এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ হয়েছে তখন। প্র্যাকটিক্যাল চলছে। এরই মধ্যে খবর পেলাম এস এস সিতে ভাল রেজাল্টকয়ারীদের বোর্ড থেকে টাকা দিচ্ছে। কলেজের নোটিশ বোর্ডে দেখলাম আমার নামটাও আছে! টাকার পরিমাণটাও আমার জন্য যথেষ্ঠ। ভাবলাম দু-একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্ম কেনার টাকা হাতে রেখে বাকি টাকা দিয়ে একটা মোবাইল কিনব। এক বন্ধুর বাসা থেকে পুরনো পত্রিকা নিয়ে পড়তাম তখন। ফিচারড ফোনের বড় বড় বিজ্ঞাপন থাকত তখন পেপারে। সেখান থেকে সাধ ও সাধ্যের সমন্বয়ে সেট পছন্দ করার চেষ্টা করতাম। অবশেষে এক ফ্লেক্সির দোকানে একটা বিজ্ঞাপন দেখে একটা সেট পছন্দ হল। দোকানমালিককে বলে রাখলাম টাকা হাতে পেলেই এই সেটটা আমাকে এনে দিতে হবে।
এরই মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হল। তাবলীগের বড় ভাইরা আমাদের পিছনে সময় দিচ্ছেন। একটা জামাত বের করা যায় কিনা। এইচ এস সি পরীক্ষার পর জামাত বের করা কঠিন। কারন তখন অনেক ছাত্র কোচিং এ ভর্তি হয়। আমি সারাদিন নানা ধান্ধায় থাকি। আর একা একা জামাতে যাব না-এটা আগেই বলে দিয়েছি। খুব যে যাবার ইচ্ছা ছিল তেমনটাও নয়। যাই হোক, প্রায় রাত দশটার দিকে আমার এক বন্ধু আসল। সে এস এস সির পর জামাতে বের হয়েছিল। ঘনিষ্ঠ বন্ধু হবার কারনে আমি ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। সারারাত মসজিদে রাত্রিযাপন করে পরদিন ভোরে কাকরাইল মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। খরচা হিসেবে মোবাইল কেনার জন্য যে টাকা আলাদা করে রেখেছিলাম সে-ই টাকা নিয়ে নিলাম। ভাবলাম পরে টাকা জমিয়ে কিনব।
জামাতে থাকাকালীন সপ্তাহে একদিন বাসায় ফোন দিতাম। মানে পাশের বাসায় ফোন দিলে আম্মাকে ডেকে দিত। আম্মা সারা সপ্তাহ অপেক্ষায় থাকতেন আমার ফোনের জন্য।
এভাবে কিছুদিন অতিক্রান্ত হবার পর আমি ফিরে এলাম। আসার দু-একদিন পর আম্মা নিজে থেকেই বলছেন একটা মোবাইল কিনতে। আমি বললাম, মোবাইলের টাকাতো খরচ করে ফেলেছি। উনি বললেন টাকা উনি দেবেন। আমিতো পুরো অবাক! ঘটনাটা কি? আগে একবার আম্মাকে বলেছিলাম টাকা দিতে মোবাইল কেনার জন্য। তখন উনি টাকা দেন নি। আর এখন টাকা সাধছেন!
আপার কাছে শুনলাম ঘটনা। আমি জামাতে থাকাকালীন একদিন আম্মার মনে হল আমার সাথে কথা বলবেন। উনার এই স্বভাব আছে। একবার যদি মনে হয়, কারো সাথে দেখা করবেন বা কথা বলবেন তবে যতক্ষন পর্যন্ত সেটা না হবে ততক্ষন পর্যন্ত আর শান্তি নেই। তো, আম্মা পাশের বাসায় গেলেন আমাকে ফোন করার জন্য। যার মোবাইল তিনি আম্মাকে বললেন, খালাম্মা ৭ টাকা করে মিনিট কাটে! মোটকথা, তার আচরনে আম্মা খুব কষ্ট পেলেন।
আমি মনে মনে শুকরিয়া আদায় করলাম। জামাতেও যেতে পারলাম, ফিরেই মোবাইল পেয়ে যাচ্ছি। আবার সেই ফ্লেক্সির দোকানে গিয়ে বললাম সেট নিয়ে আসতে। কয়েকদিন পর উনি আমাকে Samsung SGH N710 মডেলের সেটটি এনে দিলেন।
তাবলীগে সময় দিলে দুনিয়াদারীর কোন ক্ষতি হয় না। ভাইদের জীবনে এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। কাকরাইল মসজিদে সাথীদের অভিজ্ঞতার বিবিরণ শুনলে হতবাক হয়ে যেতে হয়। আমার আমার এটা অতি সামান্য ব্যাপার।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ, ক্ষমাশীল!
No comments:
Post a Comment