Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Friday, July 7, 2017

হাইকোর্টের মূর্তি ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা


কয়েকদিন আগে প্রশ্ন রেখেছিলাম যে, আপনার কাছে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ কি? এবং এর ভিত্তি কি?


কয়েকজন উত্তর দিয়েছেন নিজের মত তবে ভিত্তি কি তা উল্লেখ করেন নি তেমন কেউ। হয়ত ভিত্তির উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন নি। পরিষ্কার করি বিষয়টা। কোনটা ভাল, কোন মন্দ, কোনটা সবচেয়ে ভাল, কোনটা সবচেয়ে মন্দ; সেটা যদি যার যার বিচার-বিবেচনা ও বিবেকের উপর ছেড়ে দেই তাহলে এক এক জন এক এক অপরাধের কথা বলবে। কেউ বলবে সবচেয়ে বড় অপরাধ হল খুন করা, কেউ বলবে ধর্ষন করা, কেউ বা অন্য কিছু বলবে। কাজেই এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে মানবীয় যুক্তি-বুদ্ধির উর্ধ্বে উঠে আসমানী কিতাব সমূহের দিকে নজর দিতে হবে। সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল-কুরআন অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ হল "শিরক তথা আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করা।" ভিত্তি কুরআন ও হাদীস।

আবুল ওয়ালীদ এবং বিশর (র)...... আব্দুল্লাহ (ইব্‌ন মাসঊদ) (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ
"যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি" (৬:৮২) এ আয়াত নাযিল হলে রাসূল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) এর সাহাবিগণ বললেন, "আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে যুলুম করেনি?" তখন আল্লাহ্‌ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ "নিশ্চয়ই শির্‌ক চরম যুলুম।" (সূরা লোকমান, আয়াত ১৩) (সহিহ বুখারি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৯, ইসলামি ফাউণ্ডেশণ) 

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নে মাস্‌উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি? তিনি বললেনঃ (কাউকে) আল্লাহ্‌র প্রতিদ্বন্দ্বী বা সমকক্ষ সাব্যস্ত করা, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি তাঁকে বললাম, এটা অবশ্যই মহাপাপ। আবার জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোন্‌টি? তিনি বললেনঃ তোমার সন্তান তোমার খাদ্যে ভাগ বসাবে এই আশংকায় তুমি তাকে হত্যা করছ। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোন্‌টি? তিনি বললেনঃ তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যেনা করা। [সহিহ মুসলিম, পৃষ্ঠা-১৭৪, প্রথম খণ্ড, ইসলামি ফাউণ্ডেশন]

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাত ও জাহান্নাম ওয়াজিবকারী বস্তু দু'টি কি কি? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে অংশীদার না বানিয়ে মৃত্যুবরণ করলো সে জান্নাতী। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে শরীক বানিয়ে মারা গেলো সে জাহান্নামী। [সহিহ মুসলিম, পৃষ্ঠা-১৮০, প্রথম খণ্ড, ইসলামি ফাউণ্ডেশন] 

আবু যার (রাঃ) বলেন, একদা আমি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে দেখলাম তিনি একখানা সাদা চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন (তাই আমি চলে গেলাম) পুনরায় আমি তাঁর কাছে আসলাম, তখনও তিনি ঘুমে ছিলেন। অতঃপর আবার আসলাম, এবার তিনি ঘুম থেকে উঠেছেন, আমি তাঁর কাছে গিয়ে বসলাম। তিনি বললেনঃ যদি কোনো বান্দাহ্‌ বলে, "লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ" আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ্‌ নেই এবং এর ওপরেই তার মৃত্যু হয়, সে নিশ্চিত বেহেশ্‌তে প্রবেশ করবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, যদি সে যেনা করে এবং চুরি করে তবুও? তিনি বললেনঃ (হাঁ) যদি সে যেনা করে এবং চুরি করে তবুও। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, যদি সে যেনা করে এবং চুরি করে তবুও? তিনি বললেনঃ যদি সে যেনা করে এবং চুরি করে তবুও। এভাবে আমি তিনবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম আর তিনি একই জবাব দিলেন। অতঃপর তিনি চতুর্থবারে বললেনঃ যদিও আবু যারের নাক-ভুলুণ্ঠিত হয় তবুও। [টিকা-১] বর্ণনাকারী আবুল আসওয়াদ আদ্‌দীলী বলেন, আবু যার (রা) এ কথা বলতে বলতে সেখান থেকে বেরিয়ে আসলেনঃ 'যদি আবু যারের নাক ভুলুন্ঠিত হয় তবুও। [সহিহ মুসলিম, পৃষ্ঠা-১৮২, প্রথম খণ্ড, ইসলামি ফাউণ্ডেশন] 

আশাকরি, উপরোক্ত হাদিসসমূহের মাধ্যমে আমার কথার উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়েছে। সবচাইচতে জঘন্য অপরাধ শিরকের অপরাধ যা নিশ্চিতভাবে জাহান্নামে নিয়ে যাবে চিরকালের জন্য। 
টিকা-১: কৃতকর্মের শাস্তি ভোগের পর জান্নাতে প্রবেশ করবে। 

মূর্তি নিয়ে এখানেই আমাদের আপত্তি। প্রতীকী মূর্তি টেনে আনে ভক্তি। পৃথিবীর জনসংখ্যার একটা উল্লেখ্যযোগ্য অংশ এই মূর্তির মাধ্যমে শিরক করে থাকে। এযুগে স্থাপন করা মূর্তি পরবর্তীযুগে শিরকের উপাদান হবে না সে গ্যারান্টি নেই। সম্মানার্থে দরবেশ-ওলীদের কবর সংরক্ষণ করে মুসলিম উম্মাহর একটা বড় অংশ বিভ্রান্ত হয়েছে। কাজেই যত্রতত্র এদেশে কেন মূর্তি স্থাপন না করে বৃক্ষ রোপন করলে অন্তত কিছু উপকার পাওয়া যেত। 

পরিশেষে মা-বাবার প্রসঙ্গে আসি। খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহঃ) তার এক বয়ানে বলেন, "কোন মাতা-পিতা যদি নিজেরা শিরক করে এবং সন্তানকে শিরক করতে বাধ্য করে তাহলে এরচেয়ে বড় যুলুম আর আছে নাকি? কোন মা-বাবা যদি নিজেরা শিরক করে এবং সন্তানকে শির্‌কে বাধ্য করে তবুও মা-বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না।" 

অনেকসময় খবরে দেখি ওমুক দেশের ওমুক ছেলে/মেয়ে তার বাবাকে মাকে পুলিশে দিয়েছে। মা-বাবা হয়ত অন্যায় কিছু করেছে সে সাথে সাথে ৯১১ এ ফোন করে পুলিশে খবর দিয়েছে। এমন সংবাদে আমরা খুশি হই, বাহ্‌বা দেই। "দেখ, দেখ, ওখানকার ছেলে-মেয়েরা কত সচেতন। আমাদের দেশেও যদি এমনটা হত অনেক ছেলে-মেয়ে শান্তিতে থাকত।" দেশি-বিদেশি মিডিয়া ঐ "ছেলে/মেয়েকে" জাতীয় বীর বানিয়ে ছাড়ে। 

ইসলাম মা-বাবাকে যে সম্মান দিয়েছে তার আর কোন বিধানের পক্ষে সম্ভব হয় নি। শিরকের মত অপরাধ করা এবং করতে বাধ্য করলেও যেখানে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না সেখানে পড়াশুনা করতে না দেয়া, ধমক দেয়া, মার-ধর করা, বয়স্ক ব্যক্তির সাথে বিয়ে দেয়ার মত অপরাধে "বাবা-মা"কে জেলে-হাজতে দিয়ে যারা নিজের আখের গুছিয়ে আখিরাত বরবাদ করছে তাদের জন্য একরাশ করুণা। এমন সন্তান হওয়া এবং এমন সন্তানের জন্মদাতা হওয়া থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ্‌ চাই। আল্লাহ্‌ কবুল করুণ। আমীণ।

No comments: