Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Monday, January 25, 2016

তেলাপোকার অভিশাপ


মাথার ভিতরে তেলাপোকার কুচকাওয়াজ শুরু হয়েছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে রণ সঙ্গীত বাজছে। কাজী নজরুল ইসলামের রণসঙ্গীত নয়। তেলাপোকার রণসঙ্গীত। কথাগুলো এখনি বোঝা না গেলেও একটু পরেই ক্লিয়ার হতে শুরু করবে। 

"আমরা তেলা, করছি খেলা........."

করুক গে। আমি ভয় পাই নাকি? আমি তেলাপোকা ভয় পাই না। তেলাপোকাতো ভয় পেত রিমু। ভাবলেই হাসি আসে। তেলাপোকার মত সামান্য একটা জিনিসকে কেউ ভয় পায়? রিমু শুধু সামান্য জিনিসকেই ভয় পেত না, একটু বোকাটেও ছিল। ক্লাস নাইনে পড়া অন্য মেয়েরা যেখানে তাদের প্রেমকল্পনায় বিভোর সেখানে রিমুর এসব কিছুই ছিল না। এমনকি ক্লাশে সবচেয়ে দুষ্টু ছেলে সাজিদ যে তাকে পছন্দ করত এটাও সে বুঝত না। 

সাজিদ অবশ্য রিমুকে বোঝাতে চেষ্টা কম করেনি। সাজিদের ইচ্ছে ছিল আকার ইঙ্গিতে আগে বোঝাই, তারপর যদি ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায় তাহলে সামনা-সামনি বলা যাবে। সাজিদ কারো কাছে হেল্প না চেয়ে নিজেই নিজেই চেষ্টা করতে থাকে। 

ক্লাশ টেনে উঠার পর প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে বিভিন্ন গ্রুপ করা হয়। কি আশ্চর্য্য দেখেন। যে একটা মেয়ে সাজিদের গ্রুপে পড়ল সেই মেয়েটাই রিমু! সাজিদ মনে মনে অসম্ভব খুশি হল। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ইতরামো, ফাঁজলামো সবই চলত। রিমু মাঝে মাঝে চোখ পাকানি দিলেও সাজিদ তেমন গাঁ করত না। কারন সাজিদের ধারনা ছিল এসব রিমু মনে মনে উপভোগই করে। 

সবচেয়ে বেশি মজা হয়েছিল সেদিন তেলাপোকার ব্যবচ্ছেদ হয়েছিল। হাঃ হাঃ হাঃ... 

মাথার যন্ত্রণাটা ধীরে ধীরে অসহ্য হয়ে উঠছে। সেই সাথে বাড়ছে তেলাদের রণসঙ্গীত! 

আমরা তেলা, করছি খেলা
মানি না গরীব-ধনী......... 

স্যার আগেই বলেদিয়েছিলেন আগামী সপ্তাহে তেলাপোকার ব্যবচ্ছেদ করা হবে। সবাই যেন একটা-দুটো তেলাপোকা ধরে নিয়ে আসে। সাজিদ অবশ্য একটা-দুটো ধরে ক্ষ্যান্ত হল না। ঘরময় ছুটোছুটি করে ৬ টা তেলাপোকা ধরে পলিথিন বন্দি করে স্কুলে নিয়ে গেল। 

সাজিদ এত তেলাপোকা দিয়ে কি করেছে সেই গোমর ফাঁস হল টিফিনের সময়। টিফিনের বাটি খুলেই রিমুর বিকট চিৎকার। চার-পাচটে তেলাপোকা তার বক্সের ভিতর! তাও জীবন্ত। বাক্সখোলা হতেই তেলাগুলো মনের আনন্দে রিমুর গায়ে ছোটাছুটি শুরু করল। এদিক ওদিক ছিটকে গেলেও দুই-একটা তার জামার ভিতর ঢুকে গেল। আর রিমুর সেকি চিৎকার! চিৎকার করতে করতে সারা ক্লাস ছুটে বেড়াচ্ছে ক্লাস টেনের একটা মেয়ে! কোথায় তার ওড়না ছিটকে গেল, কোথায় গেল স্কার্ফ?-কে জানে! 

ছোটাছুটির এক পর্যায়ে বেঞ্চের পায়ার সাথে বেধে হোচট খেল রিমু। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল। মাথাটা বেকায়দাভাবে দেয়ালের সাথে বাড়ি খেল। পরক্ষনেই রিমু জ্ঞান হারাল। 

এতক্ষন যারা রিমুর ছোটাছুটি দেখে হাসাহাসি করছিল এবার তারা সবাই চিৎকার করে রিমুকে ধরতে গেল। চারপাঁচজন মিলে রিমুকে পাজকোলা করে বাইরে নিয়ে এল। চিৎকার চেচামেচি শুনে এরই মধ্যে টিচাররা চলে এসেছেন। দ্রুত রিমুকে হাসপাতালে নেয়া হল। দুর্ঘটনার কারনে স্কুল ছুটি দিয়ে দিলেন প্রধান শিক্ষক। সবাই মিলে দলবেধে রিমুকে দেখতে হাসপাতালে চলে গেল। গেল না শুধু একজন। 

ক্লাস টেনের বিজ্ঞান শাখার কক্ষের এক কোণায় শুধু সাজিদ নামের একটা ছেলে বসে রইল।

রিমুর আর জ্ঞান ফেরেনি। ফিরবেও না কোনদিন। সে এখন অন্যজগতের বাসিন্দা। সাজিদকেও আর কখনো স্কুলে দেখা যায় নি। বন্ধুবান্ধবরা কেউ দেখতে আসলেও সে দেখা করেনি। কিছুদিন পর সাজিদরা অন্য এলাকায় চলে গেলে আর কেউ খোজ নিতে আসেনি। 

মাথার যন্ত্রনাটা অসহ্য পর্যায়ে চলে গেছে। খামচে ধরে সব চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে অসংখ্য তেলাপোকা মগজটাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আর নতুন শক্তিতে তেলা সঙ্গীত গাইছে। মাথাটাকে ফাঁটিয়ে তেলাপোকাগুলোকে বের করে দিতে পারলে ভাল হত। 

দুম! দুম! দুম! 

আহ! এবার একটু শান্তি লাগছে। তেলাপোকার গুঞ্জন একটু যেন কমেছে। যদিও আমি জানি এখনি আবার শুরু হবে। হোক! আমি কি ভয় পাই? সবকটাকে পিষে মারব আমি। 

দুম! দুম! দুম! 

সামনের দেয়ালটা লালচে হয়ে গিয়েছে। দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে আসছে। 

কেউ একজন রুমে ঢুকেছে। দৌড়ে এসে কেউ একজন আমাকে ধরল। ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ যেন পেলাম।

"সাজিদ, বাপ আমার। এমন করিস না বাপ। শান্ত হ, শান্ত হ"

মা না বড় বিরক্ত করে। আমার কি এত কিছু শোনার সময় আছে? আমার মাথার ভিতরে তেলাপোকারা চিৎকার করছে,

"আমরা তেলা, করছি খেলা,
মানি না গরীব-ধনী,
তুই খুনী, তুই খুনী"

No comments: