অফিসে আসার পরপরই এক হিন্দু ভাই তার মেয়ের বিয়ে ঠিক হবার খবর দিল। সুসংবাদ বলব নাকি দু:সংবাদ বলব বুঝতে পারছি না। বর যাত্রীর বেশি দাবী দাওয়া নেই। ৪০০ বরযাত্রী খাওয়াতে হবে, এক ভরি স্বর্ণ দিতে হবে, খাট, ড্রেসিং টেবিল আর প্লাস্টিকের (RFL) ডাইনিং টেবিল হলেই চলবে। তবে অনুষ্ঠান করতে হবে আগ্রাবাদ অথবা আন্দরকিল্লার কোন কমিউনিটি সেন্টারে।
আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। তার এসব কথার অর্থ হল তাকে অনুষ্ঠান করার জন্য টাকা দিতে হবে। সাথে আরেকজন হিন্দু কলিগ ছিলেন। এসব কথা শুনেই তিনি রেগে গেলেন। আমরা হিসাব করলাম ৪০০ জনের খাবারের খরচ ২ লাখ টাকা, একভরি স্বর্ণ ৫০ হাজার, ফার্নিচার ধরলাম আরো ৫০, কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়াতো আছেই। শুধু বিয়ের খরচই কমপক্ষে ৩.৫-৪ লাখ টাকা। আর অন্যান্য অনুষ্ঠানের খরচতো আছেই।
সবমিলিয়ে ধরলাম ৫ লাখটাকা। ৯ হাজার টাকার চাকুরিওয়ালা মেয়ের বিয়ে দেয় ৫ লাখ টাকায়! এখানেই শেষ নয়। বিয়ের পর জামাইয়ের বাড়িতে অমুক অনুষ্ঠান-বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনো। মেয়ের বাবা যতদিন বেচে থাকবে ততদিন এই অত্যাচার সহ্য করতে হবে।
মেয়ের বড় ভাই গতবছর HSC পাশ করেছে। এবার আপনারাই হিসেব করুন এদেশের আইন অনুযায়ী মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে কিনা?
আমি হু-হা করে কথা শুনলাম। একবার বললাম, এত খরচ করে বিয়ে দিচ্ছেন কেন? এরচেয়ে ভাল হয়ত পাবেন। অপেক্ষা করেন। উত্তর পেলাম, এরচেয়ে ভাল পাওয়া যাবে না। যেগুলো পাওয়া যাবে সেগুলোতে আরো খরচ বেশি হবে। তখন হয়ত ঘরের সব ফার্নিচার দিতে হবে। এখনতো মাত্র তিনটা ফার্নিচার দিতে হচ্ছে।
ঐলোক বের হয়ে যাবার পর আমি আমার হিন্দু কলিগকে বললাম, এইলোক হিন্দু বলে আমি কিছু বলি নাই। যদি মুসলমান হত তাহলে বলতাম। মুসলমান হয়ে হিন্দুকে ঝাড়লে ব্যাপারটা অন্যদিকে গড়াতে পারে।
আসলে হিন্দু-মুসলমান বলে কথা নয়। চিটাগাং এর মেয়ের বাপের রক্তচোষার নষ্ট রীতিটা অনেক পুরনো। এমনিতে চট্টগ্রামের কোন ছেলের সাথে বড় বড় কথা বলেন, তখন ডায়লগ মারবে, "চাটগাঁইয়া পোয়া, মেডিত ফইল্যে লোয়া"!
শুধু বিয়ের সময় লোহা আর লোহা থাকে না। মরিচা হয়ে ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে। আগে চিটাগাং এ কোন বিয়ের দাওয়াত থাকলে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। এখন যাই না। অনেক সময় মুখের উপর বলে দেই এই কারনে যাবো না। ভবিষ্যতেও যাওয়ার ইচ্ছা নেই। এমন ক্ষেত্রে কাউকে সাহায্য করারও ইচ্ছা নেই। বিয়ে হলে হোক, না হলে যা ইচ্ছা তাই হোক।
No comments:
Post a Comment