প্রায়ই ডাঃ জাকির নায়েক সম্পর্কে একটা অভিযোগ শুনি যে তিনি বলেছেন, "আল্লাহ তায়ালাকে 'ব্রক্ষা', 'বিষ্ণু' প্রভৃতি নামে ডাকা যাবে।" এই কথার উপর ভিত্তি করে আমরা অনেকেই তাকে নানান উপাধিতে ভূষিত করি। এই অভিযোগ কতটুকু সত্য সেটাই আজকে যাচাই করলাম।
ডাঃ নায়েক এই বিষয়ে আলোচনা করেছে তার "The Concept of GOD in major Religions" লেকচারে। মূল লেকাচারের ডাবিংকৃত বাংলা সিডি আমার কাছে আছে। সেখান থেকেই তার বুলি তুলে দিচ্ছি,
"আরেকটি চমৎকার বিশেষণ যার উল্লেখ আছে ঋগবেদে। এখানে স্রষ্টাকে ডাকা হচ্ছে ব্রক্ষা নামে। এটা ঋগবেদের গ্রন্থ ২, অধ্যায় ১, অনুচ্ছেদ ৩ এ উল্লেখ করা আছে। ব্রক্ষা অর্থ সৃষ্টিকর্তা। যার অর্থ আরবিতে খালিক্ব। আমাদের মুসলমানদের কোন আপত্তি নেই যদি কেউ আল্লাহ সুবহানা তায়ালাকে ডাকে খালিক্ব, সৃষ্টিকর্তা বা ব্রক্ষা নামে। কিন্তু কেউ যদি বলে ব্রক্ষা হল সেই সৃষ্টিকর্তা যার চারটি মাথা আছে, প্রত্যেক মাথায় একটি করে মুকুট আছে এবং তার চারটি হাত আছে; আমরা মুসলমানরা তাতে প্রবল আপত্তি জানাবো। এছাড়াও এটা নিষেধ করা হয়েছে যযুর্বেদের অধ্যায় ৩২, অনুচ্ছেদ ৩ এ। "না তাস্থি প্রতিমা আস্থি" স্রষ্টার কোন প্রতিমূর্তি নেই।
আরো একটি ব্যাপার হল, স্রষ্টাকে ঋগবেদে গ্রন্থ ২, অধ্যায় ১, অনুচ্ছেদ তিনে আরেকটি চমৎকার নামে ডাকা হয়েছে। সেটি হল বিষ্ণু। বিষ্ণু অর্থ রক্ষাকারী। এই বিষ্ণু শব্দকে আরবী করলে এর মানে হবে রব। আমাদের মুসলমানদের কোন আপত্তি নেই যদি কেউ আল্লাহ সুবহানু তায়ালাকে 'রব', পালনকর্তা, 'বিষ্ণু' বা রক্ষাকারী বলে ডাকে। কিন্তু কেউ যদি বলে বিষ্ণু হল সেই সৃষ্টিকর্তা যার চারটি হাত আছে আর তার ডানহাতে একটি সুদর্শন চক্র আছে আর তার বামহাতে ধরা আছে একটি শাখ, আর তিনি পাখির পিঠে চড়েন অথবা সাপের পিঠে চড়ে বসেন; আমরা মুসলমানরা তাতে প্রবল আপত্তি জানাবো। বরং যযুর্বেদের অধ্যায় ৪০, অনুচ্ছেদ ৮ এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঈশ্বর হলে নিরাকার।"
পোস্ট শেষ। বিচারের ভার বিবেকের উপর সাবস্থ্য করলাম। তার বক্তব্য কি ছিল এবং আমরা তার বক্তব্যকে কিভাবে উপস্থাপন করেছি।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ!
“এই ধারনার দ্বারাও নিঃসন্দেহে ডাক্তার জাকির নায়েক কাফির কাফির কাফির! যে সন্দেহ করবে সেও কাফির হয়ে যাবে”।
[যেকোন ধরনের ফালতু কমেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।]
জ্বী না। উক্ত ফতোয়া আমি দেই নি। দিয়েছেন জৌনপুরের পীর সাহেব ড. সৈয়দ মুফতী মুহাম্মাদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেব। ফতোয়ার যে কপিটুকু আমার কাছে পৌছেছে সেটা সম্ভবত একটা স্ক্রিনশট এবং স্ক্রিনশট কারো ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে। কাজেই জৌনপুরের পীর সাহেব আসলেই এই ফতোয়া দিয়েছেন কিনা সেটা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। আসুন দেখা যাক কিসের উপর ভিত্তি করে ডা. জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে এত কঠোর ফতোয়া দেয়া হল।
অভিযোগ হল, ডা. নায়েক স্বীকার করেছেন যে কুরআনে ব্যকরণগত ভুল আছে। রেফারেন্স হিসেবে ডা. জাকির নায়েকের লেকচারসমগ্রর প্রথম খন্ডের ৫১২ নং পাতার কথা বলা হয়েছে। হার্ড কপি না থাকায় নেট থেকে পিডিএফ লোড করে রেফারেন্স চেক করতে হল। চেক করতে যেয়ে দেখি এটা ডা. ক্যাম্পবেলের সাথে ডা. জাকির নায়েকের আলোচনার অংশ। সৌভাগ্যবশত এই আলোচনার সিডি আমার কাছে ছিল। দীর্ঘআলোচনার ঐ অংশটুকু একসময় আমি খুজে পাই।
আলোচনার শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে ডা. জাকির নায়েককে এক ব্যাক্তি যে প্রশ্নটি করেন সেটি হবহু তুলে দিচ্ছি ভিডিও থেকে।
“ডা. নায়েক আপনি বললেন যে কুরআন শরীফে নাকি কোথাও কোন ভুল নেই। আমি কুরআনে ২০টারও বেশি ভুল দেখতে পাচ্ছি। সেটা আরবী ব্যাকরনে।এখন তার কয়েকটা আমি আপনাকে বলছি। “ইন্নাল্লাযিনা আমানু ওয়াললাযি না হাদু ওয়াসাবিঊন” এটা আছে সুরা বাকারায়। আর সূরা হাজ্বে “ইন্নাল্লাযিনা আমানু ওয়াললাযিনা হাদু ওয়াসাবিই’ন”। এখানে কোনটা ঠিক? সাবিঊ’ন নাকি সাবিই’ন?এক নম্বর।
দুই নম্বর হল, কুরআনে আছে, হ্যা, কিন্তু এছাড়াও আরো আছে। সূরা ত্বাহার ৬৩ নম্বর আয়াতে আছে, “ইন্নাহা যানি লিছাহিরান” ভুল। “ইন্নাহা যাইনি লিছাহিরান”। এটার কি ব্যাখ্যা দেবেন?
[এই পর্যায়ে সঞ্চালক বলেন সময় স্বল্পতার কারনে তার প্রথম প্রশ্নের উত্তর দেয়া হবে এবং ভদ্রলোক তাতে সম্মত হন।]
ডা. জাকিরের উত্তর, “ভাই, আপনি খুব সুন্দর একটা প্রশ্ন করেছেন। আমি আরেকটু সহযোগীতা করতে চাই যে, হ্যা, আপনি সবগুলো ব্যাকরণগত ভুলের কথাই বলেন। আর আপনার হাতের বইটা লিখেছে আব্দুল ফাদি। ঠিক? Is the Quran enviable? আমিও দেখতে পাচ্ছি, হ্যা। আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালই দেখতে পাই।
আমি এই ২০ টা ভুলের সবগুলোর উত্তর দেব। কারন আমি বইটা পড়েছি। আমি সবগুলোর উত্তর দেব ইন শা আল্লাহ। এক নম্বর পয়েন্ট ভাই, এক নম্বর পয়েন্ট। এখানে এক নম্বর পয়েন্ট হল যে, আরবী সব ব্যাকরণ এসেছে কুরআন থেকে। কুরআন হল সর্বোচ্চ আরবী বই। যে বইটাতে সবচাইতে উচু মানের সাহিত্য আছে। আরবী ভাষার সব ব্যাকরণ এসেছে কুরআন থেকেই। কুরআন হল ব্যাকরণের মূল গ্রন্থ। আর কুরআন যেহেতু ব্যাকরণের মূল গ্রন্থ, সব ব্যাকরণ এসেছে কুরআন থেকে, কুরআনে কোন ভুল থাকতে পারে না। এক নম্বর পয়েন্ট।[***point to be noted carefully]
দুই নম্বর পয়েন্ট। ব্যাপারটা এরকম যে, আপনি একটা রুলার নিলেন, সেই রুলারের গায়ে দাগ কাটা আছে, তারপর আপনি বললেন যে, মাপটা ভুল হয়েছে। এটা বেশ অযৌক্তিক। দুই নম্বর পয়েন্ট, আরবে বিভিন্ন আলাদা আলাদা গোত্রে, আপনি যদি আরবী জানেন, আর ডা. উইলিয়াম ক্যাম্পবেল আমার সাথে একমত হবেন যে, আরবের গোত্রগুলোর মধ্যে ব্যাকরণ মাঝে মাঝেই বদলে যায়। কিছু কিছু আরবী গোত্রে যে শব্দটা স্ত্রীবাচক, অন্য আরেক গোত্রে সে শব্দটাই স্ত্রীবাচক। একই শব্দ তবে গোত্রভেদে ব্যাকরণ বদল হতে থাকে। এমনকি শব্দের লিঙ্গও বদলে যায়। তাহলে আপনি কি কুরআনকে সবগুলো ব্যাকরণ দিয়ে পরীক্ষা করবেন? না। আর এছাড়াও কুরআনের ভাষা এত উচুমানের যে, এতই উঁচু মানের, এর কাছাকাছি কোন সাহিত্য নেই। আর কুরআনের বিরুদ্ধে অনেক বই আছে, ইন্টারনেটে গেলে দেখবেন, ১২ টা ব্যাকরণে ভুল, ২১ টা ব্যাকরণে ভুল। আব্দুল ফাদি, ২০ টা ব্যাকরণে ভুল। আপনাদের কি ধারনা খ্রিষ্টানরা এই বইগুলো বের করেছে? কারা এই বই বের করেছে? জানেন কারা করেছে? মুসলমানরাই, মুসলমান পন্ডিতরা, যেমন জাবাব সারি। তারাই এই বইগুলো বের করেছেন। কুরআনের ব্যাকরণ এত উঁচু মানের যে, কুরআনের ভাষা মাঝে মধ্যেই প্রচলিত আরবীর বিরুদ্ধে যায়। কুরআনের ব্যাকরণ এত উঁচুমানের, কুরআনের ব্যাকরণ এতই উঁচুমানের, এইজন্যই তারা উদাহরণ দিয়েছে। আমিও কয়েকটি উদাহরণ দেব। এতেই আপনারা সবগুলো উত্তর পেয়ে যাবেন।
তারা উদাহরণ দিয়েছে যে, কুরআনে লেখা আছে, লূত (আঃ) এর গোত্রের লোকজন তারা সকল নবীকে ত্যাগ করেছে। বলা আছে সব নবীকে তারা বর্জন করেছে। ডা. উইলিয়াম ক্যাম্পবেল বললেন, নূহ নবীর গোত্রের লোকজন তারা সব নবীকে ত্যাগ করেছে। আমরা ইতিহাস থেকে জানি মাত্র একজন নবীকে তাদের গোত্রে পাঠানো হয়েছিল। তাহলে এইখানেও ব্যাকরণে ভুল আছে।কুরআনের বলা উচিত ছিল একজন নবীর কথা, বহুবচন না। আর আমি একমত,[#point_to_be_noted_again ] আর আমার-আপনার মত লোকের কাছে মনে হবে, এটা ব্যাকরণের ভুল। কিন্তু যদি আপনারা আরবদের লেখা বইগুলো পড়ে থাকেন, কুরআনের আসল সৌন্দর্য্যটা কি? সৌন্দর্য্য হল, কুরআনে কেন একজন নবীর কথা না বলে নবীদের কথা বলা হয়েছে। আপনারা জানেন কেন? কারন আমরা জানি, সব নবীদের হেদায়েতের বাণী মূলত একটাই, যে ঈশ্বর একজনই। তৌহিদের বাণী, আল্লাহ সুবহানা তায়ালার বাণী। লূত (আঃ) এর লোকজন এবং নূহ (আঃ) এর লোকজন তাদের নবীকে ত্যাগ করেছিল। আর পরোক্ষভাবে তারা নিজদের নবীকে ত্যাগ করে সব নবীদেরই ত্যাগ করেছে”।
মন্তব্য ১. জাকির নায়েকের লেকচার সমগ্রর সমস্যা হল উনার ভিডিওর বক্তব্যের সাথে বইয়ের লেখার সামঞ্জস্যের অভাব। দেখা যায়, উনি একটা কথা বলেছেন একভাবে কিন্তু বইয়ে লেখাতে এসেছে অন্যভাবে। এসব ক্ষেত্রে লেখার সাথে ভিডিওর বক্তব্য মিলিয়ে দেখে তারপর মন্তব্য করা দরকার আমাদের। উক্ত ফতোয়ায় এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেব এই শ্রমটুকু দিয়েছেন কিনা আল্লাহই ভাল জানেন।
মন্তব্য ২. Point to be noted again অংশটুকু আরেকবার পড়ুন। স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে যে, ডা. জাকির নায়েক এই ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, আমার-আপনার মত লোকের কাছে মনে হবে এটা কুরআনের ব্যাকরণগত ভুল। এই “একমত” এর বিষয়টা যখন পূর্ববর্তী লাইন অর্থাৎ “তাহলে এইখানেও ব্যাকরণে ভুল আছে।কুরআনের বলা উচিত ছিল একজন নবীর কথা, বহুবচন না” –এর সাথে একত্রে ভাবা হয় তখন ডা. নায়েকের কথার সম্পূর্ণ উলটো অর্থ দাঁড়ায়। এটা ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত, আল্লাহই ভাল জানেন।
মন্তব্য ৩. ফেসবুকের হোমফিডে প্রায়ই একটা হাদিস আসে, যেটির মর্মার্থ এমন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন, “কোন ব্যাক্তি অপর কোন ব্যাক্তিকে কাফের বললে দু’জনের একজন অবশ্যই কাফের হবে”। সংযুক্ত ছবি অনুযায়ী জৌনপুরের পীরসাহেব ড. সৈয়দ মুফতী মুহাম্মাদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ডা. জাকির নায়েককে কাফির বলেছেন, সন্দেহকারীকেও কাফির বলেছেন।
কে কাফির হয়ে মারা যায় সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা!
[পোস্টের ভুলত্রুটি সহনশীল দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল]
No comments:
Post a Comment