Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Thursday, August 25, 2016

শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা কখন থাকবে?


শিক্ষকদের নিয়ে আমার অনেক পজিটিভ অভিজ্ঞতা আছে। আবার নেগেটিভ অভিজ্ঞতাও আছে। আজকে কিছু নেগেটিভ অভিজ্ঞতা শেয়ার করব এবং দেখবো যে সেসব থেকে আমরা কি কি শিখতে পারি। 

সামাজিক বিজ্ঞান ছিল আমার কাছে অনেক বিরক্তিকর একটা বিষয়। প্রস্তর যুগে মানুষ কি করত না করত সেগুলো পড়াশুনার বিষয় করে লাভটা কি কখনই মাথায় আসত না। মুখস্থবিদ্যা বলে এগুলোর পিছনে সময় সময় দিতে হত বেশি আবার সহজে মুখস্থও হত না। ষষ্ঠ শ্রেণীতে থাকাকালীন সময়ে একজন কড়া শিক্ষক আমাদের সামাজিক বিজ্ঞান ক্লাস নেয়া শুরু করলেন। একগাদা মুখস্থ বিদ্যা প্রতিদিনের পড়া। কোনদিন হয়, কোনদিন হয় না। জনাব শিক্ষকের অভ্যাস ছিল ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে যে কেউ মুখস্থ বলতে না পারলে ঘাড়ে ধরে মাথা নিচু করিয়ে পিঠের উপর চড় অথবা কিল মারা। (মেয়েদের গায়ে হাত দেয়ার বিষয়টা এখন খুবই অমানবিক মনেহয়, তখন মনে হত না) পড়া বলতে পারি নি। এখন চড়/ কিলতো আর মাফ পাওয়া যায় না। ঐদিন জনাব শিক্ষকের কিলটা পড়েছিল মেরুদন্ডের নিচের দিকে হাড়ে। প্রচন্ড ব্যাথায় সাথে সাথে চোখ দিয়ে পানি এসে গিয়েছিল। সম্মিলিত শাখা ছিল। পড়া না পারার চেয়ে মেয়েদের সামনে কাঁদার লজ্জা বেশি ছিল। জনাব শিক্ষকের কপাল খারাপ যে তিনি তার একজন সামান্য ছাত্রের কশেরুকা ভাঙতে পারেনি, নিদেনপক্ষে বাকা করে পঙ্গু করে দিতে পারেন নি। 

এই ঘটনা থেকে আমরা কি শিক্ষা পেলাম? এটাই শিক্ষা পেলাম যে, কেউ যদি পড়া না পারে তাহলে তার স্পর্শকাতর জায়গায় আঘাত করে তাকে অসুস্থ-পঙ্গু করে দিতে হয়। অন্তত চেষ্টা করতে হয়। 

এখন হয় কিনা জানি না, আমাদের সময় ইন্টারস্কুল খেলা হত। অন্যকোন খেলা পারি না, কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি আমার সীমাহীন আগ্রহ ছিল। তখন সবেমাত্র স্কুলে রেডবল দিয়ে খেলা শুরু হয়েছে। কাজেই আগ্রহ চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। জনাব শিক্ষক আমার কয়েকজন বন্ধুকে ইন্টার স্কুল খেলার জন্য নির্বাচন করলেন। কোন সন্দেহ নেই ক্রিকেটার হিসেবে তারা আমার চেয়ে অনেক ভাল। আমি ভাবলাম ইন্টারস্কুলতো আর খেলতে পারব না, যাই, একটু প্র্যাকটিসতো করতে পারব। প্যাড পড়ব, কাঠের বল ধরব, হ্যালমেট লাগাবো--এই বা কম কিসে! বিকাল ৪ টা থেকে অনুশীলন শুরু হল। অনেকক্ষন এটা সেটা করার পর ব্যাটিং প্র্যাকটিস শুরু হল। আমি যেহেতু আউট অফ সিলেবাস, আমার পালা এল মাগরিবের আজানেরও পরে। ততক্ষনে অন্ধকারে লাল বল দেখা যায় না। অবশ্য জনাব শিক্ষক আমি ব্যাট হাতে নেয়ার আগেই অনুশীলনের সমাপ্তি ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমার বন্ধুদের কল্যাণে একটা বল খেলার সুযোগ পাই। অন্ধকারে বল দেখা যায় না ঠিকমত, প্রথম বলেই বোল্ড! এরই সাথে সাথে অনুশীলন সমাপ্ত। পুরো তিন-চার ঘন্টার অনুশীলনে জনাব শিক্ষক আমার সাথে কোন কথা বলেননি, টিপস দেন নি। ধমক ঠিকই দিয়েছিলেন। যাক, ব্যাট-বল যে ধরতে দিয়েছেন সে-ই বেশি। কান ধরে মাঠ থেকে বের করে দিলে কার কি করার ছিল? 

এই ঘটনায় শিক্ষনিয় কি আছে? কেউ যদি আগ্রহ নিয়ে কিছু শিখতে আসে তার প্রতি বিরূপ আচরণ করতে হবে। 

কলেজে পড়ি তখন। মসজিদ থেকে স্যান্ডেল চুরি হওয়াতে একজোড়া "ফী সাবিলিল্লাহ" বার্মিজ স্যান্ডেল নিয়ে ফিরে আসলাম। এই স্যান্ডেল পড়ে কলেজে কিভাবে যাই? এই মুহূর্তে নতুন স্যান্ডেল কেনাও সম্ভব না। এক্সটা কোন স্যান্ডেল, জুতো কিচ্ছু নাই। তারউপর হয়েছে বৃষ্টি। কলেজ গেট দিয়ে প্রবেশ করে পা টিপে টিপে হাটছি। পুরনো বার্মিজ স্যান্ডেল কি রকম পিচ্ছিল তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। কলেজের বারান্দায় দাঁড়ানো জনাব শিক্ষক আমার অবস্থা দেখে খুবই মজা পেলেন। ৩২ দাত বের করে "কি কি" করতে লাগলেন। লজ্জায়, অপমানে সেদিন ................. 

এই ঘটনা থেকে আমরা কি শিখলাম? আমিতো অনেক কিছু শিখেছি। আপনি কি শিখলেন একটু বলেন। 

বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যবহারিক পরীক্ষার নাম্বারের জন্য বৈষয়িক শিক্ষকের কাছে জিম্মী থাকে - এটা নতুন কোন কথা নয়। এই জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তির পথ একটাই। জনাব শিক্ষকদের নিকট প্রাইভেট পড়া। পরীক্ষার আগে আগে শুধু মাত্র ২ মাসের জন্য পদার্থবিজ্ঞান পড়েছিলাম সাজেশন ও ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য। জীব ও প্রানীবিজ্ঞান নিজে নিজে পড়তাম। বন্ধুরা এই ব্যাপারে আমাকে খুবই হেল্প করেছে। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ব্যবহারিক ক্লাসগুলোতে মনোযোগী থেকেছি সবসময় যাতে স্যাররা খাতার নম্বর কম দিতে না পারে। ভাইবাতে যা হবার হবে। উদ্ভিদবিজ্ঞানের ব্যবহারিক ছিল জবা ফুলের ব্যবচ্ছেদ। এই একটাই আমি ভাল করে বার বার ছবি একে অনুশীলন করেছি। ভাগ্যগুনে পড়লও এটাই। প্রথমেতো জনাব শিক্ষকদের সামনে জবাফুলের ব্যবচ্ছেদ করে দেখাতে হল, তারপর খাতায় আঁকাআঁকি। আমাদের দলের দুইজনের জবা ফুল পড়েছে। জনাব শিক্ষক তাকে এক কোণায় আর আমাকে আরেক কোণায় বসিয়েছেন। আমার বুদ্ধিমান বন্ধু সাথে সাথে পকেট থেকে কাজ বের করে ছাপ দিয়ে দিব্যি ছবি একে ফেলছে। তার দলের অন্যদেরও একে দিচ্ছে। একটু পর জনাব শিক্ষক আমার দিকে এসে আমার খাতা নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলেন। আমার ছবি নাকি সুন্দর হয়েছে, নকল করে আঁকছি কিনা। পুরোদস্তুর তল্লাশি নিলেন আমার যদিও ছবি আঁকায় কোনদিনই আমার হাত ভাল ছিল না। আমার বন্ধুর দিকে কিন্তু জনাব শিক্ষক ফিরেও তাকান নি। সে পুরো এক-দেড় বছর জনাব শিক্ষকে মাইনে দিয়েছে। কাজেই জনাব শিক্ষক জানেন সে এমনিতেই সব পারবে। আমিতো কোনদিনই যাই নি তাই আমাকে একটু পরীক্ষা করলেন আর কি। 

এই ঘটনা থেকে আমরা কি শিক্ষা পাই? শিক্ষা পাই যে, যারা আপনার নিকট প্রাইভেট পড়ে না, আপনার "শিক্ষক" পদের মূল্যায়ণ করে না তাদের দৌড়ের উপর রাখতে হয়। 

এসব কারনে "জনাব শিক্ষক" হলেই শ্রদ্ধায় আমার মাথা নুইয়ে আসে না। দেখে, শুনে, বুঝে ........! 

বিঃ দ্রঃ 

১. সম্মান যোগ্য ব্যক্তিকে করতে হয়। যোগ্য ব্যক্তি সম্মান না করা যেমন অন্যায়, অযোগ্য ব্যক্তিকে সম্মান করাও তেমনি অন্যায়। 

২. কেউ কেউ মনে করেন, আমার আরো স্মার্টলি চলাফেরা করা উচিত। সবিনয়ে বলতে চাই, ভিতর থেকে আমার স্মার্টনেসটা আসে না। সম্ভবত অল্পবয়সে জীবনের কঠিন দিকটা দেখে ফেলার কারনে "মেকী" স্মার্টনেসের প্রতি বিন্দুমাত্র আস্থা নেই।

No comments: