Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Wednesday, March 8, 2017

বাড়াবাড়ি

কিশোর পাশার কথা মনে আছে কারো? হ্যা, তিন গোয়েন্দার কিশোর পাশা। নিজের মেধা আর বুদ্ধি দিয়ে বহু অপরাধীকে ঘোল খাওয়ানো রকিব হাসানের কিশোর পাশা!
এও নিশ্চয়ই মনে আছে যে, কিশোর পাশা একবার রোলস রয়েস গাড়ি জিতেছিল। কিভাবে জিতেছিল সেটাও একটু বলি।
রোলস রয়েস কোম্পানি থেকে একটি ঘোষনা করা করা হয় যে, একটি জারের ভিতর কতগুলো শিমের বিচি আছে বলতে পারলে তাকে রোলস রয়েস গাড়ি দেয়া হবে। বুদ্ধিমান কিশোর পাশা জারের আয়তন ও শিমের বিচির আয়তন মেপে সবচাইতে কাছাকাছি সঠিক উত্তর দিয়ে গাড়িটি জিতে নেয়।
মজার ব্যাপার হল, রোলস রয়েস কোম্পানি গাড়িটির মালিকানা হস্তান্তর করে নি। শুধুমাত্র ৩০ দিনের জন্য দিন-রাত যেকোন সময়ের জন্য ব্যবহার করতে দিয়েছিল। এটাই ছিল প্রতিযোগীতার পুরস্কার। যদি পুরস্কার হিসেবে আস্ত গাড়িটাই দিত তাহলে সেটা আর পুরস্কার থাকত না, হত বাড়াবাড়ি।
কাল্পনিক হোক বা অবাস্তব, কোনটা পুরস্কার আর কোনটা বাড়াবাড়ি সেটা বোঝার মত বুদ্ধি রোলস রয়েস কোম্পানির থাকলেও আমাদের নেই। আর পুরস্কার বা উপহার হিসেবে যে, নিজের মালিকানাধীন বিষয়ই দেয়া যায় এই ব্যাপারটাও অনেক সময় আমাদের খেয়াল থাকে না। মোবাইল আপনার, আর আমি যদি আপনার মোবাইলটা আমার কোন বন্ধুকে পুরস্কার/উপহার হিসেবে দেই তাহলে সেটা কেমন হয় সহজেই অনুমেয়।
মেহেদী হাসান মিরাজের বাড়ি খুলনায়। বাবা রেন্ট-এ-কারের মাইক্রোবাস চালক। বোন কলেজ স্টুডেন্ট। মিরাজ নিজেও এই বছর এইচ এস সি পাস করেছে। বাড়িতে দুটি ঘর, যার মধ্যে একটি মিরাজের বিভিন্ন মেডেল দিয়ে ভর্তি। বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা এতটাই সরু যে ঐ রাস্তায় রিক্সা চলাচল করতে পারে না।
পরিস্কার বোঝা দরকার যে, মিরাজের ফ্যামিলি ছিন্নমূল নয়। তার পরিবারে টানাপোড়ন থাকতে পারে কিন্তু এমন নয় যে, দু'বেলা অন্নসংস্থান হয় না।
কিছুদিন আগেই অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ দেখেছি আমরা। মিরাজ ছিলেন সেই দলের অধিনায়ক। শান্ত, জাকির হোসনদের মত মিরাজের পারফর্মমেন্স ছিল চোখ ধাধানো। সম্ভবত অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপে ভাল খেলার কারনেই মিরাজ শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পায়।
বাংলাদেশের হয়ে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই রেকর্ড করা নতুন কিছু নয়। আশরাফুল সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ানদের একজন, আবুল হাসান রাজু ১১ তম ব্যাটসম্যান হিসেবে শতরান করেন। আর আজকে তারা কোথায়? মিরাজ যে, হারিয়ে যাবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। মমিনুল হকের রেকর্ডও আমরা দেখতে পারি। টেস্টে ব্যাটিং এভারেজ অনেক বেশি অথচ স্ট্রাইক রেটও ভাল। কিন্তু আজকে তার পরিচয় হয়েছে টেস্ট প্লেয়ার হিসেবে।
প্রধানমন্ত্রী টেস্ট সিরিজে মিরাজের পারফর্মেন্সে খুশি হয়ে খুলনার জেলা প্রশাসককে বাড়ি তৈরি করে দিতে বলেছেন। নির্দ্বিধায় করতালি পাওয়া যেত যদি প্রধানমন্ত্রী নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে বাড়িটা তৈরি করে দিতেন। নিজের টাকায় জমি কিনে তাতে ইট,বালি, সিমেন্ট ঢালতেন।
জেলা প্রশাসক মৌখিক নির্দেশ পেয়ে জমি দেখছে। লিখিত নির্দেশ পেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। জেলা প্রশাসক কি নিজের জমি দিবে? নিজের টাকা দিয়ে জমি কিনে দেবে? নিজের বেতনের টাকায় ইট,রড, সিমেন্ট কিনে বাড়ি করবে? উত্তর যদি হ্যা হয়, তাহলেতো কোন কথাই নেই। আর যদি না হয় তাহলে প্রশ্ন উঠে, এটা কি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? কার টাকা, কার জমি?
মুস্তাফিজুরের বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেয়া হয়েছে। কেউ রা করেনি, কারন ঘরে বিদ্যুৎ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করার পর প্রায় আট কোটি টাকা খেলয়ারদের দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে খেলোয়াড়দের গাড়িও দেয়া হয়েছিল। জাতীয় দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে অন্তত দুটি করে ফ্ল্যাট দেবার পরিকল্পনাও প্রধানমন্ত্রীর আছে বলে জানা যায়।
পৃথিবীতে আর কোন "পেশা"র "চাকুরীজীবি"দের এমন পুরস্কার দেয়া হয় কিনা আমার জানা নেই। কারো জানা থাকলে শেয়ার করুন।
মিরাজের বাড়ি প্রাপ্তিকে 'ইনকাম' বলার সুযোগ নেই। মিরাজ কি মাসে মাসে বাড়ি পাবে? জাতীয় দলের খেলোয়ারা কি বেতনের সাথে মাসে মাসে গাড়ি, দু'টো করে ফ্ল্যাট পায়?
জবাব চাইবার মত যখন কেউ না থাকে তখনই মানুষ বাড়াবাড়ি করতে পারে। আজকে রাজনৈতিক দলের কোন নগণ্য নেতা/কর্মী যদি আমার/আপনার লুঙ্গি খুলে নিয়ে যায় তখন "লুঙ্গি নিছে তো কি হইছে যন্ত্রতো নিতে পারে নাই" বলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তবে হ্যা, ভবিষ্যতে যে যন্ত্রও নিয়ে যাবে না, বা যন্ত্র ব্যবহারের উপর ট্যাক্স বসিয়ে কাউকে "পুরস্কার/উপহার" দেয়া হবে না সেই গ্যারান্টি কিন্তু দেয়া যায় না।
কাজেই ট্যাক্স বসানোর আগেই যন্ত্রের ব্যবহার নিশ্চিত করুন। যন্ত্র খোয়া যাবার আগে বেশি বেশি ব্যবহার করে পুষিয়ে নিন। আফসোস কম হবে। ধন্যবাদ।

No comments: