প্রতিবার আওয়ামীলীগ সরকার যখন ফেসবুক বন্ধ করে তখন আমি নতুন কিছু শিখতে পারি। যতদূর মনে আছে ২০১০ সালে এক ছেলে শেখ হাসিনার ছবি এডিট করে আপত্তিকর করে ফেসবুকে পোস্ট করার পর সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। ঐ ছেলেকে গ্রেফতার করার পর ছবি ডিলিট করার পর ফেসবুক পুনরায় চালু করা হয়। পয়েন্ট টু বি নোটেড ইউর অনার, কাউকে খুন বা ঐ জাতীয় অপরাধের জন্য ফেসবুকে বন্ধ করা হয় নি।
২০১০ সাল ছিল আমার জীবনের সবচাইতে সুখের বছর। অসংখ্য নতুন নতুন আনন্দমধুর অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে প্রথমবারের মত পার হই। ফেসবুক বন্ধ হওয়াটাও আমার জন্য আনন্দেরই ছিল। কিভাবে, কেন- সে প্রসঙ্গে না হয় না-ই গেলাম।
তখন ব্লগে যাতায়াত ছিল। ব্লগারদের পোস্টের মাধ্যমে শিখলাম "প্রক্সি সার্ভার" বলে একটা ব্যাপার আছে। তারপর গুগলের সাহায্য নিয়ে গুগল ক্রোমে Stealthy এড অন্স ইনস্টল করে নিলাম। তখনকার গ্রামীনের গরুর গাড়ী যারা চালিয়েছেন তারা প্রক্সি সার্ভার ব্যবহারের জন্য যে ধৈর্য্যের প্রয়োজন হয় সে সম্পর্কে ভালই ধারনা থাকার কথা। গুগলের পোকা ঘুড়ে চার-পাচ কেবিপিএস স্পিডে কতক্ষন ডাউনলোড হয়ে যখন ক্রোম ক্লান্ত হয়ে যায় তখন দেখিয়ে দেয় The page you requested can't be loaded right now অথবা Connection Problem. রিফ্রেশ বাটন চাপি। এভাবে চলতে থাকে যতক্ষন ফেসবুক না আসে। ফেসবুকে লগিন করার পর অন্যদের ফোনে প্রক্রিয়া শেখাই কিভাবে Stealthy দিয়ে ফেসবুকে চালাতে হয়। তারা সফল হবার পর ফেসবুকে আমাকে মেসেজ দেয়। তাদের আনন্দ দেখে আমার আনন্দ আরো বাড়ে!
এবার যখন বন্ধ করা হল প্রথমে আমি বুঝতে পারি নি। ভেবেছি আমার ডাটা ক্যারিয়ারের সমস্যা। পরে রাতে শুনলাম। পুরনো প্রক্রিয়ায় ঢুকতে চেয়েছিলাম। স্টিলথি দিয়ে কাজ হয় না। পরে প্রক্সি সাইটে গিয়ে ফেবুতে ঢুকলাম। ফিলিংসটা ২০১০ সালের মতই ছিল। তখন মানুষজন তেমন একটা ফেসবুকে ব্যবহার করত না। বহু পোলাপান প্রক্সির ব্যাপারটা জানত না। তারা ফেবুতে নেই। চ্যাটে যেখানে ৬০-৭০ জন থাকে সেখানে তখন ৬-৭ জন। তাদের ৮০ ভাগই প্রবাসী/বিদেশী ফ্রেন্ড।
এবার প্রথমদিকে লগিন কোড আসত মোবাইলে। সরকার মহোদয় তা বুঝতে পেরে সেটাও বন্ধ করে দিল। তখন বিপাকে পড়ে গেলাম। ব্রাউজারের সেটিং অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর পর হিস্ট্রি/ক্যাচ অটো রিমুভ হয়ে যায়। আর এই ব্যাপারটা মাথায় না থাকায় মোবাইলের ব্রাউজারের হিস্ট্রিও মুছে ফেলি। এখনতো বিপদ। ঢুকতে গেলে কোড চায়। কোডও আসে না। ঢুকতেও পারি না। একারনেই শেষের দিকে ২-৩ দিন এই আইডিতে ছিলাম না।
চোর পালালে বুদ্ধি যেমন বাড়ে তেমনি ফেসবুকে খুলে দেবার পর আমি শিখলাম আইডি ভেরিফিকেশন ছাড়া কিভাবে লগিন করার আরেকটা পদ্ধতি হাতে রাখতে হবে। এই পদ্ধতিতে ফেসবুকের Settings এ গিয়ে Security তে ক্লিক করলে Code Generator পাওয়া যাবে। সেখানে ক্লিক করলে আপনার পাসওয়ার্ড দিতে বলবে। দিলে আপনাকে ১০ টা কোড দেয়া হবে। সেগুলো প্রিন্ট করে নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে। অথবা স্ক্রিনশট নিয়ে রাখতে হবে। অথবা লিখে সংরক্ষন করতে হবে।
এরপর যদি কখনো কোডের দরকার হয় কিন্তু ফেসবুক থেকে কোড আসছে না। আবার অন্য কোড ডিভাইস থেকেও এপ্রুভ করতে পারছেন না তখন এই ১০ টি কোডের যেকোন একটি কোড দিয়ে আপনি ফেসবুকে ঢুকতে পারবেন। যে কোডটি ব্যবহার হয়ে যাবে সে কোড আর ব্যবহার করা যাবে না। পরেরবার অন্য আরেকটি কোড দিতে হবে। ১০ টি কোড দিয়ে ১০ বার লগিন করা যাবে। ১০ বারের পর ফেসবুক থেকে আবার নতুন করে কোড সংরক্ষন করে নিতে হবে আগের মত করে। মোবাইলে কোড আসলে যেখানে দেন সেখানেই কোড লিখতে হবে। তাহলেই ফেসবুক আপনাকে ফেসবুকে ঢুকতে দেবে। কাজেই কোড নামিয়ে রাখতে পারে এখনি।
আর যাদের একাউন্টে মোবাইল নাম্বার দেয়া নেই তারা ফটো ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে ঢুকতে পারবেন। বর্তমান যুগে অতীব বিপদজনক একটি প্রক্রিয়া। এই যুগে কার ছবিতে কে ট্যাগ খায় বলা মুশকিল।
এবারে ইউর অনার, আমাদের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, মানুষের জানের নিরাপত্তা দিতেই নাকি ফেসবুক বন্ধ করা হয়েছে এবং এতে নাকি জানমালের নিরাপত্তা সাধন করা গিয়েছে। উদাহরনস্বরুপ তিনি বলেন, চাদে মানুষ দেখতে পাওয়া এবং রামুর বৌদ্ধমন্দির নিয়ে ফেসবুকে গুজবের জের ধরে বহুমানুষ হতাহত হয়েছে।
ইউর অনার, যদি তাই হয় তবে সেসময় যারা ফেসবুক বন্ধ করেনি তাদের বিরুদ্ধে কেন জানমালের নিরাপত্তা বিধানের ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হবে না? কেন তাদেরকে কাঠগড়ায় দাড় করানো হবে না? আর যদি তাদের কোন দায় না থাকে তাহলে তাহলে কেন অহেতুক ফেসবুক বন্ধ করা হল? যারা মেগাবাইট কিনতো শুধু ফেসবুক চালানোর জন্য তাদের ক্ষতিপূরণ কে দেবে? যারা বিভিন্ন অপারেটরদের ফেসবুক প্যাকেজগুলো গচ্চা দিয়েছে তাদের টাকা হিসেব কে দেবে? আর ফেসবুক বন্ধ করার পরও কেন সরকারী লোকজন সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফেসবুক চালিয়েছে?
দ্যটস অল ...
No comments:
Post a Comment