Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Friday, September 18, 2015

মাযহাব সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নোত্তর

দ্বীন নিয়ে অহেতুক তর্ক-বিতর্ক ইসলাম ভাল চোখে দেখে নি। কুরাআন ও হাদীসে এই ব্যাপারে সতর্কবার্তা এসেছে। তাই কূট তর্ক এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হল সহজভাবে সহজ কিছু কথা বলা। যার ইচ্ছা সে মানবে, মানতে না চাইলে কে জোর করবে? তবে আশা করি যারা সন্দিহান তাদের সন্দেহ দূর হবে।
নিশ্চয়ই আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া সিরাতুল মুস্তাকীমে চলা সম্ভব নয় এবং বিভ্রান্তি থেকে বাচাও সম্ভব নয়।
১. মাযহাব কাকে বলে?
২. মাযহাবের শাব্দিক অর্থ কি?

মাযহাব কি সেটা বলার আগে আরো কিছু পরিভাষা জানা দরকার। সেগুলো হল তাক্বলীদ, ইজতিহাদ ও ফিক্বহ।
ইজতিহাদের শাব্দিক অর্থ, উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথাসাধ্য পরিশ্রম করা। ইসলামী ফেকাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় ইজতিহাদ অর্থ,কোরআন ও সুন্নায় যে সকল আহকাম ও বিধান প্রচ্ছন্ন রয়েছে সেগুলো চিন্তা-গবেষণার মাধ্যেমে আহরণ করা। যিনি এটা করেন তিনি হলেন মুজতাহিদ।
[]
এবার আসি ফিকহের বিষয়ে।
ফিকহ হল
১. কুরআন ও হাদীসের সুস্পষ্ট বিধানবলীর সুবিন্যস্ত ও সংকলিত রূপ।
২. এবং ইসলামী ইবাদতসমূহের নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতির সুবিন্যস্ত রুপ যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সাহাবীগনকে (রাঃ) শিখিয়েছিলেন। তাঁরা তাবেয়ীগনকে এবং তাঁরা তাদের পরবর্তী লোকদেরকে শিখিয়েছিলেন।
৩. অনুরূপ ফিকহের আরেকটি গুরত্বপূর্ণ অংশ হল, ঐসব মাসআলার সুবিন্যস্ত সমষ্টি যা কুরআন-হাদীসে স্পষ্টভাবে বিদ্যমান নেই। [এখানেই ইজতিহাদের প্রসঙ্গ চলে আসে-পোস্টদাতা।]
এই ফিকহের একাধিক সংকলন বিদ্যমান ছিল, যার মধ্যে বর্তমান কাল পর্যন্ত শুধু চারটি সংকলনই স্থায়ীত্ব ও গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে। সেগুলো হল- ফিকহে হানাফী, ফিকহে মালেকী, ফিকহে শাফেয়ী, ফিকহে হাম্বলী। সাধারণ পরিভাষায় ফিহকের প্রত্যেকটি সংকলন ‘মাযহাব’ নামে পরিচিত। বলা বাহুল্য এখানে ‘মাযহাব’ শব্দটির অর্থ “ফিকহের মাযহাব” তথা ফিকহের নির্দিষ্ট একটি সংকলন। এখানে মাযহাব অর্থ দ্বীন বা আকাঈদ বিষয়ে মতবিরোধকারী কোন “ফির্কা” নয়।
[মাযহাব ও তাকলীদ কি ও কেন। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী। মাকতাবাতুল আশরাফ। পৃষ্ঠাঃ ১১-১৪]
তাক্বলীদের অর্থঃ
১. অনুসরণ করা, নকল করা, অনুকরণ করা। (ফারহাঙ্গ)
২. বেড়ী লাগানো, গলায় তরবারী ঝুলানো, কুরবানীর জন্তুর গলায় চিহ্ন স্বরূপ কিছু ঝুলিয়ে দেয়া ইত্যাদি। (আল-কাওসার)
৩. কোন কাজ কারও দায়িত্বে অর্পণ করা বা ন্যস্ত করা। (বয়ানুল্‌-লিসান)
৪. ‘হার’ পরিধান করা, “চিন্তা-গবেষণা ব্যতীত কারও কথার অনুসরণ বা অনুকরণ করা”; “ঐ শাহী নির্দেশ যা অনুসরণ করার জন্য জারী করা হয়”। (মিসবাহ)
আর পরিভাষায় ‘তাক্বলীদ’ অর্থ স্বধর্মীয় কোণ অনুসরনযোগ্য খাটি মুত্তাকী বুযুর্গের কথা ও কাজকে এই আস্থার ভিত্তিতে গ্রহন করে নিয়ে আমল করা যে, তিনি অবশ্যই উক্ত কথা বা কাজ কুরআন-সুন্নাহর আলোকেই বলেছেন। উক্ত মেনে নেওয়া বা আমল করার ব্যাপারে দলীলের অপেক্ষা না করা। কিন্তু অযদি তৎক্ষনাৎ বা পরবর্তিতে দলীলও পাওয়া যায় বা বুঝে এসে যায়; তবে এটাও তাক্বলীদের পরিপন্থী নয়। মোট কথা, তাক্বলীদের জন্য দলীল-প্রমাণ তালাশ করা জরুরী নয়। আর দলীলের সম্যক ধারনা আব জ্ঞানও তাকলীদ পরিপন্থি নয়।
[সূত্রঃ মাযহাব মানব কেন? মুফ্‌তী মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ। আলকাউসার প্রকাশনী। পৃষ্ঠা নং ১৭]
[সুতরাং বোঝা গেল কুরআন ও হাদীসে যেসব বিষয় প্রছন্ন বা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই সেগুলো নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে বিধান বের করাই ইজতিহাদ। সেগুলোর (এবং যেগুলো স্পষ্টভাবে বিদ্যমান সেগুলোর) সংকলিত, সুবিন্যস্ত রূপই ফিকহ্‌। সেই ফিকহের অনুসরণ করাই তাক্বলীদ। এই পর্যন্ত বোঝার পর নিচের প্রশ্নগুলো যে অর্থহীন সেটাও না বোঝার কারন দেখি না।
১২. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাগণ রায়িআল্লাহু আনহু এর মাযবাহ কি ছিল?
১৩. এটা কি এখনো প্রচলিত আছে? নাকি বন্ধ হয়ে গেছে?
১৪. বন্ধ হলে কে বন্ধ করল?
১৫. কেন করল?
১৬. বন্ধ করার অধিকার কে দিল?
১৮. আর যদি বন্ধ হয়ে না থাকে তবে অন্যের নামে মাযহাব সৃষ্টি করার প্রয়োজন কি?

-পোস্টদাতা]
মাজহাব এর শাব্দিক অর্থ মতামত, বিশ্বাস, ধর্ম, আদর্শ, পন্থা, মতবাদ, উৎস। (মিসবাহুল লুগাত, থানবী লাইব্রেরী-২৬২ পৃষ্ঠা)
৩. প্রচলিত চার মাযহাব মান্য করা কি ফরয?
সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, “আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম। অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে”।
এই আয়াতের তাফসীরে তফসীরে মা’আরেফুল-কোরআনের ৫ম খন্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় (ইসলামী ফাউন্ডেশন) লেখা আছে,
আলোচ্য আয়াতের “অতএব জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে” বাক্যটি যদিও বিশেষ বিষয়বস্তু সম্পর্কে বলা হয়েছে, কিন্তু ভাষা ব্যাপকতার কারণে এ জাতীয় সব ব্যাপারকে শামিল করে। তাই কোরআনী বর্ণনাভঙ্গির দিক দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তিগত ও ইতিহাসগত বিধি যে, যারা বিধি-বিধানের জ্ঞান রাখে না, তারা যারা জানে, তাদের কাছে জিজ্ঞেস করে নেবে এবং তাদের কথামত কাজ করা জ্ঞানহীনদের উপর ফরয হবে। একেই তাকলীদ (অনুসরণ) বলা হয়। [এরপর বিস্তারিত আলোচনার পর লেখা হয়েছে] এরপর দিন দিন জ্ঞানের মাপকাঠি সংকুচিত হতে থাকে এবং তাকওয়া ও আল্লাহ্‌ভীতির পরিবর্তে মানবিক স্বার্থপরতা প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে যদি কোন মাস’আলায় যে-কোন ইমামের উক্তি গ্রহণ করার এবং অন্য মাস’আলায় অন্য ইমামের উক্তি গ্রহন স্বাধীনতা দেয়া হয়, তবে এর আবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে মানুষ শরীয়ত অনুসরণের নামে প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে যাবে। যে ইমামের উক্তিতে সে নিজ প্রবৃত্তির স্বার্থ পূর্ণ হতে দেখবে সেই ইমামের উক্তিকেই গ্রহণ করবে। বলা বাহুল্য; এরূপ করার মধ্যে ধর্ম ও শরীয়তের অনুসরণ হবে কম এবং স্বার্থ ও প্রবৃত্তির অনুসরণ হবে বেশী। অথচ দীন ও শরীয়তের অনুসরণ না করে স্বার্থ ও প্রবৃত্তির অনুসরণ উম্মতের ইজমা দ্বারা হারাম। আল্লামা শাতেবী ‘মুয়াফাকাত’ গ্রন্থে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। সাধারণ তাকলীদের বিরোধীতা সত্ত্বেও ইবনে তাইমিয়া এ ধরনের অনুসরণকে স্বীয় ফতোয়া গ্রন্থে ইজমা দ্বারা হারাম বলেছেন। এ কারনেই পরবর্তী ফিকাহবিদগন এটা জরুরী মনে করেছেন যে, আমলকারীদের ওপর কোন একজন ইমামেরই তাকলীদ করা বাধ্যতামূলক করে দেয়া উচিত। এখান থেকেই ব্যক্তিতাকলীদের সূচনা।
হযরত গাঙ্গুহী (রহ) তাক্বলীদ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তাক্বলীদ’ বা অনুসরণ সাধারণত ‘ফরয’। কেননা আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেন, “তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করে নাও, যা কিছু তোমাদের অজানা রয়েছে”।
উক্ত আয়াত দ্বারা ‘তাক্বলীদ’ বা অন্যকে অনুসরণ করা ‘ফরয’ করে দেওয়া হয়েছে। (কারণ, একমাত্র মানার জন্যই ‘জানা’ জরুরী হয়ে থাকে। যার মানার বা অনুসরণ করার নিয়্যত নেই, তার জানারও দরকার নেই)
[মাযহাব মান্‌বো কেন? পৃষ্ঠা-৩৪]
[উপরোক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কার যে, মাযহাব মান্য করা ‘ফরয’ (অবশ্য অন্য কিতাবে ওয়াজিবও বলা হয়েছে এবং সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।) তাই বলে চার মাযহাব একসাথে মানা বৈধ নয় বরং যেকোন কে মাযহাব মান্য করা ফরয। একাধিক ইমামের ফতোয়া অনুযায়ী চলতে গেলে নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণের সম্ভবনা রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে আলাদা পোস্ট দেয়া সম্ভব। সংক্ষিপ্ত করা হল। –পোস্টদাতা।)
৪. যদি ফরয হয়ে থাকে তাহলে এ ফরযটি উদ্ভাবন করল কে?
--উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার।
৫. এটি টি সকলের জন্যই? ৬. না কিছু লোকের জন্য?
-- যাদের ইজতিহাদ করার যোগ্যতা নেই তাদের জন্য।
৭. যারা চার মাযহাব মানে না,তারা কি মুসলিম নয়?
-- মূলবিষয়তো লিখেই দিলাম। এবার আপনিই ফতোয়া দিন তারা কি...

৮. হানাফী, শাফি’ঈ, মালিকী ওহাম্বলী এ চার মাযহাব কখন সৃষ্টি করা হয়েছে? ৯. কে সৃষ্টি করেছে?
-- সৃষ্টি করার অর্থ এখানে ধরে নিলাম “সূচনা” করা। ফিকহি মাযহাবের গোড়াপত্তন হয় ১০০ হিজরীর পরে। ইমামগন ও তাদের ছাত্রদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তা পূর্ণতা পায় ও সংকলিত হয়।
১০. কেন করেছে?
-- “ইজতিহাদ, ফিক্‌হ, মাযহাবের সংজ্ঞাগুলো আরেকবার পরে নিন দয়া করে।
১১. যাদের নামে মাযহাব সৃষ্টি করা হয়েছে তাঁরা কি এ মাযহাবগুলি বানিয়ে নিতে বলেছেন?
-- আরেকটি অদ্ভূত ও অর্থহীন প্রশ্ন। উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি না।

১৯. চার মাযহাব মান্য করা ফরয হলে যারা চার মাযহাব মানেন না অথবা চার মাযহাব সৃষ্টি হওয়ার আগে যার মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের উপায় কি?
২০. তারা কি জাহান্নামী হবেন? (নাউযুবিল্লাহ)
২১. ইমাম চারজন কোন মাযহাব মানতেন?
২২. তাঁদের পিতা-মাত, উস্তাদ মন্ডলী ও পূর্বপুরূষগণ করা মাযহাব মেনে চলতেন?
২৩. সে মাযহাব কি এখন মানা যায় না?

এই প্রশ্নের উত্তরে “মাযহাব” কাকে বলে সেটা আবার দেখে নেয়ার অনুরোধ করছি। যে মাযহাব কাকে বলে সেটা পড়েছে তার কাছে এইসব প্রশ্ন আজগুবি।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সময় ফিকহ সংকলিত অবস্থায় ছিল না। ফিকহ্‌তো অনেক দূরের ব্যাপার কুরআনুল কারীমই সংকলিত অবস্থায় ছিল না। জামিউল কুরআন উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) কুরআন সংকলন করেন। যা যুগের পর যুগ পার হয়ে বর্তমানে আমাদের নিকট বিদ্যমান। হযরত উসমান (রাঃ) এর কুরআন সংকলনের পূর্বেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ), আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ), ওমর (রাঃ) পরলোকগত হন। কাজেই এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে তারা কুরআনের (সংকলিত কুরআনের) অনুসারী ছিলেন কিনা তাহলে আর জবাব দেয়ার মত কিছু থাকে না। হাদীসও সংকলিত অবস্থায় ছিল না। অনেক পরে হাদীসের ইমামগন হাদীস সংকলিত করেন। এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে, আগের যুগের মুসলিমরা কি বুখারী শরীফ মানতেন? বুখারী শরীফ যদি না মানেন তবেতো তারা সহীহ হাদিস অস্বীকার করলেন। তাদের হুকুম কি হবে? তারা কি জান্নাতী হবে না?
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং তার সুযোগ্য সাহাবাগনের (রাঃ) এর যুগে মানুষ যেকোন সমস্যার সমাধানে তাদের স্বরনাপন্য হতে এবং তাদের নির্দেশিত পথে আমল করতেন। তাদের মৃত্যুর মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে জেনে আমল করার পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়েছে। কাজেই কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী “জানা না থাকলে জ্ঞানীদের কাছ থেকে জেনে” নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। এটাই তাক্বলীদ।
যেমনটা সাহাবীরা করেছেন। তাদের মনে কোন প্রশ্ন জাগলে সরাসরি রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করতেন। পরবর্তী যুগের মানুষেরা সাহাবীদের (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করতেন এবং সে অনুযায়ী আমল করতেন।
আগেই বলেছি মাযহাব মানা তাদের জন্য জরুরী যাদের ইজতিহাদের যোগ্যতা নেই। যারা মুজতাহিদ (যিনি ইজতিহাদ করেন) তাদের জন্য মাযহাব মানা জরুরী নয়। কারন তারা নিজেরাই যেকোন সমস্যার সমাধান বের করতে সক্ষম।
২৪. ঈমানদারীতে এবং কুরআন-হাদীসের বিদ্যায় চার ইমাম শ্রেষ্ঠ ছিলেন না চার খলীফাহ্?
-- অবশ্যই চার খলীফাহ্‌ শ্রেষ্ঠ।
২৫. যদি খলীফাহগণ শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকেন তবে তাদের নামে মাযহাব হল না কেন?
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনার প্রশ্নটি যৌক্তিক। তবে না বুঝার কারণে আপনার মনে এমন প্রশ্ন উদয় হয়েছে। মূল কারণ হল, আমরা যদি বলি যে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ এর তাকলীদ করা হোক। তাহলে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ এর তাকলীদ করলে তাঁর কাছে ছিল কুরআন, রাসূল সাঃ এর হাদীস এবং তার নিজস্ব ফাতওয়া। কিন্তু হযরত উমর, হযরত উসমান ও হযরত আলী রাঃ এর ফাতওয়া কিন্তু হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ এর কাছে ছিল না? তাই তাঁর তাকলীদ করলে আমরা বাকি তিন খলীফায়ে রাশেদের ফাতওয়া থেকে বঞ্চিত থাকছি।
একইভাবে আমরা যদি উমর রাঃ এর তাকলীদের কথা বলি, তাহলে হযরত উমর রাঃ এর কাছে কুরআন, হাদীস, হযরত আবু বকর রাঃ এর ফাতওয়া এবং তাঁর নিজের ফাতওয়া রয়েছে। বাকি উসমান রাঃ এবং হযরত আলী রাঃ এর ফাতওয়া থাকছে না।
একই অবস্থা হযরত উসমান রাঃ এর তাকলীদের কথা বললে। হযরত আলী রাঃ এর তাকলীদের কথা বললে তাঁর কাছে কুরআন, হাদীস, হযরত আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ, হযরত উসমান রাঃ এর ফাতওয়া এবং হযরত আলী রাঃ এর নিজস্ব ফাতওয়া পাওয়া যাবে। কিন্তু তৎকালীন জিবীত থাকা ও মৃত্যুবরণ করা বাকি সাহাবীদের ফাতওয়া পাচ্ছি না।
এ কারণে সাহাবীদের পরবর্তীতে তাবেয়ী ইমাম আবু হানীফা এবং তাবে তাবেয়ী ইমাম শাফেয়ী, মালিক ও আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ এর তাকলীদের মাধ্যমে কুরআন, হাদীস এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের ফাতওয়াও পাওয়া যায়। আর আমাদের কাছে কুরআন হাদীসের সাথে সাহাবাগণও অনুসরণীয়।
وعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين من بعدي عضوا عليها بالنواجذ
হযরত ইরবাজ বিন সারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা আমার সুন্নতকে আঁকড়ে ধর। এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতকে আঁকড়ে ধর আমার পরে। এগুলোকে মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধর। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৬১৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২০১২৫, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৫০, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৭৯, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৯২২, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৩২৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৪২, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪২০১, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-৪৩৭, মাশকিলুল আসার, হাদীস নং-৯৯৮}
তাই চার ইমামের তাকলীদ করার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের মাসায়েল পাওয়া যাচ্ছে। যা শুধু চার খলীফার তাকলীদ করলে পাওয়া যেতো না।
আর আমরা বিশেষ করে ইমাম আজম আবু হানীফা রহঃ এর অনুসরণ এ জন্য করে থাকি যে, যেহেতু হযরত আলী রাঃ সম্পর্কে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে,
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : أنا مدينة العلم و علي بابها فمن أراد المدينة فليأت الباب
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ আমি হলাম ইলমের শহর। আর আলী হল এর দরজা। সুতরাং যে ব্যক্তি শহরে প্রবেশ করতে চায়, সে যেন দরজা দিয়ে আসে। {মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৪৬৩৭, আলমুজামুল কাবীর লিততাবারী, হাদীস নং-১১০৬১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩২৮৯০, জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-৫৭৪২}
যেহেতু আমরা ইলমের শহর রাসূল সাঃ এর ইলম পর্যন্ত পৌঁছতে চাই দরজা দিয়ে। আর ইলমের দরজা হযরত আলী রাঃ কুরআন, হাদীস, হযরত আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ এবং হযরত উসমান রাঃ এর ফাতওয়াসহ কুফায় এসে শুয়ে আছেন। তাই সেই কুফায় জন্ম নেয়া ইমামে আজম রহঃ এর তাকলীদ করার মাধ্যমে এই সকল ইলমের দরজা দিয়ে রাসূল সাঃ এর ইলমের শহরে প্রবেশ করে থাকি।
এ কারণে আমরা ইমাম আজম আবু হানীফা রহঃ এর তাকলীদ করে থাকি। যেহেতু তার কাছে সকল ইলমের ভান্ডার এসে পৌঁছেছে হযরত আলী রাঃ সহ অন্যান্য সাহাবীগণের পদচারণায় ধন্য কুফায়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com

[ফেসবুক থেকে-পোস্ট দাতা]
২৬. তাঁরা কি ইমামগণ অপেক্ষা কম যোগ্য ছিলেন?
-- কখনই না।

২৭. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর কালিমা পড়বে, ইমামদের নামে মাযহাব মানবে আর পীর-ফক্বীরদরে ত্বরীকাহ্ মত চলবে এ নির্দেশ কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোথায় আছে?
২৮. আল্লাহ নাবীর কি মাযহাব বা ত্বরীকাহ নেই?
২৯. সে মাযহাব বা ত্বরীকাহ কি যথেষ্ট নয়?

-- কিসব প্রশ্ন! হযরত উসমান (রাঃ) কুরআন সংকলন করেন। তাহলে কি কেউ বলতে পারে যে উসমানের কুরআন মানার কথা কোথায় আছে?
হাদীসের ইমামগন (রঃ) ছিহাহ্‌ সিত্তাহ্‌ সংকলন করেন। এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে বুখারীর হাদিস মানার কথা কোথায় আছে?
প্রকৃতপক্ষে কুরআন আল্লাহর তরফ থেকেই। উসমান (রাঃ) সেটা সংকলন করেন এবং পূর্নাঙ্গ পুস্তিকার আকার দেন। তাতে কুরআনের মর্যাদা কমে যায় নি। আর কোন বোকাও একথা বলবে না যে, এটাতো উসমানের কুরআন!
হাদীসগ্রন্থসমূহে (ছিহাহ্‌ ছিত্তাহ্‌ সমুহে। এছাড়া অনেক গ্রন্থে সহীহ হাদীস পাওয়া যায়) হাদীস সমূহ সংকলিত হয়েছে। এই হাদীস সমূহও সংকলকগনের নয়। বরং তা সাহাবা (রাঃ)দের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর। কাজেই ইমাম বুখারীর হাদীস বলে কিছু নেই।
মাযহাব হল ফিকহের সংকলিত রূপ। ফিকহ্‌ এসেছে কুরআন ও হাদীস থেকে। (ফিকহ্‌ এর সংজ্ঞা আবার দেখে নিন।) কাজেই ফিকহ্‌ গ্রন্থসমূহে যে ফাতওয়া দেয়া হয়েছে তা সংকলকগনের কোন নিজস্ব ফতোয়া নয়। কুরআন-হাদীস থেকে সংগ্রহীত। তারপরও “আমরা আম্বিয়া আলাইহিমুস্‌ সালাম ছাড়া আর কাউকে মা’সূম ভুল-ত্রুটির উর্দ্ধে মনে করি না। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর একজন উম্মতী এবং তার শরীয়তের খাদেম মনে করি। তাঁর ফিকহ্‌এর অনুসরণ আমরা এইজন্যই করি যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) শরীয়তের হুকুম আহ্‌কাম জানার জন্য ফকীহগনের শরনাপন্ন হওয়ার আদেশ করেছেন।
ইমাম আবু হানীফা (রঃ) এর কোন কথা যদি শরীয়তের দলীল দ্বারা ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে সেটা হানাফী ফিকহ্‌এর মধ্যে “ফতোয়া যোগ্য” বিবেচিত হয় না। তাহলে আমরা কিভাবে কুরআন-হাদীসের বিরোধীতা করে তাঁর তাকলীদ করলাম”।
[উদ্ধৃত অংশটুকু “মাযহাব ও তাকলীদ কি ও কেন” বইয়ের ১৬-১৭ পৃষ্ঠা থেকে]
তাহলে বোঝা গেল ফিকহ্‌এর অনুসরনের মাধ্যমে মূলত কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণই করা হয়।
৩০. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর প্রতি কি ইসলাম পরিপূণ করা হয়নি?
৩১. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম কি কামিল নাবী নন?
৩২. ইসলাম কি মুকাম্মল ধর্ম নয়?

-- চার মাযহাবের কোন ইমাম এবং তার অনসারীদের কেউ এমন আক্বীদা পোষন করেন বলে আমার জানা নেই। কারো জানা থাকলে প্রমাণ পেশ করুন দয়া করে।
৩৩. ইসলাম পূর্ণ পরিণত এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম কামিল হয়ে থাকলে অন্যের মত ও পথ মান্য করার অবকাশ কোথায়?
৩৪. যারা পূর্ন পরিণত ইসলাম এবং কামিল নাবীকে অসম্পূর্ণ প্রমাণ করে অন্যের দ্বারা তা পূর্ণ করার স্বপ্ন দেখছে, তারা কি কুরআন ও সহীহ হাদীসের বিরোধিতা করছে না?

-- আগেই বলেছি মাযহাব মানা মানেই হল কুরআন-সুন্নাহের অনুসরণ। মুজতাহিদগন কখনই এমন দাবি করেন নি যে, তারা ইসলামকে পূর্ণ করেছেন। তাদের সুযোগ্য অনুসারীদের কেউও এমন আক্বীদা পোষন করে না যে, ইসলাম অপূর্ণ ছিল, মুজতাহিদগন তা পূর্ণ করেছেন! (আস্তাগফিরুল্লাহ!)
বস্তুত মাযহাব বিরোধীদের এসব অভিযোগের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।
৩৫.যে দলটি মুক্তি পাবে বলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা করেছেন- সে নাজাতপ্রাপ্ত দল চার মাযহাবের কোনটি?
৩৬. জান্নাতের পথ বা সীরাতুল মুস্তকীম বুঝবার জন্য আল্লাহ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম একটি সরল রেখা আস্কন করে বললেন, এটা আল্লাহর পথ।তোমরা এর অনুসরণ কর। তৎপর ঐ সরল রেখাটির ডানে- বামে আরো কতকগুলি রেখা আঁকলেন ও বললেন, এ পথগুলির প্রত্যেকটিতে একটি করে শাইত্বন আছে। তারা নিজ নিজ পথের দিকে ডাকছে। তোমরা ঐ পথগুলির অনুসরণ করো না। যদি কর, তহলে তারা তোমাদেরকে সরল পথ হতে বিভ্রান্ত করে ফেলবে। (মিশকাত) এ হাদীস অনুসারী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর পথ সিরাতুল মুস্তাকীম ব্যতীত অন্য পথগুলি কি শাইত্বনের পথ নয়?

-- ৩৫ নং প্রশ্নটি আসলে কোন প্রশ্নই না। প্রশ্নকর্তার ভঙ্গিতে মনে হচ্ছে চার মাযহাব চারটি পৃথক দল এবং পরস্পরের সাথে বিরোধ ও রেষারেষিতে মত্ত! এটা মাযহাব বিরোধীদের কষ্ট কল্পনা।
মুসলিম সমাজের বিবাদ বিরোধের মূল কারন হল আক্বীদায় বিভ্রান্তি। কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী যারা সহীহ আক্বীদার অনুসারী তারাই মূলত নাজাত প্রাপ্ত। চার মাযহাবের কোন ইমাম ও তাদের অনুসারীগন আক্বীদাগতভাবে বিভ্রান্ত নয়। তারা সকলেই কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারী।
৩৭. কালিমা পড়া হয় নাবীর নামে, ক্ববরে রাখা হয নাবীর ত্বরীকায়, ক্ববরে জিজ্ঞাসা করা হবে নাবীর কথা, হাশর ময়দানেও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম শাফা’য়াত করবেন আল্লাহ আদেশে- সে মহানবী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর ত্বরীকাহ্ বাদ দিয়ে অন্যের ত্বরীকাহ্ মানলে নাজাত পাওয়া যাবে কি?
-- না, পাওয়া যাবে না। এসবের সাথে মাযহাবের অনুসরণকারীদের সম্পর্ক বোঝা গেল না।
৩৮. বাংলাদেমে মাযার ও পীরের অন্ত নেই; যত পীর তত ত্বরীকাহ্। পীর সাহেবরা আজকাল
ক্বিবলা বানিয়ে নিয়েছেন। মানুষ কি মানুষের ক্বিবলা হতে পারে?
৩৯. তারা তাদের আস্তানাগুলিকে দারগা শরীফ, খানকা শরীফ, মাযার শরীফ, ওরশ শরীফ প্রভূতি নাম দিয়ে মুসলিমদের তীথস্থান মাক্কা ও মাদীনাহ্ আবমাননার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে?
৪০. পীর তার মুরীদকে বলে সব সময় পীরের ক্বলবের সাথে তোমার ক্বলব মিলিয়ে রাখবে, যখন পীর তার স্ত্রীর উপর. ...। তখন মুরীদ কোথায় থাকে?
৪১. এগুলি কি দ্বীন ও শরী’আতের নামে ভন্ডামী নয়?

-- তথাকথিত পীর ও তাদের কার্যকলাপের সঙ্গে মাযহাবের অনুসারীদের কোন সম্পর্ক নেই।
৪২. মুসলমানদের আল্লাহ এক, নবী এক, কুরআন এক, কেবলা এক এবং একই তাদের ধর্মকর্ম রীতি-নীতি। সুতরাং তাদের মুক্তি ও কল্যাণের পথ হচ্ছে মাত্র একটিই। যা ইসলাম, সিরাতে মুস্তাকীম বা তরিকায়ে মুহাম্মাদী।
-- হ্যা, ঠিক আছে। এখানে প্রশ্নটা কি?
(৪৩) আবু হানীফা কি হানাফী মাযহাব তৈরী করেছেন?
-- মাযহাবের সংজ্ঞা পড়ে আসুন আবার। পরিষ্কার হয়ে যাবে।

(৪৪) আবু হানীফা কি রাসূল সাঃ এর সব হাদীস জানতো? যদি জেনে থাকে তাহলে পরবর্তীতে হাদীস সংগ্রহের প্রয়োজন হলো কেনো? তার মাযহাবটাই তো যথেষ্ঠ ছিলো।তাই নয় কি?
-- ইমাম আবু হানীফা (রঃ) হাদীস শাস্ত্রের কি জানতেন না জানতে সেটা বিস্তারিত জানতে “মাযহাব মানব কেন?” এর ১৩২ তম পৃষ্ঠায় দেখুন। 
সাহাবী (রাঃ) গনও কিন্তু হাদীস সংকলন করেন নি। “আমি প্রশ্ন করি হযরত আবু বকর ওমর ওসমান আলি রা: কোন হাদিসের কিতাব লিখেছেন যেখান থেকে কোন হাদিস জাল কোন হাদিস যইফ তা জানতে পারতাম। অবশ্যয় লিখেননি। ওনারা যেকারনে লিখেন নি, সে কারনে ইমাম আবু হানিফাও লিখেন নি।

কারণ টা কি?
১। ছাহাবা যুগ যাকে হাদীসে খায়রুল কুরুন বলেছে সে যুগে হাদীস জাল বা জঈফ হয়নি, যার কারণে হাদস সংকলনের প্রয়োজন দেখা দেয়নি বরং হাদীস উস্তাদ থেকে শুনে শুনে মুখস্থ রাখা হইত। ইমাম আবু হানিফা সেই যুগেরই মানুষ ছিলেন। অর্থাত উনি সাহবা এবং তাবঈদের থেকে হাদীস শিক্ষা গ্রহণ করেচেন। পরের ‍যুগে যখন হাদিস জাল করা শুরু হয় তখন ইমাম আহমদ, ইমাম বোখারী প্রমুখ ব্যক্তি হাদীস সংকলনের কাজ শুরু করেন।
২। হাদিস শরীফে আছে : মুসলিম শরীফের রেওয়ায়াত।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( لا تَكْتُبُوا عَنِّي وَمَنْ كَتَبَ عَنِّي غَيْرَ الْقُرْآنِ فَلْيَمْحُهُ وَحَدِّثُوا عَنِّي وَلا حَرَجَ ... ) رواه مسلم
হুযুর পাক সা: বলেন: তোমরা আমার থেকে কোরান অন্য কিছু লিখবেনা। যদি লিখে থাক তাহলে মুছে ফেল। কিন্তু আমার থেকে রেওয়ায়াত কর।

এই হাদিসে কোরান ছাড়া অন্য কিছু লিখতে নিষেধ করা হয়েছে। এর উপর ছাহাবাগণ আমল করেছেন, ইমাম আবু হানিফাও আমল করেছেন।
উনারা হাদিসের উপর আমল করাতে আপনার কোন অসুবিধা হইলে জানাবেন।
ইমাম আবু হানিফা রাহ: নিজে কোন কিতাব লিখেননি সংকলনের কাজে ব্যস্ত থাকার কারনে। তবে ওনার ছত্ররা ওনার রেওয়ায়ত সমুহ একত্রিক করেছেন।

যেমন :
1। الفقه الأكبر، برواية حماد بن أبي حنيفة
لفقه الأكبر، برواية أبي مطيع البلخي(2)
العالم والمتعلم، برواية أبي مقاتل السمرقندي(3)
رسالة الإمام أبي حنيفة إلى عثمان البتي(4)
الوصية، برواية أبي يوسف(5)”

(৪৫) যদি বলেন আবু হানীফা মাযহাব তৈরী করেছে তাহলে আমার প্রশ্নঃ আবু হানীফার ওস্তাদ হাম্মাদ কোন্ মাযহাব তৈরী করেছেন? নাকি করেননি? হাম্মাদের তো উচিত ছিলো হাম্মাদী মাযহাব তৈরী করা। তাহলে হাম্মাদ কেন মাযহাব তৈরী করেননি? নাকি হাম্মাদের মাযহাব তৈরী করার মত সামর্থ্য ছিলনা?
(৪৬) আবু হানীফার জন্মের আগের দিন যেসব মানুষ মারা গেছে তারা কোন মাযহাব মানতো?

(৪৭) আবু হানীফা যখন শিশু ছিলো তখন সারা দুনিয়ার মুসলিমগণ কোন মাযহাব মানতো?
(৪৮) আবু হানীফা তো আর জন্ম থেকেই মুজতাহিদ ছিলেননা।মুজতাহি দ হতে কম করে হলেও ২৫/৩০ বছর বয়স হয়েছে তার। তাহলে আবু হানীফার বয়স ২৫/৩০ বছর হওয়ার আগে সারা দুনিয়ার মুসলিমরা কোন মাযহাব মানতো? 
(৪৯) মুসলিম বিশ্বের এরিয়াটা একবার দেখুনঃ পশ্চিমে মরক্কো, আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল থেকে পূবে চীনের সীমান্ত আর উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর থেকে দক্ষিণে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিরাট এলাকা। আবু হানীফার জন্মের ছয়মাস আগে এই বিরাট এলাকায় কার মাযহাব মানা হত? তখন কিন্তু সব সাহাবা জীবিত ছিলেননা। দলিল সহ জানতে চাই।

দলিল সহ আগেই বলা হয়েছে, সে যুগে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আহমাদ, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ছাড়াও আরো অনেক মুজতাহিদ ছিল। তারাও কুরআন-সুন্নাহ গবেষনা করে সে অনুযায়ী মাছয়ালা দিতেন। কিন্তু কালক্রমে তাদের মতামতসমূহ সংরক্ষিত হয়নি। উপরোক্ত চার ইমামের ফিকহ্‌ প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং তাদের অনুসারীগন তা সংরক্ষন ও সমৃদ্ধ করেন। ধীরে ধীরে তা সমগ্র বিশ্বে ব্যাপ্তি লাভ করে। ৪৪ নং প্রশ্নের উত্তরেই বলা হয়েছে, হাদীস সংকলনের আগে মানুষ কিভাবে আমল করত এবং কেন হাদীস সংকলনের প্রয়োজন হল। এ নিয়ে আর কিছু বলার প্রয়োজন দেখি না।

No comments: