যুক্তি-তর্কের প্রধান সমস্যা হল, যুক্তি না মানার প্রবনতা বা যুক্তি সঠিক বলে মনে না হওয়া। আমার কাছে যেটা সঠিক যুক্তি অন্য কারো কাছে সেটা সঠিক নাও হতে পারে!
ভেবেছিলাম রমজান মাসে সিরিয়াস কোন পোস্ট দিব না। সিরিয়াস কোন পোস্ট দেবার আগে অনেককিছু ঘাটাঘাটি করতে হয়। কোন লাইন লেখার আগে অনেক চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। রমজানে এত সময় কোথায়? তাছাড়া এনার্জিও থাকে না।
কিন্তু বাস্তবতা এত অজুহাত শুনতে নারাজ। কিছুদিন আগে এক ভাই ইনবক্সে এক নাস্তিকের পোস্ট পেস্ট করে দিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন। একমাস সময় লাগলেও যেন আমি একটা উত্তর তৈরি করে দেই সেই অনুরোধ জানালেন। পোস্টটা পড়ে দেখলাম ভয়াবহ সব কথাবার্তা লেখা! রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে লক্ষ্য করে মিথ্যে প্রচারনা আমার কাছে নতুন কিছু নয়। ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশের কিছুদিনের মধ্যেই এইসব আমার নজরে আসে। প্রথম প্রথম গায়ে লাগলেও পরে আর গায়ে লাগত না। কারন আমার ধারনা তাদের এইসব কথাবার্তা যে ভুয়া এইগুলা নাস্তিকের দল ভালভাবেই জানে। তারা এইসব পোস্ট দেয় কেবলমাত্র বিকৃত আনন্দলাভের জন্য, অন্যকিছু না।
এবার মূল আলোচনায় আসি।
[এক]
“প্রতিটি মুসলিম বিশ্বাস করেন হযরত মুহাম্মদ সাসাধারন কেউ নন। তিনিঃ অতিপ্রাকৃত-কেউ”
মিথ্যে কথা। রসূলুল্লাহ (সাঃ) ‘অতিপ্রাকৃত কেউ’ এই ধারনা কোন মুসলিম পোষন করে না। মুসলিমদের বিশ্বাসের ভিত্তি কুরআন-হাদীসের কোথাও এই ধরনের কথা নেই। বরং এই বিপরীত কথাই কুরআন-হাদীসের বহুজায়গায় এসেছে। তিনি আমাদের মতই মানুষ ছিলেন। আমাদের মতই সমস্ত জৈবিক কাজ সাধন করেছেন তিনি। তারমধ্যে মানব চারিত্রিক গুনাবলী সর্বোচ্চ মাত্রায় বিকশিত হয়েছিল। এই কারনেই তিনি সর্বকালের, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তিনি ছিলেন আল্লহর বান্দা ও রসূল। এই মর্যাদাই তার জন্য যথেষ্ঠ। বিভিন্ন হাদীসের এরচেয়ে অধিক মর্যাদা দানের ব্যাপারে (মানুষ ভক্তিভরে যা কিছু বলত) তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে।
আল্লাহ তায়াল আরো বলেন,
“এবং তারা বলে, ‘কখনই আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনব না যতক্ষন না আপনি আমাদের জন্য ভূমি হতে একটি ঝর্ণাধারা উৎসারিত করবেন। অথবা আপনার একটি খেজুরের ও আঙ্গুরের বাগান হবে যার ফাঁকে ফাঁকে নদী-নালা প্রবাহিত করে দেবেন। অথবা আপনি যেমন বলে থাকেন তদনুযায়ী আকাশকে খন্ড-বিখন্ড করে আমাদের উপর ফেলবেন, অথবা আল্লাহ ও ফিরিশতাগনকে আমাদের সামনে এনে উপস্থিত করবেন। অথবা আপনার একটি অলংকৃত স্বর্ণ নির্মিত গৃহ হবে। অথবা আপনি আকাশে আরোহন করবেন, তবে আমরা আপনার আকাশে আরোহণে কখনো বিশ্বাস করব না যতক্ষন না আপনি আমাদের (আসমান থেকে) একটি কিতাব অবতীর্ণ করবেন যা আমরা পাঠ করব’। বল, ‘পবিত্র আমার প্রতিপালক! (সুবহানাল্লাহ!) আমি তো কেবলমাত্র একজন মানুষ, একজন রাসূল। আর মানুষের কাছে যখন হেদায়েতের বানী আসে তখন তো তারা শুধু একথা বলে ঈমান আনয়ন করা থেকে বিরত থাকে যে, আল্লাহ কি একজন মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন?
