কয়েকদিন আগে একটি ছবি দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম যে, এই ছবিতে সমস্যা কি? ছবিতে যে প্রশ্নটি ছিল সেটি হল, "মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ থেকে লোকজন কেন বিশ্ব এজতেমায় শরীক হয়?" এই প্রশ্নের উত্তরে যা বলা হয়েছে সেটা নিয়েই সমস্যার উৎপত্তি। কারো আগ্রহ থাকলে ছবিটা দেখে নিতে পারেন।
প্রশ্ন ও উত্তর যেই বইয়ে দেয়া হয়েছে এই বইটার সাথে আমি পরিচিত নই। তাবলীগে যেসব বই সাধারনত পড়া হয় যেমন, ফাজায়েলে আমাল, মুন্তাখাব হাদীস, ফাজায়েলে হাজ্ব, হেকায়েতে সাহাবা ইত্যাদি বইয়ে এভাবে প্রশ্নোত্তর নেই। কাজেই কে এই বই, কার অনুমতিতে ছাপিয়েছে সে সম্পর্কে ধারনা নেই। আজ থেকে ১০ বছর আগেই কাকরাইলে দেখেছি তাবলীগ নিয়ে চটি বইয়ের অভাব নেই। যেগুলো মুরুব্বীরা ক্রয় করতে নিরুৎসাহিত করে থাকেন। এই বইটাও তেমন কিছু হতে পারে।
এবার আসি উত্তর প্রসঙ্গে। তাবলীগে যারা সময় দিয়েছে তারা এই কথাগুলোর সাথে পরিচিত এবং এতে কোন দোষ খুজে বেড়ায় না। কারন এই কথাগুলো অনলাইনে যেভাবে আলোচনা হচ্ছে সে সেন্সে বলা হয় না। আহলে হক্ব মিডিয়ার এপসের সাহায্য নেই,
"হাদীসঃ হযরত খুরাইম বিন ফাতেক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন কিছু খরচ করে তা তার আমলনামায় ৭শত গুন হিসেবে লেখা হয়।
সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৬২৫
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৬৪৭
সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৫
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯০৩৬
মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২২৭
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯৭৭০
শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২৯৪
এখানে লক্ষ্য করুন। একটাকা খরচ করলে এখানে সাত শত গুণ সওয়াব লেখার কথা এসেছে। এবার দ্বিতীয় হাদীসটি দেখুন-
হাদীসঃ হযরত সাহল বিন মুয়াজ রাঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহকে স্মরণ করার সওয়াব আল্লাহর রাস্তায় খরচের সওয়াবের তুলনায় ৭ লক্ষ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।
অন্য বর্ণনায় এসেছে সাত লক্ষ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৬১৩
আল মু'জামুল কাবীর, হাদীস নং-৪০৫
মুসনাদুস সাহাবা ফি কুতুবিত তিসআ, হাদীস নং-১৫১৬
কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১০৮৭৯
জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-৬৮৫৮
এবার উভয় হাদীসকে একত্র করুন। প্রথম হাদীস দ্বারা জানতে পারলাম। এক টাকা খরচে সওয়াব পাওয়া যায় ৭ শত গুন। আর দ্বিতীয় হাদীসে জানতে পারলাম খরচের তুলনায় অন্য আমলে পাওয়া যায় ৭ লক্ষ্য সওয়াব বেশি। এর মানে হল, একটি আমল করলে প্রতি আমলে খরচ করলে যত পাওয়া যেত তারও সাত লক্ষ্য গুণ বেশি সওয়াব।
তাই এবার ৭ শতকে ৭ লক্ষ্য দিয়ে গুণ দিন।
৭০০*৭,০০,০০০=৪৯,০০,০০,০০০।
তাহলে কি বোঝা গেল? আল্লাহর রাস্তায় একটি আমল করলে করা উনপঞ্চাশ কোটি আমল করার সওয়াবের সমতূল্য।
উল্লেখিত হাদীস দুটি সনদ হিসেবে দুর্বল। কিন্তু জাল নয়। আর সকল গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিসগণ একমত দুর্বল হাদীস ফযীলতের ক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্য। তাই এ ফযীলত বলতে কোন সমস্যা নেই। জাযাকাল্লাহ।"
প্রথমত, উল্লেখিত বইয়ে উত্তরের ক্ষেত্রে বায়তুল্লাহ, মদীনা এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের মর্যাদার সাথে ইজতেমা মাঠের মর্যাদার তুলনা করা হয় নি। বরং আমলের তুলনা করা হয়েছে। সালাতের সাথে সালাতের। বস্তুত, আল্লাহর রাস্তায় যেকোন আমলের ক্ষেত্রে উল্লেখিত ফযীলত প্রযোজ্য হবে।
দ্বিতীয়ত, আগেই বলা হয়েছে দুর্বল হাদীস ফযীলত বর্ণনার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রসংগত, মাসয়ালা-মাসায়েলের জন্য সহীহ হাদীস জরুরী। নামায পড়লে কি লাভ আর নামায কিভাবে পড়ব-দুটো ভিন্ন বিষয়।
তৃতীয়ত, শুধু মাত্র সালাতের ক্ষেত্রেই নয়। আল্লাহর রাস্তায় যেকোন (জিকির, কুরয়ান তেলাওয়াত, হাজুত পুরা করা, মেহমানদারী, ইকরাম ইত্যাদি) নেক আমল করলে তার সওয়াব ৪৯ কোটিগুন বাড়িয়ে দেয়া হয়-তাবলীগওয়ালা কথাটা এভাবে বলে থাকেন। কাজেই কথাটিকে সালাতের সাথে খাস করা ঠিক হবে না।
চতুর্থত, কোথাও এই দাবি করা হয় নি যে। ইজতেমার ময়দায় মক্কা,মদীনা, বায়তুল মুকাদ্দাসের তুলনায় অধিক মর্যাদাবান। মক্কা,মদীনায় না যেয়ে ইজতেমা ময়দানে যাওয়া উচিত। যেটা দাবি করা হয়নি সেটা দাবি করার হয়েছে বুঝা বা বুঝাতে চাওয়া অন্যায়।
পঞ্চমত, ইজতেমা ময়দানে কোন গানবাজনা বা আমলা-আক্বিদাহ বিধ্বংসী কিছু হয় না। আল্লাহ আর আল্লাহর রাসূলের কথাই আলোচনা হয়। কাজেই এর দ্বারা আল্লাহমূখী হবার প্রেরণা জাগ্রত হবে সেটাইতো স্বাভাবিক। নয় কি?
নোটঃ আহলে মিডিয়ার এপসের যে রেফারেন্স আমি দিয়েছি সেগুলো ক্রস চেক করিনি। সব কিতাব আমার কাছে নেই। কেউ করতে চাইলে নিজ দায়িত্বে করবেন।
আর সুবিধার জন্য কমেন্টে আগের পোস্টের লিংক দেয়া হল।