Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Monday, July 27, 2015

বাটপারীতে নোবেল

গ্রামীণফোনের যে বা যারা পলিসি মেকার বা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে তাদের সাথে দেখার করার একটা শখ ইদানিং মনের ভিতর জেগে উঠেছে। লোকটা আর কিছু বুঝক বা না বুঝুক, ব্যবসা কাকে বলে সেটা অন্য সব টেলিফোন অপারেটরদের থেকে অনেক অনেক বেশি বোঝে। এমন লোকের সাক্ষাৎ পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার!
গ্রামীণ ছাড়া যতগুলো মোবাইল অপারেটর আছে গ্রামীণের মত তাদেরও বিভিন্ন মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ আছে। সবারই মাসভিত্তিক প্যাকেজ আছে। সবার মত গ্রামীণেরও মাস ৩০ দিনে ছিল। কিন্তু এখন এটা ২৮ দিনে। প্রিপেইড গ্রাহদের জন্য এখন গ্রামীণের মাসিক প্যাকেজ হল ২৮ দিনের। সুতরাং ইন্টারনেট প্যাকেজের ক্ষেত্রে গ্রামীণের ১ মাস = ২৮ দিন।

অনেকদিন গ্রামীণের নেট প্যাকেজ ব্যবহার করেছি। আগে ত্রিশ দিনই ছিল। ২৮ দিন করাতে খুবই বিরক্ত হয়েছি। কিন্তু একটু চিন্তা করতেই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি।
ফ্রেব্রুয়ারী বাদ দিলে বছরে বাকি থাকে এগার মাস। প্রতিমাসে ২ দিন করে কমাতে এগারো মাসে কমল ২২ দিন। এরই মধ্যে ৭টি মাস হল ৩১ দিনে। ২২ এর সাথে ৭ যোগ করে পাই ২৯। গ্রামীণের হিসেবে আরো একটি বাড়তি মাস!
বাহ! কি চমৎকার! এখন থেকে ১২ মাসে বছর নয়। ১৩ মাসে বছর। গ্রামীণকে আরো সনির্বদ্ধ অনুরোধ হইল তারা যেন ব্যাংকগুলোকে/সরকারকে বলে তের মাসে বছর পাশ করিয়ে নেয়। আগামী বছর থেকে ক্যালেন্ডারের পাতায় যেন ১৩ টি মাস দেখতে পাই। ডিসেম্বেরের সাথে মিল রেখে ১৩ তম মাসের নাম গ্রামীন্বর রাখা যেতে পারে।
তাই যে লোকটি গ্রামীনের লক্ষ-কোটি টাকা মুনাফা এনে দিল তার সাথে তো আমি দেখা করতে চাইতেই পারি। সফল ব্যবসায়ী হিসেবে তাকে শান্তিতে নোবেল দেয়ারও দাবি জানাই।
প্লীজ গ্রামীণ! ভদ্রলোককে আমার সাথে দেখা করিয়ে দাও। প্লীইইইইইজ...

আমাদের আরাফাত ভাই

আরাফাত ভাইয়ের বয়সটা বেড়েই চলেছে। ভয়ে হিসেব করেন না। না জানি কত হয়েছে! তবে মনে মনে জানেন, তার পরিবারের লোকজনও জানে যে, তার বয়স ৩০ পেড়িয়ে গেছে আরো অনেক আগেই। দুঃখের বিষয় হল, আরাফাত ভাইয়ের বিয়ে করা হয় নি।

ছাত্র জীবনে লেখাপড়া বেশি ভাল লাগত না। তাই তেমন কোন ডিগ্রীও নেই তার। বাবা সরকারী চাকুরী করেন, সরকারী বাসায় থাকেন-তাই পরিবারের বড় ছেলে হয়েও খুব বেশি দায়িত্ববোধ কাঁধে নেন নি। তাবলীগ তাবলীগ করে কতদিকে সফর করেছেন! বাসা থেকে কাজ করার জন্য সবসময় চাপ দিত। উনি মনের মত কাজ পান না।

বিয়ের বয়স পার হয়ে যায়, চাকুরী মেলে না। বহু কাঠ-খড় পুড়িয়ে অবশেষে একটা চাকুরী উনি পেলেন। সেটাও সরকারী চাকুরী-ই। এখানে বাসা আছে। এবার তাহল বিয়ে করতে হয়।

বিয়ে করতে যেয়ে এবার আর কোন পাত্রীই পাওয়া যায় না। উনার বয়সী তো বটেই, আশেপাশের বয়সী যত মেয়ে আছে সবার তো কবেই বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছোট বিয়ে করতে চাইলে ১০-১২ বছরের ছোট হয়ে যায়। মেয়ের ফ্যামিলি রাজি হয় না। এ কোন মুসিবত!

মুশকিল যেমন আছে, আসানও তেমন আছে। আরাফাত ভাইয়ের এই বিপদে এগিয়ে এলেন তারই এক সাথী ভাই। লম্বা সফরে ঐ ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল। সফর শেষ হবার পরও সেই ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ ছিল। কাকতালীয় ভাবে আরাফাত ভাই যেখানে চাকুরী পান মুশফিক সেখানে আগে থেকেই চাকুরী করে। পাত্রী মুশফিকেরই ছোট বোন।

সুমী সবে এইচ এস সি পাশ করেছে। রেজাল্টও ভাল। সুমীর ইচ্ছা আরো লেখাপড়া করার। কিন্তু তার ফ্যামিলির ইচ্ছা অন্যরকম। মুশফিকের আছে আরাফাত ভাইয়ের কথা শুনে সোবহান সাহেব একফাঁকে এসে আরাফাত ভাইয়ের সাথে কথা বলে গেলেন। পাত্র হিসেবে আরাফাত ভাইকে তার খুবই পছন্দ হল। কৌশলে আরাফাত ভাইয়ে পৈত্রিক ঠিকানাটাও সোবহান সাহেব জেনে নিলেন।

সোবহান সাহেব একদিন সময় করে আরাফাত ভাইয়ের বাবা আশরাফ সাহেবের সাথে দেখা করতে আসলেন। আশরাফ সাহেবের সাথে কথা বলেও সোহবান সাহেবের খুব পছন্দ হল। তিনি তাদের সাথে কথা বার্তা একরকম পাকা করেই আসলেন। এখন শুধু তাদের মেয়ে পছন্দ হলেই হল।

সুমী বা আরাফাত ভাই এইসবের কিছুই জানে না। আশরাফ সাহেব একদিন তার স্ত্রীকে নিয়ে সোবহান সাহেবের বাড়িতে আসলেন। সুমীর সাথে পরিচয় করিয়েও দিলেন। কথা বার্তায় সুমী বুঝতে পারল তার বিয়ের কথা বার্তা চলছে। সুমী আশরাফ সাহেবদের সাথে তেমন কোন কথা না বলে গুমোট হয়ে রইল।

মুশফিকের কাছে আরাফাত ভাইয়ের বিবরন শুনে সুমী আরো চিমসে গেল। রাতে শুরু হল তার কান্না। খাওয়া দাওয়াও বন্ধ। সোবহান সাহেব বিচলিত হলেন না। তিনি মেয়েকে সাফ জানিয়ে দিলেন, এখানেই তাকে বিয়ে দেয়া হবে। তিনি কথা দিয়ে ফেলেছেন। মিসেস সোবহান এসে মেয়েকে অনেক বোঝালেন। সুমী উল্টোদিকে শুয়ে শুধু কাদছে। রাতে একবার সুইসাইড করার চেষ্টা করল সুমী। কিন্তু ওড়না ছিড়ে যাওয়ায় কোমড়ে ব্যথা পাওয়া ছাড়া আর কোন লাভ হল না।

আরাফাত ভাইকে ফোন দিয়ে আশরাফ সাহেব শুধু এতটুকুই বললেন, পাত্রী পাওয়া গেছে, বাড়ি এসো।
আরাফাত ভাই বাড়ি এসেই শোনেন আগামী শুক্রবার তার বিয়ে। আজ বাদে কাল বৃহস্পতি, তারপরই শুক্রবার!

আরাফাত ভাই মনে মনে প্রমাদ গুনলেন। অবস্থাদৃষ্টেতো মনে হচ্ছে উনার মতামতের কোন গুরুত্ব দেয়া হবে না। থাক, মেয়ের ফ্যামিলি, মেয়ে রাজি থাকলেই হয়। মিসেস আশরাফ এই ব্যাপারে ছেলেকে আশ্বস্থ করলেন।

যথাসময়ে তাদের বিয়ে হয়ে গেল। সুমীকে নিয়ে আসা হল সেদিনই। সারাপথ সুমী কারো সাথে কোন কথা বলেনি। খাওয়া-দাওয়াও করেনি। বিস্ময়ের ব্যাপার হল কান্নাকাটিও করেনি।

বাসর ঘরে যখন আরাফাত ভাই ঢুকলেন তখন তার পড়নে ভারী পাঞ্জাবী। সারাদিনের ধকলে ক্লান্তও বটে। এদিকে চারদিক ফুলের গন্ধে ম ম করছে। আরাফাত ভাইয়ের মাথা ধরে গেছে।

ঘরের ঢোকার সময় সালাম দেয়ার দরকার ছিল। টেনশনে ভুলে গিয়েছেন। এখন কি দিবেন? ইতস্তত করে দিয়েই ফেললেন। সেই সালামের জবাব আরাফাত ভাইয়ের কান পর্যন্তই পৌছাল না।

আগে গোসল দেয়া দরকার। ড্রয়ার থেকে টান দিয়ে লুঙ্গি আর গামছে নিয়ে আরাফাত ভাই বাথরুমে ঢুকে গেলেন। কোমড়ে গামছা পেচিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন শাওয়ারের নিচে। টানা দশমিনিট ভেজার পর শরীর যেন একটু ঠান্ডা হল। এরপর সাবান আর শ্যাম্প মেখে আবারো দশমিনিট শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আরাফাত ভাই একটু ধাতস্থ হলেন।

পাঞ্জাবীটা ঘামে চিট চিট করছে। পড়তে আর রুচি হচ্ছে না। আরাফাত ভাই লুঙ্গি আর পাতলা একটা গ্যাঞ্জি পড়ে বেড়িয়ে আসলেন। গ্যাঞ্জির উপর দিয়ে হালকা ভুড়ির ভাব লক্ষ করে আরাফাত ভাই একটু বিব্রত হয়ে পড়লেন।

সুমী তখনো পাথরের মূর্তির মত স্থির হয়ে বসে আছে। আরাফাত ভাই মৃদু একটু কাশলেন। সুমীর তাতে কোন ভাবান্তর হল না। আরাফাত ভাই নার্ভাস হয়ে গেলেন। তাবলীগ করার কারনে তিনি কখনই মেয়েদের ধারা-কাছে যান নি। আর মেয়েরাও তাকে দেখলে অন্যদিকে সরে যেত। কাজেই নিতান্তই অপরিচিত একজন মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলবেন ভেবেই পেলেন না।

উপায়ান্তর না দেখে আরাফাত ভাই জায়নামাজে দাড়িয়ে গেলেন। নামায শেষে নাতিদীর্ঘ দোয়া করলেন। এবার যেন একটু আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেন।

ভাবলেন আমার এতক্ষন যেমন লাগছিল মেয়েটারও তো তেমন লাগতেই পারে। তিনি খড়খড় করে গলাটা পরিষ্কার করে বললেন,

"ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিন। ভাল লাগবে..."

সুমী চুপ।

আরেকবার চেষ্টা করা যাক।

"নাকি কিছু খাবেন? ক্ষুধা লাগে নি?"

> আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।

সুমীর তীক্ষ্ণ অথচ মৃদু গলাটা আরাফাত ভাইকে যেন চাবুকের মত আঘাত করল। উনি বুঝতে পারলেন উনি জীবনের সম্ভবত সবচেয়ে বড় ভুলটা করে ফেলেছেন। এই মেয়েতো বিয়েতে রাজি ছিল না। নিশ্চয়ই তার বাবা জোর করে তাকে বিয়ে দিয়েছে।

ইস! কাজটা একদম ভাল হয়নি। আমিতো একটা গাধা, আগেই কেন ভালভাবে খোজ নিলাম না!

প্রচণ্ড আফসোসে আরাফাত ভাই জায়গায় দাড়িয়েই নিজের অজান্তে মাথা নাড়তে লাগলেন।



বিপদে পড়লে আরাফাত ভাইয়ের মাথা খুব দ্রুত খেলে না। স্লো মোশনে খেলে। অন্যেরা যে বিপদ থেকে ফটাফট উঠে যায় সেখানে উনি উঠেন ঢিমেতালে। বাইরে থেকে কেউ দেখলে ভাববে উনার গরজ নেই। আসলে তা নয়। এই মুহূর্তেও আরাফাত ভাইয়ের মাথা ভিতরে ভাবনার ঝড় বইছে।

কেন আমাকে মেয়েটা পছন্দ করবে না? কেন বিয়েতে রাজি হয়নি?

আমার বয়স বেশি!

আর?

মেয়েটার হয়ত পড়াশোনার ইচ্ছা ছিল। বিয়ের ফলে সে ধরেই নিয়েছে তাকে আর পড়তে দেয়া হবে না।

আর?

মেয়েটার হয়ত বিভিন্ন শখ-আহ্লাদ ছিল, বিয়ে করার কারনে ধরেই নিয়েছে স্বামী এবং শ্বশুড়বাড়ির লোকজন সেগুলো পূরণ হতে দিবে না।

তাহলে এই মুহূর্তে আমি কি করতে পারি?

যেভাবেই হোক, মেয়েটাকে বোঝাতে হবে আমি তার পক্ষের লোক। আর আমি যেটা আশংকা করছি যদি সেগুলোই হয় তবে আমার বয়স বেশি-এই ব্যাপারটাতে তো আমার কিছু করার নেই। আমি কেন, কারোরই কিছু করার নেই। সো, এই পয়েন্ট বাদ। পড়াশোনা? ওকে, যতদূর করতে চায় আমি বাধা দিব না। আর শখ? কি শখ আমি কিভাবে জানব?

হয়ত বিড়াল পুষে, হয়ত ফুলের বাগানের শখ, হয়ত ঘুড়তে পছন্দ করে--আচ্ছা যাই হোক। পারিবারিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বাইরে না গেলে আমি আপত্তি করব না। অবশ্য এই বয়সের একটা মেয়ের পারিবারিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বাইরে তেমন কিছু থাকারও কথা নয়।

আচ্ছা, সে কি সারাদিন না খেয়ে ছিল? এই বয়সের মেয়েরা রাগ করলে তো খাওয়া-দাওয়া করার কথা না। আরেক ঝামেলা, কথাবার্তার যে ঝাজ! খাওয়ার কথা বললে আবার গ্লাস দিয়ে ঢিল দেবে নাতো?

দিলে দিক, আমার বউ, তার ভাল-মন্দ সব কিছুর দায়িত্ব এখন আমার। আমাকেই সামলাতে হবে।

আরাফাত ভাই বিছানার এক কোনায় বসলেন।

"দেখুন, আমি বুঝতে পেরেছি আপনি এই বিয়েতে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি।" -মৃদু গলায় শুরু করলেন আরাফাত ভাই। "আসলে আমি জানতাম যে, মেয়ে, মেয়ের পরিবার-এই বিয়েতে রাজি। আমাকে সম্ভবত ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। আমি কখনই মেয়ের অসন্তুষ্টির সাথে বিয়ে চাইনি। আমার বয়স বেশি। লেখাপড়াও তেমন একটা করিনি। তাই অনেক খোজাখুজির পরও আমার সমমানের পাত্রী পাওয়া যাচ্ছিল না। যখন শুনলাম মেয়ের ফ্যামিলি রাজি তখন অন্যকিছু খোজ নেবার প্রয়োজন মনে করিনি। এমনকি পাত্রীও দেখিনি। বিয়েতে মত দিয়েছি। কোন ভাবে যদি বুঝতে পারতাম এমন কিছু ঘটবে তবে হাজারবার ভাবতাম।"

"বিয়ে, সংসার নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি বিয়ের আগে।"-একটু দম নিয়ে আবারো শুরু করলেন আরাফাত ভাই। "আমি বিশ্বাস করি, মাঝি ও বৈঠার সমন্বয়ের মাধ্যমেই একটি নৌকা ভালভাবে চলতে পারে। মাঝি আছে বৈঠা নাই, নৌকা অচল। আবার বৈঠা আছে মাঝি নেই-তাতেই কোন লাভ নেই। কাজেই আপনার আমার সংসার যদি হয় তবে দু'জনের সম্মতিতেই হবে। বিয়ে যেহেতু হয়েই গিয়েছে সেহতু আমি ধরেই নিচ্ছি সংসার আমাদের করতে হবে। আমি নিজে পড়াশুনা বেশি করিনি। কিন্তু আমি চাই আপনি আপনার পড়াশুনা শেষ করুন। আমার বাড়ি থেকে একটু দূরেই সরকারী কলেজ আছে। আপনি চাইলে কালই সেখানে আপনাকে ভর্তি করে দেব........"

>আমার পানির পিপাসা পেয়েছে। --আরাফাত ভাইয়ের কথায় বাধা পড়েছে। আরাফাত ভাই স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললেন। মনে হচ্ছে প্রাথমিক ধাক্কাটা কেটে গিয়েছে।

আরাফাত ভাই নিজেই উঠে পাশের টেবিল থেকে পানি ও সেমাইয়ের বাটি হাতে নিয়ে আসলেন।

"নিন পানি নিন। সেমাইটাও একটু খেয়ে দেখুন।"

"জানেন, আমার বন্ধু-বান্ধব প্রতিবছর এদিক সেদিক বেড়াতে যায়। বিভিন্ন জায়গায় তারা গিয়েছে। বান্দরবান, রাঙামাটি, বক্সবাজার, সুন্দরবন, জাফলং... আমি একবারও তাদের সাথে যাই নি। সবসময় ভেবেছি যাব, তবে বিয়ের পর যাব। খুব মজা হবে তাই না?"

>চুপ করেন। আপনি বড় বেশি কথা বলেন।

ধমক খেয়ে আরাফাত ভাই চুপসে গেলেন। এই মেয়ে দেখা যায় কঠিন চীজ। তবে আরাফাত ভাই হতাশ হলেন না। তিনি খেয়াল করলেন, সুমীর গলায় আগের কাঠিন্য আর নেই। কার কাছ থেকে যেন শুনেছেন যেই মেয়ে যত কঠিন, সেই মেয়ের ভালবাসার ক্ষমতাও তত বেশি। কথাটা তিনি বিশ্বাসও করেন নি, অবিশ্বাসও করেন নি। দেখা যাক কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়।

আরাফাত ভাই লক্ষ্য করলেন ইতোমধ্যে সুমী সেমাই শেষ করেছে। তিনি আরেকটা বাটিতে কিছু ফল কাটা ছিল সেগুলোও নিয়ে আসলেন। দু'টুকরো আপেল হাতে নিয়ে নিজেই চিবুতে শুরু করলেন। ইচ্ছা করছিল একটুকরো সুমীকেও খাইয়ে দেন। কিন্তু অত সাহস আরাফাত ভাই করতে পারলেন না। সমস্যা নেই, বেঁচে থাকলে আরাফাত ভাইয়ের ইচ্ছা পূরণ হবে।

সুমী অবশ্য ফলের বাটির দিকে হাত বাড়ালো না। সেমাই আর পানি খেয়ে আবারো মূর্তি হয়ে গিয়েছে। আরাফাত ভাই দীর্ঘনিশ্বাস গোপন করে বললেন,

"আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি বারান্দার সোফায় ঘুমাবো।"

সুমী কিছুই বলল না।

সোফায় শুয়ে আরাফাত ভাই উদাস মনে আকাশের তারা গুনতে লাগলেন। ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন। ভাবছেন সুমীর মন তিনি জয় করতে পারবেন তো? তবে আরাফাত ভাই আশাবাদী। যাই ঘটুক তিনি নিরাশ হবেন না। যেটা হবে, সেটা ভালই হবে।

সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে আরাফাত ভাইয়ের চোখ মুদে এল।

মুক্ততদন্ত-২

ধর্মদ্রোহী বলে থাকে,
“ইতিহাস থেকে জানা যায় মুহাম্মদ সা: ধর্মগুরু ছিলেন ওয়ারাকা বিন-নোফেল, যে কিনা ছিলেন ইহুদি- খ্রিস্টানদের ধর্মপুস্তক তাওরাত, জবুর ও ইনজিল কেতাবে বিশেষজ্ঞ । কোরানে তাওরাত, জবুর ও ইনজিলের সাথে অনেক মিল থাকার এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কারণ”
এই প্রসঙ্গে আমি কিছু বলব না। ইতিহাস ও প্রামাণ্যগ্রন্থগুলো কি বলে সেটাই আগে দেখে নেই। ক্যারেন আর্মস্ট্রং তার গ্রন্থে লিখেন,
“মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর কাজ নিতে (খাদিজা রাঃ এর ব্যবসার কাজ-লেখক) সম্মত হন এবং দুঃসাহসী অভিযাত্রায় পথে নামেন। সফরসঙ্গী জনৈক মায়সারা অসংখ্য অদ্ভূত ব্যাপার লক্ষ্য করেছিল, যথাযথভাবে তা খাদিজাকে অবহিত করেছে সে। এক মংক, দাবী করেছিল সে, তাকে এক পাশে ডেকে নিয়ে বলেছে মুহাম্মদ (সঃ) সেই পয়গম্বর আরব বিশ্ব যাঁর পথ চেয়ে আছে। পরে সবিস্ময়ে জানিয়েছিল সে, দুজন ফেরেশতা তাকে প্রখর সূর্য্যের রশ্মি থেক মুহাম্মদ (সঃ) ছায়া দিতে দেখার কথা। এসব ঘটনা শোনার পর খাদিজা সরাসরি চাচাত ভাই ওয়ারাকা ইবন নওফল, অর্থাৎ হানিফের সঙ্গে পরামর্শ করতে যান। নওফল খৃস্টধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন এবং অন্যান্য ঐশীগ্রন্থ পাঠ করেছিলেন। ওয়ারাকাও আরব বিশ্বের পয়গম্বরের জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিলেন, খাদিজার কাছে খবর পেয়ে চিৎকার করে ওঠেন তিনিঃ ‘একথা যদি সত্যি হয়, খাদিজা, মুহাম্মদই নিঃসন্দেহে আমাদের জাতির পয়গম্বর’”
[অনুবাদ, মুহাম্মদ : মহানবীর (সঃ) জীবনী, লেখকঃ ক্যারেন আর্মস্ট্রং, পৃষ্ঠাঃ ৯০- ৯১]
প্রথমবার রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট ওহী আসার পর তিনি যখন খাদিজা (রাঃ)র কাছে ছুটে যান ভীত অবস্থায় তখন
“দ্রুত তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন খাদিজা। ঈশ্বর এত নিষ্ঠুর আর খেয়ালী আচরণ করেন না। ঈশ্বর যেভাবে চান ঠিক সেভাবে জীবন যাপনের প্রয়াস পেয়েছেন মুহাম্মদ (সঃ) এবং প্রতিদানে ঈশ্বর কখনও তাঁকে হতাশ হতে দেবেন না”
“স্বামীকে আরও আশ্বাস দেয়ার জন্য খাদিজা তার চাচাত ভাই ওয়ারাকার সঙ্গে পরামর্শ করার প্রস্তাব দেন। ঐশী গ্রন্থ সম্পর্কে জ্ঞান ছিল ওয়ারাকার, অভিজ্ঞ মতামত দিতে পারবেন তিনি। ওয়ারাকার অবশ্য কোন সংশয়ই ছিল না। ‘সুসংবাদ!’ চট করে বলে উঠেছেন তিনিঃ ‘তুমি যদি আমাকে সত্যি বলে থাক, হে খাদিজা, ওর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ নামুসের আগমন ঘটেছে, বহু আগে মোজেসের কাছে যার আবির্ভাব ঘটেছিল, আর হ্যাঁ, তিনি তার জাতির পয়গম্বর। পরে, কা’বায় মুহাম্মদের (সঃ) সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে এই ক্রিশ্চান পণ্ডিত একমাত্র ইশ্বরের নতুন পয়গম্বরের কাছে ছুটে গিয়ে তাঁর কপালে চুমু খেয়েছিলেন”
[অনুবাদ, মুহাম্মদ : মহানবীর (সঃ) জীবনী, লেখকঃ ক্যারেন আর্মস্ট্রং, পৃষ্ঠাঃ ৯৭]
বুখারী শরীফ পর্যালোচনা করলে আমরা এইসকল ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারি। সংক্ষিপ্ত হোক বা বিস্তারিত মূল কথা এটাই যে, দুইবারই রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে তার স্ত্রী খাদিজা (রাঃ) ওয়ারাকার সাথে পরামর্শ করতে নিয়ে যান। ওয়ারাকার যদি নবী (সাঃ)এর ধর্মগুরু হতেন তাহলে স্বাভাবিক যুক্তি বলে তিনি নিজেই ওয়ারাকার কাছে ছুটে যেতেন। তাছাড়া ওয়ারাকার ছিলেন খাদিজার (রাঃ) চাচাতো ভাই, রসূল (সাঃ) এর নয়। কাজেই ধর্মগুরু হবার দাবির অসাড়তা আরো গভীর ভাবে প্রমাণিত হয়। আর ওয়ারাকা বিন নওফল রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জাতির পয়গম্বর বলে উল্লেখ্য করেছেন। কাজেই তিনি অন্যের কাছে ধর্মশিক্ষা নেবেন না, বরং অন্যরাই তার কাছ থেকে ধর্মশিক্ষা নিবে। স্বাভাবিক যুক্তি এটাই বলে।
এই প্রসংগে আরো কিছু কথার অবতারনা করা যাক।
“খাদীজা (রাঃ) এইরূপে সান্ত্বনা দিয়া হযরতকে লইয়া বংশের বৃদ্ধ মুরব্বী চাচাত ভাই অরাকা ইবনে নওফেলের নিকট গেলেন। অরাকা সত্যান্বেষী সুজ্ঞানী লোক ছিলেন, অতি বৃদ্ধ হওয়ায় অন্ধ হইয়া গিয়াছিলেন। জাহেলিয়াতের যমানাতেই তিনি সত্য ধর্মের তালাশে সিরিয়া দেশে যাইয়া ঈসায়ী ধর্মীয় এক খাঁটি আলামের নিকট হইতে খাঁটি ঈসায়ী ধর্ম গ্রহন করিয়াছিলেন। তিনি এবরানী ভাষা লিখিতেন এবং এবরানী হইতে ইঞ্জিল কিতাবের আরবী তরজমাও করিতেন। তাহাতে পূর্বের আসমানী কিতাবসমূহে তাঁহার দক্ষতা ও পারদর্শিতা ছিল। তিনি নবীগনের প্রতি অহী ও অহীবাহক ফেরেশতা জিব্রিলের বিষয় জানিতেন”
[বোখারী শরীফ, পৃষ্ঠা-১০, ১ম খন্ড, হামিদিয়া লাইব্রেরী]
লক্ষ করার বিষয় এই যে, উপরোক্ত বিবরনীর মাধ্যমে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে অরাকা বিন নওফেল ভালভাবেই পড়তে-লিখতে জানতেন। এমনকি তিনি ভিন্ন ভাষা হতে আরবী ভাষায় ইঞ্জিলের তরজমা করেছেন। অথচ রসূলুল্লাহ (সাঃ) লেখাপড়া জানতেন না। এই প্রসঙ্গে ক্যারেন আর্মস্ট্রং তার গ্রন্থে লিখেন,
“মুহাম্মদ (সঃ)-এর লেখা-পড়া সম্পর্কে প্রাথমিক সূত্রে কোন উল্লেখ মেলে না। চিঠি লেখার প্রয়োজন হলে তিনি তা শ্রুতিলিখন করাতেন এবং আলীর মত সাক্ষর কেউ তা লিপিবদ্ধ করতেন। পড়া শোনা জানার ক্ষমতা সারাজীবন গোপন রাখতে এক বিরাট প্রতারণার প্রয়োজন হত। এটা তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিপন্থী; তাছাড়া, এরকম একটা ব্যাপার চালিয়ে যাওয়া কঠিন ছিল, কেননা আপন গোত্রের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জীবন যাপন করেছেন তিনি”
[অনুবাদ, মুহাম্মদ : মহানবীর (সঃ) জীবনী, লেখকঃ ক্যারেন আর্মস্ট্রং, পৃষ্ঠাঃ ১০০]
আর কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। গুরু হলেন একাধিক ভাষায় পারদর্শী; অথচ তার শিষ্য একেবারেই নিরক্ষর!
যুক্তির কি ছিরি!

Saturday, July 11, 2015

যাকাত ট্রাজেডী


লোক দেখানোর কথা না হয় বাদই দিলাম। যাদের নিয়ত ভাল তাদের কথাই বলি। হ্যা, যাকাতের ব্যাপারে তাদের কথা বলি। আমাদের সামাজিক অবকাঠামো এমন যে, কোন কিছু চাইলেই করা যায় না। আপনি যদি চানও সঠিকভাবে কোন কিছু করতে, কতটুকু পারবেন কে জানে! 

আমি যতদূর জানি, যাকাতের উদ্দেশ্য হল ধনী-গরীবের ব্যবধান কমানো। যাকাতের (বা যেকোন দানের) প্রধান হক্বদার আত্মীয়-স্বজন, তারপর পাড়া প্রতিবেশি, তারপর অন্যরা। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী বাদ দিয়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গিয়ে পথশিশু বা বৃদ্ধাশ্রমের বয়োবৃদ্ধদের সেবার কোন যৌক্তিকতা দেখি না। সমালোচনা করা আমার এই কথার উদ্দেশ্য না। শুধুমাত্র ক্রম উল্লেখ্য করতে চেয়েছি। 

এই রমজানে বেশিরভাগ মুসুল্লী যাকাত আদায় করে থাকেন। রমজান মাসে যেকোন ফরজ আমল অন্যমাসের ৭০ টি ফরজের সমান। যেকোন নফল অন্যমাসের ১ টি ফরজের সমান। কাজেই বলা যায় রমজান মাসে যাকাত আদায় করলে অন্যমাসের থেকে ৭০গুন বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে ইন শা আল্লাহ। 

আশেপাশে অসংখ্য যাকাত ফান্ড। মুসলিম মূল আক্বীদার যাকাত ফান্ডতো আছেই, সেই সাথে রয়েছে আওয়ামীলীগের যাকাত ফান্ড, বিএনপির যাকাত ফান্ড, মাজারীদের যাকাত ফান্ড! জামাতের আছে কিনা কে জানে? থাকতেই পারে। 

আর সরকারী যাকাত ফান্ডতো আছেই। সরকারী যাকাত ফান্ডে যাকাতের টাকা বা কোন ধরনের ডোনেশন দিলে ইনকাম ট্যাক্স রিবেটও পাওয়া যায়। সুবিধাই সুবিধা! 

তবে যেকোন যাকাত ফান্ডের অসুবিধা একটাই। যাকাতের টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে বোঝার উপায় নেই। কখন খরচ হচ্ছে সেটাও জানা যাচ্ছে না। হয়ত আপনি টাকা দিলেন আজকে, নিয়ত করলেন আজকেই আমার টাকাটা খরচ হয়ে যাক। কিন্তু কোন ফান্ডে ধরা যাক যদি ১০ লাখ টাকা উঠে তবে সেই টাকা ১ দিনেই খরচ হয় না। ধীরে ধীরে খরচ হয়। আপনার টাকা কখন খরচ হল সেটা বোঝার কোন উপায় দেখি না। 

প্রশ্ন করতে পারেন ফান্ডে দেয়ার দরকার কি? নিজ হাতে গরীবের হাতে তুলে দেব। ব্যাপারটা হয়ত ভাবা সহজ, বাস্তবায়ন এত সহজ নয়। ধরাযাক, আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন। আপনার বস একটা যাকাত ফান্ড চালায়। আপনার বস যখন আপনাকে চিঠি ধরিয়ে দেবে তখন উপায় থাকবে কি? 

আপনার এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেব আপনাকে চিঠি ধরিয়ে দিলেন। এলাকার সরকারদলীয় বড়ভাই তার যাকাত ফান্ডের জন্য আপনাকে চিঠি দিলেন। অমুকের মেয়ের বিয়ে ঈদের পর, তাকে দিতে হবে। বিগত সময় মেসে ছিলেন, মেসের বাবুর্চি-বয় আপনার মুখে দিকে তাকিয়ে আছে...... (ইত্যাদি ইত্যাদি) 

আপনার যাকাতের টাকা ভাগ হয়ে যাচ্ছে। ভেবেছিলেন আত্মীয়কে দেবেন যেন সে সাবলম্বী হতে পারে। তার ভাগের টাকা কম পড়ে যাচ্ছে। টাকার পরিমান ভাল হলে হয়ত সে জীবিকার কোন উপায় করতে পারত। কম টাকা তার হাতে যাওয়া মাত্র সে খরচ করে ফেলবে। ঈদের সময়, তার খরচ হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। পরিণামে যে গরীবই থেকে যাচ্ছে। তার অবস্থা কোন উন্নতি হচ্ছে না। পরের সে আবার যাকাতের টাকার মুখাপেক্ষী হয়ে যাচ্ছে। বার বার হয়ত তাকে দেয়াও যাচ্ছে না। কারন গরীব আত্মীয় একাধিক থাকতে পারে। তাদেরও হক আছে। তারাও আপনার মুখ চেয়ে আছেন। 

বলা যেতে পারে, যাকাতের টাকা ফান্ডে দিব না। এমনি দানের টাকা দিব। ঈদের সময় অতিরিক্ত টাকা ম্যানেজ করাই মুশকিল। অন্যমাসে যা খরচ হয়, ঈদের সময় খরচ হয় প্রায় তার দ্বিগুন। কাজেই দানের টাকা হাতে থাকবে এমন গ্যারান্টি কি? কোন গ্যারান্টি নেই। 

ইমাম সাহেব গতকাল জুমাবারের খুতবায় বলতে ছিলেন, "হাদীস শরীফে আসছে, 'উপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম'-এই হাদীসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা যখন মুহাদ্দেসীন কেরাম করছিলেন তখন ইমাম গাজ্জালী (রঃ) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় করেন, 

ওহে মুহাদ্দিসগন শোনো। রাতের অন্ধকারে তোমরা টাকা নিয়ে গরীবের দুয়ারে দুয়ারে যাবে। বিনয়ের সহিত বললে, হে ভাই, এই টাকাগুলো নিয়ে আমাকে উদ্ধার করো। তোমার হাত থাকবে নিচে, আর গরীব ভাইয়ের হাত থাকবে উপরে। তার হাতই উত্তম। কারন সে তোমার যাকাত গ্রহণ করে তোমাকে উদ্ধার করবে।" 

আমরা কি পারছি? না পারছি না...

মুক্ততদন্ত-১


যুক্তি-তর্কের প্রধান সমস্যা হল, যুক্তি না মানার প্রবনতা বা যুক্তি সঠিক বলে মনে না হওয়া। আমার কাছে যেটা সঠিক যুক্তি অন্য কারো কাছে সেটা সঠিক নাও হতে পারে! 

ভেবেছিলাম রমজান মাসে সিরিয়াস কোন পোস্ট দিব না। সিরিয়াস কোন পোস্ট দেবার আগে অনেককিছু ঘাটাঘাটি করতে হয়। কোন লাইন লেখার আগে অনেক চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। রমজানে এত সময় কোথায়? তাছাড়া এনার্জিও থাকে না। 

কিন্তু বাস্তবতা এত অজুহাত শুনতে নারাজ। কিছুদিন আগে এক ভাই ইনবক্সে এক নাস্তিকের পোস্ট পেস্ট করে দিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন। একমাস সময় লাগলেও যেন আমি একটা উত্তর তৈরি করে দেই সেই অনুরোধ জানালেন। পোস্টটা পড়ে দেখলাম ভয়াবহ সব কথাবার্তা লেখা! রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে লক্ষ্য করে মিথ্যে প্রচারনা আমার কাছে নতুন কিছু নয়। ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশের কিছুদিনের মধ্যেই এইসব আমার নজরে আসে। প্রথম প্রথম গায়ে লাগলেও পরে আর গায়ে লাগত না। কারন আমার ধারনা তাদের এইসব কথাবার্তা যে ভুয়া এইগুলা নাস্তিকের দল ভালভাবেই জানে। তারা এইসব পোস্ট দেয় কেবলমাত্র বিকৃত আনন্দলাভের জন্য, অন্যকিছু না। 

এবার মূল আলোচনায় আসি। 

[এক]

“প্রতিটি মুসলিম বিশ্বাস করেন হযরত মুহাম্মদ সাসাধারন কেউ নন। তিনিঃ অতিপ্রাকৃত-কেউ”

মিথ্যে কথা। রসূলুল্লাহ (সাঃ) ‘অতিপ্রাকৃত কেউ’ এই ধারনা কোন মুসলিম পোষন করে না। মুসলিমদের বিশ্বাসের ভিত্তি কুরআন-হাদীসের কোথাও এই ধরনের কথা নেই। বরং এই বিপরীত কথাই কুরআন-হাদীসের বহুজায়গায় এসেছে। তিনি আমাদের মতই মানুষ ছিলেন। আমাদের মতই সমস্ত জৈবিক কাজ সাধন করেছেন তিনি। তারমধ্যে মানব চারিত্রিক গুনাবলী সর্বোচ্চ মাত্রায় বিকশিত হয়েছিল। এই কারনেই তিনি সর্বকালের, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তিনি ছিলেন আল্লহর বান্দা ও রসূল। এই মর্যাদাই তার জন্য যথেষ্ঠ। বিভিন্ন হাদীসের এরচেয়ে অধিক মর্যাদা দানের ব্যাপারে (মানুষ ভক্তিভরে যা কিছু বলত) তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে। 

আল্লাহ তায়াল আরো বলেন, 

“এবং তারা বলে, ‘কখনই আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনব না যতক্ষন না আপনি আমাদের জন্য ভূমি হতে একটি ঝর্ণাধারা উৎসারিত করবেন। অথবা আপনার একটি খেজুরের ও আঙ্গুরের বাগান হবে যার ফাঁকে ফাঁকে নদী-নালা প্রবাহিত করে দেবেন। অথবা আপনি যেমন বলে থাকেন তদনুযায়ী আকাশকে খন্ড-বিখন্ড করে আমাদের উপর ফেলবেন, অথবা আল্লাহ ও ফিরিশতাগনকে আমাদের সামনে এনে উপস্থিত করবেন। অথবা আপনার একটি অলংকৃত স্বর্ণ নির্মিত গৃহ হবে। অথবা আপনি আকাশে আরোহন করবেন, তবে আমরা আপনার আকাশে আরোহণে কখনো বিশ্বাস করব না যতক্ষন না আপনি আমাদের (আসমান থেকে) একটি কিতাব অবতীর্ণ করবেন যা আমরা পাঠ করব’। বল, ‘পবিত্র আমার প্রতিপালক! (সুবহানাল্লাহ!) আমি তো কেবলমাত্র একজন মানুষ, একজন রাসূল। আর মানুষের কাছে যখন হেদায়েতের বানী আসে তখন তো তারা শুধু একথা বলে ঈমান আনয়ন করা থেকে বিরত থাকে যে, আল্লাহ কি একজন মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন?

*** সূরা (১৭) ইসরা (বনী ইসরাঈল): ৯০-৯৪ আয়াত।

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

“বল, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ মাত্র, আমার প্রতি ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তোমাদের মা’বুদ একমাত্র একই মা’বুদ। অতএব তোমরা তারই পথ অবলম্বন কর এবং তারই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। যারা শির্‌কে লিপ্ত তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ”। 

*** সূরা (৪১) ফুস্‌সিলাতত (হা মিম আস সাজদা): ৬ আয়াত।

এক হাদীসে নবী-পত্মী উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

“আমি একজন মানুষ মাত্র। আমার কাছে বিচার ফয়সালার নিয়ে মানুষেরা আসে। বাদী ও বিবাদীর মধ্য থেকে একজন হয়ত অধিকতর বাকপটু হয়, ফলে তাকে সত্যবাদী মনে করে হয়ত আমি তার পক্ষেই বিচার করি। যদি আমি ভুল করে একের সম্পদ অন্যের পক্ষে বিচার করে দেই, তবে সে সম্পদ তার জন্য হালাল হবে না। বরং তা হবে তার জন্য আগুনের একটি পিন্ড, তার ইচ্ছে হলে তা গ্রহণ করুক, আর ইচ্ছা হলে তা পরিত্যাগ করুক”।

**বুখারী, আস-সহীহ ২/৬৬৭, ৬/২৫৫৫, ২৬২২, ২৬২৬; মুসলিম, আস-সহীহ ৩/১৩৩৭-১৭৩৮; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী, ৫/১০৭, ২৮৮, ১২/৩৩৯, ১৩/১৫৭, ১৭২, ১৭৮। 

অন্য হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসূদ (রাঃ) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সালাতের মধ্যে ভুল করেন। সালামের পরে সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল, সালাতের মধ্যে কি কোনো নতুন বিধান নাযিল হয়েছে? তিনি বলেনঃ তোমরা এ প্রশ্ন করছো কেন? তারা বলেনঃ আপনি এমন এমন করেছেন। তখন তিনি সালাত পূর্ণ করেন এবং বলেনঃ “সালাতের নিয়ম পরিবর্তন করা হলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে জানাতাম। কিন্তু আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ মাত্র। তোমরা যেমন ভুল কর আমিও তেমনি ভুল করি। যদি আমি কখনো ভুল করি তবে তোমরা আমাকে মনে করিয়ে দেবে”।

**বুখারী, আস-সহীহ ১/১৫৬; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৪০০; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ১/৫০৩-৫০৪

এইসব আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমানিত হল যে, আল্লহর রাসূল (সাঃ) সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, হাল্ক, ব্যাটম্যান প্রভৃতি নন, তিনি আমাদের মতই একজন মানুষ! 

ক্যারেন আর্মস্ট্রং এর রচিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনী গ্রন্থেও বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি লিখেন,

“মুহাম্মদ (সঃ) কে বরং ইহুদি পবিত্র গ্রন্থের বৈচিত্রময় চরিত্র মোজেস, ডেভিড, সোলোমন, এলিজাহ্‌ বা ইসায়াহর মত মনে হয়- যারা আন্তরিকভাবে ধার্মিক হলেও একেবারে নিখুত ছিলেন না। 

তিনি প্রচন্ড ক্ষুদ্ধ ও অশান্ত হয়ে উঠতে পারতেন, কিন্তু আবার কোমল, আবেগপ্রবণ, দুর্বল দয়ালুও হয়ে উঠতেন। আমরা কখনও জেসাসের হাসার কথা পড়িনি, কিন্তু আমরা বারবার ঘনিষ্ঠ জনদের সঙ্গে মুহাম্মদকে (সঃ) হাসতে ও রসিকতা করতে দেখি। তাঁকে আমরা বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে দেখব, স্ত্রীদের নিয়ে সমস্যায় পড়তে দেখব, কাঁদতে দেখব বন্ধুর মৃত্যুতে, আর যেকোন গর্বিত পিতার মত নবজাত শিশুপুত্রকে প্রদর্শনরত অবস্থায়ও দেখতে পাব”। 

[অনুবাদ, মুহাম্মদ : মহানবীর (সঃ) জীবনী, লেখকঃ ক্যারেন আর্মস্ট্রং, পৃষ্ঠাঃ ৫৮- ৫৯]

[দুই]

“যার সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবী সৃষ্টি হবার ৫০০ বছর আগে এবং তখন তিনি তারকা রূপে ছিলেন। তার সৃষ্টি না হলে এই মহা বিশ্ব , পৃথিবী , মানুষ ও প্রাণীকুল কোন কিছুর সৃষ্টি হত না”। 

এই ধরনের বক্তব্য কোথা থেকে আসল বোধগম্য নয়। ধারনা করতে পারি যে, বিভিন্ন জায়গা দেখে বিভিন্ন প্রসঙ্গে পাওয়া বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একত্রিত করা হয়েছে। বানোয়াট কত কিছুই তো মানুষ বলে থাকে, তাতে কার কি আসে যায়! 

মুসলিম ধর্মগ্রন্থসমূহের মধ্যে আদি সৃষ্টি নিয়ে কি বক্তব্য পাওয়া যায় আসুন দেখি- 

“আল্লাহ সমস্ত জীব সৃষ্টি করিয়াছেন পানি হইতে, উহাদিগের কতক পেটে ভর দিয়া চলে, কতক দুই পায়ে চলে এবং কতক চলে চারি পায়ে, আল্লাহ্‌ যাহা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, আল্লাহ্‌ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান”।

[***সূরা আন-নূর, আয়াত সংখ্যা ৪৫] 

জাবের (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলিয়াছেন, আমি একদা আরজ করিলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার চরনে উৎসর্গ হউক; সকল বস্তুর পূর্বে সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা কোন্‌ জিনিসটি সৃষ্টি করিয়াছেন? রসূল (সঃ) বলিলেন, হে জাবের! আল্লাহ তাআলা সকল বস্তুর পূর্বে সর্বপ্রথম তোমাদের নবীর নূর সৃষ্টি করিয়াছেন (যাহা) আল্লাহর (বিশেষ কুদরতে সৃষ্ট) নূর হইতে। অতঃপর সেই নূর আল্লাহর কুদরতে আল্লাহ তাআলার নিয়ন্ত্রণাধীনে চলমান ছিল। ঐ সময় লওহ-কলম, বেহেশত-দোযখ, আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্য, মানব-দানব এবং ফেরেশতা কিছুই ছিল না। 

[বোখারী শরীফ, পৃষ্ঠা-৩, ৫ম খন্ড, হামিদিয়া লাইব্রেরী]

সত্যবাদী ও সত্যায়িত নবী (ছাঃ) বলিয়াছেন- 

অর্থাৎ, “আল্লাহ পাক ছিলেন, কিন্তু তাহার সহিত কিছুই ছিল না”। 

অতঃপর লওহ্‌, কলম, আরশ্‌, কুরসী, আসমান, যমীন ও উভয়ের মধ্যবর্তী জিনিসসমূহ সৃষ্টি করিয়াছেন, অবশ্য সর্বপ্রথম কোন্‌ জিনিস সৃষ্টি করিয়াছে, এই সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রহিয়াছে। যেমন আল্লাহ্‌ বলেন, 

অর্থাৎ “আল্লাহর আর্‌শ ছিল পানির উপরে”। 

ইহাতে বুঝা যায়, ‘পানি এবং আরশ’ এই দুইটিই সর্বপ্রথম সৃষ্ট বস্তু। আবু রাযীন উকাইলী ইমাম আহ্‌মদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন, 

অর্থাৎ “আরশের পূর্বে পানিকেই সৃষ্টি করা হইয়াছে”। 

হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলিয়াছেনঃ 

অর্থাৎ “প্রত্যেক বস্তুই পানি হইতে সৃষ্টি করা হইয়াছে”। 

অপর এক রেওয়াতে আছে—হযরত উবাদাহ্‌ ইবনে সামেত বলেন, নবী (ছাঃ) বলিয়াছেন, 

“আল্লহ্‌ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করিয়াছেন”। আর এক বর্ণনায় আছে, অর্থাৎ “আল্লাহ সর্বপ্রথম নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টি করিয়াছেন”। 

এইসব বিভিন্নতার সমাধান হইল-প্রতিটি জিনিস পরবর্তীটির হিসাবে প্রথম ও বস্তুও বিভিন্ন। তাই বলা হয়, সর্বপ্রথম পানি, তারপর অন্যান্য সমস্ত কিছু সৃষ্টি করা হইয়াছে।

[মেশকাত শরীফ, ১০ম খন্ড, এমদাদিয়া পুস্তকালয়। পৃষ্ঠাঃ ১৭৪]

[তিন]

“তার যখন ২৫ বছর বয়স তখন তিনি আরবের ধনী ব্যবসায়ী ৪০ বছর বয়সী খাদিজা কে বিয়ে করেন। ২৫ বছরের একটা যুবক কেন ৪০ বছর বয়স্ক মহিলা কে বিয়ে করবে ? মুহাম্মদ সা: কি পারতো না কোন যুবতী কে বিয়ে করতে ? এটার আসল কারণ হচ্ছে টাকা । খাদিজার অগাধ সম্পত্তির জন্যই তাকে বিয়ে করেন যুবক মুহাম্মদ (সাঃ)”

কাফের, মুশরিক, নাস্তিকেরা রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আঙুল উত্তোলন করে তার বিয়ে-শাদী। ইনিয়ে-বিনিয়ে, বানিয়ে নানান কথা বলে বেড়ায়। তিনি তাদের এসব অসত্যকথন থেকে পবিত্র। খাদিজা (রাঃ)র সাথে বিয়ের ব্যাপারে ক্যারেন আর্মস্ট্রং তার গ্রন্থে লিখেন, 

“খাদিজা মুহাম্মদের (সঃ)কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন। কেবল ওয়ারাকার আগ্রহ দ্বারাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তিনি তা নয়, তরুন আত্মীয়ের ব্যাক্তিগত গুণাবলি দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিলেন। দুজনের বয়সের পার্থক্য সত্তেও, খাদিজার একজন স্বামীর প্রয়োজন ছিল এবং মুহাম্মদ(সঃ) ছিলেন যোগ্যপাত্র। ‘আমাদের সম্পর্কের কারনে আপনাকে আমি পছন্দ করি’, মুহাম্মদকে (সঃ) বলেছিলেন খাদীজা, গোত্রের মাঝে আপনার সুনাম, আপনার বিশ্বস্থতা এবং সচ্চরিত্র ও সত্যবাদিতা আমার ভাল লাগে’। কথিত আছে, খাদিজার বয়স তখন ছিল চল্লিশ বছর, কিন্তু যেহেতু মুহাম্মদ(সঃ)এর ছয়টি সন্তান ধারন করেছিলেন, হয়ত বয়স কিছু কমও হয়ে থাকতে পারে।, তবে স্বামীর চেয়ে উল্লেখ্যযোগ্যভাবে বয়স্কা ছিলেন তিনি। পশ্চিমের মানুষ অনায়াসে বয়স্কা ধনী নারীকে বিয়ের করার বিষয়টি নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে থাকেন। বোঝানোর চেষ্টা থাকে যে, মুহাম্মদ (সঃ) ফূর্তির জন্যে এই বিয়েতে সম্মত হয়েছিলেন। এমনকি ম্যাক্সিম রডিনসন তাঁর সহানুভূতিভাবাপন্ন জীবনীগ্রন্থে বলতে চেয়েছেন যে, মুহাম্মদ (সঃ) নিশ্চয়ই এই বিয়েতে শারীরিক ও আবেগের দিক থেকে হতাশাব্যঞ্জক বলে আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু বিপরীতটি বরং সত্য হওয়ার কথা। পয়গম্বরত্ব প্রাপ্তির প্রথম বছরগুলোয় খাদিজার সমর্থন আর আধ্যাত্মিক পরামর্শ ছাড়া মুহাম্মদ (সঃ)-এর পক্ষে এগুনো সম্ভব ছিল না। চমৎকার মহিলা ছিলেন খাদিজা। তিনি ছিলেন, বলেছেন ইব্‌ন ইসহাক, ‘দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সম্ভ্রান্ত এবং বুদ্ধিমতী। যখনই মুহাম্মদ (সঃ) শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন বা আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা মুখোমুখি হয়েছেন তখনই শান্তির জন্যে সোজা স্ত্রীর কাছে চলে গেছেন এবং খাদিজা তাঁ বাকি জীবনে-যিনি সর্বপ্রথম স্বামীর ব্যতিক্রমী ক্ষমতার পরিচয় পেয়েছিলেন- তাঁকে ‘সহজ করতেন, ভারমুক্ত করতেন, তাঁর সত্য ঘোষণা করতেন’। আবেগময় পুরূষ ছিলেন মুহাম্মদ (সঃ) কিন্তু খাদিজার জীবনকালে আর কোনও তরুণী ভার্যা গ্রহণ করেননি- পরবর্তীকালে যারা তাঁকে বহুবিবাহের জন্য সমালোচনা করেন তাদের এ বিষয়টি জেনে রাখা উচিত। প্রকৃতপক্ষে, খাদিজার মৃত্যুর পর, খাদিজার প্রশংসা করে অন্যান্য স্ত্রীদের ক্ষিপ্ত করে তুলেছেন তিনি এবং একবার খাদিজার কন্ঠস্বর শুনতে পেয়েছেন ভেবে শোকে বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন। বাড়তি সুবিধা প্রাপ্তি এ বিয়ের উদ্দেশ্য ছিল না : পারিবারিক আয়ের একটা বিরাট অংশ দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন মুহাম্মদ (সঃ) এবং নিজে পরিবার নিয়ে দরিদ্র হালে জীবন কাটিয়েছেন”। 

[অনুবাদ, মুহাম্মদ : মহানবীর (সঃ) জীবনী, লেখকঃ ক্যারেন আর্মস্ট্রং, পৃষ্ঠাঃ ৯১]

ক্যারেন আর্মস্ট্রং সাহেবের লিখনি থেকে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, মূলত খাদিজা (রাঃ) আগ্রহের কারনেই বিয়েটা হয়েছিল। অথচ মিথ্যেবাদীগন উলটো কথাই বলে থাকে। 

চেয়ারে বসে নামায পড়া


ইফার ফতোয়াটা আপনাদের নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে। পড়ার কথা। এই নিয়ে অনলাইনের খবর জানি না প্রিন্ট মিডিয়ার কথা বলি। নয়া দিগন্তের রিপোর্টের পর এক পাঠক তার প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছিলেন এবং নয়া দিগন্ত সেটাও ছেপেছে। তবে প্রিন্ট সংস্করনে ফতোয়া পুরোটা দেয়া না হলেও অনলাইন পেপারে দেখলাম ইফা থেকে প্রকাশিত ফতোয়ার পুরো অংশ ছাপানো হয়েছে। 

মূল ফতোয়া পড়ার পর আমার মনে হয়েছে প্রতিবেদক হয় পুরো ফতোয়া পড়েন নি বা পড়ে থাকলেও ইচ্ছে করেই নিজের মন মত রিপোর্ট করে যিনি ফতোয়া দিয়েছেন তাকে হাজার হাজার নামাযীর বিপক্ষে দাড় করিয়ে দিয়েছেন। আমরা যারা সমালোচনা করছি তারাও কতজন মূল ফতোয়াটা পড়েছি আল্লহই জানেন। আমার কাছে মুফতী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সাহেবের ইন্টেশন খারাপ মনে হয় নি। কেন মনে হয় নি সেটা বোঝাতে আমি মূল বিবৃতি শেষের দুটি লাইন কোট করছি,

"মোটকথা বিষয়টি সম্পর্কে দেশের বিজ্ঞ মুফতীগনকে আরো গভীরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি এবং সংশ্লিষ্ট রোগীদের কষ্টসাধ্য নামায যেন বাতিল না হয়ে যায় সেই সতর্কতা অবলম্বন করার অনুরোধ করছি।"

আরো কিছু বলার আগে অন্য প্রসঙ্গে দুই একটা কথা বলি। আমাদের এখানে এই ভাই আছেন। মাহবুব ভাই। তিনি কোন এক দূর্ঘটনায় উনার দু'হাত, এক পা হারান। কেটে ফেলা পায়ে উনি কাঠের পা পড়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলেন। যখন আযান হয় তখন তিনি তার কাঠের পা খুলে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ওযু খানায় ওযু করেন এবং নামায আদায় করেন। এবং তিনি চেয়ার ব্যবহার করেন না। দাঁড়িয়ে নামায আদায় করেন! 

গতকাল এই ভাই (আল আমিন) পোস্ট করেছেন "আজ জুমার নামাজ পড়ার জন্য লোকাল মসজিদে গেলাম। মসজিদের এক কোনে এক যুবকের নামাজ পড়া দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। যুবকটি খুব সম্ভবত তিউনিশিয়ান বা মরোক্কান হবে। দূরারোগ্য রোগে যুবকের পা সোজা হয়ে আছে, ভাজ করে আমাদের মতো নামাজ আদায় করতে অক্ষম। তবুও যুবকটি দাড়িয়ে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করছে। পঙ্গু পা একদিকে ছড়িয়ে রুকু করছে, হাটু ভাজ না করেই সোজা উপুর হয়ে সিজদায় যাচ্ছে, আবার পা সোজা একদিকে ছড়িয়ে দিয়ে বৈঠক করছে, বৈঠক শেষে আবার হাতে উপর প্রচন্ড চাপ দিয়ে এক ঝটকায় দাড়িয়ে যাচ্ছে। যুবকটির নামাজ আদায় দেখছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম, আমরা যারা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ও যেনতেন ভাবে নামাজ আদায় করে আল্লাহ র কাছে জান্নাত কামনা করি, সেই মহান আল্লাহ না জানি এই পঙ্গু যুবকটির জন্য কত হাজার জান্নাত তৈরী করে রেখেছেন।" 

সম্ভবত ফাজায়েলে আমলে পড়েছিলাম যে, এক সাহাবী (সম্ভবত) চোখের সমস্যা হবার পর চিকিৎসকরা বলে দিলেন-এর চিকিৎসা সম্ভব। তবে আপনাকে কিছু দিন কোন উঁচু জায়গায় সিজদা করতে হবে। সাহাবী (রাঃ) বললেন, এক ওয়াক্ত নামাযও এইভাবে পড়িব না! 

এই হল আমাদের নামায প্রীতি। আফসোসের কথা হল আমাদের মধ্যে কাজ করে নামায ভীতি! আমাদের যত সমস্যা সব কিছু সমাধান হয়ে যেত (আমরা মনে করি) যদি দ্বীনের কোন বিধিবিধান মানতে না হত! 

এই যুগে যারা চিকিৎসা করেন তারা প্রচুর পড়াশুনা করেন এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। সন্দেহ নেই এই বিষয়েও যে, তারা আমাদের (যারা চিকিৎসক নই) চেয়ে চিকিৎসার বিষয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন। আমার প্রশ্ন হল, তারা কতজন নামাযের বুঝ রাখেন? একজন মুসলিমের জন্য নামায কত বড় ইবাদত, কতবড় হাতিয়ার- এই জ্ঞান তারা রাখেন কিনা। 

"ডাক্তার সাহেব, শরীর দুর্বল, কেমন জানি লাগে..." 

"রেস্ট নিবেন। নামায বাসায় পড়বেন।"

"ডাক্তার সাহেব, পায়ে মনে হয় ব্যথা পাইছি।"

"বসে নামায পড়বেন" 

স্যাক্রিফাইস আর স্যাক্রিফাইস। নামাযের সাথে স্যাক্রিফাইস। অথচ মুসলিমের যেকোন সমস্যার সমাধানের জন্য প্রথমেই নামাযের মাধ্যমে আল্লহর সাহায্য চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর আমাদের সাহায্যের হাতিয়ারের মধ্যেই ঘাপলা।

এখন আসি চেয়ার প্রসঙ্গে। চেয়ার বসে নামায পড়া বৈধ কি অবৈধ সেই আলোচনায় যাব না। সেটা গবেষকদের বিষয়। 

আমাদের মসজিদেও অসুস্থ ব্যক্তিদের চেয়ারের ব্যবস্থা আছে। তবে সমস্যা হল চেয়ার থাকাতে অনেক সুস্থ লোকও যেন অসুস্থ হয়ে যান! স্বাভাবিকভাবে নামায পড়লেন। তারপর জিকির-আসগার, অজীফার জন্য রাঝাধিরাজ, শাহেনশাহ্‌ এর মত চেয়ারে বসে গেলেন। যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ও মসজিদের আদবের সাথে বেমানান। 

কে সুস্থ কে অসুস্থ কে জানে? কে তাদের বোঝাবে? কোন কিছু বোঝাতে গেলে আমরা আবার ঝগড়া শুরু করে দেই। যদি বয়সে আমার বড় হয় তবে আমি ধমক খাব, আর আমার ছোট হলে আমিই ধমক দিব! আর মসজিদে হই হট্টগোল করা একদম ঠিক না। 

ইমাম সাহেব, মুয়াজ্জিন সাহেবের চোখে পড়ে কিনা কে জানে। তারা এই ব্যাপারে নিরব কি তাদের চাকুরীর ভয়ে নাকি অন্য কোন কারনে তাই বা কে জানে। 

আমি ধারনা করি বাংলাদেশের অনেক মসজিদের চিত্র একই। তাই আমি বলতে চাই মসজিদে চেয়ারের ব্যবহার সীমিত করা হোক। যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করা হোক।

রমজানের কারিশমা


রমজান মাস আসছে। বলা হয়ে থাকে রমজান হল সংযমের মাস। তবে আসুন দেখে নেই কে কিভাবে সংযম পালন করবে এই মাসে।


১. এইমাসে একদল আহা-উহু করবে যে, আজকে তার বউ রোজা রেখেছে, ভাত রান্না করেনি। তাই সে না খেয়ে আছে। তার কষ্ট হচ্ছে। পাড়ার রেস্তোরাগুলোও বন্ধ। কি আর করা। সংযম পালন করি। 

২. আরেকদল দেখাবে ফটোশপের ভেল্কি! প্লেনের উপরে বসে কোন এরাবিয়ান (PHP এরাবিয়ান SUPER নয়) ইফতার করছে। বলেন সুবহানাল্লহ! 

৩. আরেকদল তাদের কম্প্যূটারের হার্ডডিস্কে রাখা আর্কাইভ খুজে কিছু ছবি বের করবে। যার প্রথম পর্বে দেখা যাবে মুসলিম বিশ্বে (পুরান ঢাকাসহ) কত রকমারী ইফতারের আয়োজন করা হয়, কতটুকু খাওয়া হয় আর কতটা অপচয় হয়। দ্বিতীয় পর্বে দেখা যাবে কিছু শুকনো-কংকালসার শিশু, যারা অনাহারে-অর্ধাহারে মৃতপ্রায়। একদিনে অতিভোজন, অপরদিকে অনাহার! অবশ্য সারাবছর তারা শীতনিদ্রায় থাকলেও রোজার সময় সংযম পালনার্থে কম্বলের নিচ থেকে বের হবে। 

৪. আরেকদল সংযম পালন করবে ক্যামেরার সাহায্যে। বয়ফ্রেন্ডের সাথে ইফতার করছি (সেলফি), ঘরে ডালের বড়া বানালাম (সেলফি), সবাই মিলে ইফতার করছি (সেলফি), আজ এত্তগুলা ইফতার করব (সেলফি), আযান দেয় না ক্যারে?(সেলফি)......... 

৫. আরেকদল সংযম পালন করবে ফতোয়া ঘোষনার মাধ্যমে। "ফর্সা না হওয়া পর্যন্ত সেহরী খাও, যেকোন জায়গায় চাঁদ দেখলে রোজা রাখ, তারাবীর নামায ৮ রাকাত, মাগরীবের আযানের সময় ইফতার করলে হবে না--ইফতার করতে হবে পুরো অন্ধকার হলে......" 

রমজান মাস হল রহমতের মাস, মাগফিরাতের মাস, জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস! এই মাসে বেশি থেকে বেশি আল্লহর স্বরন বাদ দিয়ে আসুন আমরা উপরোক্ত পদ্ধতিতে দলে দলে সংযম পালন করি। 

অফটপিকঃ একজন হিন্দু আমার কাছে তার রমজানের অভিজ্ঞতা এভাবে বর্ণনা করছিল যে, সে অন্যসময় কানে হেডফোন লাগিয়ে চলাফেরা করলেও রমজানে করে না। অথচ তার পরিচিত মুসলিমরা হেডফোন লাগিয়ে দুলতে দুলতে চলে। সে বাইরে কোথাও খায় না। অথচ কত পরিচিত লোক মোড়ে দাঁড়িয়ে ধূমপান করে, পর্দা দেয়া হোটেলে পট করে ঢুকে যায়! 

আমি চুপ করে ছিলাম। আমার কাছে জবাব দেয়ার মত কিছু ছিল না।

রেসিপি-১


গরমের দিন চলছে। সারাদিনের ক্লান্তির পর ঠান্ডা একগ্লাস শরবত বা জুস পেলে সারা শরীর জুড়িয়ে যায়। কিছু রেসিপি দিলাম। শরবত বা জুস যেটাই বলেন না কেন। সামনে রমজান আসছে। রমজানেও ট্রাই করতে পারেন। 

ভার্জিন পিনা কোলাডা

২ টি ছোট সাইজের আনারস (মোট ওজন ৪০০ গ্রামের বেশি হবে না।), নারিকেলের ১/৪ ভাগের ক্রিম, ২ টেবিল চামচ নারিকেলের পানি আর পুদিনা পাতা।

নারিকেল মিহি করে চেঁছে নিন। তারপর একটি পাত্রে নিয়ে অল্প পানিতে (যেন নারকেলেগুলো ঢাকে) অল্পআঁচে ৫ মিনিট ধরে ফুটান। তারপর নামিয়ে পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে বেশিরভাগ পানি ছেঁকে নিন। তারপর মিশ্রনটি ফ্রিজে রেখে দিন। নারিকেলের ক্রিম তৈরি হয়ে গেল।

এবার আনারস ছিলে এর চোখগুলো ফেলে দিন। এখন আনারস, নারিকেলে পানি এবং নারিকেলের ক্রিম একসাথে ব্লেন্ড করুন। আপনি চাইলে কিছু বাদামী চিনিও যোগ করতে পারেন। তবে না করাই ভাল। কারন এই জুসটি এমনিতেই খুব ঘন হবে। 

পরিবেশনের সময় এতে পুদিনা পাতা ছেড়ে দিয়ে একটু নাড়ুন যেন পাতাগুলো ভিতরে ঢুকে যায়। আর আনারসের টুকরো কেটে গ্লাসে সেটে দিতে পারেন। দেখতে আকর্ষনীয় হবে।

 বাঙ্গি গ্রানিটা

একটি পুরো বাঙ্গি, ১/২ কাপ বাদামী চিনি, ১/৪ কাপ লেবুর রস, ১/২ চা-চামচ গোলাপজল।

বাঙ্গি ছিলে বিচি ফেলে দিন। বাদামী চিনি দিয়ে বাঙ্গি ব্লেন্ড করুন। পানি যথাসম্ভব কম দিন। এতে ঘন জুস তৈরি হবে। এবার লেবুর রস, গোলাপজল মিশান। ভালভাবে মিশে গেলে বের করে পানিটুকু ছেকে নিন। তারপর ফ্রিজে রেখে বরফ করুন। 

পরিবেশন করার জন্য বরফকৃত বাঙ্গি বের গুড়ো করে নিন বা Ice shaver দিয়ে টুকরো করে নিন। গ্লাসের পরিবেশন করুন। গলে যাবার আগেই ঢক ঢক গিলে ফেলুন। গলুক বা না-ই গলুক মজাদার বাঙ্গি জুস আপনি পেয়েই যাচ্ছেন।

 তুলসীর বীজের সাথে কামরাঙ্গা জুস

আধা কেজি কামরাঙ্গা, এক টেবিল চামচ বিট লবন, আধা কাপ বাদামী চিনি, এক টেবিল চামচ তুলসী বীজ (আধাকাপ পানিতে চুবানো) 

বিচি ফেলে কামরাঙ্গাগুলো বিট লবন ও বাদামী চিনি দিয়ে ব্লেন্ড করুন। তুলসীর বীজগুলো কাপের পানিতে ১০ মিনিট ধরে ডুবিয়ে রাখুন। তারপর তুলে নিয়ে পরিবেশন করার গ্লাসে ছেড়ে দিন। এরপর ব্লেন্ড করা কামরাঙ্গা জুস গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করুন।

 সফেদার জুস

সফেদা ছিলে ব্লেন্ড করে নিন। তারপর লেবুর জুসের সাথে মিশিয়ে একসাথে পান করুন। সফেদা এমনিতেই মিস্টি হওয়ায় বাড়তি চিনির প্রয়োজন নেই।

এক গ্লাসেই এক গ্লাস

আধা কাপ গুড়ের সিরাপ ( ১৫০ গ্রাম গুড় নিয়ে হালকা পানি মিশিয়ে ঘন দ্রবন তৈরি করুন), আধা কাপ লেবুর জুস, ১০০ গ্রাম পুদিনা পাতা (পেস্ট তৈরি করুন এবং পানি ঝেড়ে নিন), আরো ১০০ গ্রাম পুদিনা পাতা সাজানোর জন্য, আধা কাপ তুলসীর চা, (কাজী এন্ড কাজী টিব্যাগ দিয়ে ৩-৪ মিনিট পানিতে চুবিয়ে গাঢ় চা বানান), ১ টেবিল চামচ তুলসীর বীজ, আধা কাপ আনারসের জুস ( ২০০ গ্রাম আনারস ব্লেন্ড করে ছেকে নিন), ১০০ গ্রাম ডালিমের দানা। 

আধাকাপ পানিতে তুলসীর বীজগুলো ১০ মিনিট ধরে চুবিয়ে রাখুন। তারপর লম্বা গ্লাসের তলানীতে তুলসীর বীজগুলো (পানি থেকে তুলে) ঢেলে দিন। সবগুলো উপাদান একত্রে মিশান। গুড়ের সিরাপ দিয়েই প্রথমে শুরু করুন। কারন গুড়ের সিরাপ ঘন বলে বেশি নাড়তে হবে। সবার শেষে তুলসীর চা দিবেন। 

পরিবেশনের জন্য ছোট ছোট ডাল সহ পুদিনা পাতাগুলো এবং ডালিমের দানাগুলো গ্লাসে নিয়ে মিশ্রণ ঢেলে দিন। আনারসের টুকরো আর লেবুর টুকরো কেটে গ্লাসের উপরে এটে দিন। আসল কথা হল গ্লাসের পুরো মিশ্রনটাকে যেন কোন বন্য গাছের মত দেখায়। 

[মূলঃ রীমা ইসলাম, লাইফস্টাইল, দ্য ডেইলি স্টার। ৯ জুন, ২০১৫। অনুবাদের ভুল ত্রুটি আমার।]