*** সূরা (১৭) ইসরা (বনী ইসরাঈল): ৯০-৯৪ আয়াত।
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
“বল, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ মাত্র, আমার প্রতি ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তোমাদের মা’বুদ একমাত্র একই মা’বুদ। অতএব তোমরা তারই পথ অবলম্বন কর এবং তারই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। যারা শির্কে লিপ্ত তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ”।
*** সূরা (৪১) ফুস্সিলাতত (হা মিম আস সাজদা): ৬ আয়াত।
এক হাদীসে নবী-পত্মী উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
“আমি একজন মানুষ মাত্র। আমার কাছে বিচার ফয়সালার নিয়ে মানুষেরা আসে। বাদী ও বিবাদীর মধ্য থেকে একজন হয়ত অধিকতর বাকপটু হয়, ফলে তাকে সত্যবাদী মনে করে হয়ত আমি তার পক্ষেই বিচার করি। যদি আমি ভুল করে একের সম্পদ অন্যের পক্ষে বিচার করে দেই, তবে সে সম্পদ তার জন্য হালাল হবে না। বরং তা হবে তার জন্য আগুনের একটি পিন্ড, তার ইচ্ছে হলে তা গ্রহণ করুক, আর ইচ্ছা হলে তা পরিত্যাগ করুক”।
**বুখারী, আস-সহীহ ২/৬৬৭, ৬/২৫৫৫, ২৬২২, ২৬২৬; মুসলিম, আস-সহীহ ৩/১৩৩৭-১৭৩৮; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী, ৫/১০৭, ২৮৮, ১২/৩৩৯, ১৩/১৫৭, ১৭২, ১৭৮।
অন্য হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসূদ (রাঃ) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সালাতের মধ্যে ভুল করেন। সালামের পরে সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল, সালাতের মধ্যে কি কোনো নতুন বিধান নাযিল হয়েছে? তিনি বলেনঃ তোমরা এ প্রশ্ন করছো কেন? তারা বলেনঃ আপনি এমন এমন করেছেন। তখন তিনি সালাত পূর্ণ করেন এবং বলেনঃ “সালাতের নিয়ম পরিবর্তন করা হলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে জানাতাম। কিন্তু আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ মাত্র। তোমরা যেমন ভুল কর আমিও তেমনি ভুল করি। যদি আমি কখনো ভুল করি তবে তোমরা আমাকে মনে করিয়ে দেবে”।
**বুখারী, আস-সহীহ ১/১৫৬; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৪০০; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ১/৫০৩-৫০৪
এইসব আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমানিত হল যে, আল্লহর রাসূল (সাঃ) সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, হাল্ক, ব্যাটম্যান প্রভৃতি নন, তিনি আমাদের মতই একজন মানুষ!
ক্যারেন আর্মস্ট্রং এর রচিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনী গ্রন্থেও বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি লিখেন,
“মুহাম্মদ (সঃ) কে বরং ইহুদি পবিত্র গ্রন্থের বৈচিত্রময় চরিত্র মোজেস, ডেভিড, সোলোমন, এলিজাহ্ বা ইসায়াহর মত মনে হয়- যারা আন্তরিকভাবে ধার্মিক হলেও একেবারে নিখুত ছিলেন না।
তিনি প্রচন্ড ক্ষুদ্ধ ও অশান্ত হয়ে উঠতে পারতেন, কিন্তু আবার কোমল, আবেগপ্রবণ, দুর্বল দয়ালুও হয়ে উঠতেন। আমরা কখনও জেসাসের হাসার কথা পড়িনি, কিন্তু আমরা বারবার ঘনিষ্ঠ জনদের সঙ্গে মুহাম্মদকে (সঃ) হাসতে ও রসিকতা করতে দেখি। তাঁকে আমরা বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে দেখব, স্ত্রীদের নিয়ে সমস্যায় পড়তে দেখব, কাঁদতে দেখব বন্ধুর মৃত্যুতে, আর যেকোন গর্বিত পিতার মত নবজাত শিশুপুত্রকে প্রদর্শনরত অবস্থায়ও দেখতে পাব”।
[অনুবাদ, মুহাম্মদ : মহানবীর (সঃ) জীবনী, লেখকঃ ক্যারেন আর্মস্ট্রং, পৃষ্ঠাঃ ৫৮- ৫৯]
[দুই]
“যার সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবী সৃষ্টি হবার ৫০০ বছর আগে এবং তখন তিনি তারকা রূপে ছিলেন। তার সৃষ্টি না হলে এই মহা বিশ্ব , পৃথিবী , মানুষ ও প্রাণীকুল কোন কিছুর সৃষ্টি হত না”।
এই ধরনের বক্তব্য কোথা থেকে আসল বোধগম্য নয়। ধারনা করতে পারি যে, বিভিন্ন জায়গা দেখে বিভিন্ন প্রসঙ্গে পাওয়া বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একত্রিত করা হয়েছে। বানোয়াট কত কিছুই তো মানুষ বলে থাকে, তাতে কার কি আসে যায়!
মুসলিম ধর্মগ্রন্থসমূহের মধ্যে আদি সৃষ্টি নিয়ে কি বক্তব্য পাওয়া যায় আসুন দেখি-
“আল্লাহ সমস্ত জীব সৃষ্টি করিয়াছেন পানি হইতে, উহাদিগের কতক পেটে ভর দিয়া চলে, কতক দুই পায়ে চলে এবং কতক চলে চারি পায়ে, আল্লাহ্ যাহা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান”।
[***সূরা আন-নূর, আয়াত সংখ্যা ৪৫]
জাবের (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলিয়াছেন, আমি একদা আরজ করিলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার চরনে উৎসর্গ হউক; সকল বস্তুর পূর্বে সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা কোন্ জিনিসটি সৃষ্টি করিয়াছেন? রসূল (সঃ) বলিলেন, হে জাবের! আল্লাহ তাআলা সকল বস্তুর পূর্বে সর্বপ্রথম তোমাদের নবীর নূর সৃষ্টি করিয়াছেন (যাহা) আল্লাহর (বিশেষ কুদরতে সৃষ্ট) নূর হইতে। অতঃপর সেই নূর আল্লাহর কুদরতে আল্লাহ তাআলার নিয়ন্ত্রণাধীনে চলমান ছিল। ঐ সময় লওহ-কলম, বেহেশত-দোযখ, আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্য, মানব-দানব এবং ফেরেশতা কিছুই ছিল না।
[বোখারী শরীফ, পৃষ্ঠা-৩, ৫ম খন্ড, হামিদিয়া লাইব্রেরী]
সত্যবাদী ও সত্যায়িত নবী (ছাঃ) বলিয়াছেন-
অর্থাৎ, “আল্লাহ পাক ছিলেন, কিন্তু তাহার সহিত কিছুই ছিল না”।
অতঃপর লওহ্, কলম, আরশ্, কুরসী, আসমান, যমীন ও উভয়ের মধ্যবর্তী জিনিসসমূহ সৃষ্টি করিয়াছেন, অবশ্য সর্বপ্রথম কোন্ জিনিস সৃষ্টি করিয়াছে, এই সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রহিয়াছে। যেমন আল্লাহ্ বলেন,
অর্থাৎ “আল্লাহর আর্শ ছিল পানির উপরে”।
ইহাতে বুঝা যায়, ‘পানি এবং আরশ’ এই দুইটিই সর্বপ্রথম সৃষ্ট বস্তু। আবু রাযীন উকাইলী ইমাম আহ্মদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন,
অর্থাৎ “আরশের পূর্বে পানিকেই সৃষ্টি করা হইয়াছে”।
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলিয়াছেনঃ
অর্থাৎ “প্রত্যেক বস্তুই পানি হইতে সৃষ্টি করা হইয়াছে”।
অপর এক রেওয়াতে আছে—হযরত উবাদাহ্ ইবনে সামেত বলেন, নবী (ছাঃ) বলিয়াছেন,
“আল্লহ্ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করিয়াছেন”। আর এক বর্ণনায় আছে, অর্থাৎ “আল্লাহ সর্বপ্রথম নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টি করিয়াছেন”।
এইসব বিভিন্নতার সমাধান হইল-প্রতিটি জিনিস পরবর্তীটির হিসাবে প্রথম ও বস্তুও বিভিন্ন। তাই বলা হয়, সর্বপ্রথম পানি, তারপর অন্যান্য সমস্ত কিছু সৃষ্টি করা হইয়াছে।
[মেশকাত শরীফ, ১০ম খন্ড, এমদাদিয়া পুস্তকালয়। পৃষ্ঠাঃ ১৭৪]
[তিন]
“তার যখন ২৫ বছর বয়স তখন তিনি আরবের ধনী ব্যবসায়ী ৪০ বছর বয়সী খাদিজা কে বিয়ে করেন। ২৫ বছরের একটা যুবক কেন ৪০ বছর বয়স্ক মহিলা কে বিয়ে করবে ? মুহাম্মদ সা: কি পারতো না কোন যুবতী কে বিয়ে করতে ? এটার আসল কারণ হচ্ছে টাকা । খাদিজার অগাধ সম্পত্তির জন্যই তাকে বিয়ে করেন যুবক মুহাম্মদ (সাঃ)”
কাফের, মুশরিক, নাস্তিকেরা রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আঙুল উত্তোলন করে তার বিয়ে-শাদী। ইনিয়ে-বিনিয়ে, বানিয়ে নানান কথা বলে বেড়ায়। তিনি তাদের এসব অসত্যকথন থেকে পবিত্র। খাদিজা (রাঃ)র সাথে বিয়ের ব্যাপারে ক্যারেন আর্মস্ট্রং তার গ্রন্থে লিখেন,
“খাদিজা মুহাম্মদের (সঃ)কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন। কেবল ওয়ারাকার আগ্রহ দ্বারাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তিনি তা নয়, তরুন আত্মীয়ের ব্যাক্তিগত গুণাবলি দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিলেন। দুজনের বয়সের পার্থক্য সত্তেও, খাদিজার একজন স্বামীর প্রয়োজন ছিল এবং মুহাম্মদ(সঃ) ছিলেন যোগ্যপাত্র। ‘আমাদের সম্পর্কের কারনে আপনাকে আমি পছন্দ করি’, মুহাম্মদকে (সঃ) বলেছিলেন খাদীজা, গোত্রের মাঝে আপনার সুনাম, আপনার বিশ্বস্থতা এবং সচ্চরিত্র ও সত্যবাদিতা আমার ভাল লাগে’। কথিত আছে, খাদিজার বয়স তখন ছিল চল্লিশ বছর, কিন্তু যেহেতু মুহাম্মদ(সঃ)এর ছয়টি সন্তান ধারন করেছিলেন, হয়ত বয়স কিছু কমও হয়ে থাকতে পারে।, তবে স্বামীর চেয়ে উল্লেখ্যযোগ্যভাবে বয়স্কা ছিলেন তিনি। পশ্চিমের মানুষ অনায়াসে বয়স্কা ধনী নারীকে বিয়ের করার বিষয়টি নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে থাকেন। বোঝানোর চেষ্টা থাকে যে, মুহাম্মদ (সঃ) ফূর্তির জন্যে এই বিয়েতে সম্মত হয়েছিলেন। এমনকি ম্যাক্সিম রডিনসন তাঁর সহানুভূতিভাবাপন্ন জীবনীগ্রন্থে বলতে চেয়েছেন যে, মুহাম্মদ (সঃ) নিশ্চয়ই এই বিয়েতে শারীরিক ও আবেগের দিক থেকে হতাশাব্যঞ্জক বলে আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু বিপরীতটি বরং সত্য হওয়ার কথা। পয়গম্বরত্ব প্রাপ্তির প্রথম বছরগুলোয় খাদিজার সমর্থন আর আধ্যাত্মিক পরামর্শ ছাড়া মুহাম্মদ (সঃ)-এর পক্ষে এগুনো সম্ভব ছিল না। চমৎকার মহিলা ছিলেন খাদিজা। তিনি ছিলেন, বলেছেন ইব্ন ইসহাক, ‘দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সম্ভ্রান্ত এবং বুদ্ধিমতী। যখনই মুহাম্মদ (সঃ) শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন বা আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা মুখোমুখি হয়েছেন তখনই শান্তির জন্যে সোজা স্ত্রীর কাছে চলে গেছেন এবং খাদিজা তাঁ বাকি জীবনে-যিনি সর্বপ্রথম স্বামীর ব্যতিক্রমী ক্ষমতার পরিচয় পেয়েছিলেন- তাঁকে ‘সহজ করতেন, ভারমুক্ত করতেন, তাঁর সত্য ঘোষণা করতেন’। আবেগময় পুরূষ ছিলেন মুহাম্মদ (সঃ) কিন্তু খাদিজার জীবনকালে আর কোনও তরুণী ভার্যা গ্রহণ করেননি- পরবর্তীকালে যারা তাঁকে বহুবিবাহের জন্য সমালোচনা করেন তাদের এ বিষয়টি জেনে রাখা উচিত। প্রকৃতপক্ষে, খাদিজার মৃত্যুর পর, খাদিজার প্রশংসা করে অন্যান্য স্ত্রীদের ক্ষিপ্ত করে তুলেছেন তিনি এবং একবার খাদিজার কন্ঠস্বর শুনতে পেয়েছেন ভেবে শোকে বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন। বাড়তি সুবিধা প্রাপ্তি এ বিয়ের উদ্দেশ্য ছিল না : পারিবারিক আয়ের একটা বিরাট অংশ দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন মুহাম্মদ (সঃ) এবং নিজে পরিবার নিয়ে দরিদ্র হালে জীবন কাটিয়েছেন”।
[অনুবাদ, মুহাম্মদ : মহানবীর (সঃ) জীবনী, লেখকঃ ক্যারেন আর্মস্ট্রং, পৃষ্ঠাঃ ৯১]
ক্যারেন আর্মস্ট্রং সাহেবের লিখনি থেকে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, মূলত খাদিজা (রাঃ) আগ্রহের কারনেই বিয়েটা হয়েছিল। অথচ মিথ্যেবাদীগন উলটো কথাই বলে থাকে।
No comments:
Post a Comment