Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Monday, January 25, 2016

অনলাইন ছবি আপ্লোড ও অন্যান্য


ব্যক্তিগতভাবে আমি ফেবুতে পারিবারিক ছবি আপ্লোডের পক্ষপাতি নই। শুধু আপ্লোডই নয়, অহেতুক ছবি তোলারও কোন মানে খুজে পাই না। বর্তমান ট্রেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারি না। এতে আমার কোন আফসোস নেই। এখনকার যুগ তো এমন যে, কোথাও ঘুড়তে গেলাম, ফেবুতে ছবি আপ্লোড। কোন রেস্টুরেন্টে খেতে গেলাম, ছবি আপ্লোড দিলাম। আমি মানে খুজে পাই না। ছবি দিয়ে লাভটা কি? অর্থহীন ছবি তুলেই বা লাভ কি? 

এখনতো এমন হয়েছে যে, পারিবারিক ছবি ফেবুতে শেয়ার করা পরিবারের প্রতি ভালবাসা প্রকাশের একটি উপায় হয়ে গিয়েছে। যদি কেউ তার স্ত্রীর ছবি, সন্তানের ছবি বা অন্য কারো ছবি ফেবুতে শেয়ার না করে তবে তারা মনে করেন যে তাদের প্রতি বোধহয় ভালবাসা কম। কারন তাদের একটা সাধারন লজিক থাকে যে, ভালবাসলে তা প্রকাশ করতে হয়! 

ছবি না তোলা এবং ফেবুতে না আপ্লোড করার মাঝেই আমার ভালবাসার প্রকাশ। এর মধ্যে আমার কোন দূরভিসন্ধি নেই। নাদুস-নুদুস ছবি দিয়ে মেয়েদের দৃষ্টি আকর্ষন যেমন আমার উদ্দেশ্য থাকে না, তেমনি পরিবারের ছবি না দিয়ে কারো সাথে কোনরূপ প্রতারনা করতে ইচ্ছুক-এমনটা ভাবাও যৌক্তিক হবে না। 

এবার আসি অহেতুক ছবি বর্জনের মাধ্যমে কিভাবে আমি আমার পরিজনের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করেছি সে বিষয়ে। ধরাযাক, আমার মোবাইলে আমি যেকোন ছবি তুললাম। তোলার পর সেই ছবি আমার দায়িত্ব থাকবে। আমি চাইলে তা ডিলিট করে দিতে পারি। কিন্তু যখনই ছবিটা আমি ফেসবুকে শেয়ার করব তখন সেটা আর আমার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। যেকেউ যেকোন উদ্দেশ্যে সেই ছবি ব্যাবহার করতে পারবে। যতই সিকিউর করা হোক রিস্ক থেকেই যায়। নিছক ফান থেকে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারন করা খুবই সাধারন একটা ব্যাপার। অসংখ্য মেয়ে আছে যাদের ছবি আপত্তিকরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে! 

‘সিহাহ্‌ সিত্তাহ্‌’ বিশেষত মুসলিম শরীফে চিত্রকরদের ব্যাপারে কঠিন সতর্কবাণী এসেছে। “প্রাণীর ছবি তোলা হারাম। যেসব জিনিসের উপর এ ধরনের ছবি রয়েছে তা ব্যবহার করা হারাম। যে ঘরে ছবি এবং কুকুর থাকে তাতে ফেরেশতা প্রবেশ করে না” শীর্ষক অনুচ্ছেদ থেকে দু’একটি হাদীস তুলে দিচ্ছি।

ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেনঃ যারা ছবি বানায় কিয়ামতের দিন তাদেরকে আযাব দেয়া হবে আর বলা হবে যেগুলো তোমরা বানিয়েছো, তাতে জীবন দাও। 

আবদুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেনঃ নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন ছবি নির্মাতাদের সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে।

আবু মু’আবিয়া থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন দোযখীদের মধ্যে চিত্রকরদের সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে।

মুসলিম ইবনে সুবাইহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মাসরূকের সাথে একটি ঘরে ছিলাম। তাতে মরিয়মের (আ) প্রতিকৃতি ছিল। মাসরূক বললেন, এটা কিসরার প্রতিকৃতি। আমি বললাম, না, এটা মরিয়মের প্রতিকৃতি। মাসরূক বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদকে (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করতে শুনেছি রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামতের দিন চিত্রকরদের সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে। 

সাঈদ ইবনে আবুল হাসান বলেন, এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাসের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কাছে এসে বলল, আমি চিত্রকর। এবং চিত্র অংকন করি। অতএব এ সম্পর্কে আমাকে শরীয়তের বিধান বলে দিন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমার কাছে আস। সে ব্যক্তি তাঁর কাছে গেল। তিনি পুনরায় বললেন, আমার কাছে আস। সে ব্যক্তি তার এত কাছে গেল যে, ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর হাত ঐ ব্যক্তির মাথার উপর রাখলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে এ সম্পর্কে এমন একটা হাদীস শুনাচ্ছি, যা আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে শুনেছি। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ “সকল চিত্রকরই দোযখে যাবে। আর প্রত্যেক চিত্রের পরিবর্তে জীবিত এক ব্যক্তিকে বানানো হবে, যা দোযখে তাকে শাস্তি দেবে”। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, যদি তোমাকে এরূপ করতেই হয়, তাহলে গাছ এবং অপ্রাণীবাচক বস্তুর চিত্র অংকন কর। 

উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)আমার কাছে আসলেন। আমি জিনিসপত্র রাখার তাকে ছবিযুক্ত পর্দা লাগিয়ে ছিলাম। তিনি তা দেখতে পেয়ে ছিঁড়ে ফেললেন। তাঁর চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে গেল এবং বললেন, আয়েশা! কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি তাদের হবে যারা আল্লাহর সৃষ্টজীবের প্রতিকৃতি তৈরী করে। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমরা তা কেটে একটি কিংবা দুটি বালিশ বানালাম। 

আবু তালহা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ঘরে কুকুর কিংবা ছবি আছে সে ঘরে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না। 
[উৎসঃ সহীহ মুসলিম শরীফ। সপ্তম খন্ড। ইসলামী ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ]

অহেতুক ছবি তোলা এবং ব্যবহারের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। বরং তা আখেরাতে কঠিন আজাবের কারন। কাজেই তা থেকে বিরত থাকাই উত্তম।

আমার একটা LG মোবাইল ছিল। মডেল নং KU990R। তৎকালীন সময়ে প্রাপ্ত ফিচারড ফোনগুলোর মধ্যে উন্নত একটা মোবাইল। পাচ মেগা রেয়ার ক্যামেরা, দুই মেগা ফ্রন্ট ক্যামেরা এবং বিল্ট ইন ভিডিও কলের ব্যবস্থা। অথচ তখন বাংলাদেশে থ্রীজি নেটওয়ার্কতো আসেইনি, টুজির অবস্থায় করুন ছিল। কথা বলতে হবে বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠতে হত। 

সফরে যখন মক্কা-মদীনায় গেলাম তখন এই উন্নতমানের মোবাইল রেখে নোকিয়া ১২০৩ নিয়ে যাই। আমার আশংকা ছিল যে, শয়তান হয়ত আমাকে ধোঁকায় ফেলে দেবে এবং আমি আল্লাহ তায়ালার ঘর এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর পবিত্র রওজা মুবারকের সাথে কোনরূপ বেয়াদবি করে ফেলবো। কিন্তু সেখানে পৌছানোর পর যা দেখেছি তাতে অবাক হয়েছি খুব। বাংলাদেশী নয়, এমন লোকেরা তাদের মোবাইল, ক্যামেরা, হ্যান্ডিক্যাম দিয়ে নির্দ্বিধায় ছবি তুলছে। কোন বিকার নেই, ভাবান্তর নেই। বিশেষত ইরাক, ইরান, তুরষ্ক - এসব দেশের নাগরিকদের এইকাজ করতে দেখেছি। বাংলাদেশীরা তখন পর্যন্ত এমন কাজ করত না। 

বাংলাদেশীদের মধ্যে এই ট্রেন্ড আজকাল শুরু হয়ে গিয়েছে। আমার লিস্টের বেশ কয়েকজন তাদের মক্কা-মদিনার হেরেম শরীফের সেলফি দিয়েছেন। তাদের নিয়ত কি ছিল আল্লাহই ভাল জানেন। 

আমি চাই না, দুনিয়ার সামান্য ফান বা ভাল লাগার জন্য ফেসবুকে ছবি দিয়ে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্থ হোক। তাতে যদি কেউ মনে করে পরিবারের প্রতি আমার ভালবাসা নেই তবে কি আর করা! আল্লাহই সর্বজ্ঞ!

No comments: