Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Saturday, July 11, 2015

চাপ

বিজ্ঞানের ছাত্র যেহেতু ছিলাম প্রাইভেট পড়তেই হত। কলেজে উঠার পর প্রথমদিকে চেষ্টা করেছি নিজে নিজে অন্তত পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন চালানো যায় কিনা। কিন্তু ক্লাসরুমের হট্টগোল, যারা প্রাইভেট পড়ে তাদের "জ্বি স্যার, বুঝতে পেরেছি"-টাইপের আচরন এবং শিক্ষকদের অসহযোগীতার কারনে তা আর সম্ভবপর হয় নি। 

গনিত আগে থেকেই পড়তাম। বাধ্য হয়ে পদার্থ-রসায়নও পড়া শুরু করলাম। গনিতের কথাই বলি। যার কাছে গনিত পড়তাম ধরে নেই তার নাম রাসেল। আমরা রাসেল ভাই বলে ডাকতাম। তিনি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ছিলেন না। অন্যচাকুরী করতেন। চাকুরীর ফাঁকে ফাঁকে বা অনেক সময় ফাঁকি দিয়ে ছেলে-পেলে পড়াতেন।

ছোটবেলা থেকেই ছাত্র হিসেবে খুব ভাল বা খুব খারাপ ছিলাম না। মধ্যমসারির ছিলাম। মধ্যমসারির হলেও সামনের সারির ছেলেদের চেয়ে পিছনের সারির ছেলেদের সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিল বেশি। সামনের সারির ছাত্রদের ব্যাচে আমার জায়গা হত না বা আমি তাদের সাথে পড়তাম না। পিছনদিকের বন্ধুদের সাথেই পড়তাম। পড়াশুনার চেয়ে দুষ্টুমির দিকে নজর বেশি থাকলে যা হয় আর কি!

দেখতে দেখতে প্রথমবর্ষ শেষ করে দ্বিতীয়বর্ষে উঠলাম। পড়াশুনা আরো কঠিন হয়ে উঠল। বলবিদ্যা, প্রবাবিলিটি, প্যারাবোলা, হাইপারবোলার কঠিন জগতে হাবুডুবু খেতে লাগলাম। কোন অংক বোঝার পর পরবর্তী অংকে যেতে যেতে আগের অংক মাথা থেকে বেরিয়ে যেত। প্রথমবর্ষের ছেলে-মেয়েরা ততদিনে রাসেল ভাইয়ের কাছে পড়তে চলে এসেছে। আমাদের সাথে (ধরি) সুহান নামে একজন ছিল। আমাদের ৭-৮ জনের মধ্যেই সে-ই সবচে' ভাল করত। আর বাকি সবাই লবডংকা!

কোন এক টেস্টে খারাপ করার কারনে একদিন রাসেল ভাই আমাদের খুব বকাঝকা করলেন। সবাই মাথানিচু করে শুধু শুনছিলাম। সুহান ভাল মার্কস্‌ পেলেও আমাদের কারনে তাকে কথাগুলো হজম করতে হচ্ছিল। একপর্যায়ে ভাই আমাদের, ফার্স্ট ইয়ারের মেয়েদের পা ধুয়ে পানি খাওয়ার কথা বললেন! তাতে যদি আমাদের ব্রেন খোলে! কারন তারা খুব ভাল ফলাফল করছিল।

এই কথা শুনে আমরা সবাই একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলাম। আমি একবার রাসেল ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলাম। চোখে অবার দৃষ্টি হলেও মাথার ভিতর আগুন জ্বলছিল। দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলছিলাম, দেখা যাবে! জীবনের দৌড়ে ফার্স্ট ইয়ারের মেয়েগুলো কি করতে পারে, আর আমরা কে কি করতে পারি!

অনেক অভিভাবক ও শিক্ষকেরাই তাদের বাচ্চাদের উপর এধরনের চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। অন্যরা কিভাবে ভাল রেজাল্ট করছে? তুমি পারছো না কেন?-সবারই বোধহয় কমবেশি এই প্রশ্ন শুনতে হয়। একটি ব্যাপার খেয়াল করেছি যে, মায়ের চোখে সন্তান কখনো মোটা হয় না আর অভিভাবকের চোখে তার সন্তান কখনোই ভাল রেজাল্ট করে না। যত ভাল রেজাল্টই করুক, মাথা নেড়ে অন্যদের কাছে গল্প করেন, "আমার ছেলেটা/মেয়েটা একদন পড়াশুনা করে না।"

দিনকে দিন পড়াশুনা করার উপর চাপ বাড়তে থাকে। কিন্তু কতদিন? কলেজ পাশ করার পর ছেলে-মেয়েকে আর চোখে চোখে রাখা সম্ভব হয় না। তারা স্বাধীনতা পেয়ে যায়। তখন বেশিরভাগ ছেলেই বাবা-মার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা উপভোগ করতে থাকে। তখন হয়ত এমন অনেক কাজই সে করতে থাকে যেগুলো তার বাবা-মা কল্পনাও করতে পারেন নি। পরবর্তীতে অনেকেই আর সেসব থেকে ফেরত আসতে পারে না।

পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক পড়াশুনার উপর চাপ দিতে গিয়ে আমরা আমাদের সন্তানদের অন্য সমস্ত শিক্ষনীয় বিষয় থেকে বঞ্চিত করে ফেলি। ফলে তাদের শেখার গন্ডি কেবল বইয়ের রাজ্যে সীমাবন্ধ হয়ে পড়ে। How to Ride A Bicycle পড়ে মুখস্থ করার চেয়ে সাইকেলে উঠে প্যাডল ঘুড়ানো অনেক বেশি বাস্তবসম্মত ও কার্যকর। আবার দেখা যায়, স্কুল-কলেজের পড়াশুনার উপর জোর দিতে যেয়ে ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। আমাদের বর্তমান সময়ে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব সবচেয়ে কম দেয়া হ। স্কুল-কলেজের বইপুস্তকে ধর্ম সম্পর্কে যা শেখানো হয় বাস্তব জীবনের দৈনন্দিক কর্মকান্ডে তা কতটুকু কাজে লাগে তা আমরা সকলেই জানি।

নৈতিকতা ও মানবিকতার মূল ভিত্তি শিশুমনে গড়ে উঠে পরিবার ও ধর্মকে কেন্দ্র করে। মা-বাবার ব্যস্ততা ও দুর্বল ধর্মীয় শিক্ষার কারনে নৈতিকতা ও মানবিকতার ভিত্তি মজবুত হয়ে গড়ে উঠতে পারে না। ফলে প্রজন্ম শিক্ষিত হয় ঠিকই কিন্তু সুশিক্ষিত হয় না। কেউ হয়ত ডাক্তার হবে, কিন্তু লোভী ডাক্তার দিয়ে কারো উপকার হয় না। কেউ হয়ত ইঞ্জিনিয়ার হবে, কিন্তু ঘুষখোর ইঞ্জিনিয়ার হয়ে কি হবে? কেউ হয়ত সরকারী আমলা হবে, কিন্তু ফাঁকিবাজ/তৈলবাজ আমলা দিয়ে দেশের কি লাভ হবে?

বিষয়গুলো কি ভেবে দেখার মত নয়?

খেই হারিয়ে অন্য আলোচনায় চলে এসেছি। মানুষের জীবনের মোড় আর লেখার মোড় আপনাতেই ঘুড়ে যায়। মূল কথায় ফিরে আসি।

ফার্স্ট ইয়ারের সেই মেয়েগুলো কোথায় কি উলটে ফেলেছে জানি না তবে আমাদের মধ্য থেকে একজন বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার, আমি ভাল একটা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করি, একজন আজ ৫-৬ বছর ধরে বিদেশে, একজন সরকারী চাকুরী করে, বাকিরাও স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে।

কারো ভাগ্যলিপি কারো পক্ষে জানা সম্ভব না। সুতরাং কারো পরীক্ষার ফলাফল ভাল না হলে তার ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যাবে-এটা ভ্রান্ত ধারনা। দেখাযায় একই ব্যাচের উচ্চশিক্ষিত ছেলেটি চাকুরীর জন্য হন্যে হয়ে ছুটছে। অন্যদিকে পড়াশুনা শেষ না করা ছেলেটি হয়ত জীবন ভাল পজিশনে চলে গিয়েছে। আমি বলছি না যে, ভাল ফলাফলের গুরুত্ব নেই। বলছি যে, ভাল ফলাফলটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আজকে যার বয়স ১৫ এবং যে ছাত্র; তার জীবনের সাফল্য আজকে হিসেব করলে হবে না। করতে হবে আরো ১৫ বছর পর। বা আরো ৩০ বছর পর। সে কি করতে পারল, কি করতে পারল না সে হিসেব করার সময় ছাত্রজীবন নয়।

সর্বশেষে একটি প্রশ্ন করতে চাই, বর্তমান বাংলাদেশের শিল্পপতিদের কতজন অনার্স-মাস্টার্স-ডক্টরেট?

আমি মনেহয় আমার কথা বোঝাতে পারি নি। দুঃখিত!

No comments: