এন্ড্রয়েড ফোন আসার বহুদিন পর নিজের জন্য একটা এন্ড্রয়েড কিনলাম। এর আগে যে তিনটা এন্ড্রয়েড কিনেছিলাম সেগুলো কয়েকদিন ব্যবহার করার পর যার জন্য কিনেছিলাম তাকে দিয়ে দিয়েছি। ব্যবহার করার কারন ছিল এন্ড্রয়েড সম্পর্কে ধারনা নেয়া কারন যাকে দিচ্ছি সে আগে এন্ড্রয়েড ব্যবহার করে নি। সে ব্যবহার করতে যেয়ে কোন সমস্যায় পড়লে আমাকেই তার সমাধান করতে হবে। দেশীয় কোম্পানি হিসেবে ওয়ালটন আমার নজরে ছিল। প্রথমবার মোবাইল কেনার সময় দ্বিধান্বিত ছিলাম ওয়ালটন কিনব কি না। টাকা নিয়ে রওনাও দিয়েছি ওয়ালটন কেনার জন্য। কিন্তু সানমার ওশান সিটিতে গিয়ে প্রথমেই চোখ পড়ল স্যামস্যাং এর শো রুমে। ডিসপ্লেতে রাখা Samsung Galaxy S-7952 সেটা আমার এত পছন্দ হল যে অন্য সেটের চিন্তা বাদ দিয়ে এটাই নিলাম। অবশ্য শোরুমে ব্ল্যাক টা ছিল না। বাইরে থেকে নিতে হয়েছে। আজো এন্ড্রয়েডের কথা মনে হলে ঐ সেটের কথাই মনে পড়ে।
এর পর আরেকটা সেট নিলাম। তখন অবশ্য আমি যে কনফিগারেশন আর বাজেটের কথা ভাবছি তাতে স্যামস্যাং নিয়ে আমার পোষাবে না। আর যদি চাইনিজ এসেম্বলড সেট নেই তাহলে সিম্ফনি নিব কেন ওয়ালটন থাকতে? নিলাম একটা ওয়ালটন। সেটটা খুবই পাতলা ছিল। আমার সাথে আমার এক কলিগও ছিলেন। উনি একটা নকিয়া উইন্ডোজ ফোন নিলেন আর ওয়ালটনও একটা নিলেন আমার কেনা মডেল।
মোবাইল কেনার পরের দিনই উনি সেটা আমার আরেক জুনিয়র কলিগের কাছে বিক্রি করে দিলেন। সম্ভবত ভাবি ওয়ালটন সেট ব্যবহার করতে রাজি হয়নি। আমারটা নিয়াও পড়লাম মুশকিলে। গেম খেলছিলাম Temple Run Oz। হঠাৎ দেখি ডিসপ্লে কেমন যেন হয় গেল। সেট কেনার দুই দিনের মধ্যে আগ্রাবাদের চিপার মধ্যে ওয়াল্টনের কাস্টমার কেয়ার খুজে বের করে সেট ঠিক করতে দিয়ে আসলাম।
আসলে ওয়ালটন নিয়ে আমার মধ্যে দ্বিধা ছিল যথেষ্ঠ। কেউ ওয়ালটনের সুনাম করছিল আর কেউ কেউ খুবই বিরক্তি প্রকাশ করেছিল। সেট কেনার দুই দিনের মধ্যেই যদি কাস্টমার কেয়ার যেতে হয় তাহলে বিরক্তি-ক্ষোভ থাকাটাই স্বাভাবিক। যাই হোক ১০-১৫ দিন পরে গিয়ে নিয়ে আসলাম। তারপর যার জন্য কিনেছি তাকে দিয়ে দিলাম। এই সেটের সমস্যা ছিল ব্যাক ক্যামেরার চেয়ে ফ্রন্ট ক্যামেরায় ছবি ভাল আসত আর নেট ব্রাউজ করে গরম হয়ে যেত।
পরে জানলাম পোলাপান দুষ্টুমি করে ওয়ালটনের নাম দিয়েছে ইস্ত্রি! আপনার ঘরে ওয়ালটন সেট থাকলে আপনার আর ইস্ত্রি দরকার হবে না!
তৃতীয়বার কিনলাম ওয়ালটন এইচএম মিনি। সেট কেনার সময় আমি বড় ব্যাটারির সেট প্রেফার করি। বার বার চার্জ দেয়ার আমার কাছে খুবই বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। তাই এইচ এম মিনিটাই কিনলাম। ৪০০০ মিলি এম্পিয়ার ব্যাটারীর এই সেট টি আমি নিজে ব্যবহার না করেই যার জন্য কিনেছি তাকে দিয়ে দিলাম। সবই ভাল। তবে আগেরটার মত এটাতেও একই সমস্যা। ব্যাক ক্যামেরার চেয়ে ফ্রন্ট ক্যামেরায় ছবি ভাল আসে! কি অদ্ভূত সেট ওয়ালটন বানায় তারাই ভাল বলতে পারবে। এই সেটের ফ্ল্যাশ নিয়েও ব্যবহারকারীনী আমার নিকট অভিযোগ করেছেন। আমি তাকে ক্যামেরার কিছু ফাংশন শিখিয়ে দিলাম যেন লো লাইটেও ছবি তোলা যায়।
পোর্টেবল হার্ড ডিস্কে অনেকগুলো মুভি জমে আছে। সময়ের অভাবে দেখা হয় না। এছাড়াও সময় থাকলেও অনেকসময় মুভি দেখার মুড থাকে না। কিন্তু হার্ড ডিস্ক খালি করতে হবে। কি করা যায়? ভেবে চিনতে মোবাইল কেনার সিদ্ধান্ত নিলাম। মুভি লোড করে রাখব, অফিসে কাজের ফাঁকে দেখব, ভ্রমণের সময়ও দেখা যাবে। যেহেতু মুভি দেখবো সেহেতু এই মোবাইলটার ব্যাটারী ব্যাকআপ এক্সিলেন্ট হতে হবে।
কিনলাম Walton Primo RM2 !
এর ব্যাটারী ৫০০০ মি এম্পিয়ার, ব্যাটারী সহ ওজন ১৭২ গ্রাম প্রায়। একটু ভারী। ভারী হলেই ভাল। পকেটে রাখার পর যদি মনে না হয় মোবাইল রেখেছে তবে কোনদিক দিয়ে চুরি হয়ে যাবে টেরও পাবো না।
এর ডিসপ্লেটা অসাধারন! কালার পিসির চেয়ে একবিন্দু কম নয়। ১৩ মেগা পিক্সেল ব্যাক ক্যামেরা এবং ৫ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা। এক পাশে পাওয়ার বাটন, অন্যপাশে ভলিউম বাটন। উপরে .৩ এম এম হেডফোন জ্যাক আর নিজের দিকে স্পিকার ও চার্জিং পয়েন্ট। সেট চার্জ হতে সময় নেয় প্রায় ৩ ঘন্টা। এন্ড্রয়েড ললিপপ ভার্সনে চলে। ৯০-১২০ মিনিটের ব্লু রে প্রিন্টের মুভি টানা দেখলে (হেডফোনে গুজে) চার্জ ক্ষয় হয় মাত্র ১০% ।
স্ক্রিনের সুরক্ষায় রয়েছে সেকেন্ড জেনারেশন গরিলা গ্লাস। টাচটা খুবই লাইট প্রথমদিককার সেটগুলোর মত খসখসে নয়।
এর ১৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরী এবং ২ জিবি র্যামের তুলনায় প্রসেসরটা একটু পুরনো। সম্ভবত মালি ৪০০ সিরিজের। তবে আমার সমস্যা নয় না। অবশ্য আমি ভারী কোন গেম খেলি না। মিনিয়ন রাশ খেলি শুধু। ভারী গেম খেললে কি অবস্থা হবে বলতে পারব না।
তবে এর ব্রাউজিং এক্সপেরিয়েন্স তেমন সুবিধার লাগল না। প্রচুর চার্জ ক্ষয় হয় নেট চালালে আর সেট গরমও হয়। আমি যেখানে থাকি সেখান মোবাইলের নেটওয়ার্ক এমনিতেই দুর্বল। এই কারনেও এমনটা হতে পারে। এর অন্যান্য ফিচার গুলার মধ্যে এন্টি থেফট এবং বিভিন্ন গেস্টার যোগ করার বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে। আর এই সেটের সাথে দেয়া চার্জার ছাড়া অন্যকোন চার্জার দিয়ে চার্জ করলে বেশি সময় লাগে।
যারা মোবাইলের রিভিউ লিখে বেড়ান তাদের কাছে এই সেটটির বেশ গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। আর আমিও ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট!
smile emoticon
যারা নতুন মোবাইল কেনার কথা ভাবছেন তারা এই সেটটির কথা ভেবে দেখতে পারেন। মূল্য ১০,৯৯০ টাকা শোরুমে। বাইরে কিছু কম পেতে পারেন। তবে আমি শোরুম থেকেই কিনতে বলব। কারন তাতে এক্সেসরিজ গুলো অরিজিনাল পাবেন।
ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment