Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Sunday, April 10, 2016

কর্জে হাসানা

ইসলামের দু'একটা আইন মাঝে মাঝে আমার জ্ঞানে আসে না। মূল প্রসঙ্গে যাবার আগে একটু ঘুরে ফিরে আসি।
ধার বা কর্জে হাসানাকে ইসলামে যথেষ্ঠ উৎসাহিত করা হয়েছে। কেউ যদি ধার চায় তবে তাকে সাহায্য করা এবং কেউ বিপদে পড়লে না চাইলেও উপযাজক হয়ে ধার দেয়া পূন্যের কাজ। কর্জে হাসানার প্রচলনের অভাবে সুদি ব্যাংকের ঋনের বেড়াজালে মানুষ আটকে যেতে পারে। যাই হোক, ধরা যাক, আমার এক বন্ধু সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাকুরী করে। বিপদে পড়ে আমি তার কাছে ১ লাখ টাকা ধার চাইলাম। সে নানা কিছু চিন্তা করে আমাকে ধার দিতে রাজি হল।
এই ঘটনা যদি বিকাশ যুগের আগের হয় তবে টাকা পাঠানোর জন্য তাকে দূরবর্তী কোন ব্যাংকে যেতে হবে। ধরা যাকে সেই ব্যাংকটি গাড়ি যোগে এক ঘন্টার দূরত্ব অবস্থিত। যেতে আসতে মিনিমান দুই ঘন্টা। আমাকে ধার দিতে তার জীবন থেকে দু'ঘন্টা সময় ব্যয় হল, তার ভ্রমণের কষ্ট হল, টাকা পাঠানোর ব্যাংক ফীটাও তাকে ভরতে হল। বন্ধু আমার এই সব নীরবে সহ্য করল এই আশায় যে, যথা সময়ে আমি তার টাকা ফেরত দেব।
কিন্তু আফসোসের কথা হল তার যথাসময় আর আমার যথাসময় এক নয়। দুই মাসের কথা বলে টাকা নিয়েছি, ৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে, কিন্তু আমার যথাসময় আর আসে না।
এখন দেখা যাক ৫ বছরে তাত্ত্বিকভাবে একলাখ টাকার মূল্যমান কত থাক।
ইসলামিক আইন অনুযায়ী এক লাখ টাকা আমার হাতে থাকলেও বছর বছর আমার বন্ধুকেই যাকাত দিতে হবে। টাকা তার হাতে নেই, টাকার কোন সুবিধাও সে পাচ্ছে না, কিন্তু যাকাত তাকে দিতে হবে!
১,০০,০০০/৪০ = ২,৫০০। একলাখ টাকার প্রতিবছরে যাকাত ২৫০০ টাকা। কাজেই আমার বন্ধু ৫ বছরে যাকাত দিল = ২৫০০*৫ = ১২,৫০০ টাকা।
টাকার মূল্যমান দিন দিন কমছে। আজ থেকে ১০ বছর আগে ১০০ টাকায় যে পরিমান পন্য কেনা যেত এখন পাওয়া যাচ্ছে তার অনেক কম। মুদ্রাস্ফীতির কারনে এখন ১০ টাকাকে কোন টাকাই মনে হয় না। দেশ-বিদেশ ব্লগ হতে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে এক টাকায় সে পন্য পাওয়া যেত ২০১৪ সালে সে পন্যের মূল্য হয়েছে ১২.৪৫ টাকা। অর্থ্যাৎ ৪০ বছরের ব্যবধানে পন্যের দাম বেড়েছে প্রায় ১২.৪৫ গুন। কাজেই ৫ বছরে পন্যের দাম বাড়বে ১২.৪৫*৫/৪০ = ১.৫৬ গুন। অর্থাৎ পাঁচ বছর আগে আমার বন্ধু একলাখ টাকায় যে পন্য কিনতে পারত পাঁচবছর পর সে পন্য কিনতে তার লাগবে = ১০০০০০*১.৫৬ = ১৫৬০০০ টাকা!
কি হিসেব করলাম! নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না! পাঁচ বছরে আমার বন্ধু নীট লস = ১৫৬০০০-১০০০০০+১২৫০০ = ৬৮৫০০ টাকা! নিশ্চয়ই আমার হিসেবে কোন ভুল হয়েছে!
মূল্যস্ফীতির কারনে ক্ষতির পরিমানটা চোখে দেখা যায় না। কিন্তু যাকাত দিতে হয় নগদ টাকায়। ইসলামের বিধান অনুযায়ী যাকাত প্রদানে সম্পদ কমে যায় না আর ধারের টাকার যাকাত প্রকৃত মালিককেই দিতে হয়! টাকা তার আয়ত্ত্বে নেই, তারপরও!
আল্লাহই ভাল জানেন। তিনি সৃষ্টিকর্তা। সৃষ্টির জন্য কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ সে অনুযায়ীই তিনি বিধান দেন। সৃষ্টির সেটা বুঝে আসুক বা না আসুক, ভাল লাগুক বা না লাগুক - তার কাজ সে বিধান অনুযায়ী চলা।
বিকাশ যুগে ধারের ক্ষেত্রে ক্ষতির নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ধরেন আপনার বন্ধু আপনার কাছে ১০ হাজার টাকা ধার চাইল। আপনি জিজ্ঞেস করাতে বলল বিকাশ করে দিতে। আপনি ১০ হাজার বিকাশ করলেন ২০০ টাকা ফী সহ। ফেরত নেবার সময় কিন্তু সে আর ফী দিয়ে পাঠাবে না। তোলার সময় আপনি আবার ২০০ টাকা ফী দিলেন। আপনার পকেট থেকে হাওয়ায় উড়ে গেল ৪০০ টাকা! শুধু বিকাশ দিয়েই ব্রাক ব্যাংক কোটি কোটি টাকা আপনার আমার পকেট থেকে খসিয়ে নিচ্ছে।
খুব কম সংখ্যক মানুষই আছে যারা এইসব লসের ব্যাপারে সচেতন। সচেতনরা ১ সপ্তাহের কথা বলে টাকা নিলে ১ সপ্তাহ পরেই ফেরত দেয়। টাকা গ্রহন ও প্রদানের সম্পূর্ণ ফী নিজেরাই বহন করে। ধার দানকারী ব্যক্তির ঘাড়ে চাপায় না।
এইসব কারনে "কর্জে হাসানা"র আমল থেকে দিন দিন মানুষ দূরে সরে যাচ্ছে। আর সুদ ভিত্তিক টাকা লেনদেনের সাথে নতুন নতুন মানুষ জড়িয়ে পড়ছে। সবদিকেই সমস্যা। 
unsure emoticon

No comments: