একটা শিশু তার নিষ্পাপতা, সারল্য দিয়ে আমাদের আকৃষ্ট করে থাকে। সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, একটা হাসি দিবে, কঠিন পাথর হৃদয় তরল হয়ে যাবে। কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কেন?
১. চট্টগ্রাম আসার জন্য চিটাগাং রোড থেকে গাড়িতে উঠতে হয় আমাকে। আগে যে বাস সার্ভিস দিয়ে চিটাগাং রোড নামতাম সেটা সুপার লোকাল না হলেও মোটামুটি লোকাল ছিল। যাত্রীতে ঠাসা না হলেও জায়গায় জায়গায় থেমে লোক নিত। নামে সিটিং হলেও চিটিং করে দাঁড়ানো লোক নিত।
দূরে কর্মরত সকল মানুষের মত বাড়ী থেকে ফেরার পথে ব্যাগ যথেষ্ঠ ভারী থাকত। দেড় থেকে দুই ঘন্টার যাত্রাপথে ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে থাকা ঝামেলার ব্যাপারই বটে। একবার কিছুদূর যাবার পর ভর্তি বাসে এক মেয়ে উঠল। স্বভাবতই সিট ছিল না। পর্দানশীন মেয়েটির বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল এই মেয়ে বাসে চলাচলে অভ্যস্ত নয়, দাড়িয়েতো নয়ই। বিরক্ত হয়ে সিট ছেড়ে দিলাম। আরো কমপক্ষে দেড় ঘন্টার রাস্তা। ভারী ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থেকে মেয়েটি আমাকে বলল, ব্যাগ তার পায়ের কাছে রাখতে। আমি না না করেও রাখলাম।
২. এমনই আরেকদিন এক হিন্দু মহিলা স্বামী-সন্তানসহ বাসে উঠলেন। এর একটু আগেই এক বয়স্ক লোক বাসে উঠে তিনটি সিট দখলে নিলেন একদম পিছনের সারিতে। আরো কোন সীট ফাঁকা রইল না। মহিলা লোকটিকে সীট ছাড়তে বললে লোকটি বললেন, এই সীটে লোক আছে, গাড়িতে উঠছে। মহিলা বললেন, মহিলা বসতে দিবেন না? লোকটি বললেন, যারা উঠছে সেখানেও মহিলা আছে। কোলের বাচ্চা আছে। ঐ লোকের পরিচিতরা উঠার পর তারা সিটে বসল। গাড়ি ছেড়ে দেবার পর মহিলা গজ গজ করতে লাগলেন। "মহিলা, কিভাবে দাঁড়িয়ে যায়।" ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের মনে গজগজানির কোন জায়গা নেই। তাই যে যার সিটে বসে রইলাম।
৩. কোথায় যাচ্ছিলাম খেয়াল নেই। বাসে উঠেই দেখি এক মেয়ে বসে আছে। পাশের সিট খালি। পিছনের দিকে চলে আসলাম। আরো যাত্রী উঠল। তারাও পিছনে চলে আসল। এরই মধ্যে এক বয়স্ক চাচা উঠলেন। কমপক্ষে মেয়েটির বাবার বয়সি। মেয়েটির পাশে যেয়ে বললেন, "এখানে বসা যাবে?" মেয়েটি বলল, পিছনে বসেন। উনি আবার বললেন, "আপনার কি লোক আছে?" মেয়েটি ক্ষেপে গেল। বলল, "মেয়ে দেখলেই পাশে বসতে ইচ্ছে করে? পিছনেতো সিট খালি আছে। যান পিছনে যান।" চুন মুখ করে ভদ্রলোক পিছন দিকে এসে দুঃখের সাথে বলতে লাগলেন, "দেখলেন কি ব্যবহারটা করল। আমি ওর বাবার বয়সি!"
৪. স্থান সিলেট। শহর থেকে শাবিপ্রবি যাব। লোকাল সিএনজিতে উঠলাম। আমার সাথে আমার এক কলিগ। দু'জনই অবিবাহিত। পিছনে বসলাম। একটু এগোনোর পর এক মেয়ে উঠল। একপাশে আমি, মাঝখানে কলিগ, অন্যপাশে মেয়ে। একটু পরেই খেয়াল করলাম কলিগ আমার গায়ে হেলে পড়ছেন। আমি চেপে বসলাম। আমরা যতই চাপি, মেয়ে ততই চাপ দেয়। কিছুদূর যাবার পর মেয়েটি নেমে গেলে আমরা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলি।
৫. চিটাগাং ফিরছি। সীট পড়েছে এক মেয়ের পাশে। হেডফোন কানে দিয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। টানে বুঝলাম কুমিল্লার মেয়ে। কথা শেষ হতেই চায়না মোবাইলে লাউড স্পীকারে দিয়ে গান বাজাতে শুরু করল। ঘুমের ভান ধরে পড়ে রইলাম। বেশ কিছুক্ষন পর লাউড স্পীকারের অত্যাচার বন্ধ হল।
৬. চিটাগাং শহরে যাচ্ছি লোকাল বাসে। বাস ঠাসা লোকজনে। বাস এমন যারা একটু লম্বা তারা সোজা হয়ে দাড়াতে পারবে না। কাজেই সিট ছেড়ে দিলে ঝাকিতে মাথায় আলু না হলেও নিদেনপক্ষে ঘাড় ব্যথা হতেই পারে। একটু পরেই এক গাদা মেয়ে উঠল। তাতেও হেল্পারের মন ভরল না। মনের সুখে আরো যাত্রী নিল। দরজার সামনে চাপ বাড়াতে মেয়েগুলো পিছনদিকে চলে আসল। গায়ে গায়ে ভর্তা হবার জোগাড়। এক মেয়ে আমার এক কলিগের কোলে বসে পড়ার উপক্রম। বার বার নিষেধ করার পরও মেয়ে শুধু চাপ দেয়। এক পর্যাবে সিট ছেড়ে উঠতে বাধ্য হলেন।
৭. পাথর ঘাটার নির্লজ্জ মধ্যবয়সী হিন্দু স্কুল প্রাইমারী স্কুল শিক্ষিকাদের কথা বিস্তারিত বলা সমীচিন মনে করছি না।
এরকম ছোট ছোট ঘটনা আরো লেখা যায়। যারা দীর্ঘদিন ধরে বাসের যাত্রী তারা নিশ্চয়ই আরো বেশি লিখতে পারবেন। এখন সবসময় চেষ্টা করি জটলা এড়িয়ে যাবার। ব্যবস্থা একটা না একটা হয়েই যায় আলহামদুলিল্লাহ। সবারই যাবার তাড়া থাকে, থাকে না কেবল ধৈর্য্য!
পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধের জন্য শ্রদ্ধার জায়গাটা থাকা জরুরী। থাকার পরও যদি শ্রদ্ধা না করি তাহলে দোষ আমার। আর যদি জায়গা-ই না থাকে তাহলে বিচারের ভার যার যার বিবেকের উপর ছেড়ে দিলাম।
নোটঃ সমাধানের আলোচনা ইচ্ছে করেই করা হয় নি।
No comments:
Post a Comment