আরবী ভাষার কিছু শব্দের সঠিক বাংলা প্রতিশব্দ নেই। ভাষা যেহেতু ভাবের প্রকাশ, সেহেতু ভাবই এখানে মুখ্য। ভাব প্রকাশে মাতৃভাষার প্রয়োগ সর্বাধিক হলেও, অনেক ভাষাই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। বাংলাও তার ব্যাতিক্রম নয়। আরবী শব্দগুলোর প্রতিশব্দ না পেয়ে অনেকেই কাছাকাছি শব্দ ব্যবহার করেন। এই প্রসঙ্গে আবুল হোসেন ভট্টাচার্য তার বই "আমি কেন ইসলাম গ্রহন করলাম" এ কিছু আলোচনা করেছেন। ব্যাপারটা আমি স্লো পয়জন হিসেবে দেখেছি। কাজেই যারা এই পোস্ট পড়বেন আশা করি তারাও স্লো পয়জন হিসেবেই দেখবেন। তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত আকারে লেখার চেষ্টা করছি।
পূজা_ও_ইবাদত
পূজার সংজ্ঞায় তিনি লিখেন, "পক্ষান্তরে ঘট বা মূর্তি অথবা উভয়কে সম্মুখে রেখে ফুল, চন্দনাদি সহযোগে নির্দিষ্ট মন্ত্রপাঠ করে মূর্তির উদ্দেশ্য পাদ্য-অর্ঘ্য ভোগ-নৈবদ্য প্রভৃতি নিবেদন করাকে পূজা বলা হয়ে থাকে।
মনে রাখা প্রয়োজন যে, সন্ধ্যা, আহ্নিক, তর্পন প্রভৃতি সম্পূর্ন পৃথক ব্যাপার। পূজার সাথে ওগুলর কোন সম্পর্ক নেই এবং ওগুলোতে মূর্তি, ফুল, চন্দন বা ভোগ-নৈবদ্যের প্রয়োজন হয় না। সুতরাং ওগুলোকে পূজা বলাও হয় না। মোটকথা ঘট বা মূর্তি ছাড়া এবং ভোগ-নৈবদ্যাদি ব্যতিরেকে পূজা হতেই পারে না। বিশেষ করে পুরোহিত ছাড়া পূজা যে পূজা হতেই পারে না সেকথাও প্রায় সকলেরই জানা রয়েছে। কেননা, ব্রাক্ষণ ছাড়া অন্য কারো পূজা করার অধিকার নেই।
পক্ষান্তরে ইবাদত শব্দের মোটামুটি তাৎপর্য হলো 'উবুদিয়াত' বা দাসত্ব করা। আর তা করতে হয় ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি মুসলমানকে। অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ করে জীবনের প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি কাজ এমনকি প্রতিটি পদক্ষেপকে তাঁর দেয়া জীবনবিধানের আলোকে পরিচালিত করার নাম হলো 'ইবাদত'। এমতাবস্থায় পূজা এবং এবাদত সমার্থবোধক হতে পারে কিনা সেকথা ভেবে দেখার সনির্বদ্ধ অনুরোধ জানিয়ে রাখছি।"
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সেসময় সাধারন লোকদের মধ্যে থেকে তো বটেই আলেমদের কেউ কেউ না বোঝেই ইবাদত, নামায প্রভৃতি শব্দের স্থলে "পূজা"শব্দটির ব্যবহার করেছিলেন। তাদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন।
স্বর্গ_ও_জান্নাত
"মানবের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)-কে যে তাঁর সহধর্মিনীসহ জান্নাতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে মুসলমানমাত্রেরই সেকথা জানা রয়েছে। পবিত্র কুরআনের বঙ্গানুবাদ করতে গিয়ে কতিপয় প্রখ্যাত আলেম জান্নাতের বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে 'স্বর্গোদ্যান' শব্দটি ব্যবহার করেছেন। অথচ বেদ-পুরাণাদিতে স্বর্গের যে বিবরণ পরিলক্ষিত হয় তার সাথে জান্নাতের কোনও তুলনাই হতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়ঃ
(ক) মহাভারতের বর্ণনায় প্রকাশঃ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ অবসান হলে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির জীবিতাবস্থায়, সশরীরে এবং পদব্রজে স্বর্গে গমন করেন, এমনকি একটি কুকুরও তিনি সাথে নিয়ে যান।
(খ) রামায়নের বর্ণনায় দেখা যায়ঃ রাবণ মৃত্যুকালে শ্রীরাম চন্দ্রকে যেসব উপদেশ দিয়েছিলেন তার মধ্যে একথাও ছিল যে, 'হে রাম! সৎকার্য কখনও ফেলে রাখবে না। সকল মানুষই যাতে সহজে এবং পদব্রজে স্বর্গে যেতে পারে, সেজন্য আমি স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যে পথ-নির্মানের ইচ্ছা করেছিলাম। কিন্তু আজ-কাল করে ফেলে রাখার জন্য সে সাধ আমার পূরণ হল না।'
(গ) বিভিন্ন পুরাণ-ভাগবত প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থের বর্ণনা থেকে জানা যায়ঃ
স্বর্গে উর্বশী, মেনকা, রম্ভা, তিলোত্তমা প্রভৃতি নামে বহুসংখ্যক বেশ্যা রয়েছে। দেবতাদের মনোরঞ্জন ছাড়াও তাদের কাজ হলোঃ স্বর্গগমনেচ্ছায় অসুর অর্থাৎ সুর বা দেবতা নয় এমন কোনও ব্যক্তি সৎকাজ বা তপস্যায় রত হলে তাকে ভ্রষ্ট এবং চরিত্রহীন করে তার স্বর্গগমনের পথ রোধ করা।
তাছাড়া স্বর্গে বসবাসকারী দেব-দেবীদের যেসব লীলাকাহিনী উপরোক্ত ধর্মগ্রন্থসমূহে বর্ণিত রয়েছে, তা যদি সত্য হয় তবে সে জায়গাটাকে কোনওক্রমেই সৎসাধু মানুষের বসবাসযোগ্য বলে মনে করা যায় না।
উল্লেখ্য, স্বর্গ সম্পর্কে বেদ-পুরাণাদিতে এমনি ধরনের বহু ঘটনাই বর্ণিত রয়েছে, বাহুল্য বোধে সেগুলোকে তুলে ধরা হলো না। তবে একান্ত বাধ্য হয়েই একথা বলতে হচ্ছে যে, পবিত্র কুরআনের এই সব অনুবাদকের উদ্দেশ্য যত সৎ এবং মহৎই হোক, আসলে তাঁদের এই কাজের হলে জান্নাতের গুরুত্ব এবং মর্যাদাও ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।
পরিশেষে সশরীরে এবং পায়ে হেঁটে যে-স্বর্গে যাওয়া যায় আর যে-স্বর্গের সাথে মর্ত্যের পথ নির্মাণ সম্ভব অন্তত সে-স্বর্গ এবং জান্নাত এক হতে পারে কি না সেকথা ভেবে দেখার অনুরোধ জানিয়ে প্রসঙ্গের ইতি টানছি।"
#আল্লাহ_ও_ঈশ্বর
[এই বিষয়টা এতই প্রকাশ্য যে, এই বিষয়ে লিখলাম না- লেখক]
#জাতীয়_সঙ্গীত
[আমাদের জাতীয় সঙ্গীত যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুড়ের একটি কবিতার প্রথম ১০ লাইন-এই কথা আমার জানা ছিল না। এই বইটা পড়তে যেয়ে পেলাম কবিতায় নাকি "ওমা! তোর চরণেতে দিলাম মাথা পেতে।" লাইনটি আছে। পড়ার পর অনেক্ষন চেষ্টা করেছি জাতীয় সঙ্গীত স্মরণ করার। কিন্তু এই লাইন পেলাম না। পরে খোজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছি আমরা যে দশ লাইন গাই ঐটা পূর্ণাঙ্গ কবিতা নয়। আরো বাকি আছে। আজকে এক ভাইয়ের সহায়তায় পুরো কবিতাটা পড়লাম। আবুল হোসেন ভট্টাচার্য এই অনুচ্ছেদে যে কথাটি বোঝাতে চেয়েছেন সেটি হল কোন মুসলমান একমাত্র আল্লাহর সামনে ছাড়া আর কারও চরণে মাথা পেতে (প্রণাম, সিজদাহ্) দিতে পারে না। সে মা হোক, আর যে-ই হোক। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন, এই কবিতায় কোন জাতীকে গড়ে তোলার মত কোন উপাদান না থাকায়, জাতীয় সঙ্গীতরূপে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এটি রচিত হয়েছিল কিনা। এই ব্যাপারে একজন মুসলমানের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হতে পারে তা পাঠকদের উপরেই ছেড়ে দিলাম।-লেখক]
বেদীর_ইতিবৃত্ত
"উল্লেখ্য, যজ্ঞ-কুণ্ডের নিকটে ভূপৃষ্ট থেকে কিছুটা উঁচু করে বাঁধানো আয়তাকার স্থানকে 'বেদী বলা হয়ে থাকে। আচার্য, অধবুর্য, ঋত্মিক প্রভৃতিরা তার ওপর উপবেশন করে অগ্নিতে আহুতি প্রদান এবং সাথে সাথে 'বেদমন্ত্র' পাঠ করতেন বলে নাম 'বেদী' রাখা হয়েছিল।
বৈদিক যুগের পরবর্তী সময় থেকে এ যাবত পূজার মূর্তি এবং ঘট স্থাপনের জন্যে বেদীর ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে। বলাবাহুল্য, এটা সংস্কৃতভাষার একটি বিশেষ শব্দ এবং বেদ-পুরাণাদির বহু স্থানেই এই 'বেদী' শব্দের উল্লেখ রয়েছে।
অতএব বেদী যে মূর্তিপূজারই অঙ্গবিশেষ এবং একান্তরূপেই হিন্দুদের ধর্মীয় বিষয়, সেকথা খুলে বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ কোনওরূপ বিচার-বিবেচনা না করেই আমাদের কিছুসংখ্যক কিশোর-তরুন এবং বুদ্ধিজীবী বাংলা-ভাষা ও বাঙালি ঐতিহ্যের নামে অন্যান্য কতিপয় শব্দের ব্যবহার শুরু করেছেন।
সর্বাধিক দুঃখজনক হলো, এই বেদী শব্দের সাথে শহীদ শব্দের সংযোগ ঘটিয়ে তাঁরা আমাদের অতি শ্রদ্ধাভাজন শহীদদের মর্যাদা ধূলায় লুটিয়ে দিয়েছেন। জানি, আমার এ কথা পাঠ করে তাঁরা ভীষনভাবে মনোক্ষুন্ন হবেন। কেউ কেউ ক্রুদ্ধও হতে পারেন। অতএব তাঁদের অবগতির জন্য বলতে হচ্ছে, যেহেতু শহীদমিনারের চত্বরে বসে যজ্ঞে আহুতি দেয়া বেদপাঠ করা হয় না, পূজার ঘট বা মূর্তিও সেখানে স্থাপন করা হয় না। অতএব সে চত্বরের নাম বেদী অর্থাৎ শহীদবেদী রাখাটা শুধু বিভ্রান্তিকরই নয় একান্তরূপে সংগতিবিহীনও বটে।
মনে রাখা প্রয়োজন, 'অর্ঘ্য', 'অঞ্জলি', 'আলপনা' প্রভৃতি শব্দ মূর্তি এবং নরপূজার উদ্দেশ্যেই রচিত হয়েছে এবং বহুকাল ধরে হিন্দুসমাজ কর্তৃক সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সুতরাং ওগুলো যে মূর্তি এবং নরপূজার সাথেই একান্তরূপে সংশ্লিষ্ট সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পক্ষান্তরে ইসলামের সাথে মূর্তি এবং নরপূজার সামান্যতম সম্পর্কও নেই, থাকতে পারে না। তা সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, মাতৃভাষা প্রভৃতি যেকোনও ছদ্মাবরণেই অনুষ্ঠিত হোক না কেন। এমতাবস্থায় 'আলপনা অংকন', 'শহীদবেদী'তে 'অঞ্জলি প্রদান', 'শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন' প্রভৃতি দ্বারা শুধু ইসলামের মধ্যে মূর্তি এবন নর-পূজার অনুপ্রবেশই ঘটানো হচ্ছে না-আমাদের পরম শ্রদ্ধাভাজন শহীদদের প্রচ্ছন্নভাবে মূর্তিরূপে ব্যবহার করে তাঁদের মর্যাদা ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করার কাজও চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আরবী 'শহীদ' শব্দের স্থে সংস্কৃত 'বেদী' শব্দের এই গোঁজামিল কিভাবে শহীদদের মর্যাদা ভীষনভাবে ক্ষুণ্ন হওয়ার কারণ ঘটিয়েছে অতঃপর ধর্মশাস্ত্রের একটি বর্ণনা তুলে ধরে তা দেখানো যাচ্ছে।
প্রজাপতি দক্ষের একশত পাঁচটি কন্যার মধ্যে সর্বজেষ্ঠ্যা সতীর বিবাহ হয়েছিল শূলপানি (শিব-মহাদেব)-এর সাথে। ব্রক্ষা, বিষ্ণুসহ প্রায় সকল দেবতাই এই বিয়ে উপলক্ষে হাটকেশ্বর তীর্থে সমবেত হয়েছিলেন এবং দক্ষের অনুরোধে ব্রক্ষা এই বিয়েতে পৌরহিত্য করেছিলেন। যজ্ঞানুষ্ঠানকালে বেদীতে উপবিষ্ট অবগুণ্ঠনবতী (ঘোমটা দেয়া) সতীর প্রতি ব্রক্ষার দৃষ্টি পতিত হলে চতুরানন (চারটি মুখবিশিষ্ট) ব্রক্ষ সকলের অজ্ঞাতে সর্বশরীর দর্শন করেন। কিন্তু অবগুণ্ঠনের জন্য মুখমণ্ডল দর্শনে ব্যর্থ হন। কৌশলে কার্যোদ্ধারের জন্যে তিনি যজ্ঞ-কুণ্ডে কাঁচা কাষ্ঠ নিক্ষেপ করতে থাকেন। ফলে প্রচণ্ড ধোঁয়া থেকে নিরাপদ থাকবার জন্যে চোখ বন্ধ করেন। বলাবাহুল্য, ব্রক্ষা এই সুযোগেরই প্রতীক্ষায় ছিলেন। সুতরাং সুযোগ বুঝে অবগুণ্ঠন উন্মোচন করে তিনি সতীর মুখমণ্ডল দর্শন করেন। উল্লেখ্য, 'সর্বাঙ্গ' দর্শন করেই তিনি কামাতুর হয়ে পড়েছিলেন। এখন মুখমন্ডল দর্শনে অবস্থা চরমে উপনীত হওয়ায় বীর্যস্থলিত হয়ে বেদীর ওপর পতিত। ব্রক্ষাও সাথে সাথে বালি দ্বারা বীর্যগুলো ঢেকে ফেলেন। কিন্তু বর মহাদেবের দিব্যদৃষ্টির কাছে তা গোপন থাকে না।
নিজের স্ত্রীর ওপর ব্রক্ষার এই কামাতুর দৃষ্টি স্বাভাবিকরূপেই মহাদেবকে ক্রোধান্বিত করে তোলে। তিনি অভিশাপ দিতে উদ্যত হন। অবশেষে ব্রক্ষার ক্ষমা প্রার্থনায় ক্রোধ প্রশমিত হয়। তবে নিজের স্ত্রীর ওপর কামসক্ত অবস্থায় স্থলিত ব্রক্ষার এই বীর্য ব্যর্থ হতে না দিয়ে তৎসংশ্লিষ্ট বালিসমূহ তিনি অঙ্গুষ্ঠপ্রমাণ (বৃদ্ধাঙ্গুলির সমান)'মুনি'তে পরিণত করেন। এইরূপ প্রতিটি বালিকণা থেকে এক এক করে মোট অষ্টাশিতি সহস্র মুনির উদ্ভব ঘটে এবং বালি থেকে উদ্ভূত বিধায় তাঁদের নাম হয় 'বালখিল্য মুনি'।
------স্কন্দ পুরাণ, নাগর খন্ড, ৭৭ অধ্যায়।
উল্লেখ্য, বেদীর ওপর সংঘটিত এমনি ধরনের বহু ঘটনার কথাই পৌরণিক ধর্মগ্রন্থসমূহে লিখিত রয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, বেদীর সাথে এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা জড়িত থাকার কথা জানার পরও কোন বিবেকবান ব্যক্তি আমাদের ঐতিহ্যবাহী শহীদমিনারের চত্বরকে 'শহীদবেদী' বলে আখ্যায়িত করতে পারেন কি না এবং তদ্বারা পরম শ্রদ্ধাস্পদ শহীদদের মর্যাদা ধূলায় লুটিয়ে দেয়া হয় কিনা?"
লেখক আবুল হোসেন ভট্টাচার্য একে একে পৌরহিত্য সমাচার, লগ্ন-মহিমা, লক্ষ্ণীমাহাত্ম্য নিয়ে লিখেছেন। পোস্ট ছোট করার উদ্দেশ্যে ওসব আমি টুকলাম না। তবে ফোঁটা, সিদুরের কথা যা লিখেছেন সেখান থেকে টুকে দিচ্ছি।
"প্রাচীনকালে হিন্দুসমাজে ব্রাক্ষ, দৈব, আর্য, প্রজাপাত্য, গান্ধর্ব, রাক্ষস, অসুর এবং পৈশাচ - এই আট প্রকারের বিয়ে প্রচলিত ছিল- এর মধ্যে বল পূর্বক বা অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে যে বিয়ে করা হতো তাকে বলা হতো রাক্ষস বিয়ে।
নির্দিষ্ট কোনও চিহ্ন না থাকায় অনেক সময়ে এভাবে বিবাহিতা নারীদের বলপূর্বক নিয়ে যাওয়া হতো। ফলে শুধু ঐসব নারীদের জীবনই ব্যর্থ বিড়ম্বিত হতো না, তাদের স্বামীদের সংসারেও দারুণ অশান্তি সৃষ্টি হতো। সে কারণেই বিবাহিত নারীদের চিহ্নিত করার জন্য তাদের কপালে সিঁদুরের ফোঁটা প্রথা প্রচলিত হয়। যেহেতু বর্তমানে এ ধরনের বিয়ে প্রচলিত নেই, অতএব ফোঁটা দেয়ার প্রয়োজনীয়তাও শেষ হয়ে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, আজকাল যেসব রাক্ষস বলপূর্বক নারীদের ধরে নিয়ে যায় তারা ফোঁটার খাতির করে না। বিবাহিতা জেনেও রেহাই দেয় না। অতএব ফোঁটা দিয়ে তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব না। এখন ফোঁটা দেয়ার অর্থই যে আমাদের পূর্ব-পুরুষদের বর্বরতাকে পরিস্ফুট করে তোলা, সেকথা খুলে বলার প্রয়োজন হয় না। আর এ কাজ যে আমাদের পক্ষে মোটেই গৌরবজনক নয় সুতরাং বাঞ্ছনীয়ও নয় সে কথাও সহজেই বোধগম্য। তবে ধরে নেয়া যেতে পারে যে, পূর্ব-পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা বা মমত্ববোধের জন্যে বিবাহিতা হিন্দু নারীরা আজও এ প্রথা ধরে রেখেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, মুসলমান সমাজে এ ধরনের কিছু না ঘটা সত্ত্বেও বিবাহিত-অবিবাহিতা নির্বিশেষে মুসলমান মেয়েদের কেউ ফোঁটা দেয়ার কাজ শুরু করলেন কোন হিসেবে?"
সূত্রঃ আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম। লেখকঃ আবু হোসেন ভট্টাচার্য। জ্ঞান বিতরনী প্রকাশনী।পৃষ্ঠাঃ ১৪১-১৫৬।
কিছুদিন আগেও কেউ যদি আমাকে বলত "জল, জলখাবার, মাংস" ইত্যাদি হিন্দুয়ানী শব্দ তখন তার উপর রাগ লাগত। ভাবতাম শব্দের আবার হিন্দু-মুসলমান কি? শব্দতো শব্দ-ই। এখন আর তেমনটা মনে হয় না। এই শব্দগুলো কি অর্থে ব্যবহৃত হত, উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে জানা নেই। প্রচলিত অর্থে ভুল শব্দ ব্যবহার করছি কিনা-এখন এই প্রশ্ন মনের ভিতর উঁকি দিয়ে যায়।
আল্লাহই ভাল জানেন!
No comments:
Post a Comment