Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Sunday, April 10, 2016

তনু হত্যা এবং ....

শীতের সকালের ঘুমটা নষ্ট হল বাইরে উত্তেজিত গলার শব্দে। বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে গেল। একটু পড়েই কলেজে যাবার জন্য উঠতে হত। এখন আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। কি নিয়ে এত হইচই কানে যেতেই ঘুম ছুটে পালালো। বড় মাঠে কে যেন ফাঁসি নিয়েছে!
আমাদের স্কুলটা একটা বিশাল চতুর্ভুজের মত। মাঠের চারদিকে স্কুল ভবন আর একপাশের দোতলায় কলেজ সেকশন। স্কুলের ভিতরের মাঠের চেয়ে বাইরের মাঠটা আরো বড়। আমরা বলি বড় মাঠ। ভিতরের মাঠে এসেম্বলি হয়। হ্যান্ডবল খেলাও হয়। টিফিনের ফাঁকে ফাঁকে আমরা গোল্লাছুট, বরফ পানিও খেলেছি আগে। কলেজ পড়ুয়ারা নিশ্চয়ই এইগুলা খেলে না। বড় মাঠে অবশ্য প্রমাণ মাপে ক্রিকেট, ফুটবল খেলার পরও আরো জায়গা খালি থাকে। টুর্নামেন্ট না চললে বিকেলে অনেকগুলো গ্রুপ এই মাঠে যার যার খেলা খেলতে পারে।
যাইহোক, স্কুল এবং বড় মাঠের মাঝখানে এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত দেবদারু গাছের সারি। গাছেই নাকি কে আত্মহত্যা করেছে।
তড়িঘড়ি করে হাত মুখ ধুয়ে মায়ের চাদরখানা গায়ে জড়িয়ে বেড়িয়ে পড়লাম ঘটনা কি দেখার জন্য। আরো অনেকেই বের হচ্ছে। মাঠে যেয়ে দেখি পুরো ভীড় জমে গিয়েছে। মহিলারা এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। ছোটদেরকে ধমক দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। নাহলে ভয় পেয়ে কান্নাকাটি করতে পারে। আমার বন্ধুদের কেউ কেউ মাঠে আগেই এসেছে।
> কে ফাঁসি নিল?
>> তুই চিনস না?
> না চিনি না।
>> কেন। আমগো ক্লাসের হাসানের আব্বা।
হাসান! মুহুর্তের মধ্যে আমার আমার স্মৃতিতে সদা হাস্যোজ্জ্বল এক মুখচ্ছবি ভেসে উঠল। সে বালক শাখায় ছিল আর আমি সম্মিলিত শাখায়। কিছুদিন বালক শাখায় ক্লাস করার সুবাদে হাসানের সাথে ভালই ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। ক্লাসে তার একমাত্র কাজ ছিল আমার পাশে বসে আমাকে চিমটি কাটা! এত শৈল্পিকভাবে চিমটি কাটার মত শিল্পী আর কেউ আছে কিনা জানা নেই।
আমি আশে পাশে খুজি হাসানকে। নেই। হাসানের পরিবারেরও কেউ নেই। কিন্তু হাসানের বাবা আত্মহত্যা করবেন কেন?
বড়দের কথা শুনে মূল ব্যাপারটা বোঝা গেল। গতকাল রাতে কে বা কারা তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। রাতে আর ঘরে ফেরেননি। উনি আগেও মাঝে মাঝে রাতে ঘরে ফিরতেন না। কাজেই বাসায় কেউ সন্দেহ করেনি। সকালে তারা খবর পেয়েছে। আরো জানা গেল, টাকা-পয়সা সংক্রান্ত ব্যাপারে কয়েকজনের সাথে তার গোলমাল চলছিল। হতে পারে তারাই হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছে।
তারমানে খুন! রহস!
ততদিনে তিনগোয়েন্দার পাঠ শেষ করে মাসুদ রানাও অনেক পড়ে ফেলেছি। আর পুলিশ যেহেতু এখনো আসে নি সেহেতু একটু ছোঁক ছোঁক করা যাক। যদি কোন ক্লু পাওয়া যায়।
গাছের নিচে যেয়ে দেখি এক পাটি জুতো পড়ে আছে। আরেকপাটি কোথায় গেল? এদিক সেদিক খুজি। নেই। চাচার গায়ে চাদর জড়ানো। চাদর গায়ে দিয়ে, লুঙ্গি পড়ে চাচা এত উপরে উঠলেন কিভাবে?
একশ গজ দূরে পানির একটা কল ছিল। ভাবলাম পানি খেয়ে আসি। কলের পাশে কন্সট্রাকশন কাজের জন্য ভাঙা ইটের খোয়া অনেক আগে থেকেই রাখা ছিল। কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে কিন্তু অতিরিক্ত খোয়াগুলো সরানো হয় নি। থেকে থেকে খোয়াগুলো গুড়ো হয়ে গিয়েছে। সেই গুড়ো উপর দিয়ে দুটো সমান্তরাল রেখার উপর আমার দৃষ্টি পড়ল।
অবাক হলাম ভীষন। এখানে এমন হল কিভাবে। এগিয়ে যেতেই পাশে কালোমত একটা কিছু আমার নজরে আসল। ঘাস সরিয়ে দেখলাম একপাটি জুতো।
দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে এরপর আমার আর কোন অসুবিধাই হয় নি। পরিষ্কার বুঝতে পারলাম, ঘটনা এখানেই ঘটেছে। যে বা যারাই জড়িত থাকুক আংকেলকে মেরে টেনে হিচড়ে এদিক দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হয়ত কোন বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে। সেখান থেকে চড় থাপ্পড় বা ধাক্কা ধাক্কি হয়েছে। বেমক্কা কোন আঘাত লেগে আংকেলের প্রানবায়ু বেড়িয়ে গিয়েছে। টানাটানির এক পর্যায়ে তার পায়ের জুতো খুলে যায় এবং পরে অন্ধকারের মধ্যে সম্ভবত এক পাটি জুতোই হত্যাকারী খুজে পেয়েছে। সেটাই গাছের নিচে রেখে দিয়েছিল।
এটা যে পরিষ্কার খুন সেটা বুঝতে শার্লক হোমস হতে হয় না। আমার মত সাধারন একজন কলজে ছাত্রও সেটা বুঝতে পারে। তবে খুন করার ইচ্ছা ছিল কিনা সেটা নিয়ে আমি সন্দিহান। কারন হত্যাকারী যে বা যারাই হোক তারা আংকেলের পরিচিত এবং তার কলিগ। কলিগকে খুন করার মত ঝুকি সাধারনত কেউ নেয় না।
উপরের ঘটনাটি সম্পূর্ণ সত্য। আমি যখন কলেজে পড়ি তখনকার কথা। এই ঘটনার কোন বিচার হয় নি। BCIC র একটি বড় ফ্যাক্টরির এই ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়। অবশ্যই প্রশাসন এবং CBAর সহায়তায়। তারা অবশ্যই জানে খুনি কে বা কারা। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সাথে কোন মধ্যস্থতা করা হয়েছিল কিনা সেটা অবশ্য আমার জানা নেই। হাসান আমার বন্ধু হলেও এই ব্যাপারটা তাকে জিজ্ঞেস করা যায় না।
সে যাই হোক, আমার মত একটা কলেজ স্টুডেন্ট ঘটনাস্থল একবার দু'বার ঘূড়েই বুঝতে পেরেছিল যে, ঘটনা আত্মহত্যা নয়, বরং খুন। আর এখনকার বাঘা বাঘা ট্রেনিং প্রাপ্ত সেনা, পুলিশ, সিআইডি কর্মকর্তাদের তনু ধর্ষন হয়েছে কি হয় নি সেটা বুঝতে ১৪ বার ময়ণাতদন্ত করতে হয়!
তর্কের খাতিরে ধরা যাক, খুন করার আগে তনুকে ধর্ষন করা হয় নি। তখন নিশ্চয়ই খুব ঝড়ো বাতাস ছিল। ঝড়ো বাতাসে তনুর গা থাকে পোশাক উড়ে যায়। ব্যাপার না, আমারো এমন হয় মাঝে মাঝে লুঙ্গি পড়ে বাইরে গেলে। লুঙ্গি উড়ে যেতে চায়। কোনরকমে সামলাই।
খুন তো হয়েছে। এটাতো নিশ্চিত, নাকি? নাকি সপ্তাহখানেক পরে আবারো ময়ণাতদন্ত করে বলা হয়ে যে, খুনের কোন আলামত পাওয়া যায় নি? যেমনটা পাওয়া যায়নি সাগর-রুনির, যেমনটা পাওয়া যায় নি নুরুল ইসলাম ফারুকীর। নাকি পাওয়া গিয়েছে। হু নোস্‌ ....
টাকা পয়সা দিয়ে এই অর্থব, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, কাপুরুষ লোকজন পালে সরকার। সরকারের কি? সরকারতো নিজের পয়সায় পালে না। তাই তাদের গায়ে লাগে না। আর যাদের পয়সায় পালে তারাতো ভিক্টিমই। রক্ষকই যদি ভক্ষক হয় অথবা ভক্ষকদের পৃষ্ঠপোষক হয় তবে উপরওয়ালার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোন রাস্তা দেখি না।

No comments: