কেস স্টাডি-১
রাফি দশম শ্রেণীর ছাত্র। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। তার বাবা সরকারী চাকুরী করেন। যা মাইনে পান তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলে। সঞ্চয় তেমন একটা করতে পারেন না। রাফি অনেকদিন থেকেই এন্ড্রয়েড সেট কিনে দেবার কথা বলছে বাবাকে। শরীফ সাহেব এই মাসে না, সামনের মাসে - এসব বলে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। আর অল্প অল্প করে টাকা সরিয়ে রাখছেন।
আজ রাফি খুব খুশি। আজকে তার আব্বু মোবাইলে কিনে নিয়ে আসবেন। সকালে বলে গিয়েছেন যে, অফিস থেকে ফেরার পথে কিনে নিয়ে আসবেন। রাফি যদিও নিজে দেখে কিনতে চেয়েছিল, শরীফ সাহেব বাসায় ফিরে রাফিকে নিয়ে আবার বের হবার ঝামেলা করতে চান নি। রাফি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। পড়ার টেবিলে আজ মন বসছে না। রাত ন'টা বাজতে চলল!
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনেই রাফি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল। শরীফ সাহেবের হাত খালি। রাফির দৃষ্টি লক্ষ্য করে রহমান সাহেব বললেন,
"এই মাসে কিনে দিতে পারব না। টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। সামনের মাসে কিনে দিব, দেখি..."
রাফি মুখটা কালো করে ফেলল। তার অসম্ভব রাগ হচ্ছে। সে দুমদাম পা ফেলে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। সেই রাতে আর সে দরজা খুলল না, ভাতও খেল না।
কেস স্টাডি-২
নীলু সাধারনত সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হয় না। এমন নয় যে তার পরিবার থেকে নিষেধ করা। তার অন্য ভাই-বোনেরা ঠিকই সন্ধ্যার পর বাইরে থাকে বা বের হয়। নীলুর ভাল লাগে না। যতকিছুই হোক সন্ধ্যার মধ্যে নীলু বাসায় ফিরতে চেষ্টা করে।
আজকে বের হতে হল। সারাদিন মাথাটা ধরে ছিল। ভার্সিটিতেও যাওয়া হয় নি। কালকে একজন মানুষের জন্মদিন। তার প্রিয় মানুষটার! তার জন্য কিছু একটা কেনা দরকার। বিকেলের দিকে মাথা ধরা কমায় এখন নীলু বের হয়েছে। রিকশা নিয়ে নীলু একটা গিফট শপের সামনে নামল।
রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দেবার সময় নীলুর চোখ রাস্তার উল্টোদিকে গেল। আরেহ! ইশতি না? হ্যা ইশতিইতো! ও এখানে এই সময় কি করছে?
ইশতিয়াকও রিক্সাথেকে নামল। ইশতিয়াকের সাথে আরো একজন আছে। একটা মেয়ে! পোশাক-আশাক তেমন ভাল না। নীলুর অবাক দৃষ্টির সামনে ইশতিয়াক মেয়েটাকে নিয়ে "হোটেল নিরিবিলি" তে ঢুকে গেল।
নীলু কি করবে বুঝতে পারছে না। ওর দুনিয়াটা কেমন যেন ঘোলা হয়ে আসছে। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে।
ছিঃ ছিঃ এই ইশতিকে আমি ভালবেসেছি? সন্ধ্যাবেলাতেই মেয়ে নিয়ে হোটেলে......! নীলু আর কিছু ভাবতে পারছে না। নীলু মোবাইল বের করে লিখল "I HATE YOU" তারপর সেন্ড করে মোবাইল অফ করে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বাসায় ফিরে গেল।
কেস স্টাডি-৩
ফখরুল সাহেব দীর্ঘদিন ধরে একটি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের কলেজ শাখায় শিক্ষকতা করেন। ঘড়ি ধরে প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটায় ঘর থেকে বের হন। ১৫ মিনিট হাটেন। হাটতে হাটতেই কলেজে পৌছে যান।
আজ ঘর থেকে বের হয়ে হাটার সময় ফখরুল সাহেব একটা ব্যাপার খেয়াল করলেন। আশে-পাশের লোকজন তার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে। প্রথমে অবাক হওয়া দৃষ্টি, তারপর মুখে মুচকি হাসি। ফখরুল সাহেব কিছুই বুঝতে পারছেন না। সবাই এমন করছে কেন?-ভাবতে ভাবতেই তিনি কলেজে প্রবেশ করলেন।
ক্লাস নিতে গেলেও একই ব্যাপার ঘটতে লাগল। মেয়েগুলো মুচকি মুচকি হাসছে আর নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কি যেন বলছে?
হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মত ফখরুল সাহেবের মাথায় একটা কথা আসল। আচ্ছা প্যান্টের চেইন খোলা নাতো? আড়চোখে তাকিয়ে দেখলেন আরে তাইতো! চেইনতো খোলা-ই, ফাঁক দিয়ে শার্টের মাথাও বেড়িয়ে আছে!
এইধরনের ঘটনা আমাদের আশেপাশে অসংখ্যবার ঘটছে। এর কারন কি হতে পারে? এর একমাত্র কারন হল আমাদের কথা না বলা। কেউ হয়ত আমাকে বোকা বলতে পারেন। বাঙালী জাতি আবার কথা বলে না! কি বলে এসব পাগলের মত?
আসলে বাঙালী জাতি কথা বলে ঠিকই। কিন্তু কাজের কথা বলে না। উদ্দেশ্যহীনভাবে সারাদিন বক বক আমরা করতে পারব। কিন্তু যখন ভাল কোন কথা বলতে হবে, কাউকে কিছু বোঝাতে হবে বা কারো কোন ভুল সংশোধন করে দিতে হবে তখন আমরা বোবা হয়ে যাই।
"এসব কথা কি কেউ কখনো বলে?" , "বললে না জানি কি মনে করে" - এসব ভেবে আমরা চুপ থাকি। আর আমাদের এই চুপ থাকাতে আমাদের জীবনে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়।
প্রথম কেস স্টাডির কথাই বলি। শরীফ সাহেব ঠিকই টাকা নিয়ে বের হয়েছিলেন মোবাইল কেনার জন্য। লাঞ্চের সময় তার কলিগ বশির সাহেব তার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ধার চান। বশির সাহেবের ছোট মেয়েটার কয়েকদিন ধরে খুব জ্বর। ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। ডাক্তার কয়েকটি টেস্ট করাতে বলেছেন। হাতে টাকা নেই, তাই আর টেস্টগুলো করাতে পারছিলেন না। আজ তাই নিরুপায় হয়ে শরীফ সাহবের দারস্থ হতে হল।
শরীফ সাহেব যদি বাসায় ফিরে রাফিকে ডেকে নিয়ে কথাগুলো বুঝিয়ে বলতেন তাহলে হয়ত সেরাতে রাফি অভুক্ত অবস্থায় রাত কাটাতে হত না।
ইশতিয়াকের সাথের মেয়েটার নাম পলি। ইশতিয়াকের মামাতো বোন। এই বছরই এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা দিতে তার ঢাকায় আসা। ঢাকায় ইশতিয়াক ছাড়া তাদের পরিচিত আর কেউ নেই। তাই ঢাকায় আসার পর ভর্তি পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত ইশতিয়াকের দায়িত্ব পড়েছে পলি থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা। ইশতিয়াক নিজেই মেসে থাকে। মেসেতো আর মেয়ে নিয়ে থাকা সম্ভব না। তাই হোটেলে নিয়ে আসা। এই হোটেলের মালিক ইশতিয়াকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুমনের মামা। সব শোনার পর হোটেলে রাখতে সুমনের মামা আপত্তি করেন নি। তাই পলিকে নিয়ে ইশতিয়াক হোটেল এসেছিল।
এসব কথা পলি জানে না। ইশতিয়াককে কোন ব্যাখ্যা দেবার সুযোগও সে দেয় নি।পরিণামে তাদের সম্পর্কের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হল।
ফখরুল সাহেব রাস্তাদিয়ে হাটার সময় অসংখ্য মানুষের সাথে তার দেখা হয়েছে। কেউ তাকে মুখ ফুটে তাকে চেইন লাগানোর কথা বলেনি। তিনি আবার কি মনে করেন, লজ্জা পান কিনা! পরিনতিতে ফখরুল সাহেব বড়ধরনের লজ্জায় পড়লেন।
ঘটনাগুলো কাল্পনিক হলেও এদের ভিত্তি কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেবার মত নয়। আমরা যদি সঠিক সময়ে সঠিক কথাটি বলতে পারি, সঠিক প্রশ্নটি করতে পারি তবে এধরনের অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা সহজেই এড়ানো সম্ভব।
পারিবারিক যেকোন সমস্যার সম্মুখীন হলে পরিবারের সবাই মিলে পরামর্শ করতে পারি। পরিবারের ছোট সদস্যদের কাছ থেকেও মতামত চাইতে পারি। হয়ত তার কাছ থেকেও বর্তমান সমস্যার চমৎকার কোন সমাধান আসতে পারে। সব ব্যাপার আমরা "বড়"দের মাথায় নাও আসতে পারে। এর মাধ্যমে পরিবারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কের সবারই যেমন ধারনা থাকবে তেমনি ভবিষ্যতের যেকোন পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে সবাই প্রস্তুত থাকবে।
অনেক সময় দেখা যায় আমরা সঠিক মানুষের সাথে আলোচনা করি না। ১৭-১৮ বছরের কোন ছেলে বা মেয়ে যখন কোন সমস্যায় পড়ে তখন সে সবার আগে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা বান্ধবীর সাথে আলোচনা করে। তার বন্ধুরও বয়সও ১৭-১৮ ই। একই বয়সের কারো সাথে আলোচনা করলে সুষ্ঠ সমাধান আশা করা যায় না। কারন সেও একই ধরনের সমস্যায় থাকতে পারে। অথবা সে কোনদিন ঐ পরিস্থিতিতে পড়েনি। তাহলে সে কিভাবে সমাধান\পরামর্শ দেবে? যে কখনো কম্প্যূটার দেখেনি তাকে যদি ল্যাপটপ দিয়ে ফেসবুক চালাতে বলা হয় তবে সে কি পারবে? পারবে না। এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল হয় পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করা। কারন তারাই সবচেয়ে আপন। তারাই সবসময় আপনার ভাল চায়।
আর পরিবারের বয়োজেষ্ঠ সদস্যদেরও উচিত বয়কনিষ্ঠ সদস্যদের প্রতি লক্ষ্য রাখা। তারা কোন কথা বললে তা মনোযোগ দিয়ে শোনা। কোন সমস্যার কথা বললে এমনভাবে তার সমাধান দেয়া যেন সে ভাবে আপনি তার পক্ষে আছেন। হয়ত আপনি সুষ্ঠ সমাধানই দিয়েছেন কিন্তু আপনার কথা-বার্তার ধরনের তার মনে হয়েছে আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বা তার কথা বুঝতে পারছেন না অথবা তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, সেক্ষেত্রে সে আপনার সমাধান গ্রহন করবে না। মুখে মেনে নিলেও মনে মনে মানবে না। সবচেয়ে বড় বিপদ হল ভবিষ্যতে আর কোন কথা আপনার সাথে শেয়ার করতে চাইবে না। কাজেই খুবই সতর্কতার সাথে কথা বলতে হবে।
আশে-পাশের সবার মধ্যে এই কথা বলার অভ্যাস চালু করতে আমাদের নিজেদেরই উদ্যোগী হতে হবে। নিজে থেকেই অনেক কিছু পরিষ্কার করতে হবে। সাহস করে "কথাটা" বলেই ফেলতে হবে। ধৈর্য্য ধরে "ব্যাখ্যা" শুনতেই হবে।
আমরা কি পারিনা আরেকটু সাহসী হতে? পারি না আরেকটু ধৈর্য্য ধরতে?
রাফি দশম শ্রেণীর ছাত্র। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। তার বাবা সরকারী চাকুরী করেন। যা মাইনে পান তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলে। সঞ্চয় তেমন একটা করতে পারেন না। রাফি অনেকদিন থেকেই এন্ড্রয়েড সেট কিনে দেবার কথা বলছে বাবাকে। শরীফ সাহেব এই মাসে না, সামনের মাসে - এসব বলে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। আর অল্প অল্প করে টাকা সরিয়ে রাখছেন।
আজ রাফি খুব খুশি। আজকে তার আব্বু মোবাইলে কিনে নিয়ে আসবেন। সকালে বলে গিয়েছেন যে, অফিস থেকে ফেরার পথে কিনে নিয়ে আসবেন। রাফি যদিও নিজে দেখে কিনতে চেয়েছিল, শরীফ সাহেব বাসায় ফিরে রাফিকে নিয়ে আবার বের হবার ঝামেলা করতে চান নি। রাফি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। পড়ার টেবিলে আজ মন বসছে না। রাত ন'টা বাজতে চলল!
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনেই রাফি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল। শরীফ সাহেবের হাত খালি। রাফির দৃষ্টি লক্ষ্য করে রহমান সাহেব বললেন,
"এই মাসে কিনে দিতে পারব না। টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। সামনের মাসে কিনে দিব, দেখি..."
রাফি মুখটা কালো করে ফেলল। তার অসম্ভব রাগ হচ্ছে। সে দুমদাম পা ফেলে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। সেই রাতে আর সে দরজা খুলল না, ভাতও খেল না।
কেস স্টাডি-২
নীলু সাধারনত সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হয় না। এমন নয় যে তার পরিবার থেকে নিষেধ করা। তার অন্য ভাই-বোনেরা ঠিকই সন্ধ্যার পর বাইরে থাকে বা বের হয়। নীলুর ভাল লাগে না। যতকিছুই হোক সন্ধ্যার মধ্যে নীলু বাসায় ফিরতে চেষ্টা করে।
আজকে বের হতে হল। সারাদিন মাথাটা ধরে ছিল। ভার্সিটিতেও যাওয়া হয় নি। কালকে একজন মানুষের জন্মদিন। তার প্রিয় মানুষটার! তার জন্য কিছু একটা কেনা দরকার। বিকেলের দিকে মাথা ধরা কমায় এখন নীলু বের হয়েছে। রিকশা নিয়ে নীলু একটা গিফট শপের সামনে নামল।
রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দেবার সময় নীলুর চোখ রাস্তার উল্টোদিকে গেল। আরেহ! ইশতি না? হ্যা ইশতিইতো! ও এখানে এই সময় কি করছে?
ইশতিয়াকও রিক্সাথেকে নামল। ইশতিয়াকের সাথে আরো একজন আছে। একটা মেয়ে! পোশাক-আশাক তেমন ভাল না। নীলুর অবাক দৃষ্টির সামনে ইশতিয়াক মেয়েটাকে নিয়ে "হোটেল নিরিবিলি" তে ঢুকে গেল।
নীলু কি করবে বুঝতে পারছে না। ওর দুনিয়াটা কেমন যেন ঘোলা হয়ে আসছে। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে।
ছিঃ ছিঃ এই ইশতিকে আমি ভালবেসেছি? সন্ধ্যাবেলাতেই মেয়ে নিয়ে হোটেলে......! নীলু আর কিছু ভাবতে পারছে না। নীলু মোবাইল বের করে লিখল "I HATE YOU" তারপর সেন্ড করে মোবাইল অফ করে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বাসায় ফিরে গেল।
কেস স্টাডি-৩
ফখরুল সাহেব দীর্ঘদিন ধরে একটি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের কলেজ শাখায় শিক্ষকতা করেন। ঘড়ি ধরে প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটায় ঘর থেকে বের হন। ১৫ মিনিট হাটেন। হাটতে হাটতেই কলেজে পৌছে যান।
আজ ঘর থেকে বের হয়ে হাটার সময় ফখরুল সাহেব একটা ব্যাপার খেয়াল করলেন। আশে-পাশের লোকজন তার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে। প্রথমে অবাক হওয়া দৃষ্টি, তারপর মুখে মুচকি হাসি। ফখরুল সাহেব কিছুই বুঝতে পারছেন না। সবাই এমন করছে কেন?-ভাবতে ভাবতেই তিনি কলেজে প্রবেশ করলেন।
ক্লাস নিতে গেলেও একই ব্যাপার ঘটতে লাগল। মেয়েগুলো মুচকি মুচকি হাসছে আর নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কি যেন বলছে?
হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মত ফখরুল সাহেবের মাথায় একটা কথা আসল। আচ্ছা প্যান্টের চেইন খোলা নাতো? আড়চোখে তাকিয়ে দেখলেন আরে তাইতো! চেইনতো খোলা-ই, ফাঁক দিয়ে শার্টের মাথাও বেড়িয়ে আছে!
এইধরনের ঘটনা আমাদের আশেপাশে অসংখ্যবার ঘটছে। এর কারন কি হতে পারে? এর একমাত্র কারন হল আমাদের কথা না বলা। কেউ হয়ত আমাকে বোকা বলতে পারেন। বাঙালী জাতি আবার কথা বলে না! কি বলে এসব পাগলের মত?
আসলে বাঙালী জাতি কথা বলে ঠিকই। কিন্তু কাজের কথা বলে না। উদ্দেশ্যহীনভাবে সারাদিন বক বক আমরা করতে পারব। কিন্তু যখন ভাল কোন কথা বলতে হবে, কাউকে কিছু বোঝাতে হবে বা কারো কোন ভুল সংশোধন করে দিতে হবে তখন আমরা বোবা হয়ে যাই।
"এসব কথা কি কেউ কখনো বলে?" , "বললে না জানি কি মনে করে" - এসব ভেবে আমরা চুপ থাকি। আর আমাদের এই চুপ থাকাতে আমাদের জীবনে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়।
প্রথম কেস স্টাডির কথাই বলি। শরীফ সাহেব ঠিকই টাকা নিয়ে বের হয়েছিলেন মোবাইল কেনার জন্য। লাঞ্চের সময় তার কলিগ বশির সাহেব তার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ধার চান। বশির সাহেবের ছোট মেয়েটার কয়েকদিন ধরে খুব জ্বর। ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। ডাক্তার কয়েকটি টেস্ট করাতে বলেছেন। হাতে টাকা নেই, তাই আর টেস্টগুলো করাতে পারছিলেন না। আজ তাই নিরুপায় হয়ে শরীফ সাহবের দারস্থ হতে হল।
শরীফ সাহেব যদি বাসায় ফিরে রাফিকে ডেকে নিয়ে কথাগুলো বুঝিয়ে বলতেন তাহলে হয়ত সেরাতে রাফি অভুক্ত অবস্থায় রাত কাটাতে হত না।
ইশতিয়াকের সাথের মেয়েটার নাম পলি। ইশতিয়াকের মামাতো বোন। এই বছরই এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা দিতে তার ঢাকায় আসা। ঢাকায় ইশতিয়াক ছাড়া তাদের পরিচিত আর কেউ নেই। তাই ঢাকায় আসার পর ভর্তি পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত ইশতিয়াকের দায়িত্ব পড়েছে পলি থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা। ইশতিয়াক নিজেই মেসে থাকে। মেসেতো আর মেয়ে নিয়ে থাকা সম্ভব না। তাই হোটেলে নিয়ে আসা। এই হোটেলের মালিক ইশতিয়াকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুমনের মামা। সব শোনার পর হোটেলে রাখতে সুমনের মামা আপত্তি করেন নি। তাই পলিকে নিয়ে ইশতিয়াক হোটেল এসেছিল।
এসব কথা পলি জানে না। ইশতিয়াককে কোন ব্যাখ্যা দেবার সুযোগও সে দেয় নি।পরিণামে তাদের সম্পর্কের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হল।
ফখরুল সাহেব রাস্তাদিয়ে হাটার সময় অসংখ্য মানুষের সাথে তার দেখা হয়েছে। কেউ তাকে মুখ ফুটে তাকে চেইন লাগানোর কথা বলেনি। তিনি আবার কি মনে করেন, লজ্জা পান কিনা! পরিনতিতে ফখরুল সাহেব বড়ধরনের লজ্জায় পড়লেন।
ঘটনাগুলো কাল্পনিক হলেও এদের ভিত্তি কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেবার মত নয়। আমরা যদি সঠিক সময়ে সঠিক কথাটি বলতে পারি, সঠিক প্রশ্নটি করতে পারি তবে এধরনের অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা সহজেই এড়ানো সম্ভব।
পারিবারিক যেকোন সমস্যার সম্মুখীন হলে পরিবারের সবাই মিলে পরামর্শ করতে পারি। পরিবারের ছোট সদস্যদের কাছ থেকেও মতামত চাইতে পারি। হয়ত তার কাছ থেকেও বর্তমান সমস্যার চমৎকার কোন সমাধান আসতে পারে। সব ব্যাপার আমরা "বড়"দের মাথায় নাও আসতে পারে। এর মাধ্যমে পরিবারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কের সবারই যেমন ধারনা থাকবে তেমনি ভবিষ্যতের যেকোন পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে সবাই প্রস্তুত থাকবে।
অনেক সময় দেখা যায় আমরা সঠিক মানুষের সাথে আলোচনা করি না। ১৭-১৮ বছরের কোন ছেলে বা মেয়ে যখন কোন সমস্যায় পড়ে তখন সে সবার আগে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা বান্ধবীর সাথে আলোচনা করে। তার বন্ধুরও বয়সও ১৭-১৮ ই। একই বয়সের কারো সাথে আলোচনা করলে সুষ্ঠ সমাধান আশা করা যায় না। কারন সেও একই ধরনের সমস্যায় থাকতে পারে। অথবা সে কোনদিন ঐ পরিস্থিতিতে পড়েনি। তাহলে সে কিভাবে সমাধান\পরামর্শ দেবে? যে কখনো কম্প্যূটার দেখেনি তাকে যদি ল্যাপটপ দিয়ে ফেসবুক চালাতে বলা হয় তবে সে কি পারবে? পারবে না। এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল হয় পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করা। কারন তারাই সবচেয়ে আপন। তারাই সবসময় আপনার ভাল চায়।
আর পরিবারের বয়োজেষ্ঠ সদস্যদেরও উচিত বয়কনিষ্ঠ সদস্যদের প্রতি লক্ষ্য রাখা। তারা কোন কথা বললে তা মনোযোগ দিয়ে শোনা। কোন সমস্যার কথা বললে এমনভাবে তার সমাধান দেয়া যেন সে ভাবে আপনি তার পক্ষে আছেন। হয়ত আপনি সুষ্ঠ সমাধানই দিয়েছেন কিন্তু আপনার কথা-বার্তার ধরনের তার মনে হয়েছে আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বা তার কথা বুঝতে পারছেন না অথবা তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, সেক্ষেত্রে সে আপনার সমাধান গ্রহন করবে না। মুখে মেনে নিলেও মনে মনে মানবে না। সবচেয়ে বড় বিপদ হল ভবিষ্যতে আর কোন কথা আপনার সাথে শেয়ার করতে চাইবে না। কাজেই খুবই সতর্কতার সাথে কথা বলতে হবে।
আশে-পাশের সবার মধ্যে এই কথা বলার অভ্যাস চালু করতে আমাদের নিজেদেরই উদ্যোগী হতে হবে। নিজে থেকেই অনেক কিছু পরিষ্কার করতে হবে। সাহস করে "কথাটা" বলেই ফেলতে হবে। ধৈর্য্য ধরে "ব্যাখ্যা" শুনতেই হবে।
আমরা কি পারিনা আরেকটু সাহসী হতে? পারি না আরেকটু ধৈর্য্য ধরতে?
No comments:
Post a Comment