চিটাগাং আসলে যে ব্যাপারটিতে নিজেকে সবচেয়ে বেকুব মনে হবে তা হল চিটাগাং এর ভাষা। প্রায় আটবছর হল চিটাগাং থাকি। তবুও মাঝে মাঝে বেকুব হতে হয়। চিটাগাং এর লোকজন কথা বলে খুব দ্রুত। অনেকটা শব্দ ছুড়ে মারে বাতাসে। যদি ক্যাচ করতে পারেন তবে তো কপাল ভাল। আর তা নাহলে শব্দবানের আঘাতে জর্জরিত হয়ে আমার মত বেকুব হতে হবে।
প্রথম প্রথম চিটাগাং আসছি তখন। আমার এক বড়ভাই সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনবে ব্যবসার জন্য। উনারা আসলেন, আমিও টাউনে গেলাম। গাড়ি সংক্রান্ত কথাবার্তা হতে হতে দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে। ক্ষুধাও লেগেছে। সবাই মিলে ঢুকলাম একটা হোটেলে। খাবার কি আছে জিজ্ঞেস করাতে হড়বড় করে যা বলল তার মধ্যে ভাত, ডাল, খাসা --এই তিনটা একটু পরিচিত মনে হল।
"খাসি?"
"অ্যাঁ..."
"আচ্ছা তিনটা খাসি দাও আর ভাত দাও।"
খাবার চলে আসল। ভাত দিল, ডাল দিল। খাবার শুরু করার জন্য শিমের বিচির তরকারী দিল। শিমের বিচির তরকারীটা আমার ভাল লাগে বিধায় ঐটাই আগে নিলাম। খুব বেশি ভাল লাগল না তরকারিটা। অল্প কিছু ভাত খেয়ে সবাই বসে আছি কখন খাসি দিবে।
কিন্তু খাসি আর দেয় না। ব্যাপার কি? তিনবাটি খাসি দিতে এতক্ষন লাগে কেন? অধৈর্য্য হয়ে একবড় ভাই আবার ডাকলেন,
"এই খাসি কই? খাসি দেও না কেন?"
"খাসি হত্তুন? খাসি নাই এডে"
"কি বলে?"
"বুঝতাছিনা" -- আমি।
"কি বলছো তুমি? খাসি নিয়া আসো যাও..."
"খাসি নাই"
"তুমি না তখন বললা খাসি আছে!"
"খাসি ন, খাসি ন, খাইস্যা হইদ্দি..."
"কি?"
"খাইস্যা, খাইস্যা..."
"কোনটা খাইস্যা?"
"ইয়ান..." বলে শিমের বিচির তরকারির দিকে ইশারা করল।
এরপর আর কথা না বলে আমরা তার দিকে তাকাই আর সে মহাবিরক্ত। এত কথা বলার টাইম নাই তার। কি আর করা। চুপ করে খেয়ে নিলাম। বুঝি আমাদের কথা ভেবেই পল্লীকবি লিখেছিলেন, তিন বেকুবের হল মেলা খাইতে এসে...!
এটাতো গেল প্রথমদিকের কথা। আটবছর পরে এসেও বেকুবই হচ্ছি। কোম্পানির কোয়ার্টার নেবার পর মালামাল টানার জন্য দু'জন লোক ভাড়া করলাম। তারা কোম্পানির পরিচ্ছন্নতা কর্মী। আমার বাসার মেঝে দেখে তারা অবাক। সবুজ রঙের মেঝে। মালামালা টানাহেচড়া করার পর ধূলোবালিতে মেঝে ময়লা হয়ে গেছে তাদের একজন বলল,
"বদ্দা অনের গর এক্কানা গম আছের। অনে এক হাম খরিবেন। লাচ্ছিদি গরগুন মুছি দিলে চকচক খরিব"
" কি দিয়া মুছমু? লাচ্ছি দিয়া? লাচ্ছি দিয়া আবার ঘর মুছে নাকি?
gasp emoticon
"
"অ্যাঁ, এডে কিনিত ফাওয়া যার। মুছি ফালাইলে গর সুন্দর লাগিব।"
আমি পুরাই কনফিউজ।
"এখানে বাজারে কিনতে পাওয়া যায়? গিয়ে বললেই হবে?"
"অয়ও..."
আমি তখন ভাবছি কেনার কি দরকার। দই কিনে এনে দুই আঙ্গূলের দুই চিমটি লবন আর এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে ঘুটা দিয়ে লাচ্ছি বানিয়ে ফেলব আর তারপর মেঝে পরিষ্কার করব। একেবারে আয়নার মত চকচকে হয়ে যাবে মেঝে।
তারা আমার ভাবভঙ্গি দেখে আরো যেসব কথা বলল সেগুলো শুনে আমি লাচ্ছির তাৎপর্য বুঝতে পারলাম। বাজারে মেঝে মোছার জন্য একধরনের মোছনি পাওয়া যায়। যেটার নিচের দিকে নরম কাপড়ের ফালি একটা লম্বা পাস্টিকের লাঠির মধ্যে এক প্রান্তে লাগানো থাকে। ঐটাকে বলে লাচ্ছি! তাই "প্রাণ লাচ্ছি, খুব খাচ্ছি, আরাম পাচ্ছি"- আমার এই জাতীয় চিন্তা মুহুর্তের মধ্যে ভ্যানিশ হয়ে গেল।
গেলাম লাচ্ছি কিনতে। একটার দাম ১৯০ টাকা আরেকটা দাম ২০০ টাকা!
gasp emoticon
২০০ টেয়া দিয়া ত্যানা কিনতাম?
gasp emoticon
চলে আসলাম বাসায়। সাপ মারার একটা লাঠি ছিল ঐটার এক মাথায় কোম্পানির অনুষ্ঠানের গেঞ্জী কেটে বেধে দিলাম। হয়ে গেল দেশী লাচ্ছি!
No comments:
Post a Comment