কথায় কথায় সেদিন গোপাল ভাড়ের কথা উঠল।
"কিছুদিন ধরে গোপাল রাজসভায় আসে না। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র চিন্তিত হপ্যে মন্ত্রীকে পাঠালেন গোপালের খবর নিতে। খবর নিয়ে মন্ত্রী রাজাকে জানালো যে, গোপাল এখন নতুন ধান্ধা শুরু করেছে। রাজ্যের প্রজাদের সাথে সম্ভব অসম্ভব বিষয়ে সে বাজি ধরে বেড়ায়। কৃষ্ণচন্দ্র গোপালকে ধরে আনার জন্য লোক পাঠালেন। গোপাল আসলে রাজা তাকে বললেন,
"কিহে গোপাল আজকাল যে তোমার দেখাই পাওয়া যায় না। থাকো কোথায় তুমি?"
"আজ্ঞে মহারাজ, আমিতো এই টুকটাক বাজি ধরে থাকি। বাজির টাকায় আমার ভালই চলে যাচ্ছে। মন্ত্রী আমাকে যে বেতন দেন তাতে তো আর সংসার চলে না। তাই বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করতেই.... "
"কি! বলছো কি তুমি হে? তা কি বাজি খেলো তুমি?"
"সেটা জানতে হলেতো আমার সাথে আপনাকে বাজি ধরতে হবে।"
"বাজি? কি বাজি?
"অমুক মহারাজ আপনার সামনে মাথা পেতে দেবেন চাটি মারার জন্য"
"কি বলছো তুমি? মহারাজ কেন আমাকে মাথা পেতে দেবেন। তাও চাটি মারার জন্য! তোমার কি মাথা খারাপ হল নাকি?"
"আজ্ঞে, মহারাজ মাথা আমার ঠিকই আছে। আপনি বাজিতে রাজি কিনা বলুন।"
"ঠিক আছে, ঠিক আছে। তোমাকে কি দিতে হবে?"
"দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা "
"আর যদি তুমি বাজিতে হেরে যাও?"
"আপনি যে শাস্তি দেবেন মাথা পেতে নেব।"
"আচ্ছা ঠিক আছে।"
"তবে মহারাজ। ৫ হাজার স্বর্ণমুদ্রা কিন্তু আমাকে অগ্রিম দিতে হবে।"
"মন্ত্রী ওকে ৫ হাজার স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে দাও"
স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে গোপাল চলল পাশের রাজ্যে। পাশের রাজ্যের রাজসভায় গোপালকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
"কি হে গোপাল। অনেকদিন পর এলে। তা, কেমন চলছে তোমাদের?"
"মহারাজ তাতো চলেই যাচ্ছে। তবে আমি একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে আপনার কাছে এসেছি"
"বিশেষ উদ্দেশ্য? কি উদ্দেশ্য?"
"আজ্ঞে মহারাজ, আমিতো আমার ঐ রাজ্যে বাজি ধরে জিতে চলেছি। কেউ আমাকে পরাস্থ করতে পারে নি। তাই আপনার রাজ্যে এসেছি। যদি কেউ আমাকে হারাতে পারে! আর আপনি যেহেতু রাজা তাই আপনার সাথেই বাজি খেলতে চাই"
"বাজি! তা কি বাজি?"
"বাজি এই যে, আগামী তিনদিন তিনরাত পর আপনার মাথার তালু নরম হয়ে যাবে।"
"হে হে হে, মাথার তালু আবার নরম হয় নাকি? গোপাল তুমি বাজিতে নিশ্চিত হারবে।"
"সে মহারাজ তিনদিন তিনরাত পরেই বোঝা যাবে। যদি আমি জিতে যাই আমাকে তিন হাজার স্বর্ণমুদ্রা দেবেন। আর হেরে গেলে আমার কাছ থেকে রেখে দেবেন।"
"হে হে হে, ঠিক আছে।"- রাজা ভাবলেন এবার গোপালকে ভালভাবে জব্দ করা যাবে। আর প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথার তালু নরম হয়ে গেল কিনা সেটা রাজা পরীক্ষা করেন।
ওদিকে গোপাল রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে খবর পাঠিয়ে দিল তিনদিন পর এ রাজ্যে আসার জন্য।
দেখতে দেখতে তিনদিন পার হয়ে গেল। রাজসভায় গোপাল উপস্থিত। রাজা বললেন,
"গোপাল এবার তুমি বাজিতে ঠিকই হারলে। আমার মাথার তালু ঠিকই আছে। নরম হয় নি"
মৃদু হেসে গোপাল বলল, "মহারাজ, সেটাতো পরীক্ষার বিষয়। পরীক্ষা করে বলতে হবে। তবে আপনি মহারাজা, আপনাকে পরীক্ষা করতে আরেকজন রাজার প্রয়োজন। যেন তেন ব্যাক্তিতো আর একজন মহারাজকে পরীক্ষা করতে পারে না।"
বলতে বলতেই রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রাজসভায় প্রবেশ করলেন। মহারাজ তাকে দেখেই বললেন,
"এই যে কৃষ্ণচন্দ্র, এসো এসো। দেখো দেখি তোমার গোপাল কি বলে! আমার মাথা নাকি নরম হয়ে গিয়েছে। একটু চাটি মেরে দেখতো।" বলেই রাজা নিজ মাথাটা কৃষ্ণচন্দ্রের দিকে এগিয়ে দিলেন।
বলছিলেন আমার এক কলিগ। গোপালতো বাজিতে জিতে গেল। কিন্তু রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আদেশে তাকে এই বাজির খেলা বন্ধ করতে হল। গোপাল যেহেতু বলেছিল তার সংসার চলে না তাই সে বাজির খেলা ধরেছে সেহেতু রাজা তার বেতন বাড়িয়ে দিলেন।
আমি বললাম, আধুনিক যুগেও এমন গোপাল ভাঁড়ের দেখা মেলে।
কলিগ আগ্রহ ভরে বললেন, কেমন?
বললাম, কেন আপনি ব্যাংক ম্যানেজারের ঘটনা শুনেন নি? কোন এক ব্যাংকের ম্যানেজার দেখলেন তার এক ক্লায়েন্ট প্রতিদিনিই এক লাখ, দু লাখ টাকা একাউন্টে জমা দেন। প্রতিদিন এত টাকা কোথায় পায় সেটা জানতে একদিন তিনি ঐ ক্লায়েন্টকে ডাকালেন। বললেন,
"কি ব্যাপার? আপনি কি করেন? প্রতিদিন এত টাকা কোথায় পান?"
"স্যার, আমিতো আসলে তেমন কিছু করি না। তবে মানুষের সাথে বাজি ধরে থাকি।"
"ধূর কি বলেন? বাজিতে কি প্রতিদিন এত টাকা জেতা যায়?"
"ঠিক আছে স্যার। আপনি আমার সাথে বাজি ধরেন তাহলেওতো বুঝবেন।"
"কি বাজি?"
"বাজি এটাই যে, আপনার বাম উরুতে একটা লাল তিল আছে। ৫ লাখ টাকা বাজি।"
ম্যানেজার চোখ লোভে চকচক করে উঠল, এতো বিরাট সুযোগ! ৫ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। বললেন, "ঠিক আছে। আমি এক্ষুনি দেখিয়ে দিচ্ছি আছে কি নেই।"
"না স্যার। আজকে না। কালকে আমার তিনজন বন্ধু আসবে। তারা পরীক্ষা করে দেখবে আপনার উরুতে লাল তিল আছে কিনা।"
পরেরদিন ঐ ভদ্রলোক তার তিনজন বন্ধু নিয়ে আসলেন। ম্যানেজার প্যান্ট খুলে তার উরু দেখিয়ে দিল। তারাও পরীক্ষা করে দেখলেন। পরীক্ষার পর ঐ ভদ্রলোক ম্যানেজারকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে দিলেন।
তারপরের দিনই লোকটি ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা জমা দিল। ম্যানেজারের মাথা নষ্ট। তিনি লোকটিকে ডেকে বললেন, "কি ব্যাপার? এত টাকা কোথায় পেলেন?"
লোকটি তখন মৃদু হেসে বলল, "স্যার, আসলে আমার ঐ তিন বন্ধু হলেন উকিল। তাদের সাথে আমার বাজি হয়েছিল ১৫ লাখ টাকার। বাজির বিষয় হল, অমুক ব্যাংকের ম্যানেজার তাদের সামনে প্যান্ট খুলে দিবেন। বাজিতে আমি জিতেছি। তাই না স্যার? পাচ লাখ টাকা আপনাকে দিলাম। আর বাকিটা ব্যাংকে জমা করলাম।"
বাহ! ভালইতো। পুরো আলাদিনের চেরাগ!- ফোঁড়ন কাটলেন আরেকজন।
আলাদিনের চেরাগ পেয়েও লাভ নেই। যদি না আপনার আশেপাশের লোকজন সুবিধার না হয়। - আমি ফোঁড়নটাকে আমলে নিলাম না।
সেটা আবার কেমন?
তাহলে শোনেনঃ জাহাজ ডুবির পর অনেক কষ্টে তিনজন লোক একটা দ্বীপে পৌছল। তাদের মধ্যে একজন আমেরিকান, আরেকজন আফ্রিকান, অপরজন বাংলাদেশী। ধূ ধূ সেই দ্বীপে তেমন কোন গাছ-পালা নেই। ক্ষুৎপিপাসায় যখন তারা কাতর হয়ে পড়ল তখনই দূরে বালুর উপর কি যেন চিক চিক করে উঠল। কাছে যেতেই বোঝা গেল সেটা একটা চেরাগ। ঘষা দিতেই দৈত্য হাজির।
"হুকুম করুন। আমি আপনাদের তিনটা ইচ্ছা পূরণ করব।"
তিনজন পরামর্শ করে ঠিক করল। সবাই একটি একটি ইচ্ছার কথা বলবে। প্রথমেই আমেরিকান বললঃ
"আমি আমেরিকায় থাকি। পরিবার পরিজন ছেড়ে একা এখানে থাকতে ভাল লাগছে না। তুমি আমাকে আমার পরিবারের কাছে দিয়ে আসো।"
মুহূর্তেই দৈত্য আমেরিকানকে তার বাড়িতে পৌছে দিল। এবার আফ্রিকান লোকটি পালা। সে বললঃ
"আমি আফ্রিকায় নিজের দেশে যাচ্ছিলাম। জাহাজ ডুবিতে এখানে আটকা পড়েছি। তুমি আমাকে আমার দেশে দিয়ে আসো।" দৈত্য তাকে নিয়ে চলে গেল। কিছুক্ষন পর ফিরে আসলে বাংলাদেশী ভদ্রলোক বললেন, "ওরা তো চলে গেল। একা একা ভাল লাগছে না। তুমি এক কাজ করো। ওদেরকে নিয়ে আসো!"
হা, হা, হা! আপনি ঠিকই বলেছেন। - হাসতে হাসতে কলিগ বললেন। বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বিশেষ জ্ঞানী থাকে। এমনভাব করে যেন তারা সব জানে। দুই বন্ধুর কথা জানেন না? বলছি শোনেন। দুই বন্ধু বিমানে করে কোথাও যাচ্ছিল। এদের মধ্যে বোকাসোকা বন্ধুটা ভাবল আমার বন্ধুতো অনেক কিছু জানে তাকে জিজ্ঞেস করি এখন বিমান কোন দেশের উপর দিয়ে যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করতেই জ্ঞানী বন্ধুটি জানালা দিয়ে বাইরে হাত দিয়ে দেখে বাইরে খুব ঠান্ডা। হাত জমে যাবার অবস্থা। সে দ্রুত হাত ভিতরে টেনে নিয়ে এসে বলল,
"দোস্ত, যা ঠান্ডা বাইরে! এটা নির্ঘাত সাইবেরিয়া!"
কিছুক্ষন পর আবার বন্ধু জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা বন্ধু এখন আমরা কোথায় আছি?"
সেই বন্ধু আবারো বাইরে হাত দিয়ে দেখল হাতে খুব গরম লাগছে। সে হাত ভিতরে টেনে এনে বলল, "বাইরেতো অনেক গরম। এটা নিশ্চয়ই সাহারা মরুভূমি!"
ঘন্টাখানেক পর বন্ধু তাকে আবারো জিজ্ঞেস করল, "দোস্ত দেখতো এটা কোন জায়গা।" বন্ধু হাত বাইরে দিল। হাত ভিতরে এনে দেখে হাতঘড়িটা নেই। সে চেঁচিয়ে বলল, "গুলিস্তান, গুলিস্তান..."
অফিসে এমন আড্ডা হলে অফিস করার মজাই আলাদা।
No comments:
Post a Comment