গতকাল নাজনীন আক্তার হ্যাপি একটা পোস্ট দিয়েছেন।
"বিয়ে এখন করবো কি করবোনা?করবো কি করবোনা? করবো কি করবো না! "এই ঢং করতে করতে যে সময়টা চলে যায় সেই সময় টাতে শয়তান আরামসে গুনাহের সাগরে ডুবিয়ে না মারলেও নাকানি চুবানি খাইয়ে দিতে পারে।আর ওই নাকানি চুবানি খাওয়ার মধ্যই যে পরিমাণ গুনাহ হয় তার জন্য তো আগুন আছেই,চিন্তা কিসের!!! ঐ আগুনের ভিতর পোড়া তো পরের কথা ঐ আগুনের তাপেই তো সব ওলট পালট হয়ে যাবে!
যারা অবিবাহিত তারা ৫০% গুনাহ করে ফেলে বিয়ে না করার কারনে।
ভুলে গেলে হবে না যে,প্রথমত আমাদের বিয়ে করতে হবে আল্লাহর কথা মানার জন্য।দ্বিতীয়ত রাসূলের কথা মানার জন্য।তৃতীয়ত গুনাহ থেকে বাচার জন্য।আর এসবের তোয়াক্কা না করতে চাইলে বরং হিসাব করা শুরু করি কত তাপের আগুনে জ্বলবো!"
এই পোস্টে এই ভাই কমেন্ট করেছেন, "আপু আপনিও বিয়ে করে ফেলেন। কারন নিজে না মেনে অন্যকে উপদেশ দেয়াটা আমাদের ধর্মে নিষেধ আছে।"
অন্যত্র তিনি বলেন, "এটা সুন্নত। কারন আমাদের নবী (সাঃ) যে কাজ করতেন না, তা করার জন্য কাউকে নির্দেশ দিতেন না।" তিনি আরো বলেন, "যে ব্যক্তি নিজে না করে তা অন্যকে উপদেশ দিবে হাশরের ময়দানে তার জিব্বাহ কেটে দেওয়া হবে।"
আমাদের অনেকেই এই ধারনা করি। এই ধারনা সঠিক কি ভুল সেটা বলার আগে কয়েকটা প্রশ্ন করি। ধরা যাক, আমি মদ খাই। আমি জানি মদ খাওয়াটা ভাল না। এখন আমার ছেলে বা ভাই যদি মদ খাওয়া শুরু করে আমি কি তাকে নিষেধ করব না?
আবার ধরা যাক, আমার প্রচুর টাকা পয়সা আছে। কিন্তু আমি যাকাত দেই না। এই ব্যাপারটা আমার কলিগ জানেন। তার উপর যাকাত ফরজ নয়। এখন যদি তিনি আমাকে যাকাত দেবার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন তাহলে কি তার জিহ্বা কাটা হবে?
মনেকরি, আমার ভাইয়ের হজ্ব করার সামর্থ্য আছে। সে আলসেমী করে হজ্ব করছে না। এদিকে আমি হজ্ব করিনি বা আমার উপর হজ্ব ফরয নয়। আমি কি আমার ভাইকে আদেশ দিতে পারি না, যাও হজ্ব করে এসো?
সঠিক জিনিস ভুলভাবে উপস্থাপন করলে ভুল মানে দাঁড়ায়।
সূরা আল-বাকারাহ। আয়াত নাম্বার ৪৪। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা বলেন, "তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?"
এই আয়াতের তফসীরে "তফসীরে মা'আরেফুল কোরআন, প্রথম খন্ডের ২০১ পৃষ্ঠা"য় যা আছে তা হবহু তুলে দিচ্ছিঃ
"আমলহীন উপদেশ প্রদানকারীর নিন্দাঃ এ আয়াতে ইহুদী আলেমদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। এতে তাদেরকে ভৎসর্ণা করা হচ্ছে যে, তারা তো নিজেদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনকে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অনুসরণ করতে এবং ইসলামের উপর স্থির থাকতে নির্দেশ দেয়। (এ থেকে বোঝা যায় ইহুদী আলেমগন দীন ইসলামকে নিশ্চিতভাবে সত্য বলে মনে করত)। নিজেরা প্রবৃত্তির কামনার দ্বারা এমনভাবে প্রভাবিত ছিল যে, ইসলাম গ্রহণ করতে কখনো প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু যারাই অপরকে পুণ্য ও মঙ্গলের প্রেরণা দেয়, অথচ নিজের ক্ষেত্রে তা কার্যে পরিণত করে না, প্রকৃত প্রস্তাবে তারা সবাই ভৎসর্ণা ও নিন্দাবাদের অন্তর্ভুক্ত। এ শ্রেণীর লোকদের সম্পর্কে হাদীসে করুন পরিণতি ও ভয়ংকর শাস্তির প্রতিশ্রুতি রয়েছে। হযরত আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, হুযুর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, মি'রাজের রাতে আমি এমন কিছু সংখ্যক লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম যাদের জিহ্বা ও ঠোট আগুনের কাঁচি দিয়ে কাঁটা হচ্ছিল। আমি জিবরাঈল (আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম--এরা কারা? জিবরাঈল বললেন--এরা আপনার উম্মতের পার্থিক স্বার্থপুজারী উপদেশদানকারী, যারা অপরকে তো সৎকাজের নির্দেশ দিত, কিন্তু নিজের খবর রাখতো না। (কুরতুবী)
নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন, কতিপয় জান্নাতবাসী কতক নরকবাসীকে অগ্নিদগ্ধ হতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমরা কিভাবে দোযখে প্রবেশ করলে অথচ আল্লাহর কসম, আমরা তো সেসব সৎকাজের দৌলতেই জান্নাত লাভ করেছি, যা তোমাদের কাছে শিখেছিলাম?
পাপী ওয়ায়েজ উপদেশ প্রদান করতে পারে কি নাঃ উল্লেখিত বর্ণনা থেকে একথা যেন বোঝা না হয় যে, কোন আমলহীন বিরুদ্ধাচারীর পক্ষে অপরকে উপদেশ দান করা জায়েজ নয় এবং কোন ব্যক্তি যদি কোন পাপে লিপ্ত থাকে, তবে সে অপরকে উক্ত পাপ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিতে পারে না। কারণ, সৎকাজের জন্য ভিন্ন নেকী ও সৎকাজের প্রচার-প্রসারের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র নেকী। আর এটা সুস্পষ্ট যে, এক নেকী পরিহার করলে অপর নেকীও পরিহার করতে হবে এমন কোন কথা নেই, যেমন, কোন ব্যক্তি নামায না পোড়লে অপরকেও নামায পড়তে বলতে পারবে না, এমন কোন কথা নয়। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি নামায না পড়লে রোযাও রাখতে পারবে না, এমন কোন কথা নেই। তেমনিভাবে কোন অবৈধ কাজে লিপ্ত হওয়া ভিন্ন পাপ এবং নিজের অধীনস্থ লোকদেরকে ঐ অবৈধ কাজ থেকে বারণ না করা পৃথক পাপ। একটি পাপ করেছে বলে অপর পাপও করতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
যদি প্রত্যেক মানুষ নিজে পাপী বলে সৎকাজের নির্দেশ দান ও অসৎকাজ থেকে বাধাদান করা ছেড়ে দেয় এবং বলে যে, যখন নিষ্পাপ হতে পারবে, তখনই অপরকে উপদেশ দেবে, তাহলে ফল দাঁড়াবে এই যে, কোন তাবলীগকারীই অবশিষ্ট থাকবে না। কেননা, এমন কে আছে, যে পরিপূর্ণ নিষ্পাপ? হযরত হাসান (রাঃ) এরশাদ করেছেন-- শয়তান তো তা-ই চায় যে, মানুষ ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে তাবলীগের দায়িত্ব পালন না করে বসে থাকে।
মূল কথা এই যে, "তোমরা কি অপরকে সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা ভুলে বস?" আয়াতের অর্থ এই যে, উপদেশ দানকারী (ওয়ায়েজকে) আমলহীন থাকা উচিত নয়। এখন প্রশ্ন হতে পারে, ওয়ায়েজ এবং ওয়ায়েজ নয়--এমন কারো পক্ষেই যখন আমলহীন থাকা জায়েয নয়, তাহলে এখানে বিশেষভাবে ওয়ায়েজের কথা উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা কি? উত্তর এই যে, বিষয়টি উভরের জন্য নাজায়েয, কিন্তু ওয়ায়েজ বহির্ভুতদের তুলনায় ওয়ায়েজের অপরাধ অধিক মারাত্মক। কেননা, ওয়ায়েজ অপরাধকে অপরাধ মনে করে জেনে শুনে করছে। তারপক্ষে এ ওযর গ্রহণযোগ্য নয় যে, এটা যে অপরাধ তা আমার জানা ছিল না। অপরপক্ষে ওয়ায়েজ বহির্ভূত মূর্খদের অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। এছাড়া ওয়ায়েজ ও আলেম যদি কোন অপরাধ করে তবে তা হয় ধর্মের সাথে একপ্রকারের পরিহাস। হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, হুযুর (সাঃ) এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক অশিক্ষিত লোকদেরকে যত ক্ষমা করবেন, শিক্ষিতদেরকে তত ক্ষমা করবেন না।"
পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, বেআমল হলেও আমলের দাওয়তা দেয়া যাবে। বরং দিতে হবে। উল্লেখিত আলোচনায় ভবিষ্যতের (মৃত্য পরবর্তী জীবনের) এক খন্ডচিত্র ফুটে উঠেছে যেখানে, কিছু জান্নাতী কিছু জাহান্নামীদের দেখে খুবই অবাক হবে যে, তারা কিভাবে জাহান্নামে এল! অথচ তারা নিজেরা তাদের কথার উপর আমল করেই জান্নাত লাভ করেছেন। এখন যদি ঐ বেআমল বক্তা আমলের ওয়াজ না করতেন তবে ঐ জান্নাতীগন জান্নাত হতে হয়ত বঞ্চিত থাকতেন। সেটা কি আদৌ ভাল কিছু?
ব্যাপার হল, কেউ যদি অন্যকে বলে অথচ নিজে আমল করে না, তার সাজা হবে। তারমানে এই নয় যে, সে আরেকজনকে বলার কারনে তার সাজা হচ্ছে!
আমি নামাযের দাওয়াত দিয়ে নামায পড়ি না, আমার সাজা হবে। আমি দাওয়াতও দেই না, নামাযও পড়ি না। তাহলে কি আমার সাজা মাফ? অবশ্যই না।
ভাই মনেহয় ভেবেছেন, আমলের দাওয়াত দিলাম না, আমলও করলাম না। তাহলে সাজা হবে না। তাই দাওয়াত দেয়াকেই সাজার মূল কারণ বানিয়েছেন। অথচ ব্যাপারটা মোটেও তা নয়।
(ভুল-ত্রুটি হতে আল্লাহর পানাহ্ চাই।)
No comments:
Post a Comment