসতে বলেন কেন? এখানে কি সিট আছে? আপনার নিজেরই সিট নাই আপনি আরেকজনকে বসতে কেন বলেন?"
ঝাড়ি খেয়ে বেটা একদম চুপ। আমি চিন্তা করলাম, টিকেট কেটে হিন্দু যাচ্ছে দাঁড়িয়ে আর টিকেট ছাড়া মুসলিম (!) যাচ্ছে সিটে বসে।
যাইহোক, আসলাম চিটাগাং রোড। ইউনিকের টিকেট কাটলাম। আমার আগে এক দম্পতি (দুই বাচ্চাসহ) টিকেট কাটছে। আমি কাটছি সাড়ে সাতটায়। গাড়ি ঢাকা থেকে ছাড়বে পৌনে আটটায়। ৮ টা ২০ বেজে গেছে গাড়ির খবর নাই। এখন ঐ ভদ্রলোক কাউন্টারের লোকের সাথে হইচই।
"হ্যা, গাড়ি আসবে বললেন ১০-১৫ মিনিট পর। এখন এক ঘন্টা হয়ে যাচ্ছে। গাড়ির খবর নাই। বাচ্চাগুলা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।"
"কে বলছে গাড়ি ১০-১৫ মিনিট পরে আসবে? আমি বলছি ঢাকা থেকে গাড়ি 7:45 এ ছাড়বে। আসতে আসতে ৩০-৪০ মিনিট লাগবে।"
"আপনি একেক সময় একেক কথা বলেন কেন? এক কথা বলবেন। গাড়ি দেরি হলে বলবেন ১০-২০ মিনিট দেরি হবে। দুই কথা বলেন কেন?"
"দুই কথা কে বলছে? আমি দুই কথা বলি নাই। হেরে (আমাকে) জিগান টিকেট বিক্রির সময় কি বলছি।"
আমি-"ভাই বাদ দেন। বাচ্চারা কান্না কাটি করতেছেতো তাই এসব কথা বলতেছে। আমরাতো জানিই এই রুটের গাড়ির অবস্থা।"

এরপরও ওই লোক গজগজ করলেও কাউন্টারের ম্যানেরজার কিছু বলে নাই আর।
গাড়িতে উঠেও আরেকজনের সাথে ঝগড়া করলাম। যে ঘটনার জন্য যে দোষী না সেই ঘটনায় তার সাথে মেজাজ খারাপ করলাম। মুড অফ অবস্থা চিটাগাং শহরে এসে পৌছালাম।
একঘন্টা বাকি এখনো কম্পোনীর গাড়ি আসতে। এখন কি করব? অপেক্ষা নাকি লোকাল সার্ভিস দেখব? নাকি ওয়াল্টনের কাস্টমার কেয়ার খুজব? আগে নাহয় যুহর পড়ে নেই।
নামাযের পর সিদ্ধান্ত নিলাম ওয়াল্টনের কাস্টমার কেয়ারটাই আগে খুজে বের করি। তারপর দেখা যাবে কিহয়। ফোন দিলাম। বলল আগ্রাবাদ আসতে হবে, আমরা ৬ টা পর্যন্ত আছি।
গেলাম আগ্রাবাদ। বাসে থাকতেই একজনের সাথে কথা বলে মুহুরীপাড়া কোনদিকে আইডিয়া নিয়েছি। কিন্তু নেমে রিকশাওয়ালাকে মুহুরীপাড়া বলাতে চিনলই না। হাটা শুরু করলাম। সিঙ্গাপুর মার্কেটের সামনে দিয়ে হেটে হেটে একটু দূরেই একটা মোড়ে আসলাম। আবার ফোন দিলাম,
"ভাই কোথায় আপনাদের দোকান? রিকশাওয়ালাতো চিনে না..." 
"ভাই রিকশাওয়ালাকে বলেন যে, ...... কমিউনিটি সেন্টারের পরেই। ২-৩ মিনিট লাগবে?"
"....... কমিউনিটি সেন্টার?"
"জ্বী..."
"ওকে..."

পাশে থাকা ট্রাফিক পুলিশ আমার কথা শুনল। তারপর উনি নিজেই আমাকে একটা রিকশা ঠিক করে দিল। এই প্রথম মনে হয় কোন পুলিশকে ভাল একটা কাজ করতে সরাসরি দেখলাম!
যাইহোক, কমিউনিটি সেন্টারের ছাড়িয়ে একটু এগিয়েই রিকশা ছেড়ে দিলাম। Waltonbd আর খুজে পাই না। কোথায় কোথায়? সাত পাচ ভাবতে ভাবতে সামনের দিকে এগুচ্ছি। হঠাৎ দূরে সাইনবোর্ডটা চোখে পড়ল। হাটার গতি বাড়ালাম। সামনে যেয়ে দেখি বন্যা! কি অবস্থা আগ্রাবাদে! ঘূর্নিঝড় হুদহুদের প্রভাবে উচ্চজোয়ারে নর্দমা উপচিয়ে রাস্তায় গোড়ালির উপর পর্যন্ত পানি।
এখনতো আর রিকশাও পাই না। কি আর করা। পচা পানি পেরিয়ে গলির ভিতর চিপার মধ্যে গেলাম। ফেরার সময় রিকশা পাওয়াতে আর পানিতে পার ফেলতে হয় নি। ততক্ষনে এক ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। গাড়ি চলে গেছে। পেটেও টান পড়েছে। আগ্রাবাদ মোড়ে হোটেল জামানে ঢুকলাম। লাঞ্চ সেরে তারপর আস্তে আস্তে আমার ডেরায় পৌছালাম।

নামাযের সময় বিভ্রান্তি (যুহর)

আজকে লিখব যুহরের সালাতের ওয়াক্ত নিয়ে। প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ সমূহে যেসকল হাদীস এসেছে সেগুলো তুলে ধরলাম। তবে তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যকার কথাগুলো কিন্তু আমার লেখা।
১. বুখারী শরীফ, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা-৯~১৩, ইমাম মুহাম্মাদ ইব্‌ন ইসমাঈল বুখারী (রঃ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
৩৫৯. অনুচ্ছেদঃ প্রচণ্ড গরমের সময় যুহরের সালাত ঠান্ডায় আদায় করা
৫০৮. আয়্যূব ইব্‌ন সুলাইমান (রঃ)...আবূ হুরায়রা ও আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন গরমের প্রচণ্ডতা বৃদ্ধি পায়, তখন গরম কমলে সালাত আদায় করবে। কেননা, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের অংশ।
৫০৯. মুহাম্মদ ইব্‌ন বাশ্‌শার (রঃ)...আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এর মুআয্‌যিন আযান দিলে তিনি বললেনঃ ঠান্ডা হতে দাও, ঠান্ডা হতে দাও। অথবা তিনি বললেন, অপেক্ষা কর, অপেক্ষা কর। তিনি আরও বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের ফলেই সৃষ্টি হয়। কাজেই গরম যখন বেড়ে যায় তখন গরম কমলেই সালাত আদায় করবে। এমনকি (বিলম্ব করতে করতে বেলা এতটুকু গড়িয়ে গিয়েছিল যে) আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম।
৫১০. আলী ইব্‌ন আবদুল্লাহ্‌ মাদানী (রঃ)...আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ যখন গরম বৃদ্ধি পায় তখন তোমরা তা কমে এলে (যুহরের) সালাত আদায় করো। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপের অংশ। (তারপর তিনি বলেন), জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আর এক অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। ফলে আল্লাহ্‌ তা'আলা তাকে দু'টি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন, একটি শীতকালে আর একটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দু'টি হলো, তোমার গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভব কর তাই।
৫১১. উমর ইব্‌ন হাফ্‌স (রঃ)...আবূ সায়ীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যুহরের সালাত গরম কমলে আদায় কর। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। সুফইয়ান, ইয়াহ্‌ইয়া এবং আবূ আওয়ানা (রঃ) আ'মাশ(রঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫১২. আদম ইব্‌ন আবূ ইয়াস (রঃ)...আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়ায্‌যিন যুহরের আযান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী(সাঃ) বললেনঃ গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (সালাত নিয়ে) এত বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। তারপর নবী (সাঃ) বললেনঃ গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। কাজেই গরম প্রচন্ড হলে উত্তাপ কমার পর সালাত আদায় করো। ইব্‌নে আব্বাস (রাঃ) বলেন, হাদীসে ...... শব্দটি ...... ঝুঁকে পড়া, গড়িয়ে পড়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
৩৬১. অনুচ্ছেদঃ যুহরের ওয়াক্ত হয় সূর্য ঢলে পড়লে। জাবির (রাঃ) বলেন, দুপুরে নবী (সাঃ) সালাত আদায় করতেন।
৫১৩. আবুল ইয়ামান(রঃ)...আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন সূর্য ঢলে পড়লে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বেরিয়ে এলেন এবং যুহরের সালাত আদায় করলেন।১ তারপর মিম্বরে..... [হাদীস সংক্ষেপিত] 
টীকা-১: পূর্বোক্ত হাদীসগুলোতে বুঝা যায় গরমের দিনে যুহরের সালাত উত্তাপ হ্রাস পাওয়ার পর পড়া উত্তম। আর এ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) সূর্য ঢলার পর সালাত আদায় করলেন। এ দু' হাদীসে মূলত কোন বিরোধ নেই। সূর্য ঢলার পরেই যুহরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। তবে গরমের দিনে দেরী করে পড়া ভাল। কোন কারনে সূর্য ঢলার সাথে সাথে আদায় করে ফেললে সালাত যথাসময়ে আদায় হয়ে যায়। তবে বিনা প্রয়োজনে উত্তমের বিপরীত না করা উচিত।

৫১৫. মুহাম্মদ ইব্‌ন মুকাতিল (রঃ)...আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পিছনে গরমের সময় সালাত আদায় করতাম, তখন উত্তাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কাপড়ের উপর সিজ্‌দা করতাম।
২. সহীহ মুসলিম, ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ, দ্বিতীয় খন্ড, পৃঃ ৩৯৭~৪১০,বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার।
১২৭২. আবদুল্লাহ ইবনে 'আমর থেকে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেছেন, ..... তোমরা যখন যোহরের নামায পড়বে তখন জেনে রেখো যে এর সময় হলো-আসরের ওয়াক্ত শুরু না হওয়া পর্যন্ত। [হাদীসের অংসবিশেষ]
১২৭৩. 'আবদুল্লাহ ইবনে 'আমর নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। নবী (সাঃ) বলেছেনঃ 'আসরের নামাযের ওয়াক্ত না হওয়া পর্যন্ত যোহরের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। [হাদীসের অংশবিশেষ]
টীকাঃ এ হাদীসটিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের শেষ সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নামাযের ওয়াক্ত কখন থেকে শুরু হয় সে সম্পর্কে এ হাদীসে কিছুই বলা হয়নি।

১২৭৫. 'আবদুল্লাহ ইবনে 'আমর থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যোহরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় যখন সূর্য (মাথার ওপর থেকে পশ্চিম দিকে) হেলে পড়ে এবং মানুষের ছায়া তারা দৈর্ঘ্যের সমান হয়। আর আসরের নামাযের সময় না হওয়া পর্যন্ত তা থাকে। [হাদীসের অংশবিশেষ]
১২৭৬. 'আবদুল্লাহ ইবনে 'আমর ইবন আস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে নামাযের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেনঃ সুর্যের উপর দিকের প্রান্তভাগ দেখা না যাওয়া পর্যন্ত নামাযের সময় থাকে। যোহরের নামাযের সময় থাকে। আকাশের মধ্যভাগ থেকে সূর্য গড়িয়ে 'আসরের সময় না হওয়া পর্যন্ত। [হাদীসের অংশবিশেষ]
অনুচ্ছেদঃ ৩৪
গরমের প্রচণ্ডতা না থাকলে ওয়াক্তের প্রথম ভাগেই যোহরের নামায পরা উত্তম। যারা জামায়াতের নামায পড়ার জন্য (মসজিদে যেতে) পথে প্রচন্ড গরমের সম্মূখীন হয় তাদের জন্য দেরী করে যোহরের নামায পড়া উত্তম।

১২৮২. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ গরম প্রচণ্ডতা লাভ করলে (যোহরের) নামায দেরী করে গরমের প্রচণ্ডতা কমলে পড়ো। গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়া থেকেই হয়ে থাকে।
১২৮৩. হারমালা ইবনে ইয়াহ্‌ইয়া ইবনে ওয়াহাব, ইউনুস ও ইবনে শিহাবের মাধ্যমে আবু সালামা ও সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব থেকে বর্ণনা করেছেন। তারা উভয়ে আবু হুরায়রা থেকে হুবহু অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তারা আবু হুরায়রা বলতে শুনেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অনুরূপ বলেছেন।
১২৮৪. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ গরমের দিনে (যোহরের) নামায দেরী করে (গরমের প্রচণ্ডতা হ্রাস পেলে) পড়ো। কারন গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ ছড়ানো থেকেই হয়ে থাকে। আমর বলেছেনঃ আবু ইউনুস আবূ হুরায়রার মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ (গরমের তীব্রতার সময় যোহরের) নামায দেরী করে (গরম হ্রাস পেলে) পড়ো। কেননা গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ ছড়ানো থেকেই হয়ে থাকে। ইবনে শিহাব, ইবনুল মুসাইয়েব এবং আবু সালামা ও আবু হুরায়রার মাধ্যমে আমর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১২৮৫. আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, এই (প্রচণ্ডতম) গরম জাহান্নামের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়া থেকেই উৎপন্ন হয়ে থাকে। সুতরাং তোমরা (যোহরের) নামায দেরী করে (গরম কমে গেলে) পড়ো।
১২৮৬. হাম্মাম ইবনে মুনাব্বিহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আবু হুরায়রা আমার কাছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তারমধ্যে একটি হলো, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তীব্র গরমের সময় নামায না পড়ে পরে (গরম কমলে) নামায পড়ো। কেননা প্রচণ্ড গরম জাহান্নামের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার কারণেই সৃষ্টি হয়।
১২৮৭। আবু যার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, (একদিন) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মুয়াযযিন যোহরের নামাযের আযান দিলে নবী (সাঃ) তাকে বললেনঃ আরে, একটু ঠাণ্ডা হতে দাও না। অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) বললেনঃ কিছু সময় অপেক্ষা করো না। তিনি একথাও বললেন যে, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার কারনে হয়ে থাকে। সুতরাং গরম প্রচন্ডতা ধারন করলে নামায দেরী করে একটু ঠান্ডা হলে পড়ো। আবু যার (হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবা) বলেনঃ (প্রচণ্ড গরমের দিনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এমন সময় নামায পড়তেন যে সময়) আমরা টিলার ছায়া দেখতে পেতাম।
১২৮৯. আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ গরমের সময় যোহরের নামায দেরী করে (গরমের প্রচণ্ডতা কমলে) পড়ো। কেননা গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়াতেই হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেলেনঃ দোযখ তার প্রভু আল্লাহর দরবারে অভিযোগ করলে মহান আল্লাহ তাকে প্রতি বছর দুইবার শ্বাস প্রশ্বাসের অনুমতি দিলেন। শীতকালে একবার এবং গ্রীষ্মকালে একবার।
অনুচ্ছেদঃ ৩৫
গরমের প্রচণ্ডতা না থাকলে ওয়াক্তের প্রথমেই নামায পড়া উত্তম
১২৯১। জাবির ইবনে সামুরা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ সুর্য (মাথার ওপর থেকে) হেলে পড়লেই নবী (সাঃ) যোহরের নামায পড়তেন।
টীকাঃ এই হাদীস থেকে প্রমানিত হয় যে, খুব গরম না থাকলে যোহরের নামায ওয়াক্তের প্রথমভাগেই পড়ে নেওয়া উত্তম।

১২৯২। খাব্বাব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমরা গরমের সময় নামায পড়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)র কাছে অভিযোগ করলে তিনি আমাদের অভিযোগ গ্রহন করলেন।
টীকাঃ হাদিসটিতে ...... আর রামদা- শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ হল প্রচণ্ড গরম। পূর্বে যেসব হাদীস আলোচিত হয়েছে সেসব হাদীসের সাথে এ হাদীসটিকে আপাতঃদৃষ্টিতে সাংঘর্ষিক মনে হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঐসব হাদীসের সাথে এই হাদীসের কোন অমিল বা বৈপরীত্য নেই। কারণ কারো কারো মতে, 'রামদা' শব্দের অর্থ হলো বালু বা মাটি গরম। অর্থাৎ বালুর ওপর সূর্যোত্তাপ পড়ে যে প্রচণ্ড গরমের সৃষ্টি হয় 'রামদা' দ্বারা তাই বুঝানো হয়ছে। সুতরাং এক্ষেত্রে অভিযোগের অর্থ হলো প্রচণ্ড গরম বালুর ওপর সিজদা করতে যে অসুবিধা হতো সে বিষয়ে অভিযোগ। এতে বুঝা যায় যে, যোহরের নামায শেষ সময় এসে গেলেও বালু মাটি এরূপ গরম থাকত এবং এ অবস্থায় নামায পড়াকালে সিজদা করতে খুবই কষ্ট হতো। তাই নবী (সাঃ) এই অভিযোগের প্রতি মনোনিবেশ করেননি। এর আরো একটি অর্থ হতে পারে যে, আরবে তুলনামূলক ঠান্ডা দিনেও গরমে মাটি এরূপ উত্তপ্ত হত যে তাতে কপাল স্থাপন করে সিজদা করা কঠিন হতো।
১২৯৩. খাব্বাব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাঃ) কাছে গিয়ে প্রচন্ড গরমের (নাময পড়ার ব্যাপারে) অভিযোগ করলাম। কিন্তু তিনি আমাদের অভিযোগ গ্রহন করলেন। বর্ণনাকারী যুহাইর বলেছেন, আমি আবু ইসহাককে জিজ্ঞেস করলামঃ তারা (খাব্বাব ও অন্যান্য সাহাবাগন) কি যোহরের নামায (প্রচন্ড গরমের মধ্যে) পড়া সম্পর্কে অভিযোগ করেছিলেন? তিনি বললেন, হাঁ। আমি (যুহাইর) আবারও জিজ্ঞেস করলাম (যোহরের নামায) আগেভাগে অর্থাৎ ওয়াক্তের প্রথমদিকে পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন? তিনি এবারও বললেনঃ হাঁ।
১২৯৪. আনাস ইব্‌ন মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ প্রচণ্ড গরমের সময়ও আমরা রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাথে (যোহরের) নামায পড়তাম। আমাদের কেউ যখন (গরমের প্রচণ্ডতার কারণে সিজদার সময়) কপাল মাটিতে স্থাপন করতে পারত না তখন সে কাপড় বিছিয়ে তার ওপর সিজদা করতো।
৩. আবু দাঊদ শরীফ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা-২২৪~২২৬, ইমাম আবু দাঊদ (রঃ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
অনুচ্ছেদঃ যুহরের নামাযের ওয়াক্ত
৩৯৯. আহ্‌মাদ ইব্‌ন হাম্বল......জাবের ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইয়ে ওয়া সাল্লামের সাথে যুহরের নামায আদায় করতাম। তিনি এক মুষ্টি পাথরের নুড়ি আমার হাতে দেন ঠান্ডা হওয়ার জন্য যেন আমি অত্যধিক গরমের কারনে তা আমার সিজ্‌দার স্থানের রেখে তার উপর সিজদা করতে পারি।১ (নাসাঈ)
৪০০. উছমান ইব্‌ন আবু শায়বা...আবদুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ্‌ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, গরমের সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যুহরের নামায-তিন হতে পাচ কদমের মধ্যের সময়ে এবং শীতকালে পাচ হতে সাত কদমের মধ্যবর্তী সময়ে আদায় করতেন।২ -(নাসাঈ)
৪০১. আবুল ওয়ালীদ আত-তায়ালিসী...আবু যার (রাঃ) বলেন, আমরা নবী করীম (সাঃ) এর সাথে ছিলাম। মুআয্‌যিন যুহরের নামাযের আযান দিতে প্রস্তুত হলে তিনি বলেনঃ ঠান্ডা হতে দাও (অর্থাৎ রোদের প্রখরতা একটু নিস্তেজ হোক)। কিছুক্ষন পর মুআয্‌যিন পুনরায় আযান দিতে চাইলে তিনি আবার বলেন, ঠান্ডা হতে দাও। রাবী বলেন, নবী করীম (সাঃ) একথা দুই অথবা তিনবার বলেন। এমতাবস্থায় যুহরের নামাযের সময় প্রায় শেষ বলে প্রতিয়মান হল। তখন নবী করীম (সাঃ) বলেনঃ 'নিশ্চয়ই প্রচন্ড গরম জাহান্নামের প্রচন্ড তাপের অংশবিশেষ।' অতএব যখন অত্যধিক গরম পড়বে তখন যুহরের নামায বিলম্বে আদায় করবে।-(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)
টিকাঃ ১. নামায আদায়ের স্থান যদি অধিক গরম বা ঠান্ডা হয়, তবে তা হতে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে অন্য কাপড় অথবা অন্য কোন বস্তু সেখানে রেখে তার উপর দাঁড়ানো বা সিজ্‌দা করা জায়েজ।-(অনুবাদক)
২. "ছায়ায়ে-আসলী" বা "আসল ছায়া" বলা হয়- ঠিক দ্বিপ্রহরে প্রত্যেক ব্যক্তি বা বস্তুর ছায়া যতটুকু দীর্ঘায়িত হয়-তাকে। স্থান-কাল ও ঋতুচক্রের পরিবর্তনের ফলে ছায়ায়ে আসলীর পরিবর্তন হয়ে থাকে। হানাফী মায্‌হাব অনুযায়ী যুহরের নামাযের সর্বশেষ সময় প্রত্যেক বস্তুর আসল ছায়া বাদে যখন তার ছায়া দ্বিগুন হবে-সে সময় পর্যন্ত।-(অনুবাদক)

য়াযীদ ইব্‌ন খালিদ...আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন অত্যধিক গরম পড়বে তখন যুহরের নামায বিলম্বে আদায় করবে। কেননা নিশ্চয়ই অত্যধিক গরম জাহান্নামের প্রচন্ড তাপের অংশবিশেষ-(বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, ইব্‌ন মাজা, মালেক, তিরমিযী);
৪০৩.। মুসা ইব্‌ন ইসমাঈল...জাবের ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। সূর্য যখন পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ত তখন বিলাল (রাঃ) যুহরের নামাযের আযান দিতেন-(মুসলিম, ইব্‌নে মাজা)।
৪. মুয়াত্তা, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা-৬০~ ইমাম মালিক (রঃ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
রেওয়ায়াত ৬
নাফি' (রঃ) হইতে বর্ণিত- উমর ইব্‌নে খাত্তাব (রাঃ) তাহার (অধীনস্থ) কর্মকর্তাদের নিকট লিখিয়াছিলেন ......তোমরা যোহরের নামায পড়িও যখন ফাই (সূর্য পশ্চিমে হেলিয়া পড়ার পর যে ছায়া হয় তাহা) এক হাত হয়। এই নামাযের সময় তোমাদের প্রত্যেকের ছায়া তাহার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত। [হাদীসের অংশবিশেষ]
রেওয়ায়ত ৭
মালিক ইব্‌ন আসবাহী(রাঃ হতে বর্ণিত - উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) আবূ মুসা আশ'আরী (রা)- এর নিকট (পত্র) লিখিয়াছেনঃ সূর্য ঢলিয়া পড়িলে পর তুমি যোহর পড়, [হাদীসের অংশবিশেষ]
৫. তিরমিযী শরীফ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা-১৫২~১৫৩, ইমাম আবূ ঈসা আত তিরমিযী (রঃ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
অনুচ্ছেদঃ শীঘ্র যুহরের সালাত আদায় করা
১৫৫. হান্নাদ ইব্‌নুস সারী (রঃ)...আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সাঃ), আবূ বকর ও উমর (রাঃ) অপেক্ষা শীঘ্র১ যুহরের সালাত আদায় করতে আর কাউকে আমি দেখিনি।
এই বিষয়ে জাবির ইব্‌ন আবদিল্লাহ, খাব্‌বাহ, আবূ বারযা, ইব্‌ন মাসঊদ, যায়দ ইব্‌ন ছাবিত ও জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রঃ) বলেনঃ আইশা (রাঃ) বর্ণিত এই হাদীছটি হাসান।
সাহাবী ও পরবর্তীযুগের আলিমগন এই হাদীছের মর্মানুসারে মত গ্রহন করছেন। 
আল ইব্‌ন মাদিনী বলেন, ইয়াহইয়া ইব্‌ন সাঈদ বলেছেনঃ "প্রয়োজনীয় জিনিস থাকা স্বত্তেও যে ভিক্ষা করে......২ সম্পর্কিত ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছের প্রেক্ষিতে হাকীম ইব্‌ন জুবায়র সম্পর্কে শু' বা সমালোচনা করেছেন।

ইয়াহইয়া (রঃ) বলেনঃ সুফইয়ান ও যায়দাও হাকীম ইব্‌ন জুবায়র থেকে হাদীছ বর্ণনা করছেন। ইয়াহইয়া তাঁর থেকে রিওয়ায়াত করায় কোন অসুবিধা আছে বলে মনে করেন না।
মুহাম্মাদ আল-বুখারী (রঃ) বলেনঃ হাকীম ইব্‌ন জুবায়র-সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র-আইশা (রাঃ) সূত্রে যুহরের সালাত শীঘ্র আদায় করা সম্পর্কে হাদীছ বর্ণিত আছে।
টীকাঃ ১. আউয়াল ওয়াক্তে
টীকাঃ ২. ইমাম তিরমিযী (রঃ) 'যাকাত কার জন্য হালাল' শীর্ষক অনুচ্ছেদে হাদীছটি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।

১৫৬. হাসান ইব্‌ন আলী আল-হুলওয়ানী (রঃ)....... আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, সূর্য হেলে পড়ার পর রাসূল (সাঃ) যুহরের সালাত আদায় করেছেন।
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রঃ) বলেনঃ এই হাদীছটি সহীহ। এই বিষয়ে এই হাদীছটিই সর্বাধিক উত্তম।
এই বিষয়ে জাবির (রাঃ) থেকেও হাদীছ বর্ণিত আছে।
অনুচ্ছেদঃ গরমের দিনে বিলম্ব করে যুহর আদায় করা
১৫৭। কুতায়বা (রঃ) ...... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেনঃ প্রছন্ড গরম পড়লে (কিছুটা) শীতল সময়ে সালাত আদায় করবে। কারন, জাহান্নামের নিঃশ্বাস থেকে হয় গরমের তীব্রতা।
এই বিষয়ে আবূ সাঈদ, আবূ যার, ইব্‌ন উমর, মুগীরা, কাসিম ইব্‌ন সাফওয়ান তাঁর পিতার বরাতে, আবূ মূসা, ইব্‌ন আব্বাস এবং আনাস(রাঃ) থেকেও হাদীছ বর্ণিত রয়েছে।
উমর (রাঃ)-এর সূত্রেও এই বিষয়ে একটি হাদীছ বর্ণিত রয়েছে কিন্তু সেটি সহীহ নয়।
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রঃ) বলেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত এই হাদীছটি হাসান-সহীহ।
আলিমদের একদল তীব্র গরমের সময় যুহরের সালাত বিলম্ব করে পড়ার বিধান গ্রহন করেছেন।
ইমাম মুবারাক, (ইমাম আবূ হানীফা,) আহমদ এবং ইসহাকও এই অভিমত পোষণ করেন। ইমাম শাফিঈ (রঃ) বলেনঃ দূর থেকে মুসল্লীদের আসতে হলে যুহরের সালত বিলম্ব করে ঠান্ডা সময়ে পড়া যায়। মুসল্লী যদি একা সালাত আদায় করে বা স্বীয় মহল্লার মসজিদে সালাত আদায় করে তবে তীব্র গরমের সময়েও সালাত আদায়ে বিলম্ব না করা আমার মতে পছন্দনীয়।
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রঃ) বলেনঃ তীব্র গরমের সময় যুহরের সালাত বিলম্ব করে আদায় করার অভিমতটি উত্তম ও অনুসরনযোগ্য।
যার কষ্ট হয় এবং যাকে মসজিদে দূর থেকে আসতে হয় শুধু তার জন্যই বিলম্ব করার অনুমতি আছে বলে ইমাম শাফিঈ যে মত ব্যক্ত করেছেন তা আবূ যার (রাঃ) বর্ণিত হাদীছের বিপরীত।
আবূ যার (রাঃ) বলেনঃ আমরা এক সফরে রাসূল (সাঃ) এর সাথে ছিলাম। বিলাল যুহরের আযান দিলেন। রাসূল (সাঃ) বললেনঃ হে বিলাল! ঠান্ডা কর, আরো ঠান্ডা কর।
ইমাম শাফিঈ যে মত ব্যক্ত করেছেন, ব্যাপার যদি আসলে তা-ই হত তবে এই ক্ষেত্রে বিলাল (রাঃ)-কে ঠান্ডা কর বলার কোন অর্থ থাকত না। কেননা, সফরে তারা সকলেই একত্রে ছিলেন, দূর থেকে আসার কোন প্রয়োজন ছিল না।
১৫৮। মাহমূদ ইব্‌ন গায়লান (রঃ)...আবূ যার(রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ রাসূল (সাঃ) এক সফরে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে বিলাল (রাঃ)ও ছিলেন। যুহরের ওয়াক্তে বিলাল ইকামত দিতে চাইলেন। রাসূল (সাঃ) তাঁকে বললেনঃ ঠাণ্ডা করে পড়। পরে বিলাল (রাঃ) আবার ইকামত দিতে চাইলেন। রাসূল (সাঃ) বললেনঃ যুহরের সালাতের বেলায় আরো ঠাণ্ডা করে পড়।
আবূ যার (রাঃ) বলেনঃ এত বিলম্ব করা হল যে, এমন কি আমরা মাটিতে নেতিয়ে থাকা বালির টিলাগুলোর ছায়া পড়তে দেখতে পেলাম। এরপর ইকামত দেয়া হল এবং রাসূল (সাঃ) সালাত আদায় করলেন। পরে তিনি বললেনঃ গরমের তীব্রতা হল জাহান্নামের নিঃশ্বাস থেকে। সুতরাং তোমরা সালাত ঠান্ডা সময়ে আদায় কর।
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রঃ) বলেনঃ হাদীছটি হাসান ও সহীহ।
৬. মেশকাত শরীফ, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা-১৬৬~১৭৩। মাওলানা নূর মুহাম্মাদ আ'জমী (রঃ), এমদাদিয়া পুস্তকালয়, লিঃ। ঢাকা।
৫৩৪--(১) হযরত আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলিয়াছেনঃ যোহরের নামাযে সময় আরম্ভ হয় যখন সূর্য্য ঢলে এবং যখন মানুষের ছায়া তাহার দৈর্ঘ্যের সমান হয়, (অর্থাৎ) যে পর্যন্ত না আছরের সময় উপস্থিত হয়। [হাদীসের অংশবিশেষ]
ব্যাখ্যাঃ ছায়া তাহার দৈর্ঘ্যের সমান"--মধ্যাহ্ন সময়ে মানুষের যে ছায়া থাকে তাহাকে 'ছায়া-আসলী' বলে। এই ছায়াকে বাদ দিয়াই ছায়া মাপিতে হয়।

এই হাদীস অনুসারেই ইমাম মালেক, শাফেয়ী, আহ্‌মদ, আবু ইউসূফ, মুহাম্মদ ও যুফর প্রমুখ ইমামগণ যোহরের নামাযের সময় এক মিছ্‌ল অর্থাৎ ছায়া আসলী বাদ ছাআ এক গুণ হওয়া পর্যন্ত বলেন। এক মত অনুসারে ইমাম আবু হানীফা(রঃ)ও এ একথাই বলেন, কিন্তু তাঁহার প্রসিদ্ধ মত এই যে, যোহরের সময় দুই মিছিল পর্যন্তই থাকে। যে হাদীস অনুসারে তিনি উহা বলেন তাহা পরে আসিতেছে। তবে যোহরের নামায এক মিছ্‌লের মধ্যেই এবং আছরের নামায দুই মিছলের পর পড়াই উত্তম। ইহাতে সতর্কতা রয়েছে।
৫৩৫--(২) হযরত বুরায়দা (রাঃ) বলেন, এক ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে নামাযের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিল। তিনি বলিলেনঃ আমাদের সহিত এই দুই দিন নামায পড়। (প্রথমদিন) যখন সূর্য্য ঢলিল, তিনি বেলালকে হুকুম করিলেন এবং বেলাল আযান দিলেন, তৎপর তিনি নির্দেশ দিলেন এবং বেলাল যুহরের এক্কামত দিলেন। ........ যখন দ্বিতীয় দিন হইল, বেলালকে নির্দেশ দিলেন, যোহরকে ঠান্ডা পড়া পর্যন্ত বিলম্ব করিবে। তিনি উহাতে বিলম্ব করিলেন এবং যথেষ্ঠ ঠাণ্ডা পড়া পর্যন্ত বিলম্ব করিলেন। ......[হাদীসের অংশবিশেষ]
ব্যাখ্যাঃ ......... এখানে হুযুর (সাঃ) দুই সীমা ঠিক করিয়া নামাযের নির্দোষ সময়ই দেখাইয়াছেন।......[সংক্ষেপিত]
৫৩৬--(৩) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলিয়াছেনঃ হযরত জিবরীল (আঃ) খানায়ে কা'বার নিকট দুইবার আমাকে ইমামতি করিয়াছেন। (প্রথম বারে) তিনি আমাকে যোহর পড়াইলেন যখনই সূর্য্য ঢলিল, আর তাহা ছিল জুতার দেয়ালির (প্রস্থের) পরিমাণ.......যখন দ্বিতীয় দিন আসিল তিনি আমায় যোহর পড়াইলেন যখন বস্তুর ছায়া তাহার একগুন হইয়া গেল...... [হাদীসে অংশবিশেষ]
ব্যাখ্যাঃ "জুতার দেয়ালির প্রস্থের পরিমাণ"--অর্থাৎ খুব সামান্য পরিমাণ ঢলিয়াছিল।
৫৩৮--(৫) হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, তিনি নিজ প্রশাসকদের নিকট লিখিলেন, আমার নিকট আপনাদের সমস্ত কার্যের মধ্যে নামাযই হল অধিক গুরুত্বপূর্ণ..................। অতঃপর তিনি লিখিলেন, যোহর পড়িবে যখন ছায়া একহাত হইবে, এ পর্যন্ত যে, তোমাদের প্রত্যেকে ছায়া সমান হয়...... [হাদীসের অংশবিশেষ]
ব্যাখ্যাঃ "ছায়া একহাত"--ইহা তিনি আরবের স্থানবিশেষ ও সময়-বিশেষের প্রতি লক্ষ্য করিয়াই বলিয়াছেন। কারন, সকল স্থানের ও সকল সময়ের "ছায়া আসলী" এক নহে।

৫৩৯--(৬) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, গ্রীষ্মকালে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এর যোহরের নামাযের পরিমাণ (ছায়ার পরিমাণ) ছিল তিন হইতে পাঁচ কদম পর্যন্ত এবং শীতকালে পাঁচ হইতে সাত কদম পর্যন্ত।-আবু দাঊদ ও নাসায়ী।
ব্যাখ্যাঃ গ্রীষ্মকালে ছায়া আসলী কম হয় এবং শীতকালে বেশি হয়। এই কারনেই ছায়া আসলীসহ একগুণ ছায়ার পরিমাণ গ্রীষ্মকালের তুলনায় শীতকালে বেশী হইয়া থাকে।
কোরআনে রহিয়াছে--"নেক কাজের দিকে ধাবিত হও" এই আয়াত এবং কতিপয় হাদীস হিতে বুঝা যায় যে, প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযই সকাল সকাল বা প্রথম ওয়াক্তে পড়া উত্তম। ইমাম শাফেয়ী প্রভৃতি ইমামগন ইহারই অনুসরন করেন। পক্ষান্তরে অপর কতক হাদীস প্রমাণিত হয় যে, গরমের দিনে যোহরের নামায কিছু ঠাণ্ডা পড়িলে পড়া, আছরের নামায সকল সময় প্রথম ওয়াক্ত হইতে কিছু গৌণে পড়া, এশার নামাযও বিলম্বে পড়া এবং ফজরের নামায বরাবরই ঊষা ফর্সা হইয়া গেলে পড়াই উত্তম। ইমাম আবূ হানীফা (রঃ) ইহারই অনুসরন করেন। তাঁহাদের মতে মুস্তাহাব ওয়াক্তের প্রথমে পড়া হইলেই সকাল সকাল পড়া হইল।-অনুবাদক।
৫৪০--(১) হযরত সাইয়্যার ইব্‌নে সালামা (রাঃ) বলেন, আমি ও আমার পিতা (সাহাবী) হযরত বারযা আসলামীর নিকট গেলাম। আমার পিতা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফরয নামায কিরূপে পড়িতেন? তিনি বলিলেন, যোহর--যাহাকে তোমরা প্রথম নামায বল--যখন সূর্য্য ঢলিত তখনই পড়িতেন... [হাদীসে অংশবিশেষ]
ব্যাখ্যাঃ 'যখন সুর্য্য ঢলিত'--সম্ভবত আবু বারযা (রাঃ) এখানে শীত কালের যোহরের কথাই উল্লেখ করিয়াছেন। কেননা, গরমের দিনে কিছু দেরী করিয়া পড়ার কথা অপর হাদীসে রহিয়াছে।

৭. সুনানু নাসাঈ শরীফ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা- ২৩৫ ইমাম আবূ আবদির রাহমান আহমদ ইব্‌ন শু'আয়ব আন্‌-নাসাঈ(রঃ)
৪৯৬. মুহাম্মদ ইব্‌ন আবদুল আ'লা(রঃ)...সাইয়ার ইব্‌ন সালাম (রাঃ) বর্নিত। তিনি বলেনঃ ...... রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যোহরের সালাত আদায় করতেন যখন সূর্য ঢলে পড়তো, [হাদীসের অংশবিশেষ]

৪৯৭. কাসীর ইব্‌ন উবায়দ (র)...যুহরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদা সূর্য ঢলে পড়লে বের হন এবং তাঁদের নিয়ে যোহরের সালাত আদায় করেন।
৪৯৮. ইয়াকূব ইব্‌নে ইব্‌রাহীম (রঃ) ...খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট উত্তপ্ত বালুর অভিযোগ করলাম। তিনি আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করলেন না। আবূ ইসহাক (রাঃ) কে বলা হল, সাথীরা কি সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করার অভিযোগ করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
৪৯৯. উবায়দুল্লাহ ইব্‌ন সাঈদ (রঃ)...হামযাতুল আয়িযী (রঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, নবী (সাঃ) যখন কোন মনযিলে যোহরের পূর্বে অবতরণ করতেন তখন যোহরের সালাত আদায় না করে সেই স্থান ত্যাগ করতেন না। একব্যাক্তি বলল, অর্ধদিন ঠিক দুপুর হলেও? তিনি বললেন, ঠিক দুপুর বেলায় হলেও।১
৫০০. উয়ায়দুল্লাহ ইব্‌ন সাঈদ(রঃ)......খালীদ ইব্‌ন দীনার আবূ খালদাহ(রঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আমি আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গরমের সময় (যোহরের সালাত) বিলম্বে এবং ঠাণ্ডার সময় তাড়াতাড়ি আদায় করতেন।
টীকা১- দুপুর অর্থ হচ্ছে দুপুরের কাছাকাছি সময়, অর্থাৎ তিনি দুপুরের সময় আদায় করলেও সূর্য ঢলে পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে সালাত আদায় করে স্থল তাগ করতেন।
৫০১. কুতায়বা ইব্‌ন সাঈদ(রঃ)...আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেনঃ গরম প্রচন্ড হলে সালাত বিলম্ব করে আদায় কর। কেননা গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের ভাপ।১
৫০২. ইব্‌রাহীম ইব্‌ন ইয়াকূব (রঃ) ও আমর ইব্‌ন মানসূর(রঃ)...আবু মূসা(রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা যোহরের সালাত বিলম্ব করে আদায় কর। কারন তোমরা গরম অনুভব কর তা জাহান্নামের ভাপ।
৫০৩. হুসাওন ইব্‌ন হুরায়স(রঃ) ...আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ইনি জিব্রাঈল (আঃ), যিনি তোমাদের দীন শিক্ষা দেয়ার জন্য এসেছেন।........যোহরের সালাত আদায় করেন সূর্য ঢলে পড়লে......জিব্রাঈল(আঃ) আবার পরদিন আসেন এবং ...... যোহরের সালাত আদায় করেন যখন ছায়া তার সমান হল। [হাদীসের অংশবিশেষ]
৫০৪. আবূ আবদুর রহমান আবদুল্লাহ ইব্‌ন মুহাম্মদ আযরামী(রঃ)....আবদুল্লাহ ইব্‌ন মাসঊদ(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গ্রীষ্মকালে যোহরের সালাত আদায় করতেন যখন কোন ব্যাক্তির ছায়া পাচ কদমের মধ্যে হতো এবং শীতকালে ছায়া যখন পাঁচ হতে সাত কদমের মধ্যে হতো।

ছেলেরা

আচ্ছা মানলাম, মানলাম ছেলেরা খারাপ!
ছেলেদের গায়ে জোড় বেশি, ছেলেরা রেপ করতে পারে। বিয়ের পর পর ছেলেদের সাহস বেড়ে যায়। বিবাহিত ছেলেরা বেশি বেশি রেপ করে!
মানলাম!
ছেলেরা বউতে সন্তুষ্ট হয় না। পরকীয়া করে, কাজের মেয়ের পিছে লাগে।
মানলাম! মানলাম!
ছেলেরা সাংসারিক কোন দায়িত্ব পালন করে না। সারাদিন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়, বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজীতে ব্যস্ত থাকে। সন্তানদের জন্য তার কোন ভালবাসা, দায়িত্ববোধ নেই।
মানলাম, মেনে নিলাম!
ছেলেরা সংসারের জন্য কোন স্যাক্রিফাইস করে না। মেয়েদের মত বাপ-মা ছেড়ে আসে না। মেয়েদের কোন মূল্য দেয় না। তাদের কাজকর্মের কোন দামই নেই ছেলেদের কাছে।
মানলাম! মানলাম!! মানলাম!!!
খবরদার! কোন ছেলের ত্রিসীমানায় আসবা না। কোন ছেলেকে ভালবাসবা না। কোন ছেলেকে বিয়ে করবা না। যাও, ভাল কোন মেয়েকে বিয়ে করে সংসার করো।
গুড লাক এন্ড গেট লস্ট!

ব্যাচেলর

আমার কাছে ব্যাচেলর লাইফের সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা কি জানেন? নাস্তা করা। সকালের নাস্তা আর সন্ধ্যার নাস্তা। দেরি করে ঘুম থেকে উঠার কারনে অনেক সময় সকালের নাস্তার ক্ষুধা মরে যায়। কিন্তু যেদিন সকাল সকাল উঠে পড়ি সেদিন কি খাব, কি খাব- চিন্তায় আরো বেশি করে ক্ষুধা লেগে যায়। আসলেও খাওয়ার মত কিছু পাই না। অফিসে থাকলে ক্যান্টিনের রুটি/ডীম/ডাল অথবা ভাজি নাহয় খিচুরী/ডীম নাহয় পরোটা/ডীম/ডাল অথবা ভাজি খেতে হয়।

রুটি বানিয়ে আনতে আনতে ঠান্ডা হয়ে যায়। রুটি আমি এমনিতেই খেতে পারি না। গিলতে কষ্ট হয়। ঠান্ডা হলেতো আরো পারি না। ওভেনে দিয়ে গরম করলে সেটাও আবার কেমন যেন হয়ে যায়। আর পরোটা? সেটাতো তেলে চুপচুপ! দু'আঙুলে চিপে দিলে তেল ঝরবে এমন!

গলধঃকরন করতেও কষ্ট, গলধঃকরন করার পরেও কষ্ট। পেটে গ্যাস হবেই। বিকেলের নাস্তা আরেক যন্ত্রণা। নিজে বানাতে ইচ্ছে করে না, আবার কেনা কিছু খেতেও ইচ্ছে করে না। কতবার এমন হয়েছে নাস্তা করতে বা বিস্কিট কিনতে গিয়েছি কিন্তু কিছুই পছন্দ না হওয়াতে ফিরে এসেছি।

বয়স হয়েছে। রুচির পরিবর্তন হয়েছে। আগে যেসব খাবার (চানাচুর, বিস্কিট টাইপ)পেলে আর কিছু চাইতাম না, এখন সেগুলোর দিকে তাকাতেও ইচ্ছে করে না। ভাল ভাল ব্র্যাণ্ডের বিস্কিট, চানাচুর, কেক দোকানে থরে থরে সাজানো। কিন্তু আমার চাহিদা হয় না।

আর চিটাগাঙ্গের সাথে রুচি অন্যকোন জেলার মানুষের সাথে মিলবে কিনা জানি না। আমাদের এলাকার সাথে মিলে না। আমরা রমজান ছাড়া ছোলা খেতে দেখিনি। চিটাগাঙ্গের সারাবছর চনা চলে। "তীর ছাড়া আমার চলেই না"-এর মত "চনা ছাড়া আমরা খাই-ই না"-টাইপ।

এখানে কেউ যখন নাস্তা করতে চলে তখন লাফিয়ে লাফিয়ে ঝাল ঝাল করে। মানে ঝালে খাবে। মনে মনে হাসি। আসল ঝালতো জিন্দেগীতে চেখে দেখো নাই। গরুর মাংস খাবে লাল টুক টুক। আরে না, মরিচের জন্য না। কে জানে কি দেয়। যত গর্জে তত বর্ষে না। যত লাল দেখা যায় তত ঝাল হয় না।

এখানে ভাজা পোড়ার ব্যবসা জমজমাট। যত তেল তত মজা। তেলে চুবিয়ে ভেজে আপনি যা বিক্রি করতে চান সব বিক্রি হয়ে যাবে। ডালপুড়ি, আলুপুড়ি, কিমাপুড়ি আগেও খেতাম, এখানেও খেয়েছি। খাওয়ার পর বন্ধুদের সাথে গল্প করেছি, “চিটাগাং আসিস, এমন পুড়ি খাওয়াব আর জিন্দেগীতে পুড়ির নাম নিবি না।” যারা এসেছে এবং খেয়েছে তাদেরকে অনেক কষ্টে সুইসাইড করা থেকে বিরত রেখেছি।

অফিস থাকলে ক্যান্টিনে সকালের নাস্তা করি। যেদিন পরোটা থাকে সেদিনের কথা আর কি বলব। তেলে চুপচুপ। একটা পরোটা চাপলে যে তেল পড়বে তাতে আরো একটা পরোটা ভাজা যাবে। একেকটা পরোটা দু'আঙুলের চেপে মুখের সামনে ধরি আর চুক চুক করে আফসোস করি, এই ছিল জীবনে! আর রুটি হলেতো মাথায় বাড়ি। যেদিন খিচুরী দেয় সেদিন একটু শান্তি শান্তি লাগে।

মাঝে মাঝে লোকাল দুই একজনে নাস্তা নিয়ে আসে। কুরবানীর পর একজন সকালে রুটির সাথে খাওয়ার জন্য মাংস নিয়ে আসছে। সাথে আরো দুইজন আমরা ডিউটি করি। আমাদেরকেও সাধতে হয়। সাধার আগে যখন বাটির মুখ খুলেছে তখন উৎকট গন্ধে আমাদের এসি রুমের বারোটা বেজে গেল। পচা গন্ধ আসল কোথা থেকে? পরে কাছে যেয়ে দেখি মাংসের গন্ধ! খোদা!

এই লোকই একদিন বিকালে আমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসলো। লাউয়ের সেমাই! ওয়াও! ভাবলাম কি না কি! নতুন কিছু টেস্ট করা হবে। নাস্তার সময় আগ্রহ নিয়ে বসলাম। কিন্তু বাটিতে নেবার পর জিনিসটা দেখেই কেমন কেমন লাগা শুরু করল। ভয়ে ভয়ে মুখে দিলাম। পানসে! উনার ভাষায় কড়া মিস্টি এই সেমাই বেশি একটা গেলা আমার জন্য সম্ভব হল না। উনি অন্যদিকে ফিরতেই বাটি নিয়ে বাইরে চলে এলাম। ডাস্টবিনে ফেলে দিলাম। ভেবেছিলাম আমারই বুঝি এমন লাগল। পরে যখন আর একজন বের হয়ে আসল আধ খাওয়া বাটি নিয়ে তখন বুঝতে পারলাম, না, আমার মাথা এখনো ঠিক আছে।

মিস্টির কথা যখন আসলই আরো কিছু কথা বলা যাক। আমরা যেখানে বড় হয়েছি সেখানে বিখ্যাত কোন ব্যান্ড নেই। সবই লোকাল ব্র্যান্ড। চাকুরীতে আসার পর একজনের কাছে এখানকার স্পঞ্জের খুব সুনাম শুনলাম। কোথায় পাব জানতে চাইলে বললেন, ওহ! আমাদের বাড়ির এখানেই দোকান আছে। আমি রিকোয়েস্ট করাতে পরেরবার বাড়ি যেয়ে আমার জন্য এক কেজি স্পঞ্জ নিয়ে আসলেন।

দেখতে খুবই সুন্দর। ধবধবে সাদা! মুখে দেয়ার পর মনে হলো, আরে! এই মিষ্টিতো আমি আগেও খেয়েছি। স্মৃতির পাতা হাতড়ে দেখলাম স্পঞ্জ খেয়েছি ২০০৬ এ, নোয়াখালীতে। যতই চাবাই ততই ফুলে! কিরে ভাই! এইগুলো কি? মিষ্টি নাকি রবার? কিভাবে খায়?

সেই স্পঞ্জ গুলোর তুলনায় এইগুলো একটু ভাল হলেও স্পঞ্জইতো! জাত ভাই। এরে ওরে খাইয়ে খাইয়ে এককেজি স্পঞ্জ শেষ করলাম। কোতয়ালী মোড়ের বিখ্যাত সাধুর স্পঞ্জও রুমমেট একদিন কিনে আনলেন। একটা খেয়েই আমার আর আমার রুমমেটের “আউশ” মিটে গেল। পরে এর তারে রিকুয়েস্ট করে মিস্টিগুলো অন্তত ফেলে দেয়ার হাত থেকে রক্ষা পেল।

হাইওয়ে, বনফুল, ওয়েলফুড, মধুবন, স্বাদ—হল চিটাগাঙ্গের বিখ্যাত সব বেকারী। বেকারী বলাটা ঠিক হল কিনা বুঝতে পারছি না। যাই হোক, সবগুলোর মিষ্টিই মোটামুটি চাখা হয়েছে। চলে, খারাপ না।

৫-৬ বছর আগে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ফর ক্যামিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজে ট্রেনিংএ যাই কোম্পানির তরফ থেকে। ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল বয়লার এন্ড অপারেশন অফ স্টিম জেনারেশন সিস্টেম এর উপর ট্রেনিং করতে আমাদের সাথে যোগ দেন কর্ণফুলী পেপার মিল, সিলেট গ্যাস ফিল্ড, ইউরিয়া সারকারখানা, পলাশ ইউরিয়া সারকারখানা, চিটাগাং ইউরিয়া সারকারখানা, যমুনা সারকারখানা, ড্যাপ সারকারখানা থেকে আরো ভাইয়েরা আমাদের সাথে যোগ দেন।

বলতে গেলে বাড়িতেই গিয়েছি ট্রেনিং করতে! কেপিএমের ভাইয়েরা একবার বললেন মিষ্টি খেতে চান। নিয়ে গেলাম। তেমন বিখ্যাত কিছু না। রাজলক্ষী মিষ্টান্ন ভান্ডার। এক চামচ মুখে দিয়েই তারা অবাক! “ভাই এটা কি মিষ্টি?” “রসগোল্লা!”

ট্রেনিং শেষে তারা রসগোল্লা কিনে নিয়ে আসছেন চিটাগাং। এরপর দেখা হলেই মিষ্টির কথা বলেন।

ইনিয়ে বিনিয়ে এত কথা বলার উদ্দেশ্য হল, খাওয়া নিয়ে শান্তিতে নেই। আমার চাহিদা খুব বেশি নয়। যেটা পছন্দ সেটা অল্প হলেই হয়। যেরকম পছন্দ সেটা একটু কমদামী বা সেকেন্ড/থার্ড ক্লাস হলেও সমস্যা নেই। কিন্তু আমার পছন্দ হতে হবে।

বাসায় কিভাবে বোঝাই?

আমার যে একটা বউ দরকার সেটা আরো খোলাসা করে বলতে হবে? 



বোগে না কেও বোগে না... !!

রবির ভেড়া গ্রাহক

ওয়ালটনের এন্ড্রয়েডে দেখলাম বিল্টইন একটা এপস্‌ আছে। BDPLAN। অন্যকোন সেটে আছে কিনা জানি না। এটাতে বাংলাদেশের সবগুলো মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিভিন্ন ইন্টারনেট প্যাকেজ সম্পর্কে তথ্য আছে। কিভাবে একটিভ করতে হয়, কত টাকা কাটবে, কতদিন মেয়াদ--এইসব। আমার একটা ররি সীম আছে। এটাই ঐ এন্ড্রয়েডে লাগানো ছিল। ২ টাকা দিয়ে ৪এম্বি কিনলাম। 3G গতি! ওহ সরি, রবিরতো আবার 3.5G!!

পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর জন্য প্যাকেজটা নিলাম। কয়েকটা পেইজ বুকমার্কস করতে করতেই ৪এম্বি শেষ! মনেহয় ব্যাকগ্রাউন্ড এপস চালু ছিল। অটোরিনিউ প্যাক। ২৪ ঘন্টা পর আবার টাকা কেটে ফেলবে। কিন্তু আমারতো আর দরকার নেই। ডিএকটিভেট করে দেই।

ঢুকলাম BDPLAN এ! ওমা! এক্টিভেশন কোড আছে, কিন্তু ডিএক্টিভেশন কোড নেই!

খুব বেশি অবাক হয়নি। ফোন কম্পানির বাটপারি এই দেশে নতুন কিছু না। ভাবলাম ওয়েবসাইটে থাকতে পারে। পিসি দিয়ে রবির ওয়েবসাইটে ঢুকলাম। পুরো ওয়েবসাইট ছানাছানি করেও কিভাবে ডিএক্টিভেট করতে হয় বুঝতে পারলাম না। ডিরেক্ট কোড নেই।

রবি অন্যকোন দিক দিয়ে এক নাম্বার না হলেও বাটপারী আর গ্রাহকদের গালী খাওয়াতে একনম্বর সে অভিজ্ঞতা আমার আগেই হয়েছে।

গ্রামীন, বাংলালিংকে দেখেছি তারা গ্রাহকদের রেটিং দেয়। গ্রামীনের যেমন স্টার গ্রাহক আছে তেমনি বাংলালিংকের আছে সিলভার, গোল্ড, প্লাটিনাম-ইত্যাদি। এই রেটিংগুলা কিন্তু পজিটিভ। আমার ধারনা রবিরও রেটিং আছে। তবে নেভেটিভ রেটিং। এই যেমন গরু গ্রাহক, ছাগল গ্রাহক, ভেড়া গ্রাহক-ইত্যাদি।

কেন জানি আমার নিজেকে রবির ভেড়া গ্রাহক মনে হয়। একবার একটা জরিপ করেছিল রবি থেকে। নানা কিছু জিজ্ঞেস করার পর জানতে চাইল যে, আমার কোন পরিচিত লোককে আমি রবির কানেকশন নিতে উৎসাহিত করব কিনা? আমি না উত্তর দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই মনে হয় রবি আমাকে ভেড়া গ্রাহকদের টপ থ্রীতে তালিকাভুক্ত করেছে। আমার আরেকটা দোষ হল কিছু হলেই কাস্টমার কেয়ারে ফোন দেই আর ভ্যা ভ্যা শুনি। এখন বিপদে যখন পড়ছি ফোনতো দিতেই হবে। নাইলে প্রতিদিন ২ টাকা(!) করে কাটবে। দিলাম ফোন।

এখন আমি যেহেতু ভেড়া গ্রাহক আমার ফোন পেয়ে রবি কাস্টমার কেয়ার অফিস কেঁপে উঠবে এটা আমি মোটেই আশা করি নাই। সুরেলা মহিলা কন্ঠ সুরে সুরে আমাকে স্বাগতম জানাল অবশ্য। তারপর তাদের কারেন্ট প্রমোশন শুনালো বাধ্যতামূলক। স্কিপ করার কোন উপায় নাই। একমিনিট মনেহয় খেয়ে দিল। তারপর বাংলা শুনতে চাইলে...... এইগুলো এল। তাড়াতাড়ি কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধির নাম্বার চাপলাম। এরপর আমার মাথায় সাত আসমান ভেঙে পড়ল!

"সম্মানিত (ভেড়া) গ্রাহক। আমাদের কাছে আপনার প্রতিটা মুহূর্ত (প্রতিটা লোম) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কাস্টমার প্রতিনিধির সাথে কথা বলতে হলে আপনাকে ছয় মিনিট অপেক্ষা করতে হতে পারে।"

হতে পারে বলতে কিছু নেই। ঝাড়া ছয়মিনিট পরে লাইন দিল। এইখানে কপাল একটু ভাল যে, কলটা একটা ছেলে ধরেছিল। মেয়ে ধরলে কি হত বা হয়, সেটা অনেক আগে একটা পোস্টে লিখেছি আমি।

"শুভসন্ধ্যা স্যার, কিভাবে সাহায্য করতে পারি?"

>আমি ... প্যাকেজ নিয়েছিলাম। এটা অফ করে দেন।

"স্যার, আমি আপনাকে মেসেজ পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি সহজেই করতে পারবেন।"

>মেসেজ পাঠাতে হবে না। আপনি করে দেন।

"ঠিক আছে স্যার। আমি করে দিচ্ছি। আরেকটা মেসেজও আপনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি ভবিষ্যতে নিজে নিজেই করতে পারবেন। আমাকে একটু সময় দিবেন স্যার।"

>ওকে...

[আমি মিনিট গুনতেছি]

"আপনাকে ধন্যবাদ স্যার, আমাকে সময় দেয়ার জন্য। আপনার প্যাকেজ ডিএক্টিভেট হয়ে গেছে।"

>আচ্ছা, আমি একটা কথা বলি?

"সিউর স্যার।"

>আপনাদের ওয়েবসাইটে এত কিছু আছে। প্যাকেজের ডিটেলস! কিন্তু ডিএকটিভেশন কোড নাই কেন?
"স্যার, আপনাকে আমি মেসেজ করে দিয়েছি স্যার, কিভাবে আপনি অফ করবেন।"

>আচ্ছা ধরেন, আমি যদি আবার দশ বছর পর এই প্যাকেজটা নেই, আমি কি দশ বছর ধরে এই মেসেজটা আমার ইনবক্সে রাখব?

"যদি আপনি প্রয়োজন মনে করেন স্যার!"

>কিহ!!

"যদি আপনি প্রয়োজন মনে করেন।"

>ও আচ্ছা......!!"

"আর কোনভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি স্যার?"

>ন্‌...না

বলেই ফট করে রেখে দিলাম। এভাবেই রবির কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধির সাথে একজন ভেড়া গ্রাহকের কথোপকথন শেষ হল!