Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Saturday, July 11, 2015

চেয়ারে বসে নামায পড়া


ইফার ফতোয়াটা আপনাদের নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে। পড়ার কথা। এই নিয়ে অনলাইনের খবর জানি না প্রিন্ট মিডিয়ার কথা বলি। নয়া দিগন্তের রিপোর্টের পর এক পাঠক তার প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছিলেন এবং নয়া দিগন্ত সেটাও ছেপেছে। তবে প্রিন্ট সংস্করনে ফতোয়া পুরোটা দেয়া না হলেও অনলাইন পেপারে দেখলাম ইফা থেকে প্রকাশিত ফতোয়ার পুরো অংশ ছাপানো হয়েছে। 

মূল ফতোয়া পড়ার পর আমার মনে হয়েছে প্রতিবেদক হয় পুরো ফতোয়া পড়েন নি বা পড়ে থাকলেও ইচ্ছে করেই নিজের মন মত রিপোর্ট করে যিনি ফতোয়া দিয়েছেন তাকে হাজার হাজার নামাযীর বিপক্ষে দাড় করিয়ে দিয়েছেন। আমরা যারা সমালোচনা করছি তারাও কতজন মূল ফতোয়াটা পড়েছি আল্লহই জানেন। আমার কাছে মুফতী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সাহেবের ইন্টেশন খারাপ মনে হয় নি। কেন মনে হয় নি সেটা বোঝাতে আমি মূল বিবৃতি শেষের দুটি লাইন কোট করছি,

"মোটকথা বিষয়টি সম্পর্কে দেশের বিজ্ঞ মুফতীগনকে আরো গভীরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি এবং সংশ্লিষ্ট রোগীদের কষ্টসাধ্য নামায যেন বাতিল না হয়ে যায় সেই সতর্কতা অবলম্বন করার অনুরোধ করছি।"

আরো কিছু বলার আগে অন্য প্রসঙ্গে দুই একটা কথা বলি। আমাদের এখানে এই ভাই আছেন। মাহবুব ভাই। তিনি কোন এক দূর্ঘটনায় উনার দু'হাত, এক পা হারান। কেটে ফেলা পায়ে উনি কাঠের পা পড়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলেন। যখন আযান হয় তখন তিনি তার কাঠের পা খুলে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ওযু খানায় ওযু করেন এবং নামায আদায় করেন। এবং তিনি চেয়ার ব্যবহার করেন না। দাঁড়িয়ে নামায আদায় করেন! 

গতকাল এই ভাই (আল আমিন) পোস্ট করেছেন "আজ জুমার নামাজ পড়ার জন্য লোকাল মসজিদে গেলাম। মসজিদের এক কোনে এক যুবকের নামাজ পড়া দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। যুবকটি খুব সম্ভবত তিউনিশিয়ান বা মরোক্কান হবে। দূরারোগ্য রোগে যুবকের পা সোজা হয়ে আছে, ভাজ করে আমাদের মতো নামাজ আদায় করতে অক্ষম। তবুও যুবকটি দাড়িয়ে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করছে। পঙ্গু পা একদিকে ছড়িয়ে রুকু করছে, হাটু ভাজ না করেই সোজা উপুর হয়ে সিজদায় যাচ্ছে, আবার পা সোজা একদিকে ছড়িয়ে দিয়ে বৈঠক করছে, বৈঠক শেষে আবার হাতে উপর প্রচন্ড চাপ দিয়ে এক ঝটকায় দাড়িয়ে যাচ্ছে। যুবকটির নামাজ আদায় দেখছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম, আমরা যারা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ও যেনতেন ভাবে নামাজ আদায় করে আল্লাহ র কাছে জান্নাত কামনা করি, সেই মহান আল্লাহ না জানি এই পঙ্গু যুবকটির জন্য কত হাজার জান্নাত তৈরী করে রেখেছেন।" 

সম্ভবত ফাজায়েলে আমলে পড়েছিলাম যে, এক সাহাবী (সম্ভবত) চোখের সমস্যা হবার পর চিকিৎসকরা বলে দিলেন-এর চিকিৎসা সম্ভব। তবে আপনাকে কিছু দিন কোন উঁচু জায়গায় সিজদা করতে হবে। সাহাবী (রাঃ) বললেন, এক ওয়াক্ত নামাযও এইভাবে পড়িব না! 

এই হল আমাদের নামায প্রীতি। আফসোসের কথা হল আমাদের মধ্যে কাজ করে নামায ভীতি! আমাদের যত সমস্যা সব কিছু সমাধান হয়ে যেত (আমরা মনে করি) যদি দ্বীনের কোন বিধিবিধান মানতে না হত! 

এই যুগে যারা চিকিৎসা করেন তারা প্রচুর পড়াশুনা করেন এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। সন্দেহ নেই এই বিষয়েও যে, তারা আমাদের (যারা চিকিৎসক নই) চেয়ে চিকিৎসার বিষয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন। আমার প্রশ্ন হল, তারা কতজন নামাযের বুঝ রাখেন? একজন মুসলিমের জন্য নামায কত বড় ইবাদত, কতবড় হাতিয়ার- এই জ্ঞান তারা রাখেন কিনা। 

"ডাক্তার সাহেব, শরীর দুর্বল, কেমন জানি লাগে..." 

"রেস্ট নিবেন। নামায বাসায় পড়বেন।"

"ডাক্তার সাহেব, পায়ে মনে হয় ব্যথা পাইছি।"

"বসে নামায পড়বেন" 

স্যাক্রিফাইস আর স্যাক্রিফাইস। নামাযের সাথে স্যাক্রিফাইস। অথচ মুসলিমের যেকোন সমস্যার সমাধানের জন্য প্রথমেই নামাযের মাধ্যমে আল্লহর সাহায্য চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর আমাদের সাহায্যের হাতিয়ারের মধ্যেই ঘাপলা।

এখন আসি চেয়ার প্রসঙ্গে। চেয়ার বসে নামায পড়া বৈধ কি অবৈধ সেই আলোচনায় যাব না। সেটা গবেষকদের বিষয়। 

আমাদের মসজিদেও অসুস্থ ব্যক্তিদের চেয়ারের ব্যবস্থা আছে। তবে সমস্যা হল চেয়ার থাকাতে অনেক সুস্থ লোকও যেন অসুস্থ হয়ে যান! স্বাভাবিকভাবে নামায পড়লেন। তারপর জিকির-আসগার, অজীফার জন্য রাঝাধিরাজ, শাহেনশাহ্‌ এর মত চেয়ারে বসে গেলেন। যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ও মসজিদের আদবের সাথে বেমানান। 

কে সুস্থ কে অসুস্থ কে জানে? কে তাদের বোঝাবে? কোন কিছু বোঝাতে গেলে আমরা আবার ঝগড়া শুরু করে দেই। যদি বয়সে আমার বড় হয় তবে আমি ধমক খাব, আর আমার ছোট হলে আমিই ধমক দিব! আর মসজিদে হই হট্টগোল করা একদম ঠিক না। 

ইমাম সাহেব, মুয়াজ্জিন সাহেবের চোখে পড়ে কিনা কে জানে। তারা এই ব্যাপারে নিরব কি তাদের চাকুরীর ভয়ে নাকি অন্য কোন কারনে তাই বা কে জানে। 

আমি ধারনা করি বাংলাদেশের অনেক মসজিদের চিত্র একই। তাই আমি বলতে চাই মসজিদে চেয়ারের ব্যবহার সীমিত করা হোক। যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করা হোক।

No comments: