লোক দেখানোর কথা না হয় বাদই দিলাম। যাদের নিয়ত ভাল তাদের কথাই বলি। হ্যা, যাকাতের ব্যাপারে তাদের কথা বলি। আমাদের সামাজিক অবকাঠামো এমন যে, কোন কিছু চাইলেই করা যায় না। আপনি যদি চানও সঠিকভাবে কোন কিছু করতে, কতটুকু পারবেন কে জানে!
আমি যতদূর জানি, যাকাতের উদ্দেশ্য হল ধনী-গরীবের ব্যবধান কমানো। যাকাতের (বা যেকোন দানের) প্রধান হক্বদার আত্মীয়-স্বজন, তারপর পাড়া প্রতিবেশি, তারপর অন্যরা। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী বাদ দিয়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গিয়ে পথশিশু বা বৃদ্ধাশ্রমের বয়োবৃদ্ধদের সেবার কোন যৌক্তিকতা দেখি না। সমালোচনা করা আমার এই কথার উদ্দেশ্য না। শুধুমাত্র ক্রম উল্লেখ্য করতে চেয়েছি।
এই রমজানে বেশিরভাগ মুসুল্লী যাকাত আদায় করে থাকেন। রমজান মাসে যেকোন ফরজ আমল অন্যমাসের ৭০ টি ফরজের সমান। যেকোন নফল অন্যমাসের ১ টি ফরজের সমান। কাজেই বলা যায় রমজান মাসে যাকাত আদায় করলে অন্যমাসের থেকে ৭০গুন বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে ইন শা আল্লাহ।
আশেপাশে অসংখ্য যাকাত ফান্ড। মুসলিম মূল আক্বীদার যাকাত ফান্ডতো আছেই, সেই সাথে রয়েছে আওয়ামীলীগের যাকাত ফান্ড, বিএনপির যাকাত ফান্ড, মাজারীদের যাকাত ফান্ড! জামাতের আছে কিনা কে জানে? থাকতেই পারে।
আর সরকারী যাকাত ফান্ডতো আছেই। সরকারী যাকাত ফান্ডে যাকাতের টাকা বা কোন ধরনের ডোনেশন দিলে ইনকাম ট্যাক্স রিবেটও পাওয়া যায়। সুবিধাই সুবিধা!
তবে যেকোন যাকাত ফান্ডের অসুবিধা একটাই। যাকাতের টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে বোঝার উপায় নেই। কখন খরচ হচ্ছে সেটাও জানা যাচ্ছে না। হয়ত আপনি টাকা দিলেন আজকে, নিয়ত করলেন আজকেই আমার টাকাটা খরচ হয়ে যাক। কিন্তু কোন ফান্ডে ধরা যাক যদি ১০ লাখ টাকা উঠে তবে সেই টাকা ১ দিনেই খরচ হয় না। ধীরে ধীরে খরচ হয়। আপনার টাকা কখন খরচ হল সেটা বোঝার কোন উপায় দেখি না।
প্রশ্ন করতে পারেন ফান্ডে দেয়ার দরকার কি? নিজ হাতে গরীবের হাতে তুলে দেব। ব্যাপারটা হয়ত ভাবা সহজ, বাস্তবায়ন এত সহজ নয়। ধরাযাক, আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন। আপনার বস একটা যাকাত ফান্ড চালায়। আপনার বস যখন আপনাকে চিঠি ধরিয়ে দেবে তখন উপায় থাকবে কি?
আপনার এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেব আপনাকে চিঠি ধরিয়ে দিলেন। এলাকার সরকারদলীয় বড়ভাই তার যাকাত ফান্ডের জন্য আপনাকে চিঠি দিলেন। অমুকের মেয়ের বিয়ে ঈদের পর, তাকে দিতে হবে। বিগত সময় মেসে ছিলেন, মেসের বাবুর্চি-বয় আপনার মুখে দিকে তাকিয়ে আছে...... (ইত্যাদি ইত্যাদি)
আপনার যাকাতের টাকা ভাগ হয়ে যাচ্ছে। ভেবেছিলেন আত্মীয়কে দেবেন যেন সে সাবলম্বী হতে পারে। তার ভাগের টাকা কম পড়ে যাচ্ছে। টাকার পরিমান ভাল হলে হয়ত সে জীবিকার কোন উপায় করতে পারত। কম টাকা তার হাতে যাওয়া মাত্র সে খরচ করে ফেলবে। ঈদের সময়, তার খরচ হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। পরিণামে যে গরীবই থেকে যাচ্ছে। তার অবস্থা কোন উন্নতি হচ্ছে না। পরের সে আবার যাকাতের টাকার মুখাপেক্ষী হয়ে যাচ্ছে। বার বার হয়ত তাকে দেয়াও যাচ্ছে না। কারন গরীব আত্মীয় একাধিক থাকতে পারে। তাদেরও হক আছে। তারাও আপনার মুখ চেয়ে আছেন।
বলা যেতে পারে, যাকাতের টাকা ফান্ডে দিব না। এমনি দানের টাকা দিব। ঈদের সময় অতিরিক্ত টাকা ম্যানেজ করাই মুশকিল। অন্যমাসে যা খরচ হয়, ঈদের সময় খরচ হয় প্রায় তার দ্বিগুন। কাজেই দানের টাকা হাতে থাকবে এমন গ্যারান্টি কি? কোন গ্যারান্টি নেই।
ইমাম সাহেব গতকাল জুমাবারের খুতবায় বলতে ছিলেন, "হাদীস শরীফে আসছে, 'উপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম'-এই হাদীসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা যখন মুহাদ্দেসীন কেরাম করছিলেন তখন ইমাম গাজ্জালী (রঃ) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় করেন,
ওহে মুহাদ্দিসগন শোনো। রাতের অন্ধকারে তোমরা টাকা নিয়ে গরীবের দুয়ারে দুয়ারে যাবে। বিনয়ের সহিত বললে, হে ভাই, এই টাকাগুলো নিয়ে আমাকে উদ্ধার করো। তোমার হাত থাকবে নিচে, আর গরীব ভাইয়ের হাত থাকবে উপরে। তার হাতই উত্তম। কারন সে তোমার যাকাত গ্রহণ করে তোমাকে উদ্ধার করবে।"
আমরা কি পারছি? না পারছি না...
No comments:
Post a Comment