নগরীর কোতয়ালী মোড়ে নেমেই দেখি চারপাশ সব রঙিন। বুঝে ফেললাম মেলা শুরু হয়েছে। সাথে সাথে আফসোস জাগল মনে, আগে জানলে ক্যামেরা নিয়ে যেতাম। ক্যামেরা নেই তাতে কি হয়েছে ঘুরে ঘুরে সব কিছু দেখতে শুরু করলাম। পড়ন্ত দুপুর তখন। মেলা সবে জমতে শুরু করেছে। কোতয়ালী থেকে শুরু করে লালদিঘী হয়ে সেই আন্দরকিল্লা মোড় পর্যন্ত দোকানীরা তাদের বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসে পড়েছে।
আমি ঘুড়ে ঘুড়ে দেখতে লাগলাম আমার আগ্রহ জাগায় এমন কিছু মেলায় আছে কিনা। নতুন কিছু আছে কিনা। বাসায় কাজে লাগবে এমন কিছু দেখলেও নিয়ে নেব। গৃহস্থালির নানা টুকিটাকি মেলায় উঠেছে। যার যা প্রয়োজন কিনে নিচ্ছে। অবাক করার বিষয় হল অনেককেই দেখলাম পাইকারী হারে "ফুলের ঝাড়ু" কিনছে। এতকিছু থাকতে সবার হুট করে ঝাড়ুর প্রয়োজন পড়ল কেন কে জানে!
একদিকে বাঁশিওয়ালার বাঁশির সুর অন্যদিকে হরেক রকম মজাদার আচার, ভাজাপোড়া ও মিষ্টির সুবাস। হাতিঘোড়া আকৃতির মিছরি দেখে শ্বশুড়বাড়ির কথা মনে পড়ল। একদা শ্বশুরবাড়িতে এইগুলো খেয়েছিলাম কিনা। যে খাইয়ে দিয়েছিলে তাকে এত্তগুলা মিসকরা শুরু করলাম সাথে সাথে। তার জন্য কিছু নেব কিনা ভাবছিলাম। পরে আর নিলাম না। দেখি সামনে কি আছে!
যেতে যেতে টেরীবাজারের কাছাকাছি পৌছাতেই দেখি এক দোকান থেকে হুলস্থুল পাখির ডাক ভেসে আসছে। উকি মেরে দেখলাম 'বার্ড হুইসেল' বিক্রি হচ্ছে। মাত্র তিরিশ টাকা করে। আবারো ভাবলাম নিব কিনা। তারপর আবারো সামনে কি আছে ভেবে সামনের দিকে এগোলাম। কিন্তু সামনে আর কিছুই ছিল না। পরে মনটাই খারাপ হল। দুই একটা 'বার্ড হুইসেল' কেনাই যেত!
চিটাগাং এ কোন জামাত-শিবির নেই বোধহয়। একারনে মেলায় অনেক মেয়ে থাকলেও কোন "বস্ত্রহরন" এর ঘটনা ঘটে নি। আর ঘটলে প্রথমে বোধহয় আমিই কট খেতাম। এমনিতেই গালভর্তি দাঁড়ি, তারউপর গায়ে পাঞ্জাবী। পাঞ্জাবী পড়ে সফর তেমন একটা না করলেও আজকে শখ করে সম্বুন্ধির উপহার দেয়া পাঞ্জাবীটা গায়ে ছিল।
টেরিবাজারে কাজ সেরে আন্দরকিল্লা আসলাম। সেখান থেকে দুইটা বই কিনে বেড়োতেই দেখি আ জ ম নাসিরের প্রচারনার ট্রাক। আমি যাব রিয়াজউদ্দিন বাজার। বা পাশের নন্দন হয়ে লিংকরোডে জ্যাম লেগে গেছে তখন। এপাশে কোন খালি রিকশাও নেই। মনে মনে ধূর বলে হাটা দিলাম। কাছেই তো। কিন্তু নন্দন এসে খেই হারিয়ে ফেললাম। রাস্তা দু'ভাগ। কোনদিকে যাব? এদিকে খুব বেশি আশা হয় নি আগে। রিকশায় এসেছিলাম। এখন চিনতে পারছি না। বাঁ পাশের রাস্তায় ঢুকে গেলাম। একটু এগিয়েই মনেহল এটা ভুল রাস্তা। তারপর ঘুরে আবার আগের রাস্তায় হাটা শুরু করলাম। একটু পরেই রিয়াজউদ্দিন বাজার পৌছে গেলাম।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে এটা ওটা কেনা কাটা করলাম। পাঞ্চ মেশিন, স্টেপলার কিনে যখন পিন দিতে বললাম তখন দোকানী দুই প্যাকেট পিন বের করে দিলে। হাতে নিয়ে দেখি ভারতের জিনিস। সাথে সাথে ফেরত দিয়ে বললাম, অন্য কিছু দেন।
"ভাই এটা নেন। এটা ভাল।"
"এটা নিব না। অন্যকিছু নেই?"
"কেন ভাই? ইন্ডিয়ান দেখে কিনবেন না নাকি?"
"হুম। অন্যকিছু দেন।"
দোকানদারের চোখের দৃষ্টিতে তখন রাজ্যের বিস্ময়! এ আবার কোন পাগল। পরে চাইনিজ পিন বের করে দিল।
একদোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম চুলা জ্বালানোর জন্য গ্যাস লাইটার আছে কিনা। সাথে সাথে বের করে দিল।
"ইন্ডিয়ান?"
"জ্বী?"
"থাক লাগবে না..."
"কেন? ইন্ডিয়ান জিনিস ব্যবহার করেন না?"
"না। এর চেয়ে দেয়াশলাই কাঠি ব্যবহার করব।"
দোকানদের চোখ কপালে।
"বাংলাদেশী আছে?"
"না। বাংলাদেশী নাই।"
"তাহলে আর কি করা। দেয়াশলাই-ই ব্যবহার করতে হবে।"
বাংলাদেশী প্লাস্টিকের কিছু জিনিসপত্র নিলাম। কিছু নিলাম চিনের জিনিসপত্র। বাংলাদেশী পেলে বাংলাদেশীই নিতাম। বিদেশী পন্যে বাজার সয়লাব।
অন্যকিছু কিনব, তবুও ভারতীয় না কেনার চেষ্টা সবসময় করব। বাংলাদেশীদের এগুলো প্র্যাকটিস নেই। একদোকানে গিয়ে বাংলাদেশী শ্যাম্পু চাইতে দোকানদার আমাকে বলেছিল, আপনার প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ছয়শ লোকের মধ্যে আপনাকেই প্রথম দেখলাম বাংলাদেশী খুজছেন। আসলে বাংলাদেশী অনেকেই ব্যবহার করে না। তাই আমরাও মাল রাখি না।
কথা এটাই। বাংলাদেশী পন্য আমরা দোকানে গিয়ে খুজি না। টিভিতে যেটার এড দেয় সেটাই খুজি। খুশকির সমস্যা আমার বহুদিনের। হেড এন্ড সোল্ডার ব্যবহার করেছি, ব্যবহার করেছি ক্লিয়ার ম্যান ও সানসিল্ক। বাট শান্তি পাই নি। একদিন, দুইদিন মাথা ঠান্ডা থাকে, তৃতীয়দিন থেকে আবার যন্ত্রনা শুরু। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে যখন দেখি নখের নিচে কালো ময়লা তখন বুঝি ঘুমের মধ্যে মাথা চুলকিয়েছি। গোসল করতে গেলে ছুলে যাওয়া তালুতে পানি লাগতেই জ্বলুনি হত।
এখন ব্যবহার করছি সিলেক্ট প্লাস। স্কয়ারের পন্য। সপ্তাহে একবার দেই। আলহামদুলিল্লাহ সারা সপ্তাহ শান্তিতে থাকি। শুক্রবার শ্যাম্পু করলে পরের শুক্রবারে আবার দেই।
চেষ্টা থাকে বাংলাদেশী সাবান, বিস্কিট ও অন্যান্য হাবিজাবি ব্যবহার করার। আমার কাজ হল নিয়ত করা, চেষ্টা করা, দোয়া করা। বাকিটা আল্লাহর হাতে। আল্লাহর কাছে তৌফিক কামনা করি। আমাদের সবাইকে যেন আল্লাহ সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার তৌফিক দেন।
আমীণ!
আমি ঘুড়ে ঘুড়ে দেখতে লাগলাম আমার আগ্রহ জাগায় এমন কিছু মেলায় আছে কিনা। নতুন কিছু আছে কিনা। বাসায় কাজে লাগবে এমন কিছু দেখলেও নিয়ে নেব। গৃহস্থালির নানা টুকিটাকি মেলায় উঠেছে। যার যা প্রয়োজন কিনে নিচ্ছে। অবাক করার বিষয় হল অনেককেই দেখলাম পাইকারী হারে "ফুলের ঝাড়ু" কিনছে। এতকিছু থাকতে সবার হুট করে ঝাড়ুর প্রয়োজন পড়ল কেন কে জানে!
একদিকে বাঁশিওয়ালার বাঁশির সুর অন্যদিকে হরেক রকম মজাদার আচার, ভাজাপোড়া ও মিষ্টির সুবাস। হাতিঘোড়া আকৃতির মিছরি দেখে শ্বশুড়বাড়ির কথা মনে পড়ল। একদা শ্বশুরবাড়িতে এইগুলো খেয়েছিলাম কিনা। যে খাইয়ে দিয়েছিলে তাকে এত্তগুলা মিসকরা শুরু করলাম সাথে সাথে। তার জন্য কিছু নেব কিনা ভাবছিলাম। পরে আর নিলাম না। দেখি সামনে কি আছে!
যেতে যেতে টেরীবাজারের কাছাকাছি পৌছাতেই দেখি এক দোকান থেকে হুলস্থুল পাখির ডাক ভেসে আসছে। উকি মেরে দেখলাম 'বার্ড হুইসেল' বিক্রি হচ্ছে। মাত্র তিরিশ টাকা করে। আবারো ভাবলাম নিব কিনা। তারপর আবারো সামনে কি আছে ভেবে সামনের দিকে এগোলাম। কিন্তু সামনে আর কিছুই ছিল না। পরে মনটাই খারাপ হল। দুই একটা 'বার্ড হুইসেল' কেনাই যেত!
চিটাগাং এ কোন জামাত-শিবির নেই বোধহয়। একারনে মেলায় অনেক মেয়ে থাকলেও কোন "বস্ত্রহরন" এর ঘটনা ঘটে নি। আর ঘটলে প্রথমে বোধহয় আমিই কট খেতাম। এমনিতেই গালভর্তি দাঁড়ি, তারউপর গায়ে পাঞ্জাবী। পাঞ্জাবী পড়ে সফর তেমন একটা না করলেও আজকে শখ করে সম্বুন্ধির উপহার দেয়া পাঞ্জাবীটা গায়ে ছিল।
টেরিবাজারে কাজ সেরে আন্দরকিল্লা আসলাম। সেখান থেকে দুইটা বই কিনে বেড়োতেই দেখি আ জ ম নাসিরের প্রচারনার ট্রাক। আমি যাব রিয়াজউদ্দিন বাজার। বা পাশের নন্দন হয়ে লিংকরোডে জ্যাম লেগে গেছে তখন। এপাশে কোন খালি রিকশাও নেই। মনে মনে ধূর বলে হাটা দিলাম। কাছেই তো। কিন্তু নন্দন এসে খেই হারিয়ে ফেললাম। রাস্তা দু'ভাগ। কোনদিকে যাব? এদিকে খুব বেশি আশা হয় নি আগে। রিকশায় এসেছিলাম। এখন চিনতে পারছি না। বাঁ পাশের রাস্তায় ঢুকে গেলাম। একটু এগিয়েই মনেহল এটা ভুল রাস্তা। তারপর ঘুরে আবার আগের রাস্তায় হাটা শুরু করলাম। একটু পরেই রিয়াজউদ্দিন বাজার পৌছে গেলাম।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে এটা ওটা কেনা কাটা করলাম। পাঞ্চ মেশিন, স্টেপলার কিনে যখন পিন দিতে বললাম তখন দোকানী দুই প্যাকেট পিন বের করে দিলে। হাতে নিয়ে দেখি ভারতের জিনিস। সাথে সাথে ফেরত দিয়ে বললাম, অন্য কিছু দেন।
"ভাই এটা নেন। এটা ভাল।"
"এটা নিব না। অন্যকিছু নেই?"
"কেন ভাই? ইন্ডিয়ান দেখে কিনবেন না নাকি?"
"হুম। অন্যকিছু দেন।"
দোকানদারের চোখের দৃষ্টিতে তখন রাজ্যের বিস্ময়! এ আবার কোন পাগল। পরে চাইনিজ পিন বের করে দিল।
একদোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম চুলা জ্বালানোর জন্য গ্যাস লাইটার আছে কিনা। সাথে সাথে বের করে দিল।
"ইন্ডিয়ান?"
"জ্বী?"
"থাক লাগবে না..."
"কেন? ইন্ডিয়ান জিনিস ব্যবহার করেন না?"
"না। এর চেয়ে দেয়াশলাই কাঠি ব্যবহার করব।"
দোকানদের চোখ কপালে।
"বাংলাদেশী আছে?"
"না। বাংলাদেশী নাই।"
"তাহলে আর কি করা। দেয়াশলাই-ই ব্যবহার করতে হবে।"
বাংলাদেশী প্লাস্টিকের কিছু জিনিসপত্র নিলাম। কিছু নিলাম চিনের জিনিসপত্র। বাংলাদেশী পেলে বাংলাদেশীই নিতাম। বিদেশী পন্যে বাজার সয়লাব।
অন্যকিছু কিনব, তবুও ভারতীয় না কেনার চেষ্টা সবসময় করব। বাংলাদেশীদের এগুলো প্র্যাকটিস নেই। একদোকানে গিয়ে বাংলাদেশী শ্যাম্পু চাইতে দোকানদার আমাকে বলেছিল, আপনার প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ছয়শ লোকের মধ্যে আপনাকেই প্রথম দেখলাম বাংলাদেশী খুজছেন। আসলে বাংলাদেশী অনেকেই ব্যবহার করে না। তাই আমরাও মাল রাখি না।
কথা এটাই। বাংলাদেশী পন্য আমরা দোকানে গিয়ে খুজি না। টিভিতে যেটার এড দেয় সেটাই খুজি। খুশকির সমস্যা আমার বহুদিনের। হেড এন্ড সোল্ডার ব্যবহার করেছি, ব্যবহার করেছি ক্লিয়ার ম্যান ও সানসিল্ক। বাট শান্তি পাই নি। একদিন, দুইদিন মাথা ঠান্ডা থাকে, তৃতীয়দিন থেকে আবার যন্ত্রনা শুরু। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে যখন দেখি নখের নিচে কালো ময়লা তখন বুঝি ঘুমের মধ্যে মাথা চুলকিয়েছি। গোসল করতে গেলে ছুলে যাওয়া তালুতে পানি লাগতেই জ্বলুনি হত।
এখন ব্যবহার করছি সিলেক্ট প্লাস। স্কয়ারের পন্য। সপ্তাহে একবার দেই। আলহামদুলিল্লাহ সারা সপ্তাহ শান্তিতে থাকি। শুক্রবার শ্যাম্পু করলে পরের শুক্রবারে আবার দেই।
চেষ্টা থাকে বাংলাদেশী সাবান, বিস্কিট ও অন্যান্য হাবিজাবি ব্যবহার করার। আমার কাজ হল নিয়ত করা, চেষ্টা করা, দোয়া করা। বাকিটা আল্লাহর হাতে। আল্লাহর কাছে তৌফিক কামনা করি। আমাদের সবাইকে যেন আল্লাহ সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার তৌফিক দেন।
আমীণ!
No comments:
Post a Comment