Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Saturday, July 11, 2015

টোটাল কন্ট্রাডিকশন!

আমি যদি সুন্দরী চেলেব্রেটি হতাম তাহলে একটা ভিডিও দিতাম। এখনতো এই ট্রেন্ডই চালু হয়েছে। আফসুস আমি সুন্দরী চেলেব্রেটি না। তাই আমার ভিডিও কেউ দেখবে না। তাই আমার বক্তব্য লিখেই দিলাম। যার পড়ার পড়বে, না পড়লে নাই।

জাতি হিসেবে আমাদের আবেগ অত্যন্ত বেশি। কোন ঘটনা ঘটলে প্রথমেই আমরা আবেগ প্রবন হয়ে কত কিছুই বলি। যুক্তি থাকলেও বলি, যুক্তি না থাকলেও বলি। কিছুদিন আগে একটা নাটক দেখেছিলাম টিভিতে। ফেসবুক ভিত্তিক নাটক। নাটকের মূল চরিত্রে অভিনয় করেছে মিশু সাব্বির আর সেজুতি। ভাই-বোন। ছোট ভাই মিশু প্রায়ই সেজুতির অনুপুস্থিতিতে তার ল্যাপটপ ব্যবহার করে। মিশু ফেসবুকে একটা ফেইক আইডি চালায়। মেয়ে আইডি। এই আইডি চালাতে যেয়ে এক ছেলের সাথে চ্যাট হয়। দিনে দিনে দু'জনে অনেক আগায়। তারপর ঐ ছেলে যখন ছবি দেখতে চায় তখন মিশু তার বোনের ছবি দেয়। কথাবার্তায় নিজের বোনের অনেক গোপন ছবিও মিশু ল্যাপটপ থেকে শেয়ার করে। তো ঘটনা চক্রে একদিন সেজুতিকে ঐ ছেলে শপিং সেন্টারের বাইরে রাস্তায় দেখতে পায়। তখন মিশু আর তার বাবাও সাথে ছিল। ছেলে সেজুতিকে যতই চাপ দেয় সেজুতি অস্বীকার করে যে সে তাকে চেনে না। একপর্যায়ে ছেলেটি ঐ গোপন ছবি বের করে তাদেরকে দেখায়। তখন সবার মাথায় বাজ পড়ে। মিশুতো সবই জানে। সেজুতি কিছুই বুঝতে পারে না। সেজুতির বাবাও থমকে যান।

বাসায় এসে সেজুতি অনেক চিন্তা-ভাবনার পর বুজতে পারে এসব মিশুর কাজ। কারন সে অনেকবার মিশুকে তার ল্যাপটপ ঘাটতে দেখেছে। মিশুকে চার্জ করতেই মিশু কাঁদতে কাঁদতে সব স্বীকার করে। তারপর মিশুর বাবা মিশুকে ঘর থেকে বের করে দেন। মিশুও চলে যায়। রাতের বেলা সেজুতির মাথা ঠান্ডা হলে সেজুতি তার ভাইকে খুজতে বের হয়। আর মিশু নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে।

এখন কথা হল এই ঘটনার জন্য দায়ি কে? মিশু যেমন দায়ি, তেমনি দায়ি তার বোন। মিশু তার বোনের ছবি শেয়ার করে গুরুতর অপরাধ যেমন করেছে, তেমনি সেজুতির অপরাধ হচ্ছে প্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার। মোবাইল বা ওয়েবক্যাম থাকলেই কি খোলামেলা ছবি তুলতে হবে? ছবি তোলার সাধারন উদ্দেশ্য হল অন্যকে দেখানো। যে ছবি কাউকে দেখানো যায় না সে ছবি তোলারই দরকার কি? নিজেকেতো আয়নাতেই দেখা যায়।

কথা বলতে চাই আসলে তিনটাঃ

১. ছেলেরা নিজেদের সংযত করবে।

২. মেয়েরা শালীনভাবে চলাচল করবে।

৩. এরপরও কোন অঘটন ঘটলে তার যথোপযুক্ত শাস্তি।

রিকশাতো আমরা সবাই চড়ি কম-বেশি। রিকশার তিন চাকা। কোন চাকার যদি নষ্ট থাকে তবে রিকশা চলে না। চললেও চলে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। এই রিকশায় এক্সিডেন্টের সম্ভবনা বেশি। আর যে রিকশার সবকিছু ভাল সে রিকশায় সাধারনত এক্সিডেন্ট হয় না। তবে একেবারেই যে হয় না সেটা কিন্তু নয়।

ঐ তিন বক্তব্যের ক্ষেত্রেও একই কথা। ছেলের দায়িত্ব ছেলে পালন করবে। মেয়ের দায়িত্ব মেয়ে পালন করবে। তারপরও যদি কেউ দায়িত্ব পালন না করে তবে তার জন্য শাস্তি। সে শাস্তি দৃষ্টান্তমূলক হতে হবে। প্রকাশ্য হতে হবে। তাহলে যারা সুযোগসন্ধানী তারা সতর্ক হবে।

নেটে যেসব ভিডিও এসেছে তাদের মধ্যে একটা কথা কমন, "পোশাকের ব্যাপার না, মেন্টালিটির ব্যাপার।"

আসলেই মেন্টালিটির ব্যাপার। ছেলেদের মেন্টালিটি সৃষ্টির আদিকাল থেকেই ভাল না। তাই এটা নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। শুধু এইটুকুই বলব যে, ছেলেদের মধ্যে যারা নিজেদের প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে পাশবিক কিছু করবে তাদের যথোপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। নাহলে ব্লেড রেখে কোন কাজ হবে না। কাজ হবে না কুংফু-কারাতে শিখেও। আপনারাই বলেন ঐরকম ভীড়ের মধ্যে ব্লেড, ছুড়ি, চাকু - ইত্যাদি দিয়ে কতটুকু লাভ হবে? আদৌ কি লাভ হবে? নাকি বুমোরাং হবে এই সিদ্ধান্ত? আচ্ছা, কুংফু-কারাতে জানে এমন কাউকে কি আপনি চেনেন যে কিনা ছিনতাইকারীর কুংফু মেরে কুপোকাৎ করেছে? আমি এসব শুধু সিনেমাতেই দেখেছি। বাস্তব জীবনে দেখিনি কখনো। ছিনতাইকারীর হাত থেকে সেনাসদস্যরাই রেহাই পায় না অনেক সময় আর কুংফু!

এখন আসি মেয়েদের মেন্টালিটির কথায়। ভীড়ে ছেলেদের আচরন কেমন হয় সেটা মেয়েরা ভাল করেই জানে। কারন প্রতিবছরই এমন হয়। ছেলেরা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠে। তারপরও যেসব মেয়ে সেখানে যায় তাদের মেন্টালিটি আসলে কেমন? তারা কি রবীন্দ্রনাথ শোনে বেশি?

"আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান
আমি প্রাণেরও আশা ছেড়ে সপেছি প্রাণ"

এই টাইপ মেন্টালিটি?

শুধু ঢাকা শহরে বলব না, সমগ্র বাংলাদেশের অবস্থাও একই। এসব ঘটনা বিদ্যুৎ বেগে ছড়ায়। কোন মেয়েরই তা অজানা নয়। তাও কেন এখানে যেতেই হবে? তাদের অভিভাবকের মেন্টালিটিই বা কেমন? তাদের মেয়েরা, ছেলেরা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কেন যাচ্ছে, কার সাথে যাচ্ছে, সেখানে কি হতে পারে, কি না হতে পারে - সেসব দিকে কোন খেয়াল নেই কেন?

গতরাতে একটি গল্প লিখেছিলাম। আবুল মিয়ার গল্প। এই গল্পটি লিখেছি অতিজ্ঞানী কিছু মানুষের জন্য। যারা জ্ঞানের গভীর সাগরে ডুব দিয়ে বহুক্ষন ভাববার পর সুচিন্তিত প্রশ্ন করেন, যারা এমন করে তাদের ঘরে কি মা-বোন নেই? তারা কিভাবে মা-বোনদের সাথে থাকে?

আপনার বাবারও নিশ্চয়ই মা ছিল, বোন ছিল। তারপরও তিনি বিয়ে করেছেন। আপনার জন্ম হয়েছে। কিভাবে আপনার জন্ম হল? আপনারতো দাদি-ফুপু ছিল। তাও আপনার কেন জন্ম হল? অবাক করার মত বিষয় না? স্ত্রীকে যদি মা-বোনের মত দেখত তবে আপনার জন্ম হত না।

সুতরাং ছেলেরা ঘরের মা-বোনকে যে দৃষ্টিতে দেখে রাস্তার কোন মেয়েকে সে দৃষ্টিতে দেখে না। আর যদি ঐ মেয়ে শালীনতার ধারই না ধারে তবে তার দিকে কোন দৃষ্টিতে তাকায় সে আমরা; ছেলেরা ভাল করেই জানি।

আচ্ছা আপনি আপনার স্ত্রী/স্বামী কে যে দৃষ্টিতে দেখেন আপনার মা-বোন/বাবা-ভাইকে কি সেই দৃষ্টিতে দেখেন? দুর্ভাগ্য কার আপনার স্ত্রীর/স্বামীর? নাকি আপনার মা-বোনের/বাবা-ভাইয়ের? খুব খেয়াল করে!

ঐসব ক্ষেত্রের সাথে স্ত্রীর সম্পর্কের একটা সূক্ষ পার্থক্য থাকে। স্ত্রী প্রতি ভালবাসা থাকে। কিন্তু ঐসব ক্ষেত্রে কোন ভালবাসা থাকে না। থাকে হিংস্রতা! মা-বোনের জন্য ঐ হিংস্রতা থাকে না। কেন থাকে না-এই প্রশ্নের উত্তর যারা এখনো পান নি, তাদের আর কিছু বলার নেই আমার।

সুন্দরী চেলেব্রেটিদের একজন মেশিন ধরে টানাটানির কথা বললেন। খুবই হাস্যকর একটা কথা। মেশিন ধরে টান কি জন্য মারে সেটা মনে হয় ঐ সেলেব্রেটির জানা নেই। টানাটানি না করতেই যে অবস্থা! করলে না জানি কি হয়!

আরেকজন বললেন, "মেয়েদের পোশাকের দায়িত্ব আল্লাহ "আপনাকে" দেন নাই। মুখ, হাত, আর জিপার সামলান।" জিপার সামলানের দায়িত্ব আল্লাহ আপনারে দিছে নাকি? নাকি কে সামলাইলো, কে সামলাইলো না-সেটা দেখার দায়িত্ব আপনাকে আল্লাহ দিছেন? কথা-বার্তা সব কন্ট্রাড্রিকটরি। ছেলেদের জিপার সামলানোর মহান দায়িত্বপ্রাপ্ত এই মহিয়সী নিজের সমগোত্রীয়দের জামার জিপার সামলানোর ব্যাপারে কিন্তু কিছু বলেন নি।

একচোখ দিয়ে না দেখে দু'চোখ দিয়েই দেখার চেষ্টা করেন। ভাল হবে।

আরেকজনতো "FUCK YOURSELF" বলে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়ে বললেন, তিনি নাকি এখন থেকে তার ব্যাগে কনডম রাখবেন। যেন তাকে কেউ রেপ করতে আসলে কন্ডম দিতে পারেন। এতে ধর্ষনকারীর SPERM তার মধ্যে ঢুকবে না।

ধর্ষনকারীতো একবুক মায়া! আপনার আতিথেয়তায় খুশিতে গদগদ হয়ে যাবে!

বুরকা নেকাব পড়া এক সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশী মেয়ে বলল যে, পোশাক কোন ফ্যাক্ট না। যদি ফ্যাক্ট হত তাহলে সৌদিতে, যেখানে নারীরা সবাই পর্দা করে চলে সেখানে এক সৌদিয়ান নারী ১২ জন বাংলাদেশী পুরুষ কর্তৃক ধর্ষিত হত না।

পোশাক যদি ফ্যাক্ট না হত তাহলে আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই আল-কুরআনে চাদর টেনে দেয়ার কথা বলতেন না। শুধু ছেলেদের সংযত হবার কথা বলেই ক্ষান্ত দিতেন। তাই না?

আর শালীনভাবে চলার পরেও যদি কেউ উত্যক্ত হয় তবে তার জন্য শাস্তির বিধানের কথাতো আগেই বললাম। সবাই যদি সংযত হয়ে চলত তবে দুনিয়া আর দুনিয়া থাকত না, বেহেশত হয়ে যেত। যত কঠোর আইনই হোক ১০০ ভাগ লোক সংযত হবে না-এটাই স্বাভাবিক। তাদের জন্যই শাস্তির ব্যবস্থা। যাতে অন্যরা সতর্ক হয়।

অনেকেই আবার ফতোয়া দিয়ে দেন যেন মেয়েরা ঘরে-বাইরে সব কাজ করতে পারবে পর্দার সাথে। তাদের জন্য বোখারী শরীফ থেকে একটা হাদিস হুবহু তুলে দিচ্ছি।

/* ৪৯১। হাদীছঃ আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করিয়াছেন, বর্তমান যুগে নারীরা যে অবস্থা অবলম্বন করিয়াছে তাহা যদি রসূলুল্লাহ (সাঃ) জানিতেন, তবে খোদার কসম--নিশ্চয় তিনি নারীগণকে মসজিদে যাইতে নিষেধ করিতেন, যেরূপভাবে বনী ইস্রাঈলের নারীদের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল।

ব্যাখ্যাঃ আয়েশা (রাঃ) যেই যুগের নারীগনের প্রতি অভিযোগ করিতেছিলেন সেই নারীগন হইলেন আয়েশা (রাঃ)র যুগের নারী অর্থাৎ রসূলুল্লাহ (সাঃ)এর যুগ, সেই যুগের পরেও উত্তম যুগ আরও একটি বা দুইটি বাকী ছিল। সেই যুগ হতে দীর্ঘ চৌদ্দশত বৎসরের অধিক কাল পরের যুগ হইল বর্তমান যুগ। এই যুগের নারীদের অবস্থা আয়েশা (রাঃ) দেখিলে কি বলিতেন এবং রসূলুল্লাহ (সাঃ) তাহা জানিতে পারিলে কি করিতেন উহা পাঠকগণের বিবেক-বুদ্ধির উপরই ছাড়া হইল। */

এই হল নারীদের মসজিদে নামায পড়ার ব্যাপারে হাদীস। নামাযের ব্যাপারেই এ কথা বলা হয়েছে তাহলে পর্দার সাথে অন্য কাজের ব্যাপারে কি বলা হত আল্লাহই জানেন!

আবার ফিরে আসি ঐ নাটকের ব্যাপারে। দিনশেষে সেজুতি কিন্তু ঠিকই তার পিঠাপিঠি ভাইয়ের জন্য উদ্বিগ্ন হয়। তাকে খোজাখুজি করে। তার মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে কান্নাকাটি করে।

আপনার ভাই, আপনার বাবা, আপনার স্বামী বা আপনার ছেলে যদি পহেলা বৈশাখ, বই মেলা বা অন্যকোথাও এই কাজ করত তবে আপনি কি তাকে পুলিশে দিতে পারতেন? বা পারতেন তাকে ব্লেড, ছুড়ি, কাচি দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করতে? পারতেন তাকে জনগনের হাতে তুলে দিতে?

পারতেন?

No comments: