Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Saturday, July 11, 2015

একজন জাপানী মহিলার দৃষ্টিতে পর্দা (শেষাংশ)

[শেষাংশ]

[এই পোস্টটি মাননীয় শেখ আব্দুল আজিজ বিন বায এর 'ইসলামী হিজাব বা পর্দা' বইটির একটি অংশ। প্রতিটি মুসলিম নারীর অবশ্য পাঠ্য। আশাকরি, বর্তমানে যারা পর্দা (?) করেন তাদের অনেকের কিছু ভ্রান্তধারনার অবসান হবে]

‪#‎একজন_জাপানী_মহিলার_দৃষ্টিতে_ইসলাম_ও_পর্দা‬

একজন বিদেশিনী হিসাবে অনেক সময় আমি লোকের দৃষ্টির সামনে বিব্রত বোধ করতাম। হিজাব ব্যবহারে এ অবস্থা কেটে গেল। পর্দা আমাকে এ ধরনের অভদ্র দৃষ্টি থেকে রক্ষা করল।

পর্দার মধ্যে আমি আনন্দ ও গৌরব বোধ করতে লাগলাম, কারণ পর্দা শুধু আল্লাহর প্রতি আমার আনুগত্যের প্রতীকই নয়, উপরন্তু তা মুসলিম নারীদের মাঝে আন্তরিকতার বাঁধন। পর্দার মাধ্যমে আমরা ইসলাম পালনকারী মহিলারা একে অপরকে চিনতে পারি এবং আন্তরিকতা অনুভব করি। সর্বোপরি, পর্দা আমার চারপাশে সবাইকে মনে করিয়ে দেয় আল্লাহর কথা, আর আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে আল্লাহ আমার সাথে রয়েছেন। পর্দা আমাকে বলে দেয়ঃ "সতর্ক হও! একজন মুসলিম নারীর যোগ্য কর্ম কর।"

একজন পুলিশ যেমন ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে অধিক সচেতন থাকেন, তেমনি পর্দার মধ্যে আমি একজন মুসলিম হিসিবে নিজেকে বেশি করে অনুভব করতে লাগলাম। এটা ছিল আমার সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক ব্যাপার, কেউই আমাকে পর্দার করতে চাপ দেয়নি।

ইসলাম গ্রহনের দুই সপ্তাহ অরে আমি আমার এক বোনের বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য জাপান যাই। সেখানে যাওয়ার পর আমি সিদ্ধান্ত নেই যে, ফ্রান্সে আর ফিরে যাব না। কারন ইসলাম গ্রহনের পর ফরাসী সাহিত্যের প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। উপরন্তু আরবী ভাষা শেখার প্রতি আমি আগ্রহ অনুভব করতে লাগলাম।

মুসলিম পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ পৃথকভাবে একাকী জাপানের একটি ছোট্ট শহরে বসবাস করা আমার জন্য একটা বড় পরীক্ষা ছিল। তবে এই একাকীত্ব আমার মধ্যে মুসলমানিত্বের অনুভূতি অত্যন্ত প্রখর করে তোলে।

ইসলামের দৃষ্টিতে মহিলাদের জন্য শরীর দেখানো পোশাক পরা নিষিদ্ধ, কাজেই আমার আগের মিনি স্কার্ট, হাফহাতা ব্লাউজ ইত্যাদি অনেক পোশাকই আমাকে পরিত্যাগ করতে হল। এছাড়া পাশ্চাত্য ফ্যাশন ইসলামী হিজাব বা পর্দার পরিপন্থী, এজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে নিজের পোশাক নিজেই তৈরি করে নেব। আমার এক পোশাক তৈরিতে অভিজ্ঞ বান্ধবীর সহযোগীতায় আমি দু'সপ্তাহের মধ্যে আমার জন্য পোশাক তৈরি করে ফেললাম। পোশাকটি ছিল অনেকটা পাকিস্তানী সেলোয়ার-কামিজের মত। আমার এই অদ্ভূত পোশাক দেখে কে কি ভাবল তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই নি।

জাপানে ফেরার পর ছ'মাস এভাবে কেটে গেল। কোন মুসলিম দেশে গিয়ে আরবী ভাষা ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা করার আগ্রহ আমার মধ্যে খুবই প্রবল হয়ে উঠল। এ আগ্রহ বাস্তবায়িত করতে সচেষ্ট হলাম। অবশেষে মিসরের রাজধানী কাইরোতে পাড়ি জমালাম।

কাইরোতে মাত্র একব্যক্তিকেই আমি চিনতাম। আমার এই মেজবানের পরিবারের কেউই ইংরেজী জানত না। আমি একেবারেই পাথারে পড়লাম। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, যে মহিলাম আমাকে হাত ধরে বাসার ভিতরে নিয়ে গেলেন তিনি কাল কাপড়ে (বোরকায়) তাঁর মুখমন্ডল ও হাত সহ মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর ঢেকে রেখেছিলেন। এই ফ্যাশন (বোরকা) এখন আমার অতি পরিচিত এবং বর্তমানে রিয়াদে অবস্থানকালে আমি নিজেও এই পোশাক ব্যবহার করি। কিন্তু কায়রোতে পৌছেই এটা দেখে আমি খুবই আশ্চর্য হই।

ফ্রান্সে থাকতে একদিন আমি মুসলমানদের একটা বড় ধরনের কনফারেন্সে উপস্থিত হয়েছিলাম এবং সেখানেই আমি সর্বপ্রথম এ ধরনের মুখঢাকা কালো পোশাক দেখতে পাই। রঙ বেরঙের স্কার্ফ ও পোশাক পরা মেয়েদের মাঝে তাঁর পোশাক খুবই বেমানান লাগছিল। আমি ভাবছিলাম, এই মহিলা মূলতঃ আরব ট্রেডিশন ও আচরণের অন্ধ অনুকরণের ফলেই এরকম পোশাক পরেছেন, ইসলামের সঠিক শিক্ষা তিনি জানতে পারেননি। ইসলাম সম্পর্কে তখনো আমি বিশেষ কিছু জানতাম না। আমার ধারণা ছিল, মুখ ঢেকে রাখা একটা আরবীয় অভ্যাস ও আচরণ, ইসলামের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। কাইরোর ঐ মহিলাকে দেখেও আমার অনেকটা অনুরূপ চিন্তাই মনে এসেছিল। আমার মনে হয়েছিল, পুরূষদের সাথে সকল প্রকার সংযোগ এড়িয়ে চলার যে প্রবণতা এই মহিলার মধ্যে রয়েছে তা অস্বাভাবিক।

কালো পোশাক পড়া বোন আমাকে জানালেন যে, আমার নিজে তৈরি পোশাক বাইরে বেরোনোর উপযোগী নয়। আমি তার কথা মেনে নিতে পারিনি। কারন আমার বিশ্বাস ছিল, একজন মুসলিম মহিলার পোশাকের যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তা সবই আমার ঐ পোশাকে ছিল।

তবুও আমি ঐ মিশরীয় বোনের মত ম্যাক্সি ধরণের কাল রঙের বড় একটা কাপড় কিনলাম (যা গলা থেকে পা পর্যন্ত আবৃত করে)। উপরন্তু একটি কাল খিমার অর্থাৎ বড় ধরনের শরীর জড়ানো চাদরের মত ওড়না কিনলাম যা দিয়ে আমার শরীরের উপরিভাগ, মাথা ও দুবাহু আবৃত করে নিতাম। আমি আমার মুখ ঢাকতেও রাজি ছিলাম, কারন দেখলাম তাতে বাইরের রাস্তার ধুলো থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কিন্তু আমার বোনটি জানালেন, মুখ ঢাকার কোন প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র ধুলো থেকে বাঁচার জন্য মুখঢাকা নিষ্প্রয়োজন। তিনি নিজে মুখ ঢেকে রাখতেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে তা ঢেকে রাখা আবশ্যক।

মুখঢেকে রাখা যেসকল বোনেদের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল কাইরোতে তাঁদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। কাইরোর অনেক মানুষ কাল খিমার বা ওড়না১ দেখলেই বিরক্ত বা বিব্রত হয়ে উঠতেন। পাশ্চাত্যধাঁচে জীবনযাপনকারী সাধারণ মিশরীয় যুবকেরা এ সকল খিমারে ঢাকা পর্দানশীল মেয়েদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। এদেরকে তাঁরা "ভগ্নীগন" বলে সম্বোধন করতেন। রাস্তাঘাটে বা বাসে উঠলে সাধারন মানুষেরা এদেরকে বিশেষ সম্মান ও ভদ্রতা দেখাতেন। এসকল মহিলারা রাস্তাঘাটে একে অপরকে দেখলে আন্তরিকতার সাথে সালাম বিনিময় করতেন, তাঁদের মধ্যে কোন ব্যক্তিগত পরিচয় না থাকলেও।

[টীকাঃ এধরনের চিন্তা অনেক সময় ধর্মপ্রাণ মুসলিমের মনে জাগে। আমরা ভেবে বসি, পর্দা পালন করলে, অথবা দাড়ি রাখলে, অথবা নিয়মিত জামাতে নামাজ পড়লে হয়ত অনেক আমাকে পোঁড়া ভাববে এবং আমার আহ্বানে ইসলামের পথে এগিয়ে আসবে না। এজন্য আমরা ধর্মের এসকল বিধানকে গুরুত্বপূর্ণ মেনেও অমান্য করতে থাকি। আমরা বুঝতে পারি না যে, এটা শয়তানের প্ররোচনা, এর মাধ্যমে শয়তান আমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন থেকে আমাদেরকে দূরে সরিয়ে নেয়।

মানুষের চিরশত্রু শয়তানের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষকে সম্পুর্ণভাবে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া। যখন সে কোন মানুষকে পুরোপুরি বিভ্রান্ত করতে অক্ষম হয়, তখন সে চেষ্টা করে যতটা সম্ভব আল্লাহর বিধান পালন থেকে তাকে দূরে রাখতে। এজন্য বিভিন্ন প্ররোচনা সে মানুষের মনে এনে দেয়। সবচে' বিপদজ্জনক প্ররোচনা হল মানুষের মনে এ ভাব জাগ্রত করা যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর বিধান অমান্য করছি। এতে মানুষ পাপে পতিত হয়, অথচ পুণ্য করছি বলে মনে করে। আমাদের বুঝতে হবে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও করুণা লাভের জন্য ধর্মপালন করি। কোন বিষয়কে ধর্মের বিধান বলে জানার পর কারো মুখ চেয়ে তা অমান্য করা কঠিন অন্যায়। আল্লাহর পথে মানুষের আহ্‌বান করা প্রত্যেকের দায়িত্ব, তবে সেজন্য তাঁর নির্দেশ অমান্য করার অধিকার আমাদের নেই। আমাদের সঠিক ধর্মপালনে যদি কেউ ইসলামকে না বুঝেই প্রত্যাখান করেন তাহলে তিনি নিজেই দায়ী হবেন। যিনি ধর্মপালনে করেছেন যদি কেউ ইসলামকে না বুঝেই প্রত্যাখান করেন তাহলে তিনি নিজেই দায়ী হবেন। যিনি ধর্মপালন করেছেন এবং যিনি ধর্মকে প্রত্যাখান করেছেন সবাই আল্লাহর সৃষ্টি, মৃত্যু পরে সবাইকে তাঁর সামনে নিজ নিজ কর্মের হিসাব দিতে হবে। একজনের ভুল বা অন্যায়ের জন্য অন্য কেউ দায়ী হবেন না।]

একবার ট্রেনে যেতে আমার পাশে বসলেন এক আধবয়সী ভদ্রলোক। কেন আমি এরকম অদ্ভূত ফ্যাশনের পোশাক পরেছি তা তিনি জানতে চাইলেন। আমি তাকে বললাম, আমি একজন মুসলিম। ইসলাম ধর্মে মেয়েদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন তাদের দেহ ও সৌন্দর্য আবৃত করে রাখে। কারণ তাদের অনাবৃত দেহসুষমা ও সৌন্দর্য পুরষদের উত্তেজিত করে তুলতে পারে। সাধারনতঃ পুরুষদের জন্য এ ধরনের উত্তেজনা সংযত করা কষ্টকর তাই সমস্যা সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক, আর এ সকল সমস্যা থেকে দূরে রাখার জন্য ইসলামে মেয়েদের এ ফ্যাশনের পোশাক পরতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মনেহল আমার কথায় তিনি অত্যন্ত প্রভাবিত হলেন। ভদ্রলোক সম্ভবত আজকালকার মেয়েদের যৌন উদ্দীপক ফ্যাশান মেনে নিতে পারছিলেন না। তাঁর নামার সময় হয়েছিল। তিনি আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে নেমে গেলেন এবং বলে গেলেন, তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল ইসলাম সম্পর্কে আরো কিছু জানার, কিন্তু সময়ের অভাবে পারলেন না।

গরমকালের রৌদ্রতপ্ত দিনেও আমি পুরো শরীর ঢাকা লম্বা পোশাক পরে এবং "খিমার" দিয়ে মাথা ঢেকে বাইরে যেতাম। এতে আমার আব্বা দুঃখ পেতেন, ভাবতেন আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমি দেখলাম রৌদ্রের মধ্যে আমার এ পোশাক খুবই উপযোগী, কারণ এতে মাথা-ঘাড় সরাসরি রোদের তাপ থেকে রক্ষা পেত। উপরন্তু আমার বোনের যখন হাফপ্যান্ট পরে চলাফেরা করত, তখন ওদের সাদা উরু দেখে আমি অস্বস্থি বোধ করতাম।

অনেক মহিলা এমন পোশাক পরেন যাতের তাদের স্তন ও নিতম্বের আকৃতির পরিষ্কার ফুটে উঠে। ইসলাম গ্রহণের আগেও আমি এধরণের পোশাক দেখলে অস্বস্থি বোধ করতাম। আমার মনে হত এমন কিছু অঙ্গ প্রদর্শন করা হচ্ছে যা ঢেকে রাখা উচিৎ, বের করা উচিৎ নয়। একজন মেয়ের মনে যদি এসকল পোশাক এ ধরনের অস্বস্থিবোধ এনে দেয় তাহলে একজন পুরুষ এ পোশাক পরা মেয়েদেরকে দেখলে কিভাবে প্রভাবিত হবেন তা সহজেই অনুমান করা যায়।

মেয়ের মনে যদি এসকল পোশাক এ ধরণের অস্বস্থিবোধ এনে দেয় তাহলে একজন পুরূষ এ পোশাক পরা মেয়েদেরকে দেখলে কিভাবে প্রভাবিত হবেন তা সহজেই অনুমান করা যায়।

প্রিয় পাঠিকা হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন, শরীরের স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক আকৃতি ঢেকে রাখার দরকার কি? এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে আসুন একটু ভেবে দেখি। আজ থেকে ৫০ বৎসর আগে যেখানে জাপানে মেয়েদের জন্য সুইমিং স্যুট পরে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা অশ্লীলতা ও অন্যায় বলে মনে করা হত। অথচ আজকাল আমরা বিকিনি পরে সাঁতার কাটতে কোন লজ্জাবোধ করি না। তবে যদি কোন মহিলা জাপানের কোথাও টপলেস প্যান্টি পরে শরীরের উর্ধভাগ সম্পূর্ণ অনাবৃত করে সাঁতার কাটেন তাহলে লোকে তাকে নির্লজ্জ বলবে।

আবার দক্ষিন ফ্রান্সের সমুদ্র সৈকতে যান, দেখতে পাবেন সেখানে সকল বয়সের অসংখ্য নারী শরীরের উর্ধভাগ সম্পূর্ন অনাবৃত করে টপলেস পরে সানবাথ বা রৌদ্রস্নান করছেন। আরেকটু এগিয়ে আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে যান, সেখানের অনেক সৈকতে নুডিস্ট(নগ্নবাদী)দেরকে সম্পূর্ন উলংগ হয়ে রৌদ্রস্নানে রত দেখতে পাবেন।

যদি একটু পিছনে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন মধ্যযুগের একজন বৃটিশ নাইট তাঁর প্রিয়তমার জুতার দৃশ্যতে প্রকম্পিত হয়ে উঠতেন। এথেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, নারীদেহের গোপন অংশ, বা ঢেকে রাখার মত অংশ কি সে ব্যাপারে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তনশীল।

এখানে আমার প্রশ্নঃ আপনি কি একজন নুডিস্ট বা নগ্নবাদী? আপনি কি সম্পূর্ন নগ্ন হয়ে চলাফেরা করেন? যদি আপনি নুডিস্ট না হন তাহলে বলুন, যদি কোন নুডিস্ট আপনাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ "কেন আপনি আপনার স্তন ও নিতম্ব ঢেকে রাখেন, অথচ মুখ ও হাতের ন্যায় স্তন ও নিতম্বও তো শরীরের স্বাভাবিক অংশ?" তাহলে আপনি কি বলবেন? এ প্রশ্নের উত্তরে আপনি যা বলবেন, আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি ঠিক সেকথাই বলব। আপনি যেমন শরীরের স্বাভাবিক অংশ হওয়া সত্বেও স্তন ও নিতম্বকে গোপনীয় অঙ্গ বলে মনে করেন, আমরা মুসলিম নারীরা মুখমন্ডল ও হাত ছাড়া সমস্ত শরীরকে গোপনীয় অঙ্গ বলে মন করি। আর এজন্যই আমরা নিকটাত্মীয় (মাহরাম) ছাড়া অন্যান্য পুরুষদের থেকে মুখ ও হাত ছাড়া সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে রাখি।

আপনি যদি কোন কিছু লুকিয়ে রাখনে তাহলে তার মূল্য বেড়ে যাবে। নারীর শরীর আবৃত রাখলে তার আকর্ষণ বেড়ে যায়, এমনকি অন্য নারীর চোখেও তা অধিকতর আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। পর্দানশীন বোনেদের কাঁধ ও গলা অপূর্ব সুন্দর দেখায়, কারণ তা সাধারণতঃ আবৃত থাকে।

যখন কোন মানুষ লজ্জার অনুভূতি হারিয়ে নগ্ন হয়ে রাস্তাঘাটে চলতে থাকেন, প্রকাশ্য জনসমক্ষে পেশাব, পায়খান ও যৌনতা করতে থাকেন, তখন তিনি পশুর সমান হয়ে যান, তাঁকে আর কোনভাবেই পশু থেকে পৃথক করা যায় না। আমার ধারনা, লজ্জার অনুভূতি থেকে মানব সভ্যতার শুরু।

অনেক জাপানী মহিলা শুধু ঘর থেকে বেরোতে হলেই মেকাপ ও সাজগোজ করেন। ঘরে তাঁদেরকে কেমন দেখাচ্ছে তা নিয়ে তাঁরা মাথা ঘামান না। অথচ ইসলামের বিধান হল, একজন স্ত্রী বিশেষভাবে স্বামীর জন্য নিজেকে সুন্দর ও আকর্ষনীয় করে রাখতে সচেষ্ট হবেন। অনুরূপভাবে একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীর মণোরঞ্জনের জন্য নিজেকে সুন্দর ও আকর্ষনীয় করতে সচেষ্ট হবেন। উপরন্তু লজ্জার সহজাত অনুভূতি এদের সম্পর্কে আরো আনন্দময় ও মনোরক করে তোলে।

আপনারা হয়ত বলবেন, পুরুষদেরককে উত্তেজিত না করার উদ্দেশ্যে আমাদের মুখ ও হাত ছাড়া বাকী শরীর ঢেকে রাখাটা বাড়াবাড়ি এবং অতি-সতর্কতা। একজন পুরুষ কি শুধুমাত্র যৌন আগ্রহ নিয়েই একজন নারীর দিকে তাকান?

একথা ঠিক যে সব পুরুষই প্রথমেই যৌন অনুভূতি নিয়ে নারীকে দেখেন না। তবে নারীকে দেখার পর তাঁর পোশাক ও আচরণ থেকে পুরূষের মনে যে যৌন আগ্রহ সৃষ্টি হয় তা প্রতিরোধ করা তাঁর জন্য খুবই কষ্টকর। এ ধরনের আবেগ নিয়ন্ত্রণে পুরুষেরা বিশেষভাবে দুর্বল। বর্তমান বিশ্বের ধর্ষণ ও যৌন অত্যাচারের পরিমান দেখলেই আমরা একথা বুঝতে পারব। নারী-পুরুষের সম্মতিমূলক ব্যভিচার বৈধ করার পরও পাশ্চাত্যে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও যৌন অত্যাচারের ঘটনা ধারণাতীতভাবে বেড়ে চলেছে।

কাইরো থেকে জাপানে ফিরে আমি তিন মাস ছিলাম। এরপর আমি আমার স্বামীর সাথে সৌদি আরবে আসি। শুনেছিলাম যে, সৌদি আরবে সব মেয়েকে মুখ ঢাকতে হয়, তাই আমার মুখ ঢাকার জন্য ছোট একটি কাল কাপড় বা নিকাব সাথে করে এনেছিলাম। রিয়াদে পৌছে দেখলাম এখানের সব মহিলা মুখ ঢাকেন না। বিদেশী অমুসলিম মহিলারা শুধু দায়সারাভাবে একটা কাল গাউন পিঠের উপর ফেলে রাখেন, মুখ, মাথা কিছু ঢাকেন না। বিদেশী মুসলিম মহিলারা অনেকেই মুখ খোলা রাখেন। সৌদি মহিলারা সবাই মুখ সহ সমস্ত দেহ আবৃত করে চলাফেরা করেন।
রিয়াদে এসে প্রথমবার বাইরে বেরোনোর সময় আমি "নিকাব" দিয়ে আমার মুখ ঢেকে নেই। বেশ ভাল লাগল। আসলে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এতে কোন অসুবিধা বোধ হয় না। বরং আমার মনে হতে লাগল যে, আমি একটি বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছি। কোন মূল্যবান শিল্পকর্ম চুরি করে নিয়ে গোপনে দেখে যেমন আনন্দ পাওয়া যায় ঠিক তেমনি আনন্দ অনুভব করছিলাম আমি। অনুভব করলাম, আমার এমন একটা মূল্যবা সম্পদ রয়েছে যা দেখার অনুমতি সবার নেই সবার জন্য।

রিয়াদের রাস্তায় একজন মোটাসোটা পুরুষ এবং তার সাথে সর্বাঙ্গ কালো বোরকায় আবৃত একজন মহিলাকে দেখে একজন্য বিদেশী হয়ত ভাববেন যে, এই দম্পতির মধ্যের সম্পর্ক হচ্ছে অত্যাচার ও নিপীড়নের, মহিলাটি অত্যাচারিত এবং তার স্বামীর দাসীতে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বোরকাপরা এ সকল মহিলাদের অনুভূতি সম্পূর্ন ভিন্ন। এরা নিজেদেরকে চাকর-বরকন্দাজের প্রহরাধীন সম্রাজ্ঞীর মত ভাবেন।

রিয়াদের প্রথম কয়েক মাস আমি আমার নিকাব বা মুখাবরণ দিয়ে শুধু চোখের নিচের অংশটুকু ঢাকতাম, চোখ ও কপাল খোলা থাকত। শীতের পোশাক বানাতে যেয়ে আমি একটা চোখঢাকা নিকাব বানিয়ে নিলাম। এবার আমার সাজ পুরো হল, আর আমার শান্তি ও তৃপ্তিও পূর্ণতা পেল। এখন আমি ভিড়ের মধ্যেও অস্বস্থি বোধ করিনা। যখন চোখ খোলা রাখতাম তখন মাঝে মাঝে হঠাৎ করে কোন পুরুষের সাথে চোখাচোখি হলে বিব্রত হয়ে পড়তাম। কাল সানগ্লাসের মত চোখ ঢাকা নিকাবের ফলে অপরিচিত পুরুষের অনাহূত চোখাচোখি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

একজন মুসলিম মহিলা তাঁর নিজের মর্যাদা রক্ষার জন্য নিজেকে আবৃত করে রাখেন। অনাত্মীয় পুরুষের দৃষ্টির অধীনস্থ হতে তিনি রাজি নন। তিনি চান না তাদের উপভোগের সামগ্রী হতে। পাশ্চাত্যের বা পাশ্চাত্যপন্থি যে সকল মহিলা তাঁদের শরীরকে পুরুষদের সামনে উপভোগের সামগ্রী রূপে তুলে ধরেন তাঁদের প্রতি একজন মুসলিম নারী করূনা বোধ করেন।

বাইরে থেকে হিজাব বা পর্দা দেখে এর ভিতরে কি আছে তা বোঝা আদৌ সম্ভব নয়। বাইরে থেকে পর্দা ও পর্দানশীনদের পর্যবেক্ষণ করা, আর পর্দার মধ্যে জীবন কাটান দুটো সম্পুর্ণ পৃথক বিষয়। দুটি বিষয়ের মধ্যে যে গ্যাপ রয়েছে সেখানে নিহিত রয়েছে ইসলামকে বোঝার গ্যাপ।

বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে ইসলাম একটি জেলখানা, এখানে কোন স্বাধীনতা নেই। কিন্তু আমরা, যারা এর মধ্যে অবস্থান করছি, আমরা এত শান্তি, আনন্দ ও স্বাধীনতা অনুভব করছি যা ইসলাম গ্রহনের আগে কখনোই করিনি। পাশ্চাত্যের তথাকথিত স্বাধীনতা পায়ে ঠেলে আমরা ইসলামকে বেছে নিয়েছি। একথা যদি সত্যি হত যে, ইসলাম মেয়েদেরকে নিপীড়ন করেছে, তাদের অধিকার খর্ব করেছে, তাহলে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান সহ বিভিন্ন দেশের অগণিত মেয়ে কেন তাদের সকল স্বাধীনতা ও স্বাধিকার ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করছে? আমি আশা করি সবাই বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ, ঘৃনা বা ভ্রান্ত পূর্বধারণার কারণে যদি কেউ অন্ধ না হন তাহলে তিনি অবশ্যই দেখবেন একজন পর্দানশীন মহিলা কি অপূর্ব সুন্দর। তাঁর মধ্যে ফুটে উঠেছে স্বর্গীয় সৌন্দর্য, দেবীত্বের ও সতীত্বের আভা। আত্মনির্ভরতা ও আত্মমর্যাদায় উদ্ভাসিত তাঁর চেহারা। অত্যাচারের বা নিপীড়নের সামান্যতম কোন চিহ্নই আপনি তাঁর চেহারায় পাবেন না।

এটা জ্বলন্ত সত্য, কিন্তু তারপরো অনেকে তা দেখতে পান না। কেন? সম্ভবতঃ তাঁরা ঐ ধরণের মানুষ যারা আল্লাহর নিদর্শন দেখেও, জেনেও অস্বীকার করেন। প্রচলিত প্রথার দাসত্ব, বিদ্বেষ, ভ্রান্তধারনা ও স্বার্থের অন্বেষণ অন্ধ করে ফেলেছে। ইসলামের সত্যকে অস্বীকার করার আর কি কারন থাকতে পারে?

No comments